হিকমাত বা হিকমত বা হেকমত, আরবি: حكمة , ḥikma, আক্ষরিক অর্থে প্রজ্ঞা, দর্শন; যুক্তি, অন্তর্নিহিত কারণ[১]) হল ইসলামি দর্শন ও আইনের একটি ধারণা। অর্জিত গ্রন্থগত জ্ঞান , অভিজ্ঞতা, বাস্তবজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান ও গভীর চিন্তার সমন্নয় ঘটিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ও ব্যবহারের ক্ষমতা হচ্ছে প্রজ্ঞা। গভীর অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তার সমষ্টিও হিকমাহ।
দার্শনিক মোল্লা সদরা হিকমাত-কে "সত্তার সারমর্মকে তারা যেমন আছে তা জানতে চাওয়া" বা "মানুষের বস্তুনিষ্ঠ জগতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি বুদ্ধিগত জগতে পরিণত হওয়া" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।। [২] বিভিন্ন ইসলামিক ভাষ্য হিকমাত-কে "বিজ্ঞানের সর্বোত্তম উপায়ে সর্বোত্তম জিনিসগুলি জানা ...", [৩] অভিজ্ঞতা, [৪] "বিচারে ন্যায়বিচার" ব্যবহার করে, "বিষয়ের বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান" হিসাবে বর্ণনা করে। [৫] "যা অজ্ঞতাকে বাধা দেয়," [৬] "জিনিসকে তাদের যথাযথ স্থানে রাখা, তাদের যথাযথ মর্যাদায় সমাসীন করা" ইত্যাদি [৭] ইবনুল কাইয়্যিমের মতে, হিকমাহ-এর তিনটি স্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং একচেটিয়া স্তরটি "বাকী উম্মাহর উপর সাহাবীদের জন্য সংরক্ষিত, এবং এটি [ইসলামী] পণ্ডিতরা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারে।"
ফিকাহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র) এর একটি পরিভাষা হিসাবে, তাকি উসমানি এটিকে "[ইসলামী] আইন প্রণয়ন করার সময় আইন প্রণয়নকারীর বিবেচনায় নেওয়া প্রজ্ঞা এবং দর্শন বা [আইনের] প্রয়োগকারী দ্বারা আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা সুবিধা" হিসাবে বর্ণনা করেন। ডাঃ দিপারতুয়া এটাকে "উদ্দেশ্য ও প্রজ্ঞা" অভিধায় "শরিয়াহ দ্বারা নির্ধারিত" বলে অভিহিত করেছেন। [৮]
উসমানি ট্রাফিক লাইটের কথা উল্লেখে করে ধর্মনিরপেক্ষ আইনের উদাহরণ দিয়েছেন- যেখানে ইল্লাত ( ফিকহের আরেকটি পরিভাষা যার অর্থ "একটি লেনদেনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা প্রাসঙ্গিক আইন প্রয়োগ করে") হল লাল আলোতে থামার আনুগত্য, আর হিকমাহ হল ট্রাফিক নিরাপত্তা- যানবাহন এবং পথচারীদের সংঘর্ষ এড়ানো। [৯]
মোল্লা সাদ্রার মতে
"হিকমাহ হচ্ছে নিজের সত্যিকার অস্তিত্বের জ্ঞান অর্জন করা।"[১০]
বিভিন্ন ইসলামিক পণ্ডিত ও গবেষক এটিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইবনে মানদুর এর লিসেন আল আরব বইটিতে বলা হয়েছে
"হিকমাহ হচ্ছে ভালো ও উত্তম কিছুর বৈজ্ঞানিক বা উচ্চ পর্যায়ের ধারণা রাখা, ঐ রকম চিন্তন ক্ষমতা এবং এর ফল বাস্তবে বাস্তবায়ন।" [১১]
আবার,[১২] ইবনে ফারিস এর মতে হিকমাহ হচ্ছে:
"বাস্তব জ্ঞান এবং এর মাধ্যমে বিচার-বিবেচনা”[১৩]।
পাকিস্তানি বিচারক ও ইসলামিক পণ্ডিত মুহাম্মাদ ত্বকি উসমানীর মতে হিকমাহ হচ্ছে
"ফিকহ শাস্ত্রের একটি দিক; যেটি যাবতীয় সব জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারে আইন প্রণয়ন করার সময় প্রণেতারা ব্যবহার করে থাকেন।"[১৪]
ডক্টর দিপারতুয়ারের মতে-
“এটি হচ্ছে বাস্তবজ্ঞান ও গ্রন্থগত জ্ঞানের প্রয়োগ।”[১৫]
ইবনে আল-কাইয়ূম এর মতে "হিকমাহ এর সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে পেরেছিলেন রসূলের সাহাবারা এবং এটিই হচ্ছে ইসলামি পণ্ডিতদের জন্য জ্ঞানের বা পান্ডিত্যের সর্বোচ্চ স্তর ।" [১৬]
হিকমাহ হচ্ছে মহান আল্লাহর একটি গুণ। তিনি ‘ الحكيم (আল-হাকিম)' অর্থ প্রজ্ঞাময়।
সূরা লোকমানে বলা হয়েছে:
“পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। " সূরা লোকমান,আয়়া়ত ২৭।
সূরা আল-বাকারাহে বলা হয়েছে:
“তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তা অবশ্যই অনেক উত্তম প্রতিদান পেয়েছে। আর বুদ্ধিমানদের ছাড়া আর কেউ স্মরণ রাখবে না। " সূরা আল-বাকারাহ,আয়াত ২৬৯।