হেক্সোজ একটি জৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত C6H12O6। এটি ছয় কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট একটি মনোস্যাকারাইড বা একক শর্করা।[১] [২] এটি একটি সরল কার্বোহাইড্রেট। এর আণবিক ওজন হলো ১৮০.১৫৬ গ্রাম/মোল। [৩] আমাদের পরিচিত হেক্সোজগুলি হলো গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্যালাকটোজ, ম্যানোজ প্রভৃতি।
মনোস্যাকারাইডকে দু-ভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়: প্রথমটি হলো কার্বন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, যেমন—ট্রায়োজ (৩-কার্বন), টেট্রোজ (৪-কার্বন), পেন্টোজ (৫-কার্বন), হেক্সোজ (৬-কার্বন) ইত্যাদি। আর দ্বিতীয়টি হলো বিজারিত গ্রুপের প্রকৃতি অনুসারে, যেমন—অ্যালডোজ ও কিটোজ। অ্যালডোজের ক্ষেত্রে বিজারিত গ্রুপ অ্যালডিহাইড (-CHO) মূলক আর কিটোজের ক্ষেত্রে বিজারিত গ্রুপ হলো কিটোন (-CO-) মূলক।
অন্যান্য কিছু মনোস্যাকারাইডের মতো হেক্সোজের দুটি গঠন রূপ দেখা যায়। একটি হলো খোলা-শৃঙ্খল বা রৈখিক রূপ আর অন্যটি হলো বদ্ধ-শৃঙ্খল বা চক্রীয় রূপ। তবে এই দুটি রূপ জলীয় দ্রবণে সহজেই একে অপরে রূপান্তরিত হয়।[৪]
হেক্সোজের রৈখিক রূপটি সাধারণত দ্রবণে দেখা যায়। হেক্সোজের রৈখিক রূপের গঠনটিকে H–(CHOH)n−1–C(=O)–(CHOH)6−n–H এইভাবে লেখা হয়,যেখানে n হল ১, ২, ৩, ৪, ৫। এক্ষেত্রে এটি ছয়টি কার্বনের একটি খোলা-শৃঙ্খলের গঠন অবস্থায় থাকে। এই ছয়টি কার্বনের মধ্যে পাঁচটিতে একটি করে হাইড্রোক্সিল কার্যকরী মূলক (–OH) রয়েছে। মূলকগুলি একটি একক সমযোজী বন্ধন দ্বারা সংযুক্ত। অবশিষ্ট কার্বনের একটিতে একটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বিবন্ধন (=O) দ্বারা সংযুক্ত হয়ে একটি কার্বনিল মূলক (-CO-) গঠন করে। কার্বন পরমাণুগুলির অবশিষ্ট বন্ধন সাতটি হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে যুক্ত থাকে। কার্বনগুলিকে সাধারণত ১ থেকে ৬ নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। কার্বনের শৃঙ্খল গঠনের শেষ থেকে সবচেয়ে কাছের কার্বনিল মূলক যেখানে আছে সেই দিক থেকে নম্বর দিয়ে চিহ্নিতকরণ শুরু করা হয়।
প্রাণরসায়ন বা জীবরসায়নে হেক্সোজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ প্রভৃতি বিচ্ছিন্ন অণু হিসাবে হেক্সোজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আবার স্টার্চ, সেলুলোজ এবং গ্লাইকোসাইডের মতো অন্যান্য যৌগগুলির বিল্ডিং ব্লক হিসাবে জৈব রসায়নে হেক্সোজগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেক্সোজগুলি একটি ঘনীভবন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ডাইহেক্সোজ (সুক্রোজের মতো) গঠন করতে পারে যা ১,৬-গ্লাইকোসিডিক বন্ধন তৈরি করে।
