বাংলাদেশে বামপন্থী বিদ্রোহ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() সিপাহী ও জনতার বিপ্লবের পর জনগণের সঙ্গে উল্লাসরত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সিপাহীরা, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
![]() সমর্থন: ![]() |
সমাজতান্ত্রিক বিদ্রোহী মাওবাদী বিদ্রোহী | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
![]() ![]() ![]() ![]() |
![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
![]() ![]() ![]() ![]() |
![]() ![]() ![]() ![]() | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৩,০০০ আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত |
২,০০০ জাসদ কর্মী নিহত (নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ) অন্তত ১ টি মৃত্যু | ||||||
মোট: কমপক্ষে ৫,১৭৩ জন নিহত[২] |
১৯৭২–১৯৭৫ বাংলাদেশে বামপন্থী বিদ্রোহ বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কে বোঝায় যখন বামপন্থী বিদ্রোহী বিশেষত গণবাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।[১][৩][৪] সরকার জাতীয় রক্ষী বাহিনী গঠনের মাধ্যমে এতে সাড়া দেয়, যা সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করে।[১] এই বাহিনী রাজনৈতিক হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগে জড়িত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে[২][৫][৬] ডেথ স্কোয়াডদের দ্বারা গুলি চালানো,[৭] জোরপূর্বক গুম[৮] এবং ধর্ষণ ইত্যাদি বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডও জড়িত ছিল।[২] এই বিদ্রোহটি শেখ মুজিবের পতনের অন্যতম একটি কারণ ছিল।
১৯৭২ সালে, সিরাজুল আলম খান, এম এ জলিল, আ. স. ম. আবদুর রব এবং শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বিভক্ত হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। এর সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী, কর্নেল আবু তাহের এবং হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র এবং একটি মার্কসবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে।[৯]
অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছেন যে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যার সংখ্যা ২০০০ জনের বেশি ছিল। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্যও ছিলেন এবং অনেক হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগের অন্তর্দলীয় কোন্দলের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।[১০] গণবাহিনী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অসংখ্য সদস্যকেও হত্যা করেছিল।[৩]
অন্যদিকে, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সিরাজ সিকদার এবং আব্দুল হকের মতো মাওবাদীরা সরকার ও জনগণকে আক্রমণ করতে শুরু করে যাদেরকে তারা "শ্রেণি শত্রু" বলে মনে করত।[১১][১২]
সরকার জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করে সাড়া দেয়। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস দাবি করেন যে তিন বছরের মধ্যে, বেশিরভাগ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্যদের মৃত্যুর সংখ্যা ৩০,০০০ অতিক্রম করেছিল, যাদের সবাই জাতীয় রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।[১০]
রাষ্ট্রের কার্যত শাসক হওয়ার পর জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে সৈনিকদের বিদ্রোহের ফলে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল তা দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন করেন, আবু তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং দলের অন্যান্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[১২]
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে বিদ্রোহের সময় জাতীয় রক্ষীবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা, স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতনের প্রচলন ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।[৫]