হিউগো ডি ভ্রিস | |
---|---|
![]() ডি ভ্রিস, ১৯০৭ | |
জন্ম | হিউগো মারি ডি ভ্রিস ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৮ হারলেম, নেদারল্যান্ডস |
মৃত্যু | ২১ মে ১৯৩৫ লুনটার্ন, নেদারল্যান্ডস | (বয়স ৮৭)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | উদ্ভিদবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | লেডেন বিশ্ববিদ্যালয় |
হিউগো মারি ডি ভ্রিস (ওলন্দাজ উচ্চারণ: [ˈɦyɣoː də ˈvris]) (Hugo Marie de Vries, ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৮ - ২১ মে ১৯৩৫)[২] ছিলেন একজন ডাচ উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং প্রথম দিকের একজন জিনতত্ত্ববিদ। তিনি মূলত জিন ধারণা সর্ম্পকিত প্রস্তাব দেওয়ার জন্য সুপরিচিত। ১৮৯০ এর দশকের গ্রেগর মেন্ডেল এর কাজ সম্পর্কে স্পষ্টতই অজ্ঞাত থেকে তিনি বংশাণুগতির সূত্র পুনরায় আবিষ্কার করায় সহায়ক হন এবং "মিউটেশন" শব্দটি প্রবর্তনের জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত হন।
ডি ভ্রিজের জন্ম ১৮৮৪ সালে। তাঁর পিতা জেরিট ডি ভ্রিস (১৮১৮-১৯০০) ছিলেন হারলেমের ম্যানোনাইট মণ্ডলীর আইনজীবী এবং পরে ১৮৭২ থেকে ১৮৭৪ সালে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী।[৩] তাঁর মা এভেরার্ডিনা রিউভেনস (১৮২৩-১৯১৪) ছিলেন লেডেন বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রত্নতত্ত্বের এক অধ্যাপকের কন্যা। ১৮৬২ সালে তাঁর বাবা ডাচ কাউন্সিল অফ স্টেট এর সদস্য হন এবং তাঁর পরিবারকে হেগ এ স্থানান্তরিত করেন। হুগো ছিলেন তাঁর বড় ছেলে। প্রথম থেকেই হুগো উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন এবং হারলেম ও হেগ-এ জিমনেসিয়াম এ পড়ার সময় তাঁর হার্বেরিয়াম এর জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
১৮৬৬ সালে তিনি লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যায় মেজরিতে ভর্তি হন। তিনি উৎসাহের সাথে ডাব্লিউ.এফ.আর. সুরিনজার এর ক্লাসে এবং শিক্ষামূলক ভ্রমণে অংশ নিতেন। তবে বেশিরভাগই ১৮৬৮ সাল থেকে জুলিয়াস ফন স্যাকস এর 'লেহরবুচ ডার বোটানিক'-এ বর্ণিত পরীক্ষামূলক উদ্ভিদবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সুরিনজারের সংশয় থাকলেও তিনি চার্লস ডারউইন এর বিবর্তন তত্ত্ব দ্বারাও গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি উদ্ভিদের শিকড়ের উপর তাপের প্রভাব সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক রচনা লিখেছিলেন। তাঁর অধ্যাপককে উস্কে দেওয়ার জন্য তিনি ডারউইনকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিলেও ১৮৭০ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
অল্পকাল শিক্ষকতার পরে ডি ভ্রিস ১৮৭০ সালের সেপ্টেম্বরে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নিতে এবং উইলহেলম হাফমিস্টার পরীক্ষাগারে কাজ করার জন্য চলে যান। সেখানে দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিনি ওয়ার্জবার্গ এর সম্মানিত জুলিয়াস স্যাকের ল্যাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি সম্পর্কিত গবেষণায় যোগদান করেন। ১৮৭১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮৭৫ অবধি তিনি আমস্টারডাম এর স্কুলে উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা এবং ভূতত্ত্ব শিক্ষা দিতেন। প্রতিটি ছুটিতে তিনি গবেষণা চালিয়ে যেতে হাইডেলবার্গের ল্যাবে ফিরে আসতেন।
