এই নিবন্ধটিতে যাচাইযোগ্য দ্বিতীয় উৎস উল্লেখ করা ছাড়াই প্রাথমিক উৎস হিসেবে অনুপযুক্তভাবে এক বা একাধিক ধর্মীয় মৌলিক রচনা ব্যবহার করা হয়েছে। (December 2010) |
সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
তাজকিয়াহ (আরবি: تزكية) হল একটি আরবি-ইসলামিক পরিভাষা, সংক্ষেপে তাজকিয়া আল-নফস যার অর্থ "আত্মশুদ্ধি"। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে নফস (আত্ম-প্রবৃত্তি বা কামনা) কে প্রবৃত্তি-কেন্দ্রিক দশা থেকে পরিবর্তন করে শুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের দশায় নিয়ে যাওয়া হয়।[১] এর ভিত্তি হল বিশুদ্ধ সুন্নত থেকে শরিয়াহ ও কর্ম অধ্যয়ন এবং নিজ কর্মে তার প্রয়োগ ঘটানো ও তার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ সম্পর্কে আধ্যাত্মিক সচেতনতা লাভ করা (সর্বদা এই চেতনা নিয়ে থাকা যে, তিনি তার জ্ঞাতের দিক থেকে আমাদের সাথেই আছেন এবং আমরা যা কিছু করি তা জানেন, পাশাপাশি সর্বদা তার যিকির করা বা তাকে স্মরণ করা চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে), যাকে ইহসানের সর্বোচ্চ পর্যায় বলা হয়। যে ব্যক্তি নিজেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তাকে জাকি (আরবি: زكيّ) বলা হয়।
তাযকিয়া (এবং সম্পর্কিত মতবাদ তারবিয়া ও তালিম - ভ্রমণ ও শিক্ষা) শুধু সচেতন শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করে না: বরঞ্চ এটি হল এমন কর্ম যা ন্যায়নিষ্ঠ জীবনাচরণ গঠন করে; এবং আল্লাহর সম্মুখে নিজের অবস্থানকে স্মরণ করার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগায়।
তাজকিয়া শব্দটি আরবি যাকাত শব্দ হতে উৎসরিত, যার অর্থ হল পবিত্রতা, পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা, পরিশুদ্ধ করা। পরিভাষাটির অন্যান্য নিকটবর্তী সমার্থক ব্যবহৃত শব্দ হল ইসলাহ-ই কলব (অন্তর সংস্কার), ইখলাস (শুদ্ধতা, খাঁটি করা), কালবি সালিম (শুদ্ধ/পূর্ণ/নিরাপদ হৃদয়), ইহসান (সৌন্দর্যবর্ধন), তাহারাত (পবিত্রতা) ও সমার্থক হিসেবে পরবর্তী যুগে একটি মতবাদ হিসেবে ব্যবহৃত শব্দ হল তাসাউফ (সুফিবাদ)।
কুরআনের বহু স্থানে তাজকিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সূরা বাকারার ১২৯ ও ১৫১ নং আয়াতে, সূরা আল-ইমরানের ৭৭ এবং ১৬৪ নং আয়াত, নিসার ৪৯ নং আয়াত, সূরা তওবার ১০৩ নং আয়াতে, ত্বাহার ৭৬ নং আয়াতে, নূরের ২১ নং আয়াতে, সুরা জুমআর ২ নং আয়াতে, সূরা আলার ১৪ নং আয়াতে, সূরা শামসের ৯নং আয়াতে, সূরা লাইলের ১৮ নং আয়াত সহ আরও বিভিন্ন সূরায় শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। [২]
হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র (তাজকিয়া) করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা।
— আল-বাকারা: ১২৯
যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র (তাজকিয়া) করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।
— আল-বাকারা:১৫১
আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পরিশুদ্ধ(তাজকিয়া)ও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
— আল-বাকারাঃ ১৭৪
যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও (তাজকিয়া) করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
— আল-ইমরান: ৭৭
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন (তাজকিয়া) করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
— আল-ইমরান: ১৬৪
তুমি কি তাদেকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র বলে থাকে অথচ পবিত্র (তাজকিয়া) করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকেই? বস্তুতঃ তাদের উপর সুতা পরিমাণ অন্যায়ও হবে না।
— আন-নিসা:৪৯
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র (তাজকিয়া) করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।
— আত-তওবা: ১০৩
বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা নিজেদের পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করে।।
— ত্বাহা: ৭৬
হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র (তাজকিয়া) হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র (তাজকিয়া) করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।
— আন-নূর:২১
আর কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না; এবং কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকেও তা বহন করতে ডাকে তবে তার থেকে কিছুই বহন করা হবে না--- এমনকি নিকট আত্মীয় হলেও। আপনি শুধু তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন যারা তাদের রবকে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পরিশোধন করে, সে তো পরিশোধন (তাজকিয়া) করে নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
