হিমালয়ান থর

Himalayan tahr
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অবস্থিত কেদারনাথ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একটি পূর্ণবয়স্ক হিমালয়ান থর হরিণ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Artiodactyla
পরিবার: Bovidae
উপপরিবার: Caprinae
গণ: Hemitragus
Hodgson, 1841
প্রজাতি: H. jemlahicus
দ্বিপদী নাম
Hemitragus jemlahicus
(Smith, 1826)
Range map

হিমালয়ান থর হরিণ (Hemitragus jemlahicus) বৃহৎ প্রজাতির হরিণ, যা ভারত ও নেপালের হিমালয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। পশ্চিম হিমালয়ে এর পরিচিতি থর হিসাবে। শিকার ও খাদ্যাভাবে এদের সংখ্যা ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) এর তালিকায় থরকে প্রায়-বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[]

বিবরণ

[সম্পাদনা]

এদের মাথা ছোট, কানগুলি ছোট ও তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। এদের চোখ বড় এবং শিং এর আকারে পুরুষ ও স্ত্রীদের মধ্যে তারতময় থাকে।[] এদের শিং এর সর্বাধিক দৈর্ঘ্য হয় ৪৬সেমি। স্ত্রী প্রজাতির চেহারা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। গড়পড়তা পুরুষের ওজন হয় ৭৩কেজি এবং স্ত্রীদের ওজন হয় ৩৬কেজি। []

এদের বহিরাঙ্গ হিমালয়ের কর্কশ আবহাওয়ার সঙ্গে অত্যন্ত সুচারু রূপে অভিযোজিত হয়ে থাকে। এদের ঘন লালচে লোম শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডার হাত থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখে। শিটের শেসে লোমগুলি পাতলা হয়ে যায় এবং এদের রংটাও ফিকে হয়ে আসে।[]

এদের পায়ের আঙ্গুল জোর সংখ্যক, যা এদের রুক্ষ অথবা মসৃণ অঞ্চলে চলাফেরায় সাহায্য করে। এদের খুরের তলায় রবারের মত অংশ থাকে যা মসৃণ পাথরগুলিকে আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করে। খুরের বাইরের দিকে কেরাটিন প্রোটিন খুরকে টেঁকসই করে তোলে যা রুক্ষ জমিতে সাবলীল ভাবে চলা ফেরা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।[]

এদের জীবৎকাল সাধারণত ১৪-১৫ বছর হয়। যদিও পুরুষদের থেকে স্ত্রীদের জীবৎকাল বেশি হয়ে থাকে। []

শ্রেণীবিন্যাস

[সম্পাদনা]

থর কথাটি নেপালি কিন্তু ইংরিজিতে প্রথম ব্যবহার ১৮৩৫ সালে।[] এরা Artiodactyla বর্গের প্রাণী যারা জোড় সংখ্যক আঙ্গুলের অধিকারী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গোত্রে পড়ে। এদের নিকট আত্মীয় Caprinae উপপরিবারের অন্তর্গত ভেড়া ও ছাগল।[]

বাস্তুসংস্থান

[সম্পাদনা]

এদের জীবনযাত্রা শীতল আবহাওয়ায় এবং পাথুরে অঞ্চলে থাকার জন্য অভিযোজিত হতে থাকে। হিমালয় অঞ্চলে ২৫০০ থেকে ৫০০০ মিটারের মধ্যে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা বিভিন্ন রকমের খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত থাকে। শীতকালে বরফ পড়ে যখন পাহাড়ের উপরদিক ঢেকে যায় তখন এরা অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলের পাহাড়ের ঢালে নেমে আসে।[]

পুরুষ হিমালয়ান থরকে পছন্দসই স্ত্রী সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য অন্য পুরুষ সঙ্গীদের সাথে লড়াই করতে হয়। এই লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা নেয় শক্তিশালী চেহারা, বড় শিং, আগাসন। এক্ষেত্রে লোমের রং বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হালকা লোমওলা পুরুষরা বেশিবার মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়।[] এদের শিংগুলি শত্রুদের হাত থেকে আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসাবে এবং সঙ্গিনীকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[]

প্রজননকাল

[সম্পাদনা]

এরা মূলত বহুগামী হয় এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে স্ত্রী থরকে অর্জন করতে হয়। কমবয়সী পুরুষ থরেরা বেশি বয়স্ক ও বড় চেহারার পুরুষদের অনুপস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ে থাকে।[] যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে পুরুষরা নিজেদের মধ্যে যে লড়াইটা করে সে ক্ষেত্রে ধরা হয় আকৃতি, ওজন এবং টেস্টোস্টেরণের মাত্রা। এছাড়া আশ্চর্যজনকভাবে লোমের রং এই প্রতিযোগিতায় এক বিশেষ মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত হয়।[] স্ত্রী থরেদের গর্ভধারণকাল সাধারণত ১৮০-২৪২ দিন হয়ে থাকে।[][১০]