যখন হেক্সোজের কার্বনিল মূলক ১ নম্বর কার্বনের অবস্থানে থাকে অর্থাৎ প্রথম কার্বনটি একটি অ্যালডিহাইড মূলক (–CH=O) গঠন করে। তখন শর্করাটিকে বলা হয় অ্যালডোহেক্সোজ। এটি বিশেষ ক্ষেত্রের একটি অ্যালডোজ। অন্যথায় যদি কার্বনিল মূলকের অবস্থান ২ বা ৩ নম্বর কার্বনে হয়, তাহলে শর্করাটি কিটোন মূলক (-CO-) নিয়ে গঠিত কিটোনজাত একটি শর্করা হবে। এটিকে তখন কিটোজ বলা হয়। আরো বিশেষভাবে বলা যায় এটি নরমাল বা সাধারণ কিটোহেক্সোজ অর্থাৎ n-কিটোহেক্সোজ।[১] [২] তবে ৩-কিটোহেক্সোজ প্রকৃতিতে এখনও পাওয়া যায়নি এবং এটি সংশ্লেষণ করাও কঠিন।[৫] তাই "কিটোহেক্সোজ" বলতে সাধারণত ২-কিটোহেক্সোজকে বোঝায়।
হেক্সোজের রৈখিক রূপে ১৬টি অ্যালডোহেক্সোজ এবং আটটি ২-কিটোহেক্সোজ রয়েছে। হাইড্রোক্সিল মূলকের স্থানিক অবস্থানের ভিন্নতার জ্ন্য স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতাগুলি ভিন্ন ভিন্ন। এই ত্রিমাত্রিক সমাণুতাগুলি যুগল হয়। এগুলি আলোক সক্রিয় যৌগ। প্রতিটি জোড়ার একটি প্রচলিত নাম রয়েছে (যেমন "গ্লুকোজ" বা "ফ্রুক্টোজ") এবং যুগলগুলিকে ডি- ("D-") বা এল- ("L-") হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি নির্ভর করে অণুর ফিশার অভিক্ষেপে ৫ নম্বর কার্বন অবস্থানে থাকা হাইড্রক্সিল মূলকের উপর। মূলকটি যথাক্রমে অক্ষের ডানে বা বামে থাকতে পারে। এগুলি সমাণুতাগুলির আলোক আবর্তনের উপর নির্ভর করে না। গ্লুকোজের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ডি এবং এল মধ্যে শুধুমাত্র ডি-গ্লুকোজ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এই ডি-গ্লুকোজ প্রাণীদের শরীরের বিপাকীয় কাজে লাগে।
"হেক্সোজ" শব্দটি কখনও কখনও ডিঅক্সিহেক্সোজ যৌগের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়, যেমন ফুকোজ। এদের সাধারণ রাসায়নিক সংকেত হলো C
6H
12O
6-y, যা হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে এক বা একাধিক হাইড্রক্সিল মূলকের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে হেক্সোজ থেকে উদ্ভূত হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
অ্যালডোহেক্সোজ হলো হেক্সোজের একটি উপশ্রেণী যার রৈখিক গঠনের প্রথম কার্বন পরমাণুতে একটি কার্বনিল মূলক যুক্ত থাকে। যার গঠন H–C(=O)-(CHOH) 5 –H অর্থাৎ এতে একটি অ্যালডিহাইড মূলক যুক্ত।[১] [২] সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো গ্লুকোজ।