১৮৭৫ সালে প্রুশিয়ান কৃষি মন্ত্রক ডি ভ্রিসকে বার্লিন এর নির্মীয়মান "ল্যান্ডউয়ার্সচাটলিচ হচসচুল" "(" রয়েল এগ্রিকালচারাল কলেজ ") এর জন্য অধ্যাপক হিসাবে একটি পদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রত্যাশায় তিনি ওয়ার্জবার্গে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি কৃষিজ ফসলের গবেষণা শুরু করে স্যাচের (Sachs) সাথে সহযোগিতা শুরু করেন। ১৮৭৭ সালে বার্লিনের কলেজও তাঁকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছিল এবং তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হ্যালে-উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এ অধ্যাপনা করেন। একই বছর তাঁকে নতুন প্রতিষ্ঠিত আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এ প্ল্যান্ট ফিজিওলজিতে লেকচারার পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ১৮৭৮ সালে তাঁর জন্মদিনে তাঁকে অধ্যাপক করা হয় এবং তাঁর বার্লিন কলেজে চলে যাওয়া আটকাতে ১৮৮১ সালে তাঁর জন্মদিনে আংশিক থেকে পূর্ণ অধ্যাপক করা হয়। ডি ভ্রিস ১৮৮৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আমস্টারডামের বোটানিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং গার্ডেন এর অধ্যাপক ও পরিচালকও ছিলেন।
১৮৮৯ সালে ডি ভ্রিস তাঁর ইন্ট্রাসেলুলার প্যানজেনেসিস বইটি প্রকাশ করেন।[৪] এতেই তিনি ১৮৮৬ সালের চার্লস ডারউইন এর প্যানজেনেসিস এর তত্ত্বের পরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ করেন এবং প্রস্তাব করেন যে বিভিন্ন চরিত্রের জন্য বিভিন্ন বংশগত বাহক রয়েছে। তিনি স্পষ্টতই বলেছিলেন যে জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার আসে নির্দিষ্ট জৈব উপাদানের মাধ্যমে। তিনি এই ইউনিটগুলিকে বলেছিলেনপ্যানজিনস যা ২০ বছর পরে উইলহেলম জোহানসেন দ্বারা সংক্ষিপ্ত করে হয়ে যায় জিন।
তাঁর প্যনজিন (Pangenes) তত্ত্বকে সমর্থন করার জন্য, ডি ভ্রিস ১৮৯০-এর দশকে একাধিক উদ্ভিদ প্রজাতির সংকরায়ণের পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তিনি মেন্ডেলের কাজ সম্পর্কে তখনও অজ্ঞাত ছিলেন। সেই অবস্থাতেই ডি ভ্রিস তাঁর গবেষণায় প্রাপ্ত আধিপত্য এবং সুপ্ত, পৃথকীকরণ, এবং স্বাধীন বন্টনের সূত্র প্রয়োগ করে দ্বিতীয় প্রজন্মের ফেনোটাইপ বা জনুর এর ৩: ১ অনুপাতটি ব্যাখ্যা করেন।[৫] তাঁর এইসব পর্যবেক্ষণে তাঁর অনুমানটিকে আরও নিশ্চিত করে যে জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বহণ করে তার উত্তরাধিকার কণা।
তিনি আরও অনুমান করেছিলেন যে জিনগুলি প্রজাতির বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং একই জিন দুটি ভিন্ন প্রজাতির ফুলের চুলের মতো রেখার জন্য দায়ী। উভয় প্রজাতির একটি সাধারণ পূর্বপুরুষের কাছ থেকে তা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছে। এটি বাস্তবে ঘটেও। তবে উচ্চতর প্রাণীর মধ্যে তা খুব কমই ঘটে থাকে (দেখুন অনুভূমিক জিন স্থানান্তর)। জেনেটিক্সের বিষয়ে ডি ভ্রিজের কাজ জ্যান্টিনা ট্যামস এর গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তাঁর সাথে ১৮৯৮ সালে একটি সময়ের জন্য কাজ করেছিলেন।
১৮৯০ এর দশকের শেষের দিকে ডি ভ্রিস ত্রিশ বছর আগের মেন্ডেলের কাজ সম্পর্কে অবগত হন। তাই তিনি তাঁর নিজের কিছু পরিভাষাগত পরিবর্তন এনে ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি যখন ফরাসী জার্নাল কম্পিটিস রেন্দাস দে লা আকাদেমি দেস সায়েন্সেস - এ তাঁর পরীক্ষাগুলির ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন তখন তিনি মেন্ডেলের রচনার কথা উল্লেখ করতে অবহেলা করেছিলেন। কিন্তু কার্ল কোরেনস দ্বারা সমালোচনার পরে তিনি মেন্ডেলের অগ্রাধিকার স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
কোরেনস এবং এরিখ ফন স্চারম্যাক উভয়কেই এখন মেন্ডেলের সূত্র পুনরায় আবিষ্কারের জন্য কৃতীত্ব দেওয়া হয়। কারেনস ছিলেন নাগেলি এর শিক্ষার্থী। মেন্ডেল তাঁর সাথে মটর গাছ সম্পর্কে তাঁর কাজের কথা লিখেছিলেন। কিন্তু তাঁরা এর তাৎপর্য বুঝতে পারেন নি এবং কাকতালীয়ভাবে স্চারম্যাকের দাদু ছাত্রাবস্থায় ভিয়েনায় মেন্ডেলকে উদ্ভিদবিদ্যায় শিক্ষাদান করে ছিলেন।