![]() ১৯৩৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে হার্বার্ট সাটক্লিফ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হার্বার্ট সাটক্লিফ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | সামারব্রিজ, নিডারডেল, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য | ২৪ নভেম্বর ১৮৯৪|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২২ জানুয়ারি ১৯৭৮ ক্রস হিলস, উত্তর ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য | (বয়স ৮৩)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম পেস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | উইলিয়াম হার্বার্ট হবস সাটক্লিফ (পুত্র) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২১৫) | ১৪ জুন ১৯২৪ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৯ জুন ১৯৩৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৯-১৯৪৫ | ইয়র্কশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৪-১৯৩৩ | এমসিসি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ এপ্রিল ২০১৫ |
হার্বার্ট সাটক্লিফ (ইংরেজি: Herbert Sutcliffe; জন্ম: ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৪ - মৃত্যু: ২২ জানুয়ারি, ১৯৭৮) ইয়র্কশায়ারের সামারব্রিজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ও বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে মাঠে নামতেন। তাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফলতম ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত করা হয়ে থাকে।[১] এছাড়াও, ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
গ্যাবলগেটের সামারব্রিজে হার্বার্ট সাটক্লিফের জন্ম হয়। উইলি ও জেন সাটক্লিফ তার বাবা-মা। তাদের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে সাটক্লিফের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। অন্য দুই ভাই হচ্ছেন আর্থার ও বব। উইলি সাটক্লিফ ড্যাক্রে ব্যাংকের কাছে এক কড়াতকলে কাজ করতেন। তিনি ক্লাব ক্রিকেটার ছিলেন।[২]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণের শুরুর দিকে তিনি সফলতম ব্যবসায়ী ছিলেন। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে অর্থ উপার্জনের দিকে ধাবিত হন ও লিডসে একটি ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রয়ের লক্ষ্যে দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সাল থেকে তার ইয়র্কশায়ারীয় দলীয় সঙ্গী জর্জ ম্যাকাউলিকে সাথে নিয়ে লিডস ও ওয়াকফিল্ডে ক্রিকেটের সাজ-সরঞ্জামের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে থাকেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে ম্যাকাউলি তার মায়ের কাছ থেকে £২৫০ পাউন্ড-স্টার্লিং কর্জ করেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে ঐ প্রতিষ্ঠানটি লিমিটেড কোম্পানীতে রূপান্তরিত হয় ও সাটক্লিফ এর অন্যতম পরিচালক হন।[৩][৪] সাটক্লিফের আত্মজীবনীকার অ্যালেন হিলের অভিমত, জর্জ ম্যাকাউলি খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলন। এক বছর পরই প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটান। তবে, হার্বার্ট সাটক্লিফ ঠিকই সফলতার মুখ দেখেন।[৪] পদত্যাগকালীন ম্যাকাউলি £৯০০ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন।[৩]
১৯৪৫ সালে একটি খেলা বাদে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরই তিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে আগস্ট, ১৯৩৯ সালে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। ফলে তার ক্রিকেট জীবন কার্যত শেষ হয়ে যায়। ক্রিকেট খেলার প্রতি গভীর মনোযোগ, স্থিরতা, দক্ষতার কারণে দলে তিনি অমূল্য রত্ন হিসেবে চিহ্নিত হন। এছাড়াও তিনি বেশ বাজে উইকেটেও ব্যাটিং করে খ্যাতি অর্জন করেন। ইয়র্কশায়ার দলের পক্ষে পার্সি হোমসের সাথে ও তার খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে তরুণ লেন হাটনের সাথে জুটি গড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। দলে থাকাকালীন তার দল বারোবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে।
১৯২৩ মৌসুমে ছয়জন ব্যাটসম্যানের একজন হিসেবে দলের পক্ষে সহস্রাধিক প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছিলেন। অন্যরা হচ্ছেন - মরিস লেল্যান্ড, পার্সি হোমস, রয় কিলনার, উইলফ্রেড রোডস ও এডগার ওল্ডরড।[৫] ১৯২২ থেকে ১৯২৫ সময়কালে ইয়র্কশায়ার দল উপর্যুপরী চার মৌসুমে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছিল।