অ্যালডোহেক্সোজে মোট চারটি কাইরাল কেন্দ্র রয়েছে। একই কার্বন পরমাণুতে চারটি ভিন্ন পরমাণু বা মূলক যুক্ত থাকলে ঐ কার্বন পরমাণুর সাপেক্ষে অণুটি অপ্রতিসম হয়ে থাকে। তখন ঐ যৌগ অণুকে অপ্রতিসম যৌগ বলে এবং ঐ কার্বনকে বলা হয় অপ্রতিসম কার্বন। এই অপ্রতিসম কার্বনকেই কাইরাল কেন্দ্র বলা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অ্যালডোহেক্সোজে চারটি কাইরাল কেন্দ্র থাকার জন্য এতে ১৬টি (২৪ ) ভিন্ন স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা সম্ভব। যার মধ্যে ৮ জোড়া এনানসিওমার রয়েছে। অপ্রতিসম কার্বন সম্বলিত কোন যৌগ ও এর দর্পণ প্রতিবিম্ব পরস্পর সমপাতিত না হলে এরূপ দুই ভিন্ন গঠনের যৌগ আলোক সক্রিয় হয়। তখন এরূপ দুই আলোক সক্রিয় সমাণুকে এনানসিওমার বা এনানসিওমর্ফ বলে। ফিশার অভিক্ষেপে আটটি ডি-অ্যালডোহেক্সোজ -এর রৈখিক রূপগুলি হলো:
এই ডি-সমাণুগুলির মধ্যে, ডি-আল্ট্রোজ ছাড়া বাকি সবগুলি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। এরমধ্যে আবার ডি-গ্লুকোজ, ডি-গ্যালাকটোজ এবং ডি-ম্যানোজ এই তিনটি অ্যালডোহেক্সোজ বেশি দেখা যায়। এল-সমাণুগুলি সাধারণত জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায় না। তবে ব্যাকটেরিয়াম বিউট্রিভব্রিও ফাইব্রিসলভেন এর স্ট্রেন থেকে এল-অ্যালট্রোজ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।[৬]
এই ক্রমে আঁকা হলে, ডি-অ্যালডোহেক্সোজের ফিশারের অনুমানগুলিকে 0 থেকে 7 পর্যন্ত ৩-সংখ্যার বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বা দ্বিমিক সংখ্যা পদ্ধতি দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। সেগুলি হলো ০০০, ০০১, ০১০, ০১১, ১০০, ১০১, ১১০, ১১১। বাইনারি পদ্ধতিতে ০ অথবা ১ কে বিট বলা হয়। যে তিনটি করে বিটের ক্রম দেখানো হয়েছে সেগুলি বাম থেকে ডানে যথাক্রমে কার্বন ৪, ৩, এবং ২-এ হাইড্রোক্সিলের অবস্থান নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে বিট-এর মান ০ হলে ডানদিকে এবং মান ১ হলে বাম দিকে হয়।
আটটি এল-অ্যালডোহেক্সোজ-এর ফিশার অভিক্ষেপগুলি সংশ্লিষ্ট ডি-সমাণুগুলির দর্পন প্রতিবিম্ব।
কিটোহেক্সোজ হলো একটি কিটোন মূলকযুক্ত হেক্সোজ।[১] [২] [৭] কিটোহেক্সোজের মধ্যে ২-কিটোহেক্সোজগুলির গুরুত্ব বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২-কিটোহেক্সোজ হলো ফ্রুক্টোজ।
২-কিটোহেক্সোজগুলি ছাড়া শুধুমাত্র ৩-কিটোহেক্সোজগুলি রয়েছে। তবে প্রকৃতিতে এদের অস্তিত্ব নেই। যদিও খুব শ্রমসাপেক্ষে একটি ৩-কিটোহেক্সোজ সংশ্লেষিত করা সম্ভব হয়েছে।
রৈখিক রূপের ২-কিটোহেক্সোজগুলির তিনটি কাইরাল কেন্দ্র রয়েছে অর্থাৎ আটটি (২৩ ) ভিন্ন স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা সম্ভব। সম্ভাব্য সমাণুতাগুলির আবার চার জোড়া এনানসিওমার রয়েছে।। চারটি ডি-সমাণু হলো:
সংশ্লিষ্ট গঠনগুলির ৩, ৪, এবং ৫ কার্বন অবস্থানের বিপরীতে হাইড্রোক্সিল মূলক রয়েছে। নীচে একটি বিকল্প শৈলীতে আটটি সমাণুর গঠন দেওয়া হয়েছে:
তাত্ত্বিকভাবে, কিটোহেক্সোজগুলির মধ্যে ৩-কিটোহেক্সোজ অন্তর্ভুক্ত। ৩-কিটোহেক্সোজ যৌগটির ৩ নম্বর কার্বনের অবস্থানে কার্বনিল মূলক রয়েছে যেমন H–(CHOH)2–C(=O)-(CHOH)3–H এই রৈখিক গঠনটি। তবে এই যৌগগুলি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় বলে এখনও জানা যায়নি। যৌগগুলি সংশ্লেষণ করাও কঠিন।[৫]
১৮৯৭ সালে ফ্রুক্টোজের সঙ্গে ক্ষারের বিক্রিয়ায় একটি কিটোহেক্সোজ তৈরি করা হয়। ক্ষার হিসাবে লেড(II) হাইড্রক্সাইড ব্যবহার করা হয়। উৎপন্ন পদার্থের নাম দেওয়া হয় গ্লুটোজ। এই যৌগটিকে গাঁজন যায় না। গ্লুটোজ যৌগটিকে সেই সময় ৩-কিটোহেক্সোজ বলে দাবি করা হয়।[১২] [১৩] তবে পরবর্তী গবেষণায় দেখা যায় যে পদার্থটি অন্যান্য বিভিন্ন যৌগের মিশ্রণ ছিল।[১৩] [১৪]
১৯৬১ সালে জর্জ ইউ. ইউয়েন এবং জেমস এম সুগিহার নামে দুই বিজ্ঞানী একটি জটিল পথের মাধ্যমে ৩-কেটোহেক্সোজ, জাইলো -৩-হেক্সুলোজ প্রথম সংশ্লেষণ করেছেন বলে একটি গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন।[৫]
হেক্সোজের বদ্ধ বা চক্রীয় রূপটি তৈরি হয় যখন কার্বনিল মূলক অন্য কার্বনের একটি হাইড্রক্সিল মূলকের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে দুটি কার্বনের মধ্যে একটি ইথার –O– বন্ধন তৈরি করে। এই আন্তঃআণবিক বিক্রিয়াটির ফলে একটি চক্রীয় অণু উৎপন্ন হয়। পাঁচ বা ততোধিক কার্বনসহ বেশিরভাগ মনোস্যাকারাইডের মতো, প্রতিটি অ্যালডোহেক্সোজ বা ২-কেটোহেক্সোজও এক বা একাধিক চক্রীয় গঠন (বদ্ধ-শৃঙ্খল) তৈরি করে।
যদি চক্রীয় গঠনে পাঁচটি কার্বন পরমাণু থাকে (মোট ছয়টি পরমাণু) তখন ঐ চক্রীয় গঠনকে পাইরানোজ বলা হয়। আবার যদি চক্রীয় গঠনে চারটি কার্বন পরমাণু থাকে (মোট পাঁচটি পরমাণু) তখন ঐ গঠনটিকে ফিউরানোজ বলা হয়।[৪] চক্রীয় গঠনের কার্বনের প্রচলিত সংখ্যাকরণ মুক্ত-শৃঙ্খল কার্বন যৌগের মতোই।
যদি শর্করাটি একটি অ্যালডোহেক্সোজ হয় এবং কার্বনিল মূলকের অবস্থান ১ নম্বর কার্বনে থাকে তবে বিক্রিয়াটি কার্বন ৪ বা কার্বন ৫-এর উপর থাকা হাইড্রোক্সিল মূলককে যুক্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে যথাক্রমে পাঁচ- বা ছয় পরমাণুবিশিষ্ট চক্রীয় গঠনযুক্ত একটি হেমিঅ্যাসিটাল যৌগ তৈরি হয়। আবার যদি শর্করাটি একটি ২-কিটোহেক্সোজ হয়, তবে এটি শুধুমাত্র কার্বন ৫ অবস্থানে থাকা হাইড্রক্সিল মূলককের সাথে একটি পাঁচ-পরমাণুবিশিষ্ট একটি হেমিকেটাল যৌগ তৈরি করে।
এই চক্রীয় গঠন কার্বক্সিল কার্বনকে একটি কাইরাল কেন্দ্রে পরিণত করে। এক্ষেত্রে, হাইড্রক্সিল মূলকের অবস্থানের উপর নির্ভর করে দুটি কনফিগারেশন তৈরি হয়। অতএব, রৈখিক গঠনে প্রতিটি হেক্সোজ দুটি স্বতন্ত্র চক্রীয় গঠন তৈরি করতে পারে। এই যৌগগুলির নামের আগে "α" এবং "β" দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