— ফাতির:১৮
তিনিই উম্মীদের (নিরক্ষরদের) মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র (তাজকিয়া) করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে (পথভ্রষ্টতায়) ছিল।
— আল-জুমআ:২
কিসে জানাবে তোমাকে, হয়তো বা সে পরিশুদ্ধ (তাযকিয়া) হত।
— আবাসা:৩
অথচ সে পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) না হলে তোমার কোন দোষ নেই।
— আবাসা: ৭
নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়।
— আল-আলা: ১৪
যে নিজেকে শুদ্ধ (তাজকিয়া) করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।
— আল-শামস: ৯-১০
এ (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে খোদাভীরু ব্যক্তিকে, যে আত্নশুদ্ধির (তাজকিয়া) জন্যে তার ধন-সম্পদ দান করে।
— আল-লাইল: ১৭-১৮
বহু হাদীসে আত্মশুদ্ধি অর্থে তাজকিয়া শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে।
আবূ যার থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও (তাজকিয়া) করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেনঃ (১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে।
— Ibn Majah: 2208
যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ মা’আন রাকাশী ... আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস এর মাতা উম্মু সুলায়মের কাছে একটি ইয়াতিম বালিকা ছিল। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেনঃ এই মেয়ে , তুমি তো বেশ বড় হয়েছ; তবে (আমার বয়স বড় না হোক) তুমি দীর্ঘজীবী না হও। তখন ইয়াতীম বালিকাটি উম্মু সুলায়মের কাছে ফিরে গেল। তখন উম্মু সুলায়ম বললেন, তোমার কী হয়েছে? ওহে আমার পিচ্চি মিষ্টি মেয়ে! মেয়েটি বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ দু’আ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমার বয়স যেন বড় না হয় (আমি দীর্ঘজীবী না হই)। সুতরাং এখন থেকে আমি আর বয়সে বড় হব না। অথবা সে سِنِّي এর স্থলে قَرْنِي (আমার চুল) বলেছিল। একথা শুনে উম্মু সুলায়ম তাড়াতাড়ি ওড়না পরে বেরিয়ে পড়েন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তাঁকে (লক্ষ করে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কী ব্যাপার, হে উম্মু সুলায়ম! তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমার ইয়াতীম বালিকাটিকে বদ দু’আ করেছেন? তিনি বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তা কি? (কিসের বদ দু’আ?) উম্মু সুলায়ম বললেন, সে তো বলছে যে, আপনি তাকে বদ দু’আ করেছেন যেন তার বয়স না বাড়ে কিংবা তার চুল বৃদ্ধি না পায়। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকী হাসি দিয়ে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি কি জাননা যে, আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এই মর্মে আমি শর্ত (প্রতিশ্রুতি) বদ্ধ হয়েছি এবং আমি বলেছি যে, আমি তো একজন মানুষ। মানুষ যাতে সন্তুষ্ট হয় আমিও তাতে সন্তুষ্ট হই। আমিও অসন্তুস্ত হই যে ভাবে মানুষ রাগান্বিত হয়ে থাকে। সুতরাং আমি আমার উম্মাতের কোন ব্যক্তি কে বদ দু’আ করলে সে যদি তার যোগ্য না হয় তাহলে তা তার জন্য পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধি (তাজকিয়া) ও নৈকট্যের মাধ্যম বানিয়ে দিন, যা তাকে কিয়ামত দিবসে সে আপনার নৈকট্য লাভ করিয়ে দিবে।
— Sahih Muslim: 6389
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, যাইনাব (রাযিঃ) এর আসল নাম ছিল বাররাহ্’। তাই বলা হলো, তিনি যেন আত্মশুদ্ধি (তাজকিয়া) করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নামকরণ করলেন যাইনাব।
— Shaih Muslim: 5500
৬৯। আবু বাকর বিন আবু যুহাইর বর্ণনা করেন যে, আমি জানতে পেরেছি যে, আবু বাকর আস সিদ্দিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহতো বলেছেনঃ “তোমাদের এবং আহলে কিতাবদের লম্বা লম্বা আশা আকাঙ্ক্ষা কোন কাজে আসবে না। যে-ই খারাপ কাজ করবে, সে-ই তার প্রতিফল ভোগ করবে।” (সূরা আন নিসা-১২৩) এ আয়াতের পর আর আত্মশুদ্ধির (তাজকিয়া) উপায় কী থাকে? এ দ্বারা তো বুঝা যায়, যে কোন খারাপ কাজই আমরা করবো, তার শাস্তি আমাদের ভোগ করতেই হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবু বাকর, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। আচ্ছা, তোমার কি কখনো রোগ-ব্যাধি হয় না? তুমি কি কখনো দুঃখ কষ্ট ভোগ কর না? তুমি কি কখনো দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে আক্রান্ত হওনা? তুমি কি কখনো পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হও না? আবু বকর বললেনঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটাইতো সেই কৰ্মফল, যা তোমাদেরকে দেয়া হয়।
