দেশ | চীন |
---|---|
সংস্থা | চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন |
উদ্দেশ্য | রোবটভিত্তিক চন্দ্র অভিযান (একাধিক) |
অবস্থা | চলমান |
কার্যক্রমের ইতিহাস | |
স্থায়িত্বকাল | ২০০৩ – আজ অবধি |
প্রথম উড্ডয়ন | ছাং-ও ১, ২৪ অক্টোবর ২০০৭, ১০:০৫:০৪.৬০২ UTC |
উৎক্ষেপণ কেন্দ্র(সমূহ) | |
যানের তথ্য | |
যানের ধরন | চন্দ্র পরিক্রমকসমূহ, অবতরণ যানসমূহ, বিচরণ যানসমূহ এবং নমুনাসহ প্রত্যাবর্তনকারী মহাকাশযান |
উৎক্ষেপক যান(গুলি) |
|
চীনা চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচি (চীনা: 中国探月; ফিনিন: Zhōngguó Tànyuè চুংকুও থান-ইউয়ে), যা চীনা চন্দ্রদেবী ছাং-ও-র নামে ছাং-ও প্রকল্প (চীনা: 嫦娥工程; ফিনিন: Cháng'é Gōngchéng, ছাং-ও কুংছেং) নামেও পরিচিত, চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত রোবটভিত্তিক (স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রভিত্তিক) চন্দ্রানুসন্ধানের একটি চলমান ধারাবাহিক কর্মসূচি। কর্মসূচিটিতে চন্দ্র পরিক্রমকযান বা আবর্তক যান, অবতরণ যান, বিচরণ যান এবং নমুনা প্রত্যানয়নকারী মহাকাশযানসমূহের কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত। এই যানগুলিকে চীনের নিজস্ব "দীর্ঘ পদযাত্রা" (ছাংচেং বা লংমার্চ) পরিবারের রকেটের সাহায্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। একটি দূরমিতি, অনুসরণ ও আদেশ ব্যবস্থা দ্বারা এই উৎক্ষেপণ ও উড্ডয়নগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেটি বেইজিং নগরীতে অবস্থিত একটি ৫০ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা এবং খুনমিং, সাংহাই ও উরুমছি নগরীতে অবস্থিত তিনটি ৪০ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকে। অ্যান্টেনাগুলি একত্রে ৩০০০ কিলোমিটারের একটি "ভিএলবিআই" (অতিবৃহৎ ভূমিরেখা ব্যতিচারমিতি) অ্যান্টেনা গঠন করেছে।[১][২] নিম্নমুখী সংযোগের উপাত্ত গ্রহণের জন্য একটি স্বত্বযুক্ত ভূ-প্রয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে।
চীনা ভূবিজ্ঞানী ও রাসায়নিক মহাকাশবিজ্ঞানী ঔইয়াং সিইঊয়ান এ পর্যন্ত জানা চাঁদে মজুদ বিভিন্ন ধাতু যেমন টাইটেনিয়াম ও (পরমাণুকেন্দ্রের গলন বা ফিউশন প্রক্রিয়ার আদর্শ জ্বালানি হিসেবে) হিলিয়াম-৩ গ্যাসের ব্যবহারের পক্ষে মত দেওয়া প্রথম কয়েকজন বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। তিনি বর্তমানে চীনের চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া বিজ্ঞানী সুন চিয়াওতুং প্রধান নকশাবিদ হিসেবে এবং সুন সেচৌ সহকারী মহানকশাবিদ হিসেবে নিযুক্ত আছেন। কর্মসূচির প্রধান পরিচালক হলেন লুয়ান এনচিয়ে।
কর্মসূচিটির প্রথম মহাকাশযানটি ছিল ছাং-ও ১ চন্দ্র পরিক্রমক যান বা আবর্তক যান। এটিকে ২০০৭ সালের ২৪শে অক্টোবর তারিখে চীনের শিছাং কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৩] ছাং-ও ২ নামের দ্বিতীয় পরিক্রমক যানটিকে ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর প্রেরণ করা হয়।[৪][৫] এরপর ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর ছাং-ও ৩ অভিযানের মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়, যাতে একটি অবতরণ যান (ল্যান্ডার) ও একটি বিচরণ যান (রোভার) অন্তর্ভুক্ত ছিল। যান দুইটি সফলভাবে ২০১৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে কোমল অবতরণ সম্পন্ন করে। এরপর ছাং-ও ৪ অভিযানের যানটিকে ২০১৮ সালের ৭ই ডিসেম্বর তারিখে চন্দ্রাভিমুখে উৎক্ষেপণ করা হয়; এটিতেও একটি অবতরণ যান ও বিচরণ যান ছিল। এগুলি ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি চাঁদের দূরবর্তী পার্শ্বে দক্ষিণ মেরু-আইটকেন অববাহিকা অঞ্চলে অবতরণ করে। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ একটি নমুনা সংগ্রহ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার নাম ছাং-ও ৫।[৬]
চীনের চন্দ্রানুসন্ধান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক প্রতীকটির আকৃতি দেখতে চীনা অক্ষর 月 [zh]-এর মতো, যার অর্থ "চাঁদ"। এই প্রতীকটিতে চীনা অক্ষরে লেখা চাঁদ অক্ষরটির কেন্দ্রে দুইটি মানব পদচিহ্ন অঙ্কিত আছে। এটি কর্মসূচিটির পরম লক্ষ্যকে নির্দেশ করছে, যা হল চাঁদে মানব অভিযানের পথ সুগম করা। চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসনের প্রধান চাং খচিয়েন ঘোষণা দেন যে চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশচারীদের অবতরণ ও চাঁদে একটি মহাকাশ বিরতিকেন্দ্র বা স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।[৭]
চীনা চন্দ্র অভিযান কর্মসূচিটিকে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত উন্নতির চারটি দশায় ভাগ করে নকশা করা হয়েছে।[৮] প্রথম দশাটির উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র চান্দ্র কক্ষপথে পৌঁছানো, যে কাজটি ২০০৭ সালে ছাং-ও ১ ও ২০১০ সালে ছাং-ও ২ অভিযান দুইটি সমাপ্ত করে। দ্বিতীয় দশার উদ্দেশ্য ছিল চাঁদে অবতরণ করা ও চন্দ্রপৃষ্ঠে পরিভ্রমণ করা, যে কাজটি ২০১৩ সালে ছাং-ও ৩ ও ২০১৯ সালে ছাং-ও ৪ অভিযান দুইটি সম্পন্ন করে (ছাং-ও ৪-এর চন্দ্র বিচরণ যানটি ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত সক্রিয় আছে)। তৃতীয় দশাটির উদ্দেশ্য চাঁদের ভূ-নিকটস্থ পার্শ্ব থেকে চান্দ্র নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে প্রত্যানয়ন করা, যেটি ২০২০/২০২১ সালে ছাং-ও ৫ অভিযানটি সম্পন্ন করেছে এবং ভবিষ্যতে ছাং-ও ৬ অভিযানটিও একই কাজে নিয়োজিত হবে। চতুর্থ দশার উদ্দেশ্য হল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।[৮][৯][১০] ছাং-ও কর্মসূচিটির সামগ্রিক উদ্দেশ্য হল ২০৩০-এর দশকে একটি মানব চালকবাহী মহাকাশযানের অবতরণ সহজ করা এবং সম্ভব হলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি ঘাঁটি স্থাপন করা।[১১]