১৪ জুন, ১৯২৪ তারিখ শনিবার তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জ্যাক হবসকে সাথে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করে। খেলায় তারা প্রথম শতরানের জুটি (১৩৬) গড়েন যাতে সাটক্লিফের অংশগ্রহণ ছিল ৬৪ রান।[৬] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে তারা ২৬৮ রান তোলেন। ১২২ রান করে সাটক্লিফ তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। হবস করেন ২১১ রান। খেলায় ইংল্যান্ড পুনরায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ী হয়।[৭] সিরিজে তিনি ৭৫.৭৫ গড়ে ৩০৩ রান তোলেন।[৮] জুলাইয়ের প্রথমার্ধ্বে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বে ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। শুরুতে সফরে যেতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীও সাথে যাবেন এ শর্তে মন পরিবর্তন করেন। সাটক্লিফের জন্য এ সফরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ক্রিকেটের উঁচু স্তর হিসেবে টেস্টে হবসের সাথে অবশ্যম্ভাবী জুটি গড়ে নিজেকে বিশ্বমানের খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেন।
১৯২৪ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে জ্যাক হবসের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে স্মরণীয় সাফল্য লাভ করেন।[৯] এ সময়কালে তাদের জুটি ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফলতম জুটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাদের মধ্যকার প্রথম দুই টেস্টে যথাক্রমে ১৩৬ ও ২৬৮ এর পর থেকে শুরু হয়। এ দু’জন ইংল্যান্ডের পক্ষে ১৫টি শতরানের জুটি গড়েন। তন্মধ্যে ১১টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এছাড়াও তারা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আরও ১১টি শতরানের জুটি গড়েছিলেন।[১০] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ৫৪টি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি তিনবার অস্ট্রেলিয়া সফর করেন ও প্রভূতঃ সফলতা পান। তন্মধ্যে, ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে বিতর্কিত বডিলাইন সিরিজে তিনি সর্বশেষ সফর করেন। ডগলাস জারদিনের বোলিংয়ে তিনি ব্যাপক সমর্থন যোগান। কিন্তু তার নিকটতম বন্ধুরা তা অস্বীকার করেন ও সাটক্লিফ বডিলাইনকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যয়িত করেছেন বলে জানান।
দলীয় অধিনায়কের সাথে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখেন ও দলের ফলাফলে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। পরিসংখ্যানগতভাবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফলতম ব্যাটসম্যান ছিলেন। এপ্রিল, ২০১৫ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ ইনিংস সম্পন্নকারী টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যাটিং গড়ে যে-কোন ইংরেজ ক্রিকেটারের তুলনায় শীর্ষস্থানে অবস্থান করছেন ও বৈশ্বিকভাবে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন।
![]() |
৯৯.৯৪
|
![]() |
৬০.৯৭
|
![]() |
৬০.৮৩
|
![]() |
৬০.৭৩
|
![]() |
৫৯.২৩
|
![]() |
৫৮.৬৭
|
![]() |
৫৮.৬১
|
![]() |
৫৮.৪৫
|
![]() |
৫৭.৭৮
|
![]() |
৫৬.৯৪
|
![]() |
৫৬.৬৮
|
![]() |
৫৬.৬৭
|
উৎস: ক্রিকইনফো যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবনে কমপক্ষে ২০ ইনিংস। |
১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে টেস্ট দল নির্বাচক ছিলেন। এ সময়ে ইংল্যান্ড দল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজদেশে খেলে।[১১] অবসর পরবর্তীকালে ক্রিকেটের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল তার। ১৯৭৭ সালে সর্বশেষ জনসমক্ষে হুইলচেয়ারে তাকে দেখা যায়। সাটক্লিফ ও লেন হাটনের পর তৃতীয় ইয়র্কশায়ার ব্যাটসম্যান হিসেবে জিওফ বয়কট প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শততম সেঞ্চুরি করার পর তাদেরকে ছবি নেয়া হয়।[১২] এর কয়েকমাস পরই তার দেহাবসান ঘটে।
টেস্ট ক্রিকেটে সাটক্লিফের রেকর্ড অত্যন্ত চমৎকার। তার পরিসংখ্যানগত রেকর্ড কেবলমাত্র ডন ব্র্যাডম্যানের সাথেই তুলনা করা যায়। পুরো টেস্ট জীবনে তার ব্যাটিং গড় কখনো ৬০-এর নিচে যায়নি। জাভেদ মিয়াঁদাদের ক্ষেত্রেও ৫০-এর নিচে যায়নি।[১৩] টেস্টে নিজস্ব দ্বাদশ ইনিংসে দ্রুততম সহস্র রান করেন। পরবর্তীতে এভারটন উইকস তার সমকক্ষ হন।[১৪]
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ২১ বছর ইয়র্কশায়ারের ক্লাব কমিটিতে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের টেস্ট দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ইয়র্কশায়ারের অনুশীলনী মাঠ হিসেবে হেডিংলিতে তার স্মরণে কয়েকটি ফটকের নামকরণ হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৫] ১৯১৯ সালের কাউন্টি ক্রিকেটে চমকপ্রদ সাফল্য লাভের প্রেক্ষিতে পার্সি হোমস ও হার্বার্ট সাটক্লিফকে ১৯২০ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।[১৬] ১৯৪৯ সালে এমসিসি’র সম্মানসূচক সদস্যরূপে মনোনীত হন তিনি। ইংরেজ পেশাদারদের সংগঠনে জর্জ হার্স্ট, উইলফ্রেড রোডস ও জ্যাক হবসের সাথে তিনিও নির্বাচক মনোনীত হন।[১৭] ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ সালে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ তাকে ক্লাবের আজীবন সদস্যরূপে মনোনীত করে। জুলাই, ১৯৬৫ সালে হেডিংলি মাঠে ক্লাবের সভাপতি ও তার সাবেক অধিনায়ক স্যার উইলিয়াম ওরস্লে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সাটক্লিফ গেট’ উদ্বোধন করেন।[১৮]