হৃৎপিণ্ডঘটিত শল্যচিকিৎসা | |
---|---|
মেশ | ঘ০০৬৩৪৮ |
ওপিএস-৩০১ কোড: | ৫-৩৫...৫-৩৭ |
হৃৎপিণ্ডঘটিত শল্যচিকিৎসা, অথবা কার্ডিওভাসকুলার শল্যচিকিৎসা, হলো হৃৎপিণ্ডঘটিত শল্যচিকিৎসক ধারা একধরনের হৃৎপিণ্ডজনিত অথবা রক্তবাহীকায় শল্যচিকিৎসা। এটা প্রায়ই করোনারি আর্টারি বাইপাস কলম এর সাথে যুক্ত করা হয় উদাহরণস্বরূপ, ইস্চেমিক হার্ট ডিজিজ এর জটিলতা চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়; জন্মগত হৃদরোগ সংশোধন করার; অথবা চিকিৎসা কপাটিকা-সদৃশ হৃদরোগ এন্ডোকারডিটিস সহ বাতগ্রস্ত হৃদরোগ বিভিন্ন কারণ, থেকে, এবং অথেরোস্ক্লেরোসিস। এছাড়া হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[১]
মাথার খুলি (কোষ যে হৃদয় ঘিরে) সর্বাগ্রে অপারেশন ১৯ শতকের সংঘটিত এবং ফ্রান্সিসকো রোমেরো ১৮০১ সালে এর প্রথম অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে[২] এরপর ডোমেনকি জিন জেরি (১৮১০), হেনরি ডাল্টন (১৮৯১), এবং ডেনিয়াল হেল উইলিয়ামস (১৮৯৩) সালে সফলভাবে এর অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হোন।[৩] এক্সেল কেপ্পলেন হৃৎপিণ্ডে প্রথম সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেন ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ সালে রিকশস্পিটালেটে (বর্তমানে অসলো)। কেপ্পলেন ২৪ বছর বয়সি একজন পুরুষের অস্ত্রোপচার করেছিলেন যার বাম বগলে ছুরিকাগাত হয়েছিলো এবং গভীর ক্ষত ছিলো, তিনি রক্তপাত বন্ধে পটীবন্ধনি ওষুধ ব্যবহার করেছিলেন। রোগী তার জ্ঞান ফিরে পেয়েছিলেন, কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সাথে জ্বরাক্রান্ত হন এবং অস্ত্রোপচার এর তিন দিন পর তিনি মারা যান।[৪][৫]
গ্রেট বেসেল বা হৃদযন্ত্রের উপর অস্ত্রোপচারের সফলতার শুরু হয় এই শতাব্দী থেকে। যাইহোক এ পর্যন্ত হার্ট ভালভ এর অপারেশন অজানা ছিলো, ১৯২৫ সালে হেনরি সাউট্টার একটি তরুণীর হার্ট ভালভে সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হোন। তিনি বাম উপাঙ্গ হয়ে হৃদযন্ত্রের অলিন্দে ক্ষতিগ্রস্ত মিট্রাল ভালভে অস্ত্রোপচার করেন। রোগীটি কিছু বছর বেচে ছিলেন,[৬] কিন্তু সাউট্টারের সহকর্মীদের পদ্ধতি অহেতুক বিবেচিত এবং এ কারণে তিনি তার পদ্ধতিটি চালিয়ে যেতে পারেননি।[৭][৮]
আল্ফার্ড ব্লালোক, হেলেন বি. টাউসসিগ এবং ভিভিএন থোমাস নভেম্বর,২৯ ১৯৪৪ সালে জন্স হোপকিন্স হসপিটাল এক বছর বয়সি বাচ্চার শরীরে সফলভবে হৃদযন্ত্রের পেড্রিয়াক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন।[৯]
