১৯৬৩ সিরিয়ান অভ্যুত্থান ثورة الثامن من آذار | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: আরব স্নায়ু যুদ্ধ | |||||||
সামরিক কমিটির সদস্য সালিম হাতুম (বামে), মুহাম্মদ উমরান (মধ্যে) এবং সালাহ জাদিদ (ডানে) অভ্যুত্থানের সাফল্য উদযাপন করছেন | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
সিরিয়ান সরকার | বাথ পার্টির সিরিয়ান আঞ্চলিক শাখার সামরিক কমিটি | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
নাজিম আল-কুদসি, সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি খালিদ আল-আজম, সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী |
জাইদ আল-হারিরি মুহাম্মদ উমরান সালাহ জাদিদ হাফিজ আল-আসাদ রশিদ আল-কুতাইনি মুহাম্মদ আল-সুফি | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৮২০ জন নিহত[১] |
১৯৬৩ সিরিয়ান অভ্যুত্থান, যা সিরিয়ান সরকার কর্তৃক ৮ মার্চ বিপ্লব বলে সম্বোধিত হয়, (আরবি: ثورة الثامن من آذار), ছিল আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির সিরিয়ান আঞ্চলিক শাখার সামরিক কমিটি কর্তৃক সংঘটিত একটি সফল অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে কমিটি ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়। ইরাকি আঞ্চলিক শাখার সফল সামরিক অভ্যুত্থানে উৎসাহিত হয়ে এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়।
এই অভ্যুত্থান বাথ পার্টির সামরিক কমিটি পরিকল্পনা করেছিল। বেসামরিক নেতারা এতে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু দলের নেতা মিশেল আফলাক এই পরিকল্পনা জানতেন। মুহাম্মদ উমরান, সালাহ জাদিদ ও হাফিজ আল আসাদ ছিলেন পরিকল্পনা ও ক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তী সময়ে সামরিক কমিটির মূল নেতা। কমিটি নাসেরবাদি রশিদ আল-কুতাইনি ও মুহাম্মদ আল-সুফি এবং স্বাধীন মতাবলম্বী জাইদ আল-হারিরির সমর্থন আদায় করেছিল। অভ্যুত্থান মূলত ৭ মার্চের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় পরিকল্পনাকারীরা জড়ো হচ্ছে তা সরকার জেনে যাওয়ায় অভ্যুত্থান একদিন পিছিয়ে যায়।
বাথিজম |
---|
Part of a series on |
Politics portal |
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়া আরব রাজতন্ত্র হিসেবে আধুনিক সিরিয়া স্থাপিত হয়। প্রথম ফয়সাল ছিলেন এর বাদশাহ। এই নতুন রাষ্ট্র একটি আরব রাজতন্ত্র হওয়ার কথা ছিল। রাষ্ট্র কর্তৃক সিরিয়ান ছাড়াও আরব জাতীয়তাবাদ ও প্যান-ইসলামিক নীতি গ্রহণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা সিরিয়া প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিল। যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে গোপন সাইকস-পিকট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী সিরিয়া ও লেবাননে ফরাসি মেন্ডেট স্থাপিত হয়। ফলে এই অঞ্চল ফরাসি উপনিবেশে পরিণত হয়। অধিকাংশ সিরিয়ান এই নতুন রাষ্ট্রকে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দেখে।[২] এই পর্যায়ে সিরিয়ান পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য কয়েকটি আন্দোলনের মাধ্যমে চেষ্টা চালানো হয়। এদের মধ্যে সিরিয়ান সোশাল ন্যাশনালিস্ট পার্টি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এই দল সাম্যবাদ ও ইসলামবাদের সমর্থক হয়ে উঠে। অধিকাংশ সিরিয়ান নিজেদেরকে সিরিয়ান ভাবার বদলে আরব ভাবতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত।[৩]
