হামাদান همدان | |
---|---|
শহর | |
প্রাচীন নাম: ইকবাতানা, হাংমাতানা | |
ইরানে হামাদান | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°৪৮′ উত্তর ৪৮°৩১′ পূর্ব / ৩৪.৮০০° উত্তর ৪৮.৫১৭° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ![]() |
প্রদেশ | হামাদান |
কাউন্টি | হামাদান |
বাখশ | কেন্দ্রীয় |
উচ্চতা | ১,৮৫০ মিটার (৬,০৬৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০৬) | |
• মোট | ৪,৭৩,১৪৯ |
• ক্রম | ইরানে ১৪তম |
সময় অঞ্চল | IRST (ইউটিসি+৩:৩০) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | IRDT (ইউটিসি+৪:৩০) |
ওয়েবসাইট | www |
হামাদান বা হামেদান (ফার্সি: همدان, Hamadān) (প্রাচীন ফার্সি: হাংমেতানা, ইকবাতানা) ইরানের হামাদান প্রদেশের রাজধানী শহর। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে আদমশুমারি অনুযায়ী এই শহরের জনসংখ্যা ৪,৭৩,১৪৯ এবং পরিবার সংখ্যা ১,২৭,৮১২।[১]
হামাদানকে ইরান ও পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর অন্যতম হিসেবে ধরা হয়। ১১০০ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দে এটি এসিরিয়ানরা এই শহর দখল করেছিল এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের বক্তব্য অনুসারে এই শহর ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে মেডাসের রাজধানী ছিল।
ইরানের মধ্যপশ্চিম অংশে ৩,৫৭৪ মিটার আলওয়ান্দ পর্বতমালায় হামাদানের সবুজ পাহাড়ী এলাকা রয়েছে। হামাদান সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১,৮৫০ মিটার উচুতে অবস্থিত।
পুরনো শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও এর ঐতিহাসিক স্থানগুলোর কারণে গ্রীষ্মকালে হামাদানে পর্যটক সমাগম ঘটে। এটি তেহরানের প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার (২২৪ মাইল) দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত।
শহরের প্রধান প্রতীক গাঞ্জনামা, ইবনে সিনা স্মৃতিসৌধ ও বাবা তাহির স্মৃতিসৌধ। শহরের অধিবাসীদের মাতৃভাষা ফার্সি।[২][৩][৪]
ক্লিফর্ড এডমন্ড বসওয়ার্থের মতানুযায়ী হামাদান খুবই পুরনো শহর। তার মতে এই শহরের নাম ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বের এসিরিয়ান রাজা প্রথম তিগলাথ-পিলেসারের সময়ের কিউনিফর্ম বিবরণে রয়েছে এমন হতে পারে, তবে হেরোডোটাস নিশ্চিতভাবে এর নাম উল্লেখ করেছেন যাতে বলা হয়েছে যে খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে মেডিয়ার রাজা ডিওকেস আগবাতানা বা ইকবাতানা শহর নির্মাণ করেছিলেন।[৫]
হামাদান মেডেস জাতি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এই শহর ছিল মেডিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী। পরে তা হাখমানেশী সাম্রাজ্যের কয়েকটি রাজধানীর অন্যতম রাজধানী হয়।
বাইবেলের বুক অফ এজরাতে হামাদানের উল্লেখ রয়েছে, এতে বলা হয়েছে যে এখানে রাজা কর্তৃক ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে মন্দির নির্মাণের অনুমতি প্রদানের একটি দলিল পাওয়া গিয়েছিল (এজরা ৬:২)। এজরার বিবরণে শহরের প্রাচীন নাম ইকবাতানা ব্যবহৃত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এক মাইলের বেশি উচু হওয়ায় এখানে চামড়ার উপর লিখিত নথি সুরক্ষিত থাকত।
পার্থিয়ান যুগে তিসফুন দেশের রাজধানী হয় এবং হামাদান গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ও পার্থিয়ান শাসকদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। পার্থিয়ানদের পর সাসানীয়রা হামাদানে তাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ নির্মাণ করে। ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত নাহাওয়ান্দের যুদ্ধের পর হামাদান মুসলিমদের হস্তগত হয়।