২য় বিশ্বযুদ্ধর পর হৃদযন্ত্রে শল্যচিকিৎসা রাতারাতি পাল্টে যায়। ১৯৪৭ সালে থোমাস সেলর লন্ডনের মিডলসেক্স হাসপাতালে হৃদরোগীর পালমোনারি দেহনালির সংকীর্ণ অবস্থার অপারেশন করেন এবং সফলভাবে পালমোনারি ভালভ এর স্টেনোসিস বিভক্ত করেন। ১৯৪৮ সালে রাসেল ব্রোক পালমোনারি স্টেনোসিস এ আক্রান্ত এমন তিন রোগীর অস্ত্রোপাচারে বিশেষভাবে তৈরিকৃত ডায়ালেটোর বা বর্ধক সফলভাবে ব্যবহার করেন। এক বছর পর তিনি একটি ইনফান্ডিবুলাম এর পরিকল্পনা করেন, যা হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার এর সময়য় কাজে লাগে। এর ধারা কার্ডিও আবিষ্কারের পূর্বেও সরাসরি ভালভে বাইপাস অস্ত্রোপচারের হাজার হাজার অপারেশন সম্ভব হয়।[৭]
তার সাথে ১৯৪৮ সালে চার শল্যচিকিৎসক মিট্রাল ভালভে সফল অস্ত্রোপচার করেন, যার কারণ সাধারণত বাতজ্বর। শার্লটের হোরাক স্মিথি মিট্রাল ভালভ থেকে অতিরিক্ত অংশ বাদ দেওয়ার জন্য ভালভুলোটোম ব্যবহার করেন,[১০] যেখানে অন্য তিন ডাক্তার— হাহ্নেমান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চার্লস বেইলে; বোস্টনের ডোয়ায়েট হারকেন; এবং গায়েস হাসপাতালের রাসেল ব্রোক সাউট্টারের তত্ত্ব ব্যবহার করেন। চার ডাক্তারি স্বতন্ত্রভাবে তাদের কাজ সম্পূর্ণ করেন এবং তারা তাদের কাজের মধ্যে কিছু মাসের ফাঁক রয়েছে। এই সময় সাউট্টারের প্রযুক্তিটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়া শুরু হয়।[৭][৮]
২ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সালে মিন্নেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তার সি. ওয়ালটন লিল্লেহেই এবং এফ জন লেউস ডিআরএস ব্যবহার করে জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে খুঁত নিয়ে জন্মানো ব্যক্তির সফলভাবে অপারেশন করেন। ১৯৫৩ সালে আলেকজান্ডার আলেকজান্দ্রোভিছ ভিশ্নেভস্ক্য সর্বপ্রথম লোকাল এনেসথেসিয়ায় কার্ডিয়াক সার্জারি করেন। ১৯৫৬ সালে কানাডায় ডাক্তার জন কার্টার সর্বপ্রথম চিত্রায়িত ওপেন-হার্ট অস্ত্রোপচার করেন।
যে কোন ধরনের ওপেন হার্ট সার্জারিতে একজন সার্জন বুকের পাঁজর বা খাঁচা খুলে হৃদয়ে কাজ চালানোর জন্য একটি বড় ফুটো (কাটা) করে তোলে। এখানে উন্মুক্ত বলতে বুক বোজানো হয়েছে হৃৎপিণ্ড না। অস্ত্রোপচারের ধরন অনুযায়ী হৃৎপিণ্ড উন্মুক্ত করা হয়।[১১]
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এর ডাক্তার উইলফ্রেড জি বিগলো বলেন রক্তপাতহীন এবং গতিহীন পরিবেশে রোগীর হৃৎপিণ্ডে ভালো কাজ করা যেতে পারে। অস্ত্রোপচার চলাকালীন হৃৎপিণ্ড অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডের জায়গায় কার্ডিও বাইপাস লাগিয়ে দেওয়া হয়, যা ওইসময় রোগীর শরিরে রক্ত এবং অক্সিজেন পাম্প করে। সার্জন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করে হৃৎপিণ্ড লাগানোর চেষ্টা করে থাকেন, কারণ কার্ডিও হৃৎপিণ্ডের সকল কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না।[১২]