ফরাসি মেন্ডেট বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে ছিল সামন্ততান্ত্রিক। এতে মুষ্টিমেয় আধা-উদার শাসকগোষ্ঠীর উপর নির্ভর করা হয়। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় ছিল। এই ব্যবস্থা নগর-গ্রাম জীবন প্রণালীর প্রতিফলনে সমাজে শ্রেণী সৃষ্টি করে। একটি হিসাব অনুযায়ী তিন হাজার পরিবার সিরিয়ার অর্ধেক ভূমির মালিক ছিল। ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সম্পদের মালিক ছিল মধ্যবিত্তরা। দুই-তৃতীয়াংশ কৃষক ছিল ভূমিহীন।[৪] কৃষি রাজস্বের পরিমাণ অনেকাংশ পরিবর্তিত হয়ে যায়। জনসংখ্যার ২% আয়ের ৫০% পেত। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও মধ্য ভূসম্পত্তির অধিকারী মধ্যবিত্তশ্রেণী জনসংখ্যার ১৮% হয়ে কৃষি আয়ের ২৫% লাভ করত। বাকি ৮০% জনগণ আয়ের বাকি অংশ লাভ করত।[৫] শ্রেণী পার্থক্য ও সামাজিক বিরোধিতার উপর ভিত্তি করে ভূস্বামী-কৃষক সম্পর্ক গড়ে উঠত। ফলে ভূস্বামীদের পতন ঘনীভূত হয়।[৬]
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মেন্ডেট সমাপ্ত হয় এবং সেই বছরের ১৭ এপ্রিল সিরিয়া স্বাধীন হয়।[৭] মেন্ডেট যুগে শাসনকারী অভিজাত গোষ্ঠীরা স্বাধীনতার পর শাসন বজায় রাখে এবং একই পন্থায় শাসন করে।[৮] ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে প্রথাগত অভিজাতদের পতন ত্বরান্বিত হয় এবং রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর উত্থান ঘটে। হুসনি আল-জাইম ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার প্রথম একনায়ক হন। কিন্তু ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক অফিসার আদিব শিশাকলি পর্দার আড়াল থেকে ক্ষমতা অর্জন করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তিনি আরেকটি সামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম করে। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রবেশের ফলে আগের মুষ্টিমেয় ব্যক্তির শাসন শেষ হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তবে ক্ষমতা হ্রাস পেলেও অভিজাতরা সম্পদের ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখে।[৯]
এই পরিস্থিতিতে বাথিজম নামক আদর্শ সামনে আসে। ১৯৪০ এর দশকে মিশেল আফলাক ও সালাহউদ্দিন আল-বিতার আরব বাথ মুভমেন্ট গঠন করেন। এছাড়াও জাকি আল-আরসুজি, ওয়াহিব আল-গানিম ও জালাল আল-সাইয়িদ বাথিস্ট আন্দোলনের প্রথমদিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আকরাম আল-হাওরানি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আরব সোশ্যালিস্ট পার্টি গঠন করেন। আরব সোশ্যালিস্ট পার্টি ও আরব বাথ পার্টির যুক্তকরণের মাধ্যমে বাথ পার্টি গঠিত হয়।[১০] ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে আরব বাথ পার্টি গঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন কংগ্রেসের ১৫০ জন প্রতিনিধির মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে আগত পেশাজীবী বা বুদ্ধিজীবী। ১৯৫০ এর দশক নাগাদ শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন আদায়ে পার্টি সফল হয়।[১১] তবে বাথ পার্টি সম্পূর্ণ মধ্যবিত্ত শ্রেণী নিয়ে গঠিত ছিল না। একেবারে শুরু থেকে সদস্য সংগ্রহ ও দলের নতুন সংগঠন তৈরীর জন্য দলের সদস্যদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হত।[১২] ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাথ পার্টি সিরিয়ায় প্রথমবার শ্রমিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ করে।[১৩] বাথ পার্টির শক্তিশালী থাকাকালীন সময়ে সমাজের সব স্তর থেকে সদস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্তের কারণে দলের ভেতর গোষ্ঠীতন্ত্র ও অন্যান্য অসুবিধা দেখা দেয়। দলের নেতাদের তাই গণতান্ত্রিক পন্থার দিকে ঝুকতে হয়।[১৩]
