১ম শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্ম বলতে খ্রিস্টধর্মের গঠনমূলক ইতিহাসকে বোঝানো হয়, যা শুরু হয় যীশুর পরিচর্যা থেকে (আনু. ২৭-২৯ খ্রিস্টাব্দ) এবং বারোজন প্রেরিতের মৃত্যু পর্যন্ত (আনু. ১০০) এর সময়সীমা ধরা হয়। এ সময়কালকে অ্যাপোস্টোলিক যুগ বা প্রেরিতীয় যুগ হিসেবেও ধরা হয়। প্রারম্ভিক খ্রিস্টধর্ম যীশুর এস্ক্যাটোলজিকাল পরিচর্যা থেকে বিকশিত হয়। যীশুর উর্ধ্বগমণের পর, তার প্রথম দিকের অনুসারীরা ১ম শতাব্দীর দ্বিতীয় মন্দির কালের শেষের দিকে একটি এপোক্যালিপ্টিক মেসিয়ানিক ইহুদি সম্প্রদায় গঠন করে। প্রথম দিকে যীশুর পুনরুত্থানই পরকালের সূচনা এই বিশ্বাস করলেও, শীঘ্রই এটি "যীশুর প্রত্যাশিত দ্বিতীয় আগমন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সূচনা একই সময়কালে হবে" এতে পরিবর্তিত হয়।[১]
পল দ্য অ্যাপোস্টেল, একজন ফরীশী ইহুদি যিনি প্রথম দিককার ইহুদি খ্রিস্টানদের শাস্তি প্রদান করেছিলেন, তিনি আনু. ৩৩-৩৬ খ্রিস্টাব্দে ধর্মান্তরিত হন[২][৩][৪] এবং বিধর্মীদের মধ্যে ধর্মান্তরগ্রাহ শুরু করেন। পলের মতে, বিজাতীয় ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের ইহুদী হুকুম আহকাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। তার যুক্তিতে সকলেই যীশুর উপর বিশ্বাসের কারণে সঠিক পথে আছে।[৫][৬] এটিই ছিল প্রাথমিক খ্রিস্টধর্ম এবং ইহুদি ধর্মের ক্রমান্বয়ে বিভক্তির একটি অংশ। কারণ এর মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম একটি স্বতন্ত্র ধর্ম হয়ে ওঠে যার মধ্যে প্রধানত বিধর্মীদের আনুগত্য ছিল।[৫]
জেরুজালেমে একটি প্রাথমিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় ছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন জেমস দ্য জাস্ট, পিটার এবং জন।[৭] অ্যাক্টস ১১:২৬ অনুসারে, অ্যান্টিওকে যীশুর অনুসারীদের প্রথম খ্রিস্টান নামে অভিহিত করা হয়। প্রেরিত পিটার রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী রোমে শহীদ হন। প্রেরিতরা সুসমাচারের বার্তাকে ধ্রুপদী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে গিয়েছিলেন এবং খ্রিস্টধর্মের প্রাথমিক কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি প্রেরিতীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ মারা যাওয়া প্রেরিতের নাম ছিল জন (যোহন), আনু. ১০০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু।[৮]
প্রাচীন ইহুদীয় খ্রিস্টানরা নিজেদেরকে "পথ" হিসাবে পরিচয় দিতেন, সম্ভবত এটি ইশাইয়া ৪০:৩ নং অনুচ্ছেদ "প্রভুর পথ প্রস্তুত করুন" থেকে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ইহুদিরা তাদের ডাকতেন "নাসারা" বলে,অথচ কিছু ইহুদি-খ্রিস্টান সম্প্রদায় নিজেদেরকে "এবিওনাইটস" বলে পরিচয় দিতেন, যার অর্থ "দরিদ্র"। অ্যাক্টস ১১:২৬ এ রয়েছে, সর্বপ্রথম অ্যান্টিওক শহরে অ্যান্টিওকের অ-ইহুদি রোমান বাসিন্দারা যিশুর শিষ্যদের বোঝাতে "খ্রিস্টান" শব্দটি ব্যবহার করে, যার অর্থ "খ্রিস্টের অনুসারী"।[৯] আর "খ্রিস্টধর্ম" শব্দটির প্রাচীনতম নথিভুক্ত ব্যবহার হয়েছিল প্রায় ১০০ খ্রি সালে, অ্যান্টিওকের ইগনাশিয়াসের দ্বারা।
যীশুর প্রথম অনুসারীরা ইহুদি দ্বিতীয় উপাসনালয় রাজ্যের মধ্যে পরকালিক ইহুদি খ্রিস্টান সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত ছিল।[১০][১১][১২][১৩][১৪] প্রাথমিক খ্রিস্টান দলগুলি কট্টর ইহুদি ছিল, যেমন ইবিওনাইটস,[১০] এবং জেরুজালেমের প্রাথমিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়, যার নেতৃত্বে ছিলেন জেমস দ্য জাস্ট, যিশুর ভাই ।[১৩] খ্রিস্টধর্ম "রোমান ফিলিস্তিনে ইহুদি ধর্মের একটি সম্প্রদায় হিসাবে আবির্ভূত হয়"।[১৫] খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর সমন্বিত হেলেনিস্টিক বিশ্বে, যেখানে রোমান আইন এবং গ্রীক সংস্কৃতির আধিপত্য ছিল।[১৬] হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি সর্বত্র ইহুদিদের রীতিনীতি ও অনুশীলনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ইহুদি ধর্মে প্রবেশের ফলে ইহুদি প্রবাসীদের মধ্যে হেলেনিস্টিক ইহুদি ধর্মের জন্ম হয় যা হেলেনিজমের সংস্কৃতি এবং ভাষার মধ্যে একটি হিব্র্যাইক-ইহুদি ধর্মীয় ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে হেলেনিস্টিক ইহুদি ধর্ম টলেমাইক মিশরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোমানদের গ্রীস, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, যিহূদিয়া এবং মিশরের বিজয়ের পর এটি একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় লিসিটা হয়ে ওঠে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]