১৯৫২ বসন্তকালীন সুইস এভারেস্ট পর্বত অভিযান

এডওয়ার্ড উইস-ডুনান্টের নেতৃত্বে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তকালীন সুইস এভারেস্ট পর্বত অভিযান ছিল সুইসদের প্রথম এভারেস্ট পর্বত অভিযান।

কাঠমান্ডু থেকে নামচেবাজার

[সম্পাদনা]

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে মার্চ কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে নেপালী মালবাহকেরা কয়েক টন খাবার ও সাজ সরঞ্জাম নিয়ে |নামচেবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং |ইস্টারের আগের দিন পৌঁছয়। নেপালী মালবাহকেরা এখান থেকে ফিরে যায় এবং শোলোখুম্বু থেকে দশজন শেরপা দলে নেওয়া হয়। থায়াংবোচে বৌদ্ধ মঠে লামারা অভিযাত্রীদের সংবর্ধনা জানান।[]

থায়াংবোচে থেকে খুম্বু হিমবাহ

[সম্পাদনা]

অভিযাত্রীদল থায়াংবোচে থেকে যাত্রা শুরু করে তাওচেআমাডাবলাম শৃঙ্গদ্বয়কে দুই পাশে রেখে দুধকোশী নদী পেরিয়ে খুম্বু হিমবাহের উৎসমুখে পৌঁছন। এই হিমবাহের ১৬৫৭০ ফুট উচ্চতায় মূল শিবির স্থাপন করা হয়। এখান থেকে চল্লিশজন শেরপা বাদ দিয়ে বাকী শেরপারা ফিরে যান।[]

ওয়েস্টার্ন কুমে প্রবেশ

[সম্পাদনা]

অভিযাত্রীদল ওয়েস্টার্ন কুমের বরফের দেওয়ালের নিচে এক নম্বর শিবির স্থাপন করেন যার দায়িত্বে ছিলেন এডওয়ার্ড উইস-ডুনান্ট। দলটিকে দুই ভাগে ভাগ করে পালা করে দড়ি খাটানো, বরফ-সিঁড়ি বানানো ও বিকল্প সহজ রাস্তা খোঁজার কাজ শুরু হয়। একটু উঁচুতে দ্বিতীয় শিবির স্থাপন করা হয়। এরপর কুমের প্রবেশপথের ঠিক নিচে অবস্থিত এভারেস্ট থেকে নুপৎসে পর্যন্ত বিস্তৃত তুষারখাতকে অতিক্রম করার চেষ্টা শুরু হয়। দলের সদস্য অ্যাস্পারকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতে তুষারখাতের ৬০ ফুট নিচে তিনি অপর দেওয়ালে বরফ-কুঠার দিয়ে আটকে অপর পাড়ে উঠে আসেন। এরপরে ফাটলের দুই প্রান্তে একটি দড়ির সেতু বানিয়ে ওয়েস্টার্ন কুমে প্রবেশ করা হয়। ওয়েস্টার্ন কুম প্রবেশের জন্য এইভাবেই সর্বপ্রথম রাস্তা তৈরী হয়। এরপর প্রায় কুড়ি হাজার ফুট উচ্চতায় তৃতীয় শিবির স্থাপন করা হয়।[]

নিস্তব্ধ উপত্যকায় তিন সপ্তাহ

[সম্পাদনা]

ওয়েস্টার্ন কুমের মাঝখানে চতুর্থ শিবির স্থাপন করা হয়, যার বামদিকে এভারেস্ট, ডানদিকে নুপৎসে এবং সামনে লোৎসে। সুইসরা এই জায়গার নাম দেন ভ্যালি অব সাইলেন্স বা নিস্তব্ধ উপত্যকা। এখানে তিন সপ্তাহ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।[]

সাউথ কলে প্রবেশ

[সম্পাদনা]

২২,৬৪০ ফুট উচ্চতায় লোৎসের নিচে পঞ্চম শিবির স্থাপন করা হয়। এখান থেকে সাউথ কল অব্দি বরফে ঢাকা গিরিসঙ্কট ও তার পরবর্তী পাথরের দেওয়ালের পথকে সুইসরা নাম দেন জেনেভা স্পার। .[] এই রাস্তা ধরে বরফের ধাপ কেটে সিঁড়ি বানিয়ে ও দড়ি খাটিয়ে আরোহণের চেষ্টা শুরু হয় ও সাউথ কলের মাঝামাঝি দুরত্বে মালপত্র আনা হয়। এখান থেকে রেমন্ড ল্যাম্বার্ট, লিয়ঁ ফ্লোরি, রেনে আউবার্ট, তেনজিং নোরগে, পাশাং ফুটার, ফু থার্কে, দা নামগিয়াল, আজীবা, মিংগমা দোরজী এবং আং নরবু এগিয়ে যান। পথিমধ্যে আজীবা অসুস্থ এবং মিংগমা ও নরবু ক্লান্তি বোধ করায় নিচে ফিরে যান। ২৬শে মে সকাল দশটায় তারা সাউথ কল পৌঁছন ও ষষ্ঠ শিবির স্থাপন করেন। []

ব্যর্থ শীর্ষাভিযান

[সম্পাদনা]

সাউথ কল থেকে বাকি শেরপারা ক্লান্তিজনিত কারণে নেমে গেলে একদিনের খাবার, একটি তাঁবু ও চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সাউথ কল থেকে ল্যাম্বার্ট, ফ্লোরি, আউবার্ট, তেনজিং নোরগে শীর্ষের দিকে আরোহণ শুরু করেন। বরফের ঢাল পার হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব শৈলশিরা ধরে উঠে প্রায় সাড়ে সাতাশ হাজার ফুট উচ্চতায় শিবির স্থাপন করা হলে ফ্লোরিআউবার্ট নেমে যান। পরের দিন ল্যাম্বার্টতেনজিং ২৮,২৫০ ফুট উচ্চতা অব্দি পৌঁছে নেমে আসার সিদ্ধান্ত নেন।[]

দ্বিতীয় প্রচেষ্টা

[সম্পাদনা]

ল্যাম্বার্টতেনজিং ব্যর্থ হলে রেনি ডিটার্টের নেতৃত্বে চারজন সুইস ও পাঁচজন শেরপা সাউথ কল অব্দি আরোহণ করেন কিন্তু উচ্চতাজনিত অসুস্থতা এবং প্রচন্ড শীত ও ঝড়ের দাপটে তারাও ফিরে আসতে বাধ্য হন। []

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. স্বপ্নশিখরে তেনজিং - জেমস র‍্যামসে উলম্যান, অনুবাদ - সুকুমার চক্রবর্তী, প্রকাশক - সূর্যেন্দু ভট্টাচার্য্য, ২০এ রাধানাথ বোস লেন, কলকাতা ৭০০০০৬, ISBN 978-81-909878-1-3
  2. Bear Grylls - The Kid Who Climbed Everest (2004) - Page 226[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (Google Books link)]