আলেকসঁদ্র মিশেল জেরার দেসপ্লা (ফরাসি : [a.lɛk.sɑ̃dʁ dɛs.pla]; জন্ম: ২৩ আগস্ট ১৯৬১) হলেন একজন ফরাসি-গ্রিক চলচ্চিত্রের সুরকার। তিনি দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল ও দ্য শেপ অব ওয়াটার চলচ্চিত্রের সুরায়োজনের জন্য দুইবার একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন ও আরও সাতটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া তিনি আটটি সেজার পুরস্কারের মনোনয়ন হতে তিনটি পুরস্কার, সাতটি বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন হতে তিনটি পুরস্কার, সাতটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন হতে দুটি পুরস্কার এবং ছয়টি গ্র্যামি পুরস্কারের মনোনয়ন হতে দুটি পুরস্কার জয় করেন।
দেসপ্লা স্বাধীন ও বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দ্য কুইন (২০০৬), দ্য গোল্ডেন কম্পাস (২০০৭), দ্য কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটন (২০০৮), দ্য টোয়ালাইট সাগা: নিউ মুন (২০০৯), ফ্যান্ট্যাস্টিক মিস্টার ফক্স (২০০৯), দ্য কিংস স্পিচ (২০১০), হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ - পার্ট ১ (২০১০) ও পার্ট ২ (২০১১), মুনরাইজ কিংডম (২০১২), আর্গো (২০১২), রাইজ অব দ্য গার্ডিয়ান্স (২০১২), জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২), গডজিলা (২০১৪), দি ইমিটেশন গেম (২০১৪), আনব্রোকেন (২০১৪), দ্য ডেনিশ গার্ল (২০১৫), ও আইল অব ডগস (২০১৮)।[১]
দেসপ্লা প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফরাসি ও মাতা গ্রিক। বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তাদের সাক্ষাৎ হয়।[২] বিয়ের পরে তার ফ্রান্সে ফিরে যান এবং সেখানেই দেসপ্লা জন্মগ্রহণ করেন। তার দুই বড় বোন মারি-ক্রিশ্চিন, যিনি কিকি নামেও পরিচিত, এবং রোজালিন্দা দেসপ্লা।
পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিয়ানো বাজানো শুরু করেন। তিনি ট্রাম্পেট ও বাঁশিতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি ফ্রান্সে ক্লোদ বালিফ ও ইয়ানিস জেনাকিসের সাথে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জ্যাক হেয়েসের সাথে পড়াশোনা করেন। দেসপ্লা অতি দ্রুত দক্ষ পরিবেশক ও সুরকার হয়ে ওঠেন।
চলচ্চিত্রের ভক্ত দেসপ্লা বাল্যকাল থেকে চলচ্চিত্রের সুরকার হতে চাইতেন এবং তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যান। তিনি ১৯৮৬ প্রথম ল্য সুফিলু চলচ্চিত্রে সুরারোপ করেন। তার প্রথম চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের রেকর্ডিংয়ের সময় তিনি বেহালাবাদক দমিনিক ল্যমনিয়ের সাথে পরিচিত হন, যাকে তিনি পরিবর্তীকালে বিয়ে করেন।[৩]
দেসপ্লা ১৯৮০-এর দশক থেকে অনেক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন এবং তার হলিউডে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৩ সালে গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং চলচ্চিত্র দিয়ে।[৪]
দেসপ্লা দ্য কুইন (২০০৬) চলচ্চিত্রে সুরারোপ করে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫] ২০০৭ সালে তিনি ফিলিপ পুলম্যানের দ্য গোল্ডেন কম্পাস, মার্কিন সুরকার অ্যারন জিগম্যানের সাথে যৌথভাবে জাচ হেমের প্রথম চলচ্চিত্র মিস্টার ম্যাগোরিয়াম্স ওয়ান্ডার এম্পোরিয়াম, এবং অ্যাং লির লাস্ট, কশন চলচ্চিত্রের সুর রচনা করেন। দ্য কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটন (২০০৮) চলচ্চিত্রের সুরায়োজনের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি দ্য টোয়ালাইট সাগা: নিউ মুন ও ফ্যান্ট্যাস্টিক মিস্টার ফক্স চলচ্চিত্রের সুর রচনা করেন। দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি তার তৃতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন এবং শ্রেষ্ঠ মৌলিক সঙ্গীত বিভাগে বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। দুটি পুরস্কার আয়োজনেই তিনি মাইকেল জাচ্চিনোর কাছে পরাজিত হন, যিনি আপ চলচ্চিত্রের জন্য এই দুটি পুরস্কার জিতে নেন।
দ্য কিংস স্পিচ (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার চতুর্থ একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫] তিনি হ্যারি পটার ধারাবাহিকের হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ - পার্ট ১ (২০১০) ও পার্ট ২ (২০১১) চলচ্চিত্রের সুর করেন। মুনরাইজ কিংডম (২০১২) চলচ্চিত্রের সুর বাজানোর জন্য মনোরম ও নান্দনিক বলে বিবেচিত হয়।[৫] আর্গো (২০১২), রাইজ অব দ্য গার্ডিয়ান্স (২০১২), জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২)। ২০১৪ সালে তিনি গডজিলা, দি ইমিটেশন গেম, আনব্রোকেন ছবির সুর করেন। দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল ছিল পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসনের সাথে তার তৃতীয় কাজ এবং এই ছবির সুর বেশি মর্মস্পর্শী ছিল। এই চলচ্চিত্রের সুরায়োজনের জন্য তিনি তার প্রথম একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।[৫] পরের বছর তিনি দ্য ডেনিশ গার্ল (২০১৫) চলচ্চিত্রের সুর করেন।
২০১৮ সালে দ্য শেপ অব ওয়াটার চলচ্চিত্রের সুরায়োজনের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কার[৬] এবং দ্বিতীয় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন।[৭] এছাড়া তিনি আইল অব ডগস (২০১৮) ও লিটল উইমেন (২০১৯) চলচ্চিত্রে সুরারোপের জন্য আরও দুটি অস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৮][৯]
তিনি দ্য ফ্রেঞ্চ ডিসপ্যাচ (২০২১) চলচ্চিত্রে সুরায়োজনের জন্য শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন[১০] ও শ্রেষ্ঠ মৌলিক সঙ্গীত বিভাগে বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১১] ২০২২ সালের গিয়ের্মো দেল তোরোর পিনোচ্চিও চলচ্চিত্রে সুরারোপ করে শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১২]