বুওয়িদের যুগে শহরের বেশ ক্ষতি হয়। ১১শ শতাব্দীতে সেলজুকরা তাদের রাজধানী বাগদাদ থেকে হামাদানে স্থানান্তর করে। হামাদানের ভাগ্য স্থানীয় শক্তিগুলোর উত্থান ও পতনের উপর নির্ভর করেছে। তৈমুরীয় আক্রমণের সময় হামাদান শহর ধ্বংস হয়। সাফাভি যুগে শহর বিস্তার লাভ করে। ১৮শ শতাব্দীতে উসমানীয়দের কাছে শহরটি আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু নাদির শাহ উসমানীয়দের বিতাড়িত করেন। ইরান ও উসমানীয়দের মধ্যকার শান্তিচুক্তি অনুসারে হামাদানকে ইরানের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হামাদান সিল্ক রোডে অবস্থিত। ইরানের পশ্চিম অঞ্চলের মূল সড়ক নেটওয়ার্কে অবস্থানের কারণে বিগত শতাব্দীগুলোতেও শহরে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে রুশ এবং তুরকি-জার্মান বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড লড়াই হয়। দুই বাহিনীই শহর অধিকার করেছিল। তবে শেষপর্যন্ত ব্রিটিশরা এর দখল লাভ করে। যুদ্ধ শেষে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তা ইরানের হাতে তুলে দেয়া হয়।
হামাদান প্রদেশ জগ্রোস পর্বতমালার পূর্বে নাতিশীতোষ্ণ পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। উত্তর ও উত্তরপূর্বের বিস্তীর্ণ সমভূমি প্রায় সারাবছর ধরে বয়ে যাওয়া বায়ুপ্রবাহের প্রভাবাধীন থাকে।
এই অঞ্চলের কয়েকটি বায়ুপ্রবাহ হল: বসন্ত ও শীত ঋতুতে উত্তর ও উত্তরপূর্বের বায়ুপ্রবাহ, এটি প্রধানত আর্দ্র ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। শরত ঋতুতে পশ্চিম-পূর্ব বায়ুপ্রবাহ ও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ, এটি উচ্চ অংশ ও সমতলের বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে, এটি অনেকটা আসাদাবাদ অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহের মত।
হামাদান-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ১৭.০ (৬২.৬) |
১৯.০ (৬৬.২) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২৮.০ (৮২.৪) |
৩৩.০ (৯১.৪) |
৩৯.০ (১০২.২) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
৩৯.৪ (১০২.৯) |
৩৬.৪ (৯৭.৫) |
৩০.০ (৮৬.০) |
২৩.০ (৭৩.৪) |
১৮.৮ (৬৫.৮) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২.০ (৩৫.৬) |
৪.৩ (৩৯.৭) |
১১.৫ (৫২.৭) |
১৮.১ (৬৪.৬) |
২৩.৯ (৭৫.০) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩৪.৯ (৯৪.৮) |
৩৪.২ (৯৩.৬) |
২৯.৮ (৮৫.৬) |
২১.৯ (৭১.৪) |
১৩.৭ (৫৬.৭) |
৫.৯ (৪২.৬) |
১৯.৩ (৬৬.৭) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | −৪.৬ (২৩.৭) |
−২.২ (২৮.০) |
৪.৫ (৪০.১) |
১০.৪ (৫০.৭) |
১৫.৫ (৫৯.৯) |
২১.৩ (৭০.৩) |
২৫.৩ (৭৭.৫) |
২৪.৩ (৭৫.৭) |
১৯.০ (৬৬.২) |
১২.১ (৫৩.৮) |
৫.৩ (৪১.৫) |
−০.৯ (৩০.৪) |
১০.৮ (৫১.৫) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | −১০.৫ (১৩.১) |
−৮.২ (১৭.২) |
−২.১ (২৮.২) |
২.৭ (৩৬.৯) |
৬.৪ (৪৩.৫) |
৯.৮ (৪৯.৬) |
১৩.৯ (৫৭.০) |
১২.৮ (৫৫.০) |
৭.০ (৪৪.৬) |
২.৫ (৩৬.৫) |
−২.১ (২৮.২) |
−৬.৬ (২০.১) |
২.১ (৩৫.৮) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −৩৪ (−২৯) |
−৩৩.০ (−২৭.৪) |
−২১ (−৬) |
−১২.০ (১০.৪) |
−৩.০ (২৬.৬) |
২.০ (৩৫.৬) |
৭.০ (৪৪.৬) |
৪.০ (৩৯.২) |
−৪.০ (২৪.৮) |
−৭.০ (১৯.৪) |
−১৪.৫ (৫.৯) |
−২৯ (−২০) |
−৩৪ (−২৯) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৪৬.৩ (১.৮২) |
৪৩.৬ (১.৭২) |
৪৯.৪ (১.৯৪) |
৪৯.৮ (১.৯৬) |
৩৭.৮ (১.৪৯) |
৩.৭ (০.১৫) |
২.০ (০.০৮) |
১.৮ (০.০৭) |
০.৮ (০.০৩) |
২০.৭ (০.৮১) |
২৬.৯ (১.০৬) |
৪০.৯ (১.৬১) |
৩২৩.৭ (১২.৭৪) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ১১.৬ | ১১.১ | ১২.৪ | ১২.১ | ৯.৫ | ২.০ | ১.৩ | ১.৬ | ১.০ | ৫.৬ | ৬.৮ | ১০.১ | ৮৫.১ |