এরা অত্যন্ত ক্ষিপ্র ও গতিশীল হওয়ার জন্য আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। রাতের দিকে এরা অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় চলে আসে যেখানে খাদ্য ও জলের প্রাচুর্য থাকে। দিনের বেলায় এরা উচ্চ পর্বতঢালে বিশ্রামের জন্য চলে যায়।[১১] এইভাবে এরা শত্রুদের আক্রমণের মোকাবিলা করা ছাড়াও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের খাদ্য ও জলের ভাণ্ডারের উৎস সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকে।

খাদ্যাভ্যাস

[সম্পাদনা]

এরা তৃণভোজী প্রাণী। এদের খাদ্য মূলত ঘাস, পাতা এবং ফল।[১০] এরা মূলত গুল্মজাতীয় এবং বৃক্ষময় উদ্ভিদ খেতে পছন্দ করে।[১১] যদিও এদের খাদ্যের ৭৫ শতাংশই ঘাস জাতীয় হয়ে থাকে।[১২] অধিকাংশ বোভিড পরিবারের অন্তর্গত প্রাণীদের মতই এরাও রোমন্থনকারী পশু এবং এদের পাচনতন্ত্র জটিল হয়ে থাকে।

এরা হিমালয়ের তুষার চিতার অন্যতম প্রিয় খাদ্য।[১৩]

বর্তমান অবস্থা

[সম্পাদনা]

ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) এর তালিকায় থরকে প্রায়-বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bhatnagar, Y. V. & Lovari, S. (২০০৮)। "Hemitragus jemlahicus"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2014.3প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন 
  2. Theodor, Jessica M. “Artiodactyla (Even-Toed Ungulates Including Sheep and Camels).” In eLS. John Wiley & Sons, Ltd, 2001. http://onlinelibrary.wiley.com.prx.library.gatech.edu/doi/10.1038/npg.els.0001570/abstract[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ].
  3. http://animaldiversity.ummz.umich.edu/accounts/Hemitragus_jemlahicus/
  4. "Himalayan tahr", http://www.ultimateungulate.com/tahrhim.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ তারিখে, (Nov. 2001).
  5. Smith, A. T., Yan Xie, Hoffman, R., Lunde, D., MacKinnon, J., Wilson, D. E. and Wozencraft, W. C. 2008. A Guide to the Mammals of China. Princeton University Press, Princeton, New Jersey.
  6. Simpson, J. A., and E. S. C. Weiner. The Oxford English Dictionary. 20 vols. 2nd ed. New York: Oxford University Press, 1989.
  7. Himalayan tahr (Hemitragus jemlahicus). Arkive. http://www.arkive.org/himalayan-tahr/hemitragus-jemlahicus/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জুলাই ২০১২ তারিখে
  8. Lovari, S., B. Pellizzi, R. Boesi, and L. Fusani. “Mating Dominance Amongst Male Himalayan Tahr: Blonds Do Better.” Behavioural Processes 81, no. 1 (May 2009): 20–25. doi:10.1016/j.beproc.2008.12.008.
  9. Forsyth, David M., Richard P. Duncan, Ken G. Tustin, and Jean-Michel Gaillard. “A Substantial Energetic Cost to Male Reproduction in a Sexually Dimorphic Ungulate.” Ecology 86, no. 8 (August 1, 2005): 2154–2163. doi:10.1890/03-0738.
  10. UCN 2012. IUCN Red List of Threatened Species: Hemitragus Jemlahicus (Himalayan Tahr). Version 2012.2 Accessed February 24, 2013. http://www.iucnredlist.org/details/9919/0.
  11. Watson, Michael(2007). “Aspects of the feeding ecology of Himalayan tahr (Hemitragus jemlacicus), some comparisons with chamois (Rupicapra rupicapra rupicapra) and implications for tahr management in New Zealand” . Lincoln University.
  12. Clauss, M., Hummel, J., Vercammen, F., Streich, W. J., (30 June 2005) Observations on the Macroscopic Digestive Anatomy of the Himalayan Tahr (hemitragus jemlahicus). Anatomia, Histologia, Embryologia.
  13. Ale, Som B. “Ecology of the Snow Leopard and the Himalayan Tahr in Sagarmatha (Mt. Everest) National Park, Nepal.” University of Illinois, 2007. http://www.carnivoreconservation.org/files/thesis/ale_2007_phd.pdf.