১৯২৬ সালে জানা যায় যে, স্ফটিকের কঠিন অবস্থায় হেক্সোজগুলি চক্রীয় রূপ ধারণ করে। "α" এবং "β" ফর্মগুলি, যেগুলি এনানসিওমার নয়, সাধারণত সেগুলি আলাদাভাবে স্ফটিক গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, ডি-গ্লুকোজ একটি α স্ফটিক গঠন করে যার আপেক্ষিক ঘূর্ণন +১১২° এবং গলনাঙ্ক ১৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সঙ্গে একটি β স্ফটিক যার আপেক্ষিক ঘূর্ণন +১৯° এবং গলনাঙ্ক ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।[৪]
রৈখিক গঠনটি স্ফটিক তৈরি করতে পারে না। এটি জলীয় দ্রবণে অল্প পরিমাণে বিদ্যমান থাকে, যেখানে এটি চক্রীয় গঠনের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখে।[৪] তবে রৈখিক গঠনটি চক্রীয় গঠনের সঙ্গে মধ্যবর্তী পর্যায় হিসাবে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
"α" এবং "β" ফর্মের যৌগগুলিকে উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করলে আপেক্ষিক ঘূর্ণনের মান পরিবর্তিত হয়ে মিউটাঘূর্ণন ধর্ম প্রকাশ করে।
যদিও সমস্ত হেক্সোজের গঠন একই রকম এবং এদের মধ্যে কিছু সাধারণ ধর্ম আছে তবুও প্রতিটি এনানসিওমার যুগলের নিজস্ব রসায়ন রয়েছে। ফ্রুক্টোজ যৌগটি জল, অ্যালকোহল এবং ইথারে দ্রবণীয়।[৯] প্রতিটি এনানসিওমার যুগলের সাধারণত ব্যাপকভাবে ভিন্ন জৈবিক ধর্ম থাকে।
২-কিটোহেক্সোজ একটি বিস্তৃত pH পরিসরে স্থিতিশীল তবে অ্যালডোহেক্সোসের তুলনায় সামান্য কম স্থিতিশীল।
জৈব রসায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যালডোহেক্সোজ হল ডি-গ্লুকোজ, যা অনেক জীবন্ত প্রাণীর বিপাকীয় কাজের প্রধান "জ্বালানি"।
২-কিটোহেক্সোজ সাইকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং ট্যাগাটোজ ডি-সমাণু হিসাবে প্রাকৃতিতে পাওয়া যায়। তবে সরবোজ প্রাকৃতিতে এল-সমাণু হিসাবে দেখা যায়।
ডি-সরবোজ সাধারণত অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।[১০] ডি-ট্যাগাটোজ হলো একটি বিরল প্রাকৃতিক কিটোহেক্সোজ যা খাদ্যে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।[১১] ডি-ফ্রুক্টোজ অনেক ফলের মিষ্টি স্বাদের জন্য দায়ী এবং এটি সাধারণ চিনি অর্থাৎ সুক্রোজের একটি বিল্ডিং ব্লক।
"হেক্সোজ" শব্দটি কখনও কখনও ডিঅক্সিঅ্যালডোহেক্সোজকেও অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়, যার এক বা একাধিক হাইড্রক্সিল (–OH) মূলক হাইড্রোজেন পরমাণু (–H) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এটিকে ইংরেজিতে প্যারেন্ট হেক্সোজ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কয়েকটি ডিঅক্সিহেক্সোজের উদাহরণ হল: