হায়াসিনথ বা হায়াসিনথাস হলেন গ্রিক পুরাণের এক দিব্য নায়ক। স্পার্টার দক্ষিণপশ্চিমে অ্যামিক্লি-তে তার সমাধিঢিপি অবস্থিত। ধ্রুপদি যুগে এই সমাধিঢিপিকে ঘিরে একটি "টেমেনোস" বা আশ্রম (স্যাংচুয়ারি) ছিল। এটি ছিল অ্যাপোলোর মূর্তির পাদদেশে। মাইসিনিয়ান যুগ থেকে হায়াসিনথকে কেন্দ্র করে একটি বীরপূজা-সংস্কৃতি ("কাল্ট") প্রচলিত ছিল।[১] তাকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে অজস্র গল্পকথা। এই সব গল্পে তাকে ঘিরে স্থানীয় "কাল্ট" ও অ্যাপোলোর সঙ্গে তার সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায়।
হায়াসিনথের পিতামাতা কে ছিলেন, তা নিয়ে গ্রিক পুরাণের গল্পগুলিতে স্থানভিত্তিক পাঠান্তর রয়েছে। কোনো গল্পে তাকে ম্যাসিডনের রাজা পিয়েরাস ও সিলোর পুত্র বলা হয়েছে; কোথাও তিনি স্পার্টার রাজা ওয়েব্যালাসের পুত্র; আবার কোথাও তিনি অ্যামিক্লিয়া জাতির বংশধর রাজা অ্যামিক্লাসের ছেলে।[২] অ্যামিক্লিয়ায় অ্যাপোলোর মূর্তির পাদদেশে তার সমাধি অবস্থিত। এখানে মাইসিনিয়ান যুগ থেকে তাকে কেন্দ্র করে একটি বীরপূজা-সংস্কৃতির প্রচলন আছে।
সেই চাকতিটির আঘাত লেগেই হায়াসিনথের মৃত্যু ঘটেছিল।[৩] গল্পে বৈচিত্র্য আনার জন্য একটি পাঠান্তরে বায়ুদেবতা জেফিরাসকে হায়াসিনথের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়।[৪] বলা হয়, হায়াসিনথের সৌন্দর্য জেফিরাস ও অ্যাপোলোর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করেছিল। হায়াসিনথ ধনুর্বিদ্যার দেবতা উজ্জ্বলবর্ণ অ্যাপোলোকে বেছে নিলে, জেফিরাস ঈর্ষান্বিত হন। তিনি অ্যাপোলোর ছোঁড়া চাকতিটি উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে হায়াসিনথকে আহত করেন এবং তাতেই হায়াসিনথের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর অ্যাপোলোর বাধায় হেডিস হায়াসিনথকে পাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। অ্যাপোলো হায়াসিনথের নিঃসৃত রক্ত থেকে তার নামে একটি ফুলের গাছ সৃষ্টি করেন। ওভিডের বর্ণনা অনুযায়ী, অ্যাপোলোর চোখের জলে নবসৃষ্ট ফুলের পাপড়িতে তার দুঃখের চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল। গল্পের একটি স্থানীয় স্পার্টান পাঠান্তর অনুযায়ী, আফ্রোদিতি, আথেনা ও আর্তেমিস হায়াসিনথ ও তার বোন পোলিবোয়াকে স্বর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।[৫]
স্পার্টানদের অন্যতম প্রধান উৎসব হায়াসিনথিয়ার অধিষ্ঠাতা দেবতা ছিলেন হায়াসিনথ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এই উৎসব আয়োজিত হত। তিন দিন ধরে চলত এই উৎসব। তিন দিনের মধ্যে এক দিন দিব্য নায়ক হায়াসিনথের মৃত্যু উপলক্ষে শোকপালন করা হত এবং অপর দুই দিন অ্যাপোলো হায়াকিনথিওস রূপে তার পুনর্জন্মের ঘটনাটিকে উদ্যাপন করা হত। তবে সম্মানের বিভাজন নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে।[৬]
নামের "nth" উপসর্গ দেখে মনে করা হয় হায়াসিনথাস নামটি প্রাক-হেলেনীয় যুগের।[৭] ধ্রুপদি ব্যাখ্যাকর্তাদের মতে, তার এই পুরাণকথা, যেখানে অ্যাপোলোকে ডোরিয়ান দেবতা হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে, এটি প্রকৃতির মৃত্যু ও পুনর্জন্মের একটি ধ্রুপদি রূপক। এই পুরাণকথাটি অ্যাডোনিসের পুরাণকথার অনুরূপ। আরও বলা হয় যে, হায়াসিনথ ছিলেন প্রাক-হেলেনীয় যুগের দেবতা। তার "দুর্ঘটনাজনিত" মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অ্যাপোলো তার দেবত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।[৮]
অ্যাপোলো হায়াসিনথকে একজন দক্ষ পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছিলেন। ফিলোস্ট্র্যাটাসের মতে, তিনি শুধু চাকতি ছোঁড়াই শিখছিলেন না, বরং অন্যান্য ব্যায়াম, ধনুর্বিদ্যা, সংগীত, ভাগ্যগণনাবিদ্যা ও বীণাবাদনও শিখছিলেন। পসেনিয়াস অ্যামিক্লিয়াতে হায়াসিনথের পূজাবেদিতে তার একটি বালকবেশী মূর্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। প্যানোপোলিসের কবি নোনাস অ্যাপোলো কর্তৃক হায়াসিনথের পুনরুজ্জীবনের কথা লিখেছেন।
হায়াসিনথের পুরাণকথা দ্বারা অনুপ্রাণিত মোৎসার্ট অ্যাপোলো অ্যান্ড হায়াসিনথ নামে একটি অপেরা রচনা করেছিলেন।