— Musnad Ahmad: 69
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে যে মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহ সম্মুখীন হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। এর সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ ”যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও (তাজকিয়া) করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।(৩ঃ ৭৭)” বর্ণনাকারী বললেন, এরপর আশআস ইবনু কায়েস সেখানে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আবূ আবদুর রহমান তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম, এ রকম এ রকম বলেছে। তখন তিনি বললেন, এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। এ ঘটনায় জ্ঞাত হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো তুমি প্রমাণ উপস্থাপন করবে নতুবা সে শপথ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের সম্পত্তি হরণ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে সে আল্লাহর সম্মুখীন হবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহই তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন।
— Bukhari: 4193
ইবনু মাসঊদ থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ গ্রাসের জন্য মিথ্যা কসম করবে, এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধানিত থাকবেন। আবদুল্লাহ বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রমাণ হিসাবে এ আয়াত পাঠ করেনঃ যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রতি এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করবেন না; তাদের জন্য মর্মন্তুদ শান্তি রয়েছে। (৩ঃ ৭৭)
— Muslim: 256
যাযিদ ইবনু আরকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে তেমনই বলব যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ "হে আল্লাহ! আমি আপনার কছে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনার আমার নফসে (অন্তর) তাকওয়া দান করুন এবং একে পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করে দিন। আপনি একে সর্বোত্তম পরিশোধনকারী, আপনিই এর মালিক ও এর অভিবাবক। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অনুপকারী ইলম থেকে ও ভয় ভীতিহীন কলব থেকে; অতৃপ্ত নফস থেকে ও এমন দুআ থেকে যা কবুল হয় না।"
— Muslim: 6658
আবূ বাকর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হতভাগা! তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে দিয়েছ, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেলেছ। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো যদি তাঁর সঙ্গীর প্রশংসা করতেই হয় তবে সে যেন বলে ‘অমুক সম্পর্কে আমার ধারণা’ আল্লাহ্ তা’আলাই তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবে জানেন, (আমি তাঁর ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে জানি না)। আর আল্লাহর উপর খোদকারী করে কারো পরিশুদ্ধতা (তাজকিয়া) ঘোষণা করছি না। পরিণাম সম্পর্কিত জ্ঞান আল্লাহরই আছে। (তবে) আমি মনে করি সে এরূপ। যদি তা জানে।
— Muslim: 7230
খালিদ ইবনু আসলাম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার -এর সঙ্গে বের হলাম। তখন তিনি বললেন, এ আয়াতটি ("সে দিন যখন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে দাগিয়ে দেয়া হবে তাদের কপাল, তাদের পাঁজর এবং তাদের পৃষ্ঠদেশ, বলা হবেঃ এগুলো হল তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং যা তোমরা জমা করে রাখতে তার স্বাদ গ্রহণ কর।" :সূরাহ বারাআত ৯/৩৫) যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের। এরপর যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হলে আল্লাহ তা সম্পদের পরিশুদ্ধকারী তাজকিয়া করেন। [১৪০৪]
— Bukhari: 4661
আবূদ দারদা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে বিশুদ্ধ (ওয়াজকাহা- তাজকিয়ার ধাতুমুল), তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলার যিকর। মু'আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলার যিকরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।
— Tirmidhi: 3377