ক্ষমতাগ্রহণ প্রতিযোগীতামূলক নির্বাচন নাকি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হবে সে প্রশ্নে দলের মধ্যে দ্বিধা ছিল। নির্বাচনী ব্যবস্থায় দুর্নীতির কারণে দলের উদার ও গণতন্ত্রপন্থি নেতারাও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণের পক্ষে ছিলেন। ক্ষমতাগ্রহণের পূর্বে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকে জামাল আবদেল নাসেরের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যাপারে বাথ পার্টি ঝুকি নেয়।[১৪] ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকে মিশরের আধিপত্য ছিল। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ায় একটি সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক বিলুপ্ত হয়। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠা ও বিলুপ্তির ফলে এর সমর্থন প্রশ্নে বাথ পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আফলাক বাথ পার্টির একটি সম্মেলন আহ্বান করেন এবং পুনরায় দল প্রতিষ্ঠা করেন। দলের কিছু শাখা আদেশ প্যান-আরবিস্টদের প্রতি সহিংস এবং কট্টর সমাজবাদী হয়ে উঠে। ৮ মার্চের বিপ্লব সংঘটনকারী সামরিক কমিটি তাদের অধিকাংশ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিল।[১৫]
৮ মার্চের বিপ্লবকে একটি সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে দেখা হলেও এতে শুরু থেকে জাতীয় বিদ্রোহের অনেক উপাদান ছিল। অভ্যুত্থান মুষ্টিমেয় লোকের শাসক বিরোধীদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত, সামরিক অফিসার, প্রান্তিক সংখ্যালঘু এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষকের অংশ ছিল।[১৬] আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে দেখলে বলা যায় যে ফ্রান্সের তৈরী সীমানা ছিল কৃত্রিম এবং ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরায়েলের সাথে সিরিয়ার সংঘাত বিপ্লবে প্রভাব ফেলেছে। প্রথাগত অভিজাতরা স্বাধীনতার পর ক্ষমতা লাভ করেছিল। বাইরের শক্তি কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া সীমানা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আরব জাতীয়তাবাদ, প্যান-ইসলামিজম ও বৃহত্তর সিরিয়ানবাদ জাতীয় সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে। সংরামের গণচরিত্র ও কঠোর আদর্শবাদ সমস্যার কঠোর সমাধানের দিকে নিয়ে যায়।[১৭]
কৃষি ছিল অর্থনীতির সবচেয়ে বৃহৎ ক্ষেত্র। কৃষিক্ষেত্রে প্রথাগত অভিজাতদের আধিপত্যের কারণে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী পুজিপতি ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত ছিল। তারা প্রথাগত অভিজাতদের একচেটিয়া ক্ষমতার বিরোধিতা করে।[১৭] অধিকাংশ রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনী রক্ষণশীল ও অভিজাতপন্থি হলেও সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী কঠোর অবস্থানে যায় এবং অধিক ক্ষমতার আশা করে। অভিজাতরা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে সক্ষম না এমন বিশ্বাস তাদের মধ্যে জন্ম নেয়। সামরিক বাহিনীতে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেককে নেয়া হয়েছিল।[১৭]
সিরিয়া জাতিগত সংখ্যালঘুরা প্রায় উপেক্ষিত থাকত। জাতিগোষ্ঠীগুলো একেকটি নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলাউয়ি, দ্রুজ ও ইসমাইলিরা ছিল নিম্ন সামাজিক শ্রেণীর গোষ্ঠী। তারা আরব জাতীয়তাবাদের এসকল দিক গ্রহণ করে।[১৮] কৃষিজীবীদের সহায়তা ছাড়া সিরিয়ায় বাথপন্থি বিপ্লব সম্ভব ছিল না।[১৮] শুধুমাত্র মধ্যবিত্তদের নিয়ে অগ্রসর হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হত। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও কৃষিজীবীদের সম্মিলনে বিপ্লব সম্ভব হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের অসাম্য কৃষক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। বাথ পার্টির সিরিয়ান শাখা তরুণ কৃষকদেরকে আন্দোলনে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশকে কাজে লাগানো যায়।[১৮]
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের অধিকাংশ সময় বাথ পার্টির সিরিয়া শাখা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে। তারা আল-কিসওয়াহ ও কাতানা সামরিক ঘাঁটি দখল, আল-কিসওয়াহর ৭০ম আর্মর্ড বিগেড, হোমসের সামরিক একাডেমি ও দামেস্ক রেডিও স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনাকারীরা সবাই ছিলেন তরুণ বয়সের। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে এবং প্রথাগত অভিজাতরা কার্যকর রাজনৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।[১৯]
অভ্যুত্থান সফল হওয়ার জন্য সিরিয়ান সেনা অফিসারদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের ভাঙন, বিদ্রোহসহ অন্যান্য কারণে সামরিক অফিসাররাও বিশৃঙ্খল ও সরকারবিরোধী হয়ে পড়ে। এসময় অফিসাররা পাঁচটি ভাগে বিভক্ত ছিলেন।; এগুলো হল সাবেকি শাসন সমর্থন করা দামেস্ক অংশ, আকরাম আল-হাওরানির সমর্থক, নাসেরবাদি অংশ, বাথপন্থি অংশ এবং স্বাধীন অংশ।[২০] দামেস্ক অংশ নাজিম আল-কুদসির শাসনের সমর্থক ছিল। একারণে তারা ছিল সামরিক কমিটির প্রতিপক্ষ। প্যান-আরবিজমের বিপক্ষে অবস্থানের কারণে হাওরানির সমর্থকরাও তাদের প্রতিপক্ক বিবেচনা করে। বাথপন্থিদের সাথে নাসেরবাদিদের মিত্রতা সৃষ্টি হয়। এসময় এমনকি তারা জামাল আবদেল নাসের এবং ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের পুনপ্রতিষ্ঠায় সমর্থন দেয়।
নাসেরবাদিদের সাথে সামরিক কমিটির মিত্রতার ফলে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রশিদ আল-কুতাইনি ও হিমস ব্রিগেডের কমান্ডার মুহাম্মদ আল-সুফির মধ্যে গোপন যোগাযোগ স্থাপিত হয়।[২১] স্বাধীন মতাবলম্বী কর্নেল জিয়াদ আল-হারিরিকে নিজেদের সাথে যুক্ত করার জন্য সামরিক কমিটির তরফ থেকে জুনিয়র অফিসারদের একটি দলকে নির্দেশ দেয়া হয়। এই দল কাজে সফল হয় এবং তারা আল-হারিরিকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা যদি সফল হয় তবে তিনি সেনাপ্রধান হতে পারবেন এবং ব্যর্থ হলে তিনি তাদের ত্যাগ করতে পারবেন।[২২] সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী খালিদ আল-আজম তার পদাবনতির পরিকল্পনা করছিলেন বলে আল-হারিরি কমিটিকে সমর্থন দেন।[২২]
অভ্যুত্থান পরিকল্পনার কারণে বেসামরিক বাথপন্থিরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। দলকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে মূলত সেনাবাহিনির সাথে মিত্রতা করা হয়েছিল। মিশেল আফলাকের নেতৃত্বাধীন বেসামরিক অংশকে সামরিক কমিটি সুবিধাজনক হিসেবে দেখত না। ক্ষমতা দখল ও ধরে রাখার জন্য সামরিক কমিটি ও আফলাক উভয়ের একে অন্যকে প্রয়োজন ছিল। আফলাককে ছাড়া সমর্থন পাওয়া সম্ভব ছিল না। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে বাথ পার্টির ৫ম জাতীয় সম্মেলনের সময় দলের পুনপ্রতিষ্ঠা এবং আফলাককে জাতীয় কমান্ডের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মুহাম্মদ উমরান ছিলেন সামরিক কমিটির একজন প্রধান নেতা। ৫ম জাতীয় সম্মেলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। আফলাককে তিনি সামরিক কমিটির উদ্দেশ্য অবিহিত করেছিলেন। আফলাক অভ্যুত্থানের ব্যাপারে জানলেও অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার ভাগাভাগি কীভাবে হবে সে বিষয়ে আফলাক ও কমিটির মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।[২৩]
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি ইরাকি শাখা আলি সালিহ আল-সাদির নেতৃত্বে আবদুল করিম কাসেমকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। ইরাকি শাখা ক্ষমতা দখলের জন্য সামরিক অফিসার ছাড়াও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশকে ব্যবহার করেছিল।[২৩] কাসেমের পতনের ফলে আরব রাজনীতির চালচিত্র পাল্টে যায়। ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের সময় থেকে নাসেরবাদিরা আরব জাতীয়তাবাদি আন্দোলনে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। কিন্তু ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর বাথ পার্টি একটি শক্তি হিসেবে উঠে আসে। তবে ইরাকি আঞ্চলিক শাখার অনুরূপ সিরিয়ান আঞ্চলিক শাখার ব্যাপক জনসমর্থন বা মধ্যবিত্ত ভিত্তিক উল্লেখযোগ্য সমর্থন ছিল না। দলের সমর্থন কম হওয়ার কারণে আফলাক পরিকল্পনাদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারা এই ধারণা গ্রহণে ব্যর্থ হয় এবং ৭ মার্চ অভ্যুত্থান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিন সামরিক গোয়েন্দারা তাদের সমবেত হওয়ার স্থানে তল্লাশি চালায়। ৮ মার্চ পর্যন্ত অভ্যুত্থান স্থগিতের পরিকল্পনার কথা অন্যন্য ইউনিটগুলোকে জানানোর জন্য আসাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়।[২৪]
৭-৮ মার্চ রাতে পরিকল্পনার সাথে জড়িত ট্যাংক ও ইউনিটগুলো দামেস্কের রাস্তায় বেরিয়ে আসে। আল-হারিরি ইসরায়েল-সিরিয়া সীমান্তের দিক থেকে একটি ব্রিগেডকে নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে বাথপন্থিরা আস-সুওয়াইদাতে অবস্থানরত দ্বিতীয় ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণ পায়। ৭০ম আর্মর্ড ব্রিগেডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল করিম অভ্যুত্থানকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করার পর উমরান ব্রিগেডের কমান্ড গ্রহণ করেন। দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কাতানায় থাকা তুলনামূলক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিট হস্তক্ষেপ করেনি। সম্ভবত উয়িদাদ বশির দামেস্ক অঞ্চলের যোগাযোগের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ফলে এমন হয়।[২৪] আল-কিসওয়াহর বাহিনীকে পরাজিত ও কাতানার বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করার পর আল-হারিরির বাহিনী দামেস্কের দিয়ে অগ্রসর হয় এবং শহরের সড়ক অবরোধ করে। একই সময় কেন্দ্রীয় ডাকঘরের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখল করা হয়।[২৫] দলের অফিসার সালিম হাতুম রেডিও স্টেশন দখল করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর লড়াই ছাড়াই দখল করা সম্ভব হয়। কমান্ডার-ইন-চীফ জাহর আল-দীন গ্রেপ্তার হন। আল-কুদসি ও আল-হাওরানি উভয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। সালাহ জাদিদ সকালে সাইকেলে করে শহরে আসেন এবং অফিসার্স এফেয়ার্সের ব্যুরো দখল করেন। পরে এটি তার ব্যক্তিগত কার্যালয় হয়।[২৫]
আসাদ একটি ক্ষুদ্র দলের নেতৃত্ব দিয়ে দামেস্ক থেকে উত্তরপূর্বে আল-দুমাইর বিমানঘাটি দখল করতে যান। বিদ্রোহীদের অবস্থানের উপর বোমা হামলার জন্য এই ঘাটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বিমান হামলা রোধের জন্য ভোর হওয়ার আগেই আল-হারিরির ব্রিগেডের একটি কোম্পানিকে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ৭০ম আর্মর্ড ব্রিগেড আত্মসমর্পণ করতে দেরী করায় আসাদের বাহিনীও দেরি করতে বাধ্য হয়। আসাদ যখন ঘাটির উপকন্ঠে পৌছান তখন সকাল হয়ে গিয়েছিল। আত্মসমর্পণ না করলে গোলা বর্ষণ শুরু হবে এই মর্মে আসাদ ঘাটির কমান্ডারদের বার্তা পাঠান। আসাদের অভিমত অনুযায়ী তারা লড়াইয়ে জয়ী হতে সক্ষম ছিল কিন্ত এরপরও আত্মসমর্পণ করে।[২৫]
সেদিন সকালে অভ্যুত্থানকারীরা সাফল্য উদযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে সমবেত হন।[২৫] অভ্যুত্থান মোটামুটি রক্তপাতহীন ছিল বলা যায়। সাধারণ জনগণও অভ্যুত্থান মেনে নেয়। দ্রুজ বংশোদ্ভূত সাবির ফালহাওত অভ্যুত্থানকারীদের প্রথম ঘোষণা রচনা ও পাঠ করেছিলেন। তাকে পরবর্তীতে বিপ্লবের কবি অভিহিত করা হয়েছিল। নবম ঘোষণায় সামরিক কমিটির পাঁচজন সদস্যকে সামরিক বাহিনীতে পুনস্থাপন করে। নবগঠিত সরকারের উপরের দিকের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন উমরান, জাদিদ ও আসাদ।[২৬] ক্ষমতাগ্রহণের সময় ৮২০ জন নিহত হয় বলে অভিমত রয়েছে। পরে আরো ২০ জন মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত হয়েছিল।[১]
অভ্যুত্থানের পর সর্বপ্রথম ২০ সদস্যের জাতীয় বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল গঠিত হয়। এতে ১২জন বাথপন্থি এবং ৮জন নাসেরবাদি ও স্বাধীন সদস্য ছিলেন। ৯ মার্চ কাউন্সিল বাথ পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সালাহউদ্দিন আল-বিতারকে সরকার গঠন ও কাউন্সিলের নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। পরে ছয়জন বেসামরিক ব্যক্তি কাউন্সিলের সদস্যপদ পান। এদের মধ্যে ছিলেন বাথিস্ট আফলাক, আল-বিতার ও মনসুর আল-আতরাশ এবং আরো তিনজন নাসেরবাদি। তবে এই পদক্ষেপ ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পারেনি। অফিসাররা মূলত দেশ পরিচালনা করতেন। সামরিক কমিটির সদস্যরা শুরু থেকে কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যদের অজ্ঞাতে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ করতেন। বেসামরিক নেতারা একথা জানতে পারার পর আল-আতরাশ বলেছিলেন: "এই ভদ্রলোকেরা কেন কথা বলেন না? আমি কি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো আমাদের জানানোর জন্য লিয়াজো অফিসার নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দেব?"[২৬] এরপর থেকে উমরান বেসামরিক নেতাদেরকে কমিটির সদস্যদের পরিকল্পনার আবছা ধারণা দিতে থাকেন।[২৬]