তুষারময় দিনগুলির গড় | ৮.৮ | ৮.২ | ৪.২ | ০.৬ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০.২ | ০.৯ | ৬.৯ | ২৯.৮ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৭৬ | ৭৩ | ৬৪ | ৫৬ | ৫০ | ৩৬ | ৩১ | ৩১ | ৩৪ | ৪৮ | ৬১ | ৭৩ | ৫৩ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ১৩১.৮ | ১৩৭.১ | ১৭৪.৫ | ১৯৯.৬ | ২৫৮.৫ | ৩৪১.৮ | ৩৪২.৭ | ৩২২.২ | ২৯৫.৬ | ২৩৪.৩ | ১৮৩.১ | ১৩৫.৩ | ২,৭৫৬.৫ |
উৎস: NOAA (1961-1990)[৬] |
হামাদান আলওয়ান্দ পর্বতমালার নিকটে অবস্থিত। এখানে শুস্ক গ্রীষ্ম মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়। এছাড়া শীতকালে তুষার পড়ে থাকে। এটি ইরানের অন্যতম ঠান্ডা অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি শীতের দিন তাপমাত্রা −৩০ °সে (−২২ °ফা) এর নিচে নেমে যায়। শীতকালে ভারি তুষারপাত হয় যা প্রায় দুইমাসব্যপীও হতে পারে। সংক্ষিপ্ত গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া শান্ত, মনোরম ও রৌদ্রজ্জল থাকে।
![]() |
![]() |
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী হামাদানের জনসংখ্যা ছিল ১৬,৭৭,৯৫৭।[৭] সেই বছরের সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে হামাদান কাউন্টিতে সনসংখ্যা ছিল ৫,৬৩,৪৪৪। অধিকাংশ জনগণ পার্সিয়ান। এছাড়া হামাদানে সংখ্যালঘুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আজারবাইজানি ও অল্প সংখ্যক ইহুদি রয়েছে।[৮]
হামাদান অনেক কবি ও সাংস্কৃতিক তারকার আবাস। একে নিরবচ্ছিন্নভাবে অধ্যুষিত শহরের মধ্যে প্রাচীনতমের একটি বলা হয়ে থাকে।
চামড়া, সিরামিক ও কার্পেটের হস্তশিল্পের জন্য হামাদান বিখ্যাত।
ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংগঠন শুধু হামাদানের ২০৭টি স্থানকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ববহ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
এখানকার একটি সমাধিকে বাইবেলে উল্লেখিত ইসথার ও তার ভাই মোরডেকাইয়ের সমাধির ধ্বংসাবশেষ হিসেবে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞানী ও লেখক ইবনে সিনাকে হামাদানে দাফন করা হয়েছে। ১১শ শতাব্দীর ইরানি কবি বাবা তাহিরকে এখানে দাফন করা হয়েছে।
মাকামাত বদিউজ্জামান আল-হামাদানির লেখক বদিউজ্জামান আল-হামাদানি হামাদানে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পাস তেহরান ফুটবল ক্লাব বিলুপ্তির পর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুন পাস হামাদান ফুটবল ক্লাব গঠিত হয়। এই দল ও আলওয়ান্দ হামাদান ফুটবল ক্লাব আজাদেগান লীগে অংশগ্রহণ করেছে।
শহরের কিছু ক্রীড়া স্থাপনার মধ্যে রয়েছে: কুদস স্টেডিয়াম, শহীদ মুফাত্তাহ স্টেডিয়াম, তাখতি স্পোর্ট কমপ্লেক্স ও হামাদানের জাতীয় স্টেডিয়াম।
পারস্যের সাংবিধানিক বিপ্লবের পূর্বে হামাদানের শিক্ষাব্যবস্থা মক্তব ও ধর্মীয় বিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছিল। ফখরি মোজাফারি স্কুল ছিল হামাদানের প্রথম আধুনিক স্কুল। এটি এই বিপ্লবের পর স্থাপিত হয়। হামাদানে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রথম আধুনিক স্কুল ছিল এলাইয়েন্স ও লাজারিস্ট।
হামাদানের কিছু জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় হল:
হামাদান নিম্নোক্ত শহরগুলোর জমজ শহর:
পূর্বসূরী - |
মেডিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী "ইকবাতানা" হিসেবে ৬৭৮–৫৪৯ খ্রিষ্টপূর্ব |
উত্তরসূরী - |
পূর্বসূরী - |
হাখমানেশী সাম্রাজ্যের রাজধানী "ইকবাতানা" হিসেবে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ৫৫০–৩৩০ খ্রিষ্টপূর্ব |
উত্তরসূরী - |
পূর্বসূরী ইসফাহান |
সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজধানী (পশ্চিম রাজধানী) ১১১৮–১১৯৪ |
উত্তরসূরী - |
পূর্বসূরী ইসফাহান |
ইরানের রাজধানী ১১১৮–১১৯৪ |
উত্তরসূরী গুরগঞ্জ |