হিট উইকেট হ'ল ক্রিকেট খেলায় অনুসৃত এমন একটি পদ্ধতি যার প্রয়োগে কোনও খেলোয়াড়কে খেলা থেকে অপসৃত করা হয়। ব্যাটসম্যানকে অপসৃত বা আউট করার এই পদ্ধতিটি ক্রিকেটের আইন এর ৩৫ নম্বর আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। যদি বোলার তাঁর ডেলিভারি স্ট্রাইডে প্রবেশ করেন এবং বলটি খেলা চলাকালীন অবস্থায় থাকে তখন স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা তাঁর শরীরের স্পর্শে তাঁর উইকেটটি যদি পড়ে যায় তখন তাঁকে "হিট উইকেট" আউট দেওয়া হয়।[১] বল করার সময়কালে স্ট্রাইকার তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বা সেই ডেলিভারিটি খেলার পরে তাঁর প্রথম রানের জন্য যাত্রা শুরু করার সময় এমন ঘটতে পারে। সহজ কথায় স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যান যদি বল মারার সময় বা কোনও রান নেওয়ার চেষ্টা করার সময় তাঁর ঠেলায় স্টাম্পের বেল পড়ে গেলে বা স্টাম্প উপড়ে গেলে তিনি হিট উইকেট আউট হন।
ব্যাটসম্যানকে ফেরৎ পাঠানোর জন্য এই ষষ্ঠ পদ্ধতিটি বাদেও খুব সাধারণ উপায়গুলি হল ক্যাচ ধরা, বোল্ড করা, লেগ বিফোর উইকেট, রান আউট এবং স্টাম্পড। এই পদ্ধতিটি তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বিরল। এই পাঁচটি প্রচলিত পদ্ধতি ছাড়াও ব্যাটসম্যানকে আউট করার আরও চারটি উপায় আছে (টাইম আউট, অবসট্রাকটিং দ্য ফিল্ড, রিটায়ার আউট এবং হিট দ্য বল টোয়াইস) যেগুলি অত্যন্ত বিরল।
উইকেট প্রাপ্তির কৃতিত্ব বোলারের প্রাপ্য হলেও এই ক্ষেত্রটিতে বোলারের সক্রিয়তার সন্ধান পাওয়া যাবে না। যদি বোলার কর্তৃক বলটি ডেলিভারী না করা হয় বা যদি নো-বল হয় তবে কোনও ব্যাটসম্যানকে "হিট উইকেট" আউট দেওয়া যায় না।
৬ সেপ্টেম্বর ২০২০[হালনাগাদ] টেস্ট ক্রিকেট এ মোট ১৫৯ ব্যাটসম্যান হিট উইকেটে আউট হয়েছেন,[২] একদিনের আন্তর্জাতিক এ ৭০ জন ব্যাটসম্যান[৩] এবং টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক এ ১৪ জন।[৪] মহিলাদের টেস্ট ক্রিকেটে হিট উইকেটে ১২ জন খেলোয়াড়,[৫] এক দিবসীয় তে সাত জন,[৬] এবং টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাঁচ জন খেলোয়াড় হিট উইকেট হয়েছেন।[৭]
-এর হিসাব অনুযায়ীব্যাটসম্যানকে ফেরৎ পাঠানোর এই পদ্ধতির বিরলতার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকগুলি ঘটনা উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়েছে।
১৯৯১ সালের ৯ আগস্টে ওভাল এ ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মধ্যে একটি ম্যাচ চলাকালে ইয়ান বোথাম বোলার কার্টলি অ্যামব্রোস কে হুক করার চেষ্টা করেন এবং তাঁর স্টাম্পের উপর পড়ে যান। ফলে তিনি "হিট উইকেট" হয়ে যান। দিনের পরে বিবিসি রেডিওর "টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল" এর "ব্রায়ান জনস্টন" স্কোরকার্ডের বিবরণ স্বাভাবিকভাবে পড়ছিলেন। তিনি যখন বোথামের হিট উইকেট প্রসঙ্গে আসেন তখন তাঁর সহভাষ্যকার জোনাথন অ্যাগ্নিউ মন্তব্য করেন যে বোথাম 'যথেষ্টভাবে তাঁর পা সরিয়ে নেন নি'। দ্ব্যর্থক এই কথাটির অর্থ হ'ল তিনি স্টাম্পের চেয়ে পা আরও উঁচু করে স্টাম্পে আঘাত করা এড়াতে সক্ষম হন নি এবং লিঙ্গের উল্লেখও করেছিলেন। জনস্টন আরও মন্তব্য করতে না পেরে আস্তে আস্তে হাসতে শুরু করেন এবং প্রায় এক মিনিট ধরে সম্প্রচার কেবল মুখ চেপে হাসিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।[৮]
হেডিংলিতে ১৯২১ অ্যাশেজ সিরিজে তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অ্যান্ডি ডুকাট ইংল্যান্ডের হয়ে তাঁর একমাত্র টেস্ট খেলছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার টেড ম্যাকডোনাল্ড এর করা একটি দ্রুত বলকে প্রতিহত করতে গেলেন। ডুকাটের ব্যাট ভেঙে গিয়ে একটি স্প্লিন্টার পিছনে উড়ে এসে বেল ফেলে দেয়। বলটি গিয়ে স্লিপ ফিল্ডারের হাতে জমা পড়ে। ডুকাটকে "কট" আউট দেওয়া হয়। যদিও মনে হয় যে তাঁকে "হিট উইকেট" আউটও দেওয়া যেতে পারত।[৯]
পরে ১৯২১ সালেই অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে জোহানেসবার্গ এর ওল্ড ওয়ান্ডারারার্স এ দ্বিতীয় টেস্টে ম্যাকডোনাল্ড বিলি জাল্ক কে একইভাবে ফেরৎ পাঠিয়ে ছিলেন। ব্যাটসম্যানের ব্যাটের টুকরোগুলি বেল ফেলে দেয় এবং জাল্ককে "হিট উইকেট" আউট দেওয়া হয়।[১০]
এই ঘটনার পরে এমসিসি স্পষ্ট করে দেয় যে ব্যাটসম্যানকে "হিট উইকেট" দেওয়ার জন্য পুরো ব্যাট দিয়ে উইকেট ভাঙতে হবে। যাইহোক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর কার্যকরভাবে এই আইনটির পরিবর্তন করা হয়। তাতে বলা হয় যদি স্প্লিন্টার বা ব্যাটের কিছু অংশ উইকেট ভেঙে দেয় তবে ব্যাটসম্যানকে "হিট উইকেট" দেওয়া যাবে। [১১]
১৯৫৩ সালে ডার্বিশায়ার এর বিরুদ্ধে সারের হয়ে খেলছিলেন অ্যালান রেভিল। অ্যালেক বেডসার এর একটি লিফটিং ডেলিভারিতে তিনি হাতে আঘাত পান। রেভিল ব্যথায় হাত নাড়তে গেলে তাঁর গ্লাভস উড়ে গিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে এবং একটি বেল পড়ে যায়। আম্পায়ার বিবেচনা করেন যে রেভিল তখনও "বল খেলছেন" এবং তিনি তাঁকে "হিট উইকেট" আউট দেন। [১০]