হো জামালো হল পাকিস্তানের সিন্ধি সংস্কৃতিতে বিশেষত সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধি ভাষার একপ্রকার লোকসঙ্গীত এবং সে সম্পর্কিত নৃত্য। এটি মূলত মধ্য উনিশ শতকের স্থানীয় লোক-নায়ক জামালো খোসো বালুচের সাথে সংশ্লিষ্ট। আধুনিক সময়ে, গানটি ১৯৪৭ সাল থেকে পুনরায় জনপ্রিয় হয়েছে এবং সিন্ধি ভাষায় আবিদা পারভিন ও উর্দু ভাষায় শাজিয়া খুশ্ক এটি পুনরায় রেকর্ড করেছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেখানে সিন্ধুর যুদ্ধ এবং লোককাহিনীর বিবরণ তুলে ধরা হয় সেখানে এই সঙ্গীত এবং নৃত্যটি কোন অনুষ্ঠানের শেষে পরিবেশিত হয়। উৎসব এবং উদ্যাপন উপলক্ষে এই নাচ করা হয়। প্রধান সংগীতশিল্পী জামালোর সাহসিকতার প্রশংসা করে এর চরণগুলো গাওয়া হয় এবং প্রতিটি শ্লোকের সাথে নৃত্যশিল্পীরা "হো জামালো!" বলে চিৎকারমূলক সুর তোলে এবং প্রধান গায়ককে ঘিরে সাধারণ নৃত্যের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে থাকে। গানটির শেষের দিকে গতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ ধরনের এই পরিবেশনাটিকে ট্রান্স-ইনডিউসিং বলা হয়।
জামালো শিদি সিন্ধু প্রদেশের সুক্কুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা তৎকালে ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির অধীনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোম্পানি শাসনের আওতায় ছিল এবং পরবর্তী কালে অধুনাতন পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। সম্ভবত ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা জন জ্যাকব তাকে সুক্কুরে ফাঁসিতে ঝুলানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ জারি করেছিলেন। এর এক বছর পরেই খুব দ্রুত জ্যাকব সিন্ধের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হন, তারপর পার্সিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। জামালো (যে প্রচলিত নামে তিনি পরিচিত) সুক্কুর সেতুর নিকটে একটি জেলে বন্দী ছিলেন, যেটি ইংরেজ সরকার কর্তৃক ট্রেনের জন্য নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু তা তখনো চালু করা হয় নি। সেই সময়েই সিন্ধু সরকার ঘোষণা করেছিল যে, কেউ যদি সেতুটি পেরিয়ে ট্রেন পরীক্ষা করে চালিয়ে যেতে পারে তবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। জামাল জ্যাকবকে একটি চিঠি পাঠিয়ে রেললাইন পেরুনোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই শর্তে যে যদি ইনি নিরাপদে পার হয়ে যান তবে তাঁকে জেল এবং কারাভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি নিরাপদে রেললাইন পেরিয়েছিলেন, ফলে শর্তমত তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন এবং সিন্ধের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর তাঁকে পুরস্কৃত করেছিল। তাঁর স্ত্রী তাঁর অসমসাহসিক কার্য সম্পর্কে "হো জামালো" গানটি রচনা করেছিলেন এবং এটি তখন থেকেই এই অঞ্চলে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। [১]