শল্যচিকিৎসকরা হৃৎপিণ্ড অস্ত্রোপচারে হাইপোথারমিয়ার গতিবেগ বোজবার পর কার্ডিও বাইপাস অপারেশনে অনেক উন্নতি ঘটেছে: কমপ্লেক্স ইন্ট্রাকার্ডিয়াক মেরামতে কতোটুকু সময় লাগবে এবং রোগীর শরীর থেকে (বিশেষত মস্তিষ্কে) রক্ত প্রবাহ, সেইসাথে হার্ট এবং ফুসফুসে ফাংশন প্রয়োজন। ১৯৫৩ সালে ডাক্তার জন হেয়শাম গিব্বন ফিলাডেল্ফিয়ার জেফফেরসোন মেডিকেল স্কুলে সর্বপ্রথম সফল এক্সট্রাকোরপরিয়াল সার্কুলেশন অপারেশন সম্পন্ন করেন, কিন্তু তার সূত্রটি পরপর ব্যর্থ হওয়ার পর নিয়মটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে ডাক্তার লিল্লেহাই নিয়ন্ত্রিত ক্রস প্রচলন কৌশল ব্যবহার করে অনেকগুলো অস্ত্রোপচারে সফল হোন, যেখানে রোগীর বাবা অথবা মমা "হার্ট-লাঞ্চ মেশিন" ব্যবহার করেন। ডাক্তার জন ডাব্লিউ কিয়াক্লিন মায়ো ক্লিনিকে সর্বপ্রথম গিবন-টাইপ পাম্প ব্যবহার করেন।
নাযিহ যুহদি ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ সালে ওকলাহোমা শহরের মার্সি হাসপাতালে টেরি জিন তুষার নামের ৭ বছর বয়সী এক বাচ্চার শরিরে সর্বপ্রথম ইচ্ছাকৃত হেমুডিলেশন ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। অস্ত্রোপচারটি সফল হয়; কিন্তু তুষার তিন বছর পর মারা যায়।[১৩] এরপর যুহদি, কেরি এবং গ্রিয়ার মার্চ ১৯৬১ সালে সাড়ে তিন বছরের এক বাচ্চার শরিরে হেমুডিলেশন মেশিন ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করেন।
১৯৯০ সাল থেকে ডাক্তাররা কার্ডিও বাইপাস ছাড়া অফ-পাম্প করোনারি বাইপাস সঞ্চালন করতে শুরু করেন। এইসব অপারেশনে অস্ত্রোপচারের সময় হৃৎপিণ্ড সজাগ থাকে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে হৃৎপিণ্ডে ব্লোকেজ রোধ করতে হলে হৃদযন্ত্র আগের মতো স্থিতিশীল রাখা অসম্ভব। যার জন্য জলনালি বা কন্ডিউট ভেসেলে সেফেনউস শিরা ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিকে এন্ডোস্কোপিক ভেসেল হারভেস্টিং (ইভিএইচ) বলা হয়।
১৯৪৫ সালে সোভিয়েত রোগবিদ্যাবিৎ নিকোলাই সিনিটস্যন সফলভাবে এক ব্যাঙ থেকে অন্য ব্যাঙে এবং এক কুকুর থেকে অন্য কুকুরে হৃৎপিণ্ড স্থানান্তর করেন।
নর্মান শুম্বায়কে হৃৎপিণ্ড স্থানান্তরের জনক বলা হয়, এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকান হৃৎপিণ্ড শল্যচিকিৎসক ক্রিস্টিন বার্ণার্ড শুম্বায় এবং রিচার্ড লয়ার এর পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড স্থানান্তর করেন।[১৪] বার্ণার্ড সর্বপ্রথম ৩ ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালে কেপ টাউন এর গ্রুউট সছুউর হাসপাতালে লউইস ওয়াশকান্সক্য এর শরিরে হৃৎপিণ্ড স্থানান্তর করেন।[১৪][১৫] এর তিন দিন পর ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালে এড্রিয়ান কান্ট্রওইট্য ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক এর মাইমোনিডেস হাসপাতালে (বর্তমানে মাইমোনিডেস মেডিকেল সেন্টার) সর্বপ্রথম পেডিয়াট্রিক হৃৎপিণ্ড স্থানান্তর করেন।[১৪] শুম্বায় ৬ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরিরে তার প্রথম হৃৎপিণ্ড স্থানান্তর অপারেশন সম্পূর্ণ করেন।[১৪]