হারিস চৌধুরী | |
---|---|
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব[১] | |
কাজের মেয়াদ ২০০১ – ২০০৬ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আবুল হারিস চৌধুরী ১ নভেম্বর ১৯৫২ সিলেট |
মৃত্যু | ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ঢাকা |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | জোসনা আরা চৌধুরী |
সন্তান | নায়েম শাফি চৌধুরী সামীরা তানজীন চৌধুরী |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নটর ডেম কলেজ |
হারিস চৌধুরী (১ নভেম্বর ১৯৫২ - ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। পুরো নাম আবুল হারিছ চৌধুরী, তবে তিনি হারিছ চৌধুরী নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।[২][৩][৪]
হারিস চৌধুরী ১৯৪৭ সালে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার নানাবাড়ি ভারতের আসামে করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে। তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে এমএ পাশ করেন।[৫]
হারিস চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন শুরু ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের জাগদলে যোগ দেন। বিএনপি গঠনের পর সংগঠনের সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫]
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিলেট-১০ আসন থেকে ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন তিনি।
তবে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে তিনি তার বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে সরকার গঠন করে খালেদা জিয়া হারিছ চৌধুরীকে রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন।[৬]
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য অভিযুক্ত করা হয় হারিস চৌধুরীকে।[৭] তাকে তিন বছর জেল দণ্ডিত করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা গঠিত একটি বিশেষ দুর্নীতি বিরোধী ট্রাইব্যুনালে।[৮][৯]
২০০৫ সালের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় সরকার পরিবর্তনের পর তাকে অভিযুক্ত করা হয়।[১০] এছাড়াও তিনি ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের ঢাকার গ্রেনেড হামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযুক্ত।[১১] ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।[১২] ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন।[১৩] গ্রেনেড হামলা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশেষ দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করলে পত্রিকায় তার দেশ ত্যাগের খবর প্রচার হতে থাকে। খবরে বলা হয় তিনি ভারত হয়ে লন্ডন পালিয়ে গিয়েছেন। তবে তার মৃত্যুর পর লন্ডন বাংলা ভয়েসকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান তিনি ঢাকাতেই ছিলেন।[১৪] ৬ মার্চ ২০২২ সালে দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয় যে, তিনি মাহমুদুর রহমান নাম ধারন করে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে আত্মগোপনে ঢাকার পান্থপথে বসবাস করতেন।[১৫][১৬]
হারিস চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী ও মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সামীরা তানজীন চৌধুরী ব্যারিস্টারি পাশ করে ব্রিটিশ সরকারের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী জনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে জুরিখে একটি তেল কম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।[১৭]
পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তার ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী (আমরান হোসাইন চৌধুরী ও চৌধুরী এএইচ নামেও পরিচিত। তার বড় বোনের নাম হচ্ছে আখলাসুন নাহার। সবার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী থাকেন সিলেটের কানাইঘাটে গ্রামের বাড়িতে।[১৮][১৯] তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
হারিস চৌধুরী ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সাভারের লালাবাদ কমলাপুরের বিরুলিয়ার খতমেনাবিয়্যিয়ান মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে পারিবারিক ভাবে তার দাফন করা হয়।[১৫][২০][২১]