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশে যে ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। এর সত্যতা প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ "যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও (তাজকিয়া) করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।" (৩ঃ৭৭) বর্ণনাকারী বললেন, এরপর আশ‘আস ইবনু কায়স (রহ.) সেখানে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, আবূ ‘আবদুর রহমান তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম, এ রকম এ রকম বলেছেন। তখন তিনি বললেন, এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। আমার চাচাত ভাইয়ের এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ঘটনা জ্ঞাত হয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো তুমি প্রমাণ হাজির করবে নতুবা সে শপথ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। অনন্তর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশে ঠান্ডা মাথায় অবরোধ করে মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহই তার উপর রাগান্বিত থাকবেন।
— Bukhari: 4550
আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধকালে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর ভেতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আওফ! ভেতরে এসো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি সম্পূর্ণ প্রবেশ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ, সম্পূর্ণভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আওফ! কিয়ামতের পূর্বেকার ছয়টি আলামত স্মরণ রাখবে। সেগুলো একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু।আওফ বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, প্রথমটি। অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করবেন। এরপর তোমাদের সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি মাথাপিছু শত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) পেয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হবে না। তোমাদের মধ্যে এমন বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা থেকে কোন মুসলমানের ঘরই রেহাই পাবে না। এরপর বনু আসফার (রোমক খৃস্টান)-এর সাথে তোমাদের সন্ধি হবে। কিন্তু তারা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা তলে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। প্রতিটি পতাকার অধীনে থাকবে বারো হাজার সৈন্য।
— Ibn Majah: 4042
সূফিতত্ত্ব অনুসারে, আত্মার সৃষ্টিগত একমাত্র বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার আধ্যাত্মিকতা। কোন ব্যক্তিযখন জীবনে উন্নতি করে, তখন সে তার জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে মালাকাত লাভ কতে থাকে। আত্মা পুনঃপুনঃ একই আচরণে অভ্যস্ত, যা তখন কাজকর্ম নির্ধারণ করে। মনের ভালো সত্ত্বা নৈতিক ও বিজ্ঞ প্রদর্শন করে আর খারাপ সত্ত্বা অনৈতিক আচরণ প্রদর্শন করে। এই সত্ত্বাগুলোই "আখেরা"য় ভাগ্য নির্ধারণ করে। নৈতিক গুনাবলি অনন্ত সুখ ও কল্যাণ "ফালাহ" আনয়ন করে, অপরদিকে নীতিভ্রষ্টতা চিরস্থায়ী ধ্বংসের পথে ধাবিত করে।
আত্মশুদ্ধির প্রাথমিক সূচনা হল সেই বোধ যে, আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান হল আমাদের পূর্বতন মূল্যায়িত জাগতিক বিষয় ও উচ্চাকাঙ্খা হতে উত্তম।
খালিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মুসলেহ তার ইসলাহে কুলুব নামক গ্রন্থে বলেছেন,[৩] তাজকিয়ার পথে প্রধান সমস্যা হল পাঁচটিঃ
পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির পন্থাসমূহকে তিনি আট ভাগে ভাগ করেছেনঃ
তাজকিয়ায়ে নফসের প্রক্রিয়া শুরু হয় "সকল কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল" এই হাদিসকে ধারণ করার মাধ্যমে এবং শেষ হয় উত্তম চরিত্র, "ইহসান", "এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ" এই গুণগুলো নিজের মধ্যে পূর্নতা দানের মাধ্যমে, যা আছে সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসে ও সহীহ মুসলিমের "জিবরাঈলের হাদিস" নামে খ্যাত বহুল উল্লেখিত হাদিসে।
সূফিবাদ অনুসারে, এটি মনে রাখতে হবে যে, তাজকিয়া কোন হাল (সাময়িক দশা) নয়, যা আল্লাহর কাছ থেকে আকাঙ্খীর কাছে নেমে আসে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউই এটি আনতে বা দুর করতে পারে না। মাকাম ও হাল পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং প্রায়শই এদেরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। প্রফেসর এ.জে. আর্বেরি তার সূফিসম