শুরুতে সামরিক কমিটিকে ভেঙে ফেলতে পারে এমন কোনো মতবিরোধ ছিল না। এসময় সদস্যরা জাতির ভবিষ্যত নিয়ে নিজেদের লক্ষ্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। ৯ মার্চ কাউন্সিল লুয়াই আল-আতাসিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করে কমান্ডার-ইন-চীফ নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া তাকে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করায় কার্যত তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হন। হারিরি চীফ অফ স্টাফ নিযুক্ত হন। আতাসি ও হারিরির শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও কাউন্সিলকে হুমকিতে ফেলতে পারার মত ক্ষমতা তাদের ছিল না। নাসেরবাদি অফিসারদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়। মুহাম্মদ আল-সুফি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং রশিদ আল-কুতাইনি ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ হন। সামরিক কমিটিতে আরো পাঁচজন নতুন সদস্য যোগ দিয়েছিলেন।[note ১] তারা ক্ষমতায় বাথিস্টদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেন। কাউন্সিলের অধিবেশনের আগে কমিটি তাদের রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতার মূল চালক হয়ে উঠেন।[২৭]
উমরানকে প্রথমে হোমসের ৫ম ব্রিগেডের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে জুন মাসে তিনি ৭০ম আর্মর্ড ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে উন্নীত হন। অফিসার্স এফেয়ার্স ব্যুরোর প্রধান হিসেবে জাদিদ তার বন্ধুদেরকে উচ্চপদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তার প্রতিপক্ষদের সরিয়ে দেন এবং বেশ কয়েকজন বাথিস্টকে উচ্চপদে নিয়োগ দেন। সামরিক কমিটির অন্যতম নতুন সদস্য আহমাদ সুওয়াইদানি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এবং মাজয়াদ হুনাইদি সামরিক পুলিশের প্রধান হন। হোমসের সামরিক একাডেমি বাথপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। আসাদের ভাই রিফাত আল-আসাদসহ কয়েকশত বাথপন্থিকে কমান্ড প্রদানের পূর্বে সামরিক শিক্ষার উপর স্বল্পকালীন কোর্স করানো হয়।[২৮] আসাদ কার্যত সিরিয়ান বিমান বাহিনীর প্রধানে পরিণত হন। সামরিক কমিটির সদস্যরা নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কম বয়সী হওয়ায় কমিটি আমিন আল-হাফিজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়।[২৯]
উত্তর সিরিয়া ও দামেস্কে নাসেরের পক্ষে সমাবেশ, ইউনিয়নপন্থি বাথিস্ট নেতা যেমন জামাল আল-আতাসির মত নাসেরবাদি ও আরব জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের নেতাদের চাপ, সিরিয়ায় বাথিস্টদের জনপ্রিয়তার অভাব - এসকল ঘটনা মিশর ও ইরাকের সরকারের সাথে নতুন সরকারের একীভূতকরণের দিকে ধাবিত হয়। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের ইউনিয়নপন্থিরা ইউনিয়নবিরোধীদেরকে উৎখাত করে। ১৭ এপ্রিল নাসেরকে এর রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে রেখে তিন রাষ্ট্রকে ফেডারেল ইউনিয়ন হিসেবে যুক্ত করার ব্যাপারে একটি সমঝোতা হয়।[৩০][৩১]
তবে ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মের মধ্যে বাথপন্থিদের দ্বারা প্রভাবিত সামরিক কমিটি সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে। উচ্চপর্যায়ের সামরিক পদ থেকে ৫০ জনের বেশি নাসেরবাদি অফিসারকে অপসারণ করার ফলে মিশর রেডিওতে বাথকে দোষারোপ করে প্রচারণা চালায়। আলেপ্পো, দামেস্ক, হামা ও দেশের অন্যান্য স্থানে ইউনিয়নপন্থি দাঙ্গা সংঘটিত হয়। অপসারণের ফলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আল-সুফি, ডেপুটি চীফ-অফ-স্টাফ আল-কুতাইনি ও মন্ত্রিসভার আরো চারজন নাসেরবাদি সদস্যসহ নাসেরবাদিরা প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগ করেন।[৩২][note ২]
পরবর্তীতে ১৯ জুন চীফ-অফ-স্টাফ আল-হারিরি প্রধানমন্ত্রী আল-বিতার, আফলাক ও শিক্ষামন্ত্রী সামি দুরুবিকে নিয়ে আলজেরিয়ায় একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।[৩৫] আল-হারিরি চলে যাওয়ার পর কমিটি আল-হারিরির কমান্ডের প্রায় ৩০জন উচ্চপর্যায়ের অফিসারকে অপসারণের সুযোগ ব্যবহার করে। তাদের অনেকেই রাজনৈতিক দিক থেকে স্বাধীন মতাবলম্বী ছিলেন।[৩৬][৩৭] আল-হারিরিকে যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ান দূতাবাসে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট ধরার নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে তিনি দূতাবাসের সামরিক এটাশে নিযুক্ত হন। তবে কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে ২৩ জুন তিনি বৈরুত হয়ে সিরিয়ায় ফিরে আসেন।[৩৮] দেশে ফেরার পর ব্যর্থ হয়ে ৮ জুলাই তিনি ফ্রান্সে স্বেচ্ছা নির্বাসনের উদ্দেশ্যে সিরিয়া ত্যাগ করেন। আল-বিতারের অসন্তোষের কারণে মূলত আল-হারিরি পদচ্যুত হয়েছিলেন। আল-বিতার তাকে তার সরকারের উপর সামরিক কমিটির প্রভাবের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সামরিক প্রতিপক্ষ বিবেচনা করতেন।[৩৬]
এই পর্যায়েও নাসেরবাদিরা সামরিক ক্ষেত্রে তুলনামূলক শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছিল। ১৮ জুলাই জাসিম আলওয়ানের নেতৃত্বে ও মিশরীয় গোয়েন্দাদের সহায়তায় তারা নতুন সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালান।[৩৯][৪০] সেনা সদরদপ্তর ও প্রচারকেন্দ্রে হামলা চালানো হয় এবং অভ্যুত্থানে সংঘটিত লড়াইয়ে কয়েকশত মানুষ মারা যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তিও ছিল।[৩৯] অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয়। এতে অংশগ্রহণকারী ২৭জন অফিসার গ্রেপ্তার হন। তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সিরিয়ায় ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের তেমন প্রচলন ছিল না। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত অভ্যুত্থানকারীদের বহিষ্কার, কারাবন্দী বা বিদেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব দেয়া হত।[৪০] রাষ্ট্রপতি লুয়াই আল-আতাসি মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে তার অসম্মতির কারণে পদত্যাগ করেন।[৪১] আলওয়ান ও তার প্রধান সহকর্মী রাইফ আল-মারি ও মুহাম্মদ নাবহান কিছু সময়ের জন্য পালিয়ে থাকতে পারলেও শেষপর্যন্ত সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হন। বিচারে তারা দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৪২] নাসের ও ইরাকের রাষ্ট্রপতি আবদুস সালাম আরিফের তদবিরের ফলে তাদেরকে একবছর পর মুক্তি দিয়ে বহিষ্কার করা হয়।[৪৩][৪৪]
আলওয়ানের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার ফলে সিরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে নাসেরবাদিদের প্রভাব শেষ হয়ে যায়। সামরিক কমিটি এরপর দেশের ক্ষমতাকেন্দ্রের প্রধান চালক হয়ে উঠে।[৪০] মিশরের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে নাসের তখনও সিরিয়ার সাধারণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাথপন্থিদের ঘাতক ও ফ্যাসিবাদি বলে সমালোচনা করেন।[৩৯] তিনি তাদেরকে ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক শক্তি বলে অভিহিত করেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে দলের কঠোর অবস্থান এবং নেতৃত্বে অধিক সংখ্যক অসুন্নিদের উপস্থিতির কারণে তাদের প্রতি এই অভিযোগ করা হয়।[৪১] নাসের ১৭ এপ্রিলের ইউনিয়ন সমঝোতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।[৩৯][৪১]