ইউটিসি সময় | ২০১১-০৯-১৮ ১২:৪০:৫১ |
---|---|
আইএসসি ইভেন্ট | ১৭২৩৮৮৪৬ |
ইউএসজিএস-এএনএসএস | কমক্যাট |
স্থানীয় তারিখ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ |
স্থানীয় সময় | ১৮:১০ IST ১৮:২৫ NPT ১৮:৪০ BTT ২০:৪০ CST |
স্থায়িত্ব | ৩০-৪০ সেকেন্ড |
মাত্রা | ṃ |
গভীরতা | ১৯.৭ কি.মি (১২.১ এম আই) |
ভূকম্পন বিন্দু | তাপলেজুং, নেপাল ২৭°৪৩′২৩″ উত্তর ৮৮°০৩′৫০″ পূর্ব / ২৭.৭২৩° উত্তর ৮৮.০৬৪° পূর্ব |
ধরন | অন্তর্দেশীয় পাত বা ইন্ট্রাপ্লেট[১] |
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা | ভারত বাংলাদেশ নেপাল ভুটান চীন |
সর্বোচ্চ তীব্রতা | VII (অত্যন্ত শক্তিশালী )[২] |
ভূমিধ্বস | হয়েছিল |
আঘাতপরবর্তী | হয়েছিল |
হতাহত | কমপক্ষে ১১১ জন নিহত হন |
২০১১ সিকিম ভূমিকম্প (যা ২০১১ হিমালয় ভূকম্প নামেও পরিচিত) রবিবার ১৮ ই সেপ্টেম্বর ভারতীয় স্থানীয় সময় অনুযায়ী সন্ধ্যে ৬ টা ১০ মিনিটে ৬.৯ (Mw) তীব্রতাসহ নেপাল সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চল ও ভারতের সিকিম রাজ্যে অনুভুত হয় যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা সংরক্ষণ অঞ্চল৷[৩] ভূমিকম্পের প্রভাব উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ তিব্বত জুড়ে অনুভূত হয়েছিল।এই ভূ-প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কমপক্ষে ১১১ জন নিহত হওয়ার কথা জানা যায়৷[৪] সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর পাওয়া যায় সিকিম থেকে এবং পূর্ব সিকিমের সিংতাম জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷[৫] সিকিমের প্রধান শহর গ্যাংটক্ -এর অনেক বহুতল ভেঙে পরে৷[৬] নেপালে সর্বমোট ৬ জন নিহত হওয়ার কথা জানা যায় যার মধ্যে তিনজন কাঠমান্ডুর ব্রিটিশ এমব্যাসির ভেঙে পড়া দেওয়ালে পিষ্ট হয়ে মারা যান৷[৭] বাংলাদেশ, ভুটান এবং তিব্বত জুড়ে প্রাণহানি, ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি ও সম্পত্তি নাশের কথা জানা গেছে; উত্তরাঞ্চলেও সাতজনের প্রাণহানির কথা জানা যায়।
সিকিম ভূমিকম্পের কয়েকদিন আগেই হরিয়ানার সোনিপৎ জেলায় ৪.২ (Mw) মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে যার কম্পন নতুন দিল্লিতেও অনুভূত হয়েছিল৷[৮] ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে বেশ কয়েকটি ভূকম্পন অনুভূত যার মধ্যে সিকিম ভূমিকম্প চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে৷[৯]
এই ভূমিকম্পের ঠিক এক বছর পরে, ১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০১২ সন্ধ্যা :৫:৫৫ -এ সিকিমে ৪.১ (Mw) মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, এক বছর আগেকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি লোকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।[১][১০][১১][১২]
রিখটার স্কেলে ৬.৯ (Mw) তীব্রতার এই ভূমিকম্পটি ১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ভারতীয় সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা বেজে ১০ মিনিটে অনুভূত হয়৷ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক্ -এর ৬৮ কি.মি উত্তর-পূর্বে৷ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৯.৭ কি.মি (১২.২ এম আই) গভীরতায় ভূমিকম্পের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়৷[৩] কাকতালীয় ভাবে এইস্থানেই তখন ভূপৃষ্ঠের গভীরে ভারতীয় মহাদেশীয় পাত(টেক্টোনিক প্লেট) এবং ইউরেশীয় পাতের চ্যুতিরেখা অবস্থান করছিল৷ এই অঞ্চলে সাধারণত দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে প্রায়শই মৃদু থেকে তীব্র কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং এই প্রক্রিয়াজনিত ভূকম্পন ইন্টার-প্লেট গোষ্ঠীভুক্ত, কিন্তু প্রাথমিক তত্ব যাচাই করে দেখা যায় যে সিকিম ভূকম্পন আসলে ইউরেশীয় পাতের স্ট্রাইক স্লিপ ফল্টিং অর্থাৎ মহাদেশীয় পাতের অভ্যন্তরে কোনো দুর্বল স্থান, চ্যুতি বা ফাঁক থাকার কারণে উৎপন্ন হয়েছে যা অনেকটা ইন্ট্রা-প্লেট প্রক্রিয়ার অনুরূপ৷ এই কারণবশত ২০১১-এর সিকিম ভূমিকম্প কে ইন্ট্রা-প্লেট গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়েছে৷ প্রাথমিক বিশ্লেষণ আরো জটিল উৎসের দিকে ইঙ্গিত করেছে, বলা হয়েছে যে অনুভূত ভূকম্পন ভূপৃষ্ঠের একই কেন্দ্রীয় গভীরতায় দুটি ভিন্ন সময়ে ঘটিত পৃথক পৃথক ঘটনার ফলস্বরূপ হতে পারে।
ভূপৃষ্ঠের অগভীরে কম্পন উৎপন্ন হওয়ার ফলে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দুর নিকটবর্তী ও পার্শবর্তী অঞ্চলে তীব্র থেকে তীব্রতর কম্পন অনুভূত হয় এবং এই কম্পন ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড অবধি স্থায়ী হয়৷[১৩] গ্যাংটকের পশ্চিম অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়, এছাড়াও সিকিমের মঙ্গন ও তার আশেপাশের অঞ্চল থেকে শুরু করে সুদূর দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি জেলা অবধি ভূমিকম্পের শক্তিশালী তীব্র কম্পন ছড়িয়ে পরে৷ কেন্দ্রস্থল থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত স্থান, যেমন বিহারের রাজধানী শহর পাটনা, বিহার শরীফ[২] ও পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র ভূমিকম্পের তীব্র থেকে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়৷নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীনসহ সংলগ্ন ৫ টি দেশে এই ভূমিকম্পের প্রভাব পরে৷এছাড়াও অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও দিল্লিসহ ভারতবর্ষের বিস্তৃত এলাকা এই ভূমিকম্পে প্রভাবিত হয়৷[১৪] তিব্বতের সিগ্যাটসে ও লাসাতেও এই ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছিল৷[১৫]
সিকিমে মূল ভূমিকম্পের কেবলমাত্র ৩০ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে, ৫.৭, ৫.১ এবং ৪.৮ (Mw) তীব্রতার পরপর তিনটি আফটারশকস বা ভূকম্প পরবর্তী অপেক্ষাকৃত মৃদু কম্পন অনুভূত হয়৷[১৬] নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতেও দুবার ৪.৮ (Mw) মাত্রার আফটারশক অনুভূত হয়৷সৌভাগ্যক্রমে এই আফ্টারশকগুলিতে কোথাও কোনোপ্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷ গ্যাংটক শহর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সারারাত ধরে প্রায় ২০ বার ভূকম্প পরবর্তী ঝটকা অনুভূত হয় যা ওই অঞ্চলে আতঙ্কের সৃষ্টি করে৷[১৭] সিকিম ভূমিকম্পের পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর সুদূর দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ৩.৯ (Mw)মাত্রার মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।[১৮] ভারতীয় সময় অনুযায়ী সকাল ৬:৩০ মিনিটে মহারাষ্ট্রের লাট্টুর, ওসমানবাদ ও সোলাপুর জেলাতে এই মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই জেলাগুলি পূর্বেই ১৯৯৩ সালের লাট্টুর ভূকম্পনের দ্বারা প্রভাবিত ছিল।[১৯] অবশ্য এই মৃদু কম্পনের প্রভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।[২০]
Country | Deaths |
---|---|
![]() |
৯৭ |
![]() |
৭ |
![]() |
৬ |
![]() |
১ |
![]() |
০ |
সর্বমোট | ১১১ |
সিকিম-নেপাল সীমান্তে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু আর এই অঞ্চলের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য ভবন গঠনগত দিক দিয়ে কোনো জোরালো ভূমিকম্পের কাছে খুবই দুর্বল৷[২] এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত অধিবাসীরা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে সিকিমের বহু অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।ভূমিকম্পের তীব্র কম্পনের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বহু জায়গায় ধস নামে ও ঘরবাড়ি ভেঙে যায়।[১৩] কমপক্ষে ১১১ জনের প্রাণহানি হয় এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।যখন এই ভূমিকম্প আঘাত হানে তখন এই অঞ্চলে বর্ষা চলছিল। ভারী বৃষ্টি ও তার ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন ভূমিধ্বস উদ্ধারকার্যে বিপুল বাধার সৃষ্টি করে।[২১]
এই ভূমিকম্পের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জেলা। উত্তর ভারতে ৭৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়।[১৭] শুধুমাত্র সিকিমেই ৬০ জনের প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়।[২২] বিহারে ৭ জন এবং পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ৬ জন নিহত হওয়ার কথা জানা যায়। [২৩] পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির বিদ্যুৎ কেন্দ্রও এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এর ফলে সিকিম ও তার পার্শবর্তী সংলগ্ন অঞ্চল যেমন পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পঙ, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[২৪] সিকিমের জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়।জাতীয় সড়ক ৩১,যা সিকিম অঞ্চলের প্রধান সড়ক এই ভূমিকম্পের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[২১] তিস্তা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ১০ শ্রমিক এই দুর্ঘটনার শিকার হন।[২৫]
প্রাণহানি ছাড়াও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ধরলে প্রায় ₹ ১,০০০ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.২২ বিলিয়ন) ডলারের সম্পত্তিনাশের আশঙ্কা করা হয়েছে যার আসল পরিমাপ এখনো জানা সম্ভব হয়নি।[২৬]
উত্তর সিকিমের পেগ্যং -এ ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের দুটি ভবন ভেঙে পরে।[২৭] গ্যাংটকে অনেক প্রশাসনিক ভবন ও হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[২৮] তীব্র ভূকম্পন লিংসে, সাক্যং, পেনটং, বে আর থলং.-এই গ্রামগুলিকে ধস্ত করে ফেলে [২৯]
নেপালের রাজধানী শহর কাঠমান্ডুতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এখানে ব্রিটিশ দূতাবাসের দেওয়াল ভেঙে ৩ জন ব্যক্তির প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। পূর্ব নেপাল অঞ্চল ভূকম্পন কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই স্থানে ভূমিকম্পের তীব্র প্রভাব পর। ১০০-এর উপর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভারী বৃষ্টির ফলে ভূমিধসের উপদ্রব হয়। [৩০] সুনসারী জেলায় বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। নেপালের ধরান শহরের পূর্বপ্রান্তে দুজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। [৩১] এই ভূমিকম্পের ফলে নেপালে সর্বমোট ৬ জনের প্রাণহানির কথা জানা যায়।
বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে ভূমিকম্পের সমবচেয়ে শক্তিশালী আঘাত অনুভূত হয়। ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, পাবনা, বগুড়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চিটাগং সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি কক্সবাজারেও ভূমিকম্পের তীব্র থেকে মৃদু কম্পন টের পাওয়া যায়।[৩২] আতংকিত মানুষজন ঘরবাড়ি ও দপ্তর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। [৩২][৩৩] তবে দালানকোঠায় ফাটল ধরা ছাড়া কোনো মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।[৩৪] ভূমিকম্পের কিছু সময় পর মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুক্ষনের জন্য বাধা পেয়েছিল শুধু। [৩৩]
তিব্বতের ইয়াডং,[৩৫] ডিংগিয়েং এবং গাম্বা তে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যায়।[১৫] ইয়াডং -এ কমপক্ষে ৭ জনের প্রাণহানির কথা জানা যায়। [৩৬] এই স্থানের টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পরে।[৩৭]
ভুটানে সেরকমভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি৷ ওয়াংথাংকা গ্রাম, লংগো এবং পারো শহরে কিছু ঘরবাড়ির দেওয়ালে ও সিলিঙে ফাটল ধরেছিলো৷পারো থেকে থিম্পু যাওয়ার পথে ইসুনা ব্রিজের কাছে পাহাড়ি ধসের উপদ্রব হয় এবং চুংজোম ব্রিজের কাছে বড় বড় পাথর ধসে পরে৷ শহরবাসীদের কিছু সময়ের জন্য পারো-থিম্পু সড়কপথে যাতায়াত বন্ধ করতে বলা হয়৷ টেলি ও মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাও কিছু সময়ের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হয়৷[৩৮]
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমি থিনলের বক্তব্য অনুযায়ী,[৩৯] পূর্ব ভুটানে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি৷চুখা-ফুন্টসোলিং সড়কের ৪ টি জায়গায় পাথর পড়ার জন্য যোগাযোগব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হয়৷'হা' -তে দুটি বাড়ি ভেঙে পরে এবং ৩-৪ জন সামান্য আহত হন৷থিম্পুর রাজপ্রাসাদ (থিম্পু জং) -এর চার কোনের চারটি স্তম্ভ ও অন্যান্য স্থানে সামান্য ফাটল দেখা দেয় যার জন্য অধিবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ভূকম্প পরবর্তী উদ্ধারকার্যের জন্য জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এন.ডি.আর.এফ)-র ৪ টি দলকে তৎক্ষণাৎ সিকিমে পাঠানো হয় এবং অতিরিক্ত ৫ টি দলকে কলকাতা থেকে পাঠানো হয়।[১৬] কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে উৎপন্ন ভূমিধস দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমকে মূল অঞ্চল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তাই সেইখানে উদ্ধারকারী দল দেরিতে পৌঁছায়৷ভারতীয় সেনা উত্তর সিকিম থেকে ১৪ জন ভ্রমণার্থীর একটি দলকে উদ্ধার করে৷ ভারতীয় সেনাদল তাদের পদাতিকবর্গ, ইঞ্জিনিয়ার, চারটি 'ধ্রুব' ও পাঁচটি 'চিতা' হেলিকপ্টার সহ ৭২ টি উদ্ধারকারী দল গঠন করে৷ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধস উদ্ধারকার্যে বিপুল বাধার সৃষ্টি করেছিল৷[১৭][৪০]
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ ১৯ সেপ্টেম্বর নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০,০০০ ₹ ২০০০০ (ইউএস$ ২৪৪.৪৭) টাকার এবং গুরুতর আহতদের জন্য ১,০০,০০০₹ ১০০০০০ (ইউএস$ ১,২২২.৩৩) টাকার ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন৷ এছাড়াও সিকিম সকার আহত ও সামান্য আহতদের জন্য যথাক্রমে ₹ ৫০,০০০ (ইউএস$ ৬১১.১৭) টাকা ও ₹ ২৫,০০০ (ইউএস$ ৩০৫.৫৮) টাকার অনুদানের ঘোষণা করেন৷ [১৭] বুধবার সকাল থেকেই আবহাওয়ার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সিকিমে উদ্ধারকার্য পুনরায় শুরু হয়৷খুব তাড়াতাড়ি জাতীয় সড়ক ৩১ দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে তোলা সম্ভব হয়৷সিকিমের মঙ্গন ও চুংথাং সড়কের মেরামতিও শুরু হয়ে যায়৷সিকিমের উত্তর ও পশ্চিমের দুর্গম অঞ্চলে আহতদের উদ্ধার,উপশম ও অন্যান্য তাৎক্ষণিক জরুরি কাজের জন্য ১৫ টি হেলিকপ্টারকে কাজে নামানো হয়৷
ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জি.ও.সি ইন চার্জ লেফটেন্যান্ট বিক্রম সিংহ ভূমিকম্প প্রভাবিত এলাকা প্রদর্শন করতে এসেছিলেন। তিনি তার সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে উদ্ধারকার্য এবং যত দ্রুত সম্ভব অবস্থার উন্নতি কীভাবে করা যাবে সেই সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছিলেন। ভূমিকম্প প্রভাবিত এলাকায় উদ্ধারকার্যের জন্যই তারা আলাদাভাবে তাদের "ত্রিশক্তি সাহায্য" অপারেশন শুরু করেন যাতে ৩৩ জন সেনাকে ত্রাণবণ্টনের কাজ দেওয়া হয়।
সেনাদের সূত্র অনুযায়ী তারা গ্যাংটক, চুংথাং, পেগ্যং ও দার্জিলিং -এ তাদের সেনা ছাউনিতে প্রায় ২০০০ জনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আরো ৪০০ জনকে ভারত-তিব্বত সীমানার সেনা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়।বুধবার দিনই অনেক সংখ্যক বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে সেনা ছাউনি থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয় এবং তারা স্কুলে হাজিরা দিতেও সক্ষম হয়েছিল।
সোমবার আবহাওয়ার উন্নতির সাথে সাথে সেনাদল দুর্গম অঞ্চলের গ্রামে তাদের হেলিকপ্টার থেকে নামতে সক্ষম হন এবং আহতদের উদ্ধার ও সুশ্রসার জন্য চিকিৎসা শিবির গড়ে তোলা হয়।
মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর ২১ ইঞ্জিনিয়ার -এর দল উত্তর সিকিমের কিছু অংশে আংশিক সড়ক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করতে সফল হয়েছিল।ভূমিকম্পের কারণে ভেঙে পড়া টেলিযোগাযোগ এবং বিদ্যুতের লাইনগুলিরও দ্রুত পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, গ্যাংটকের প্রধান সড়ক ভূমিধসের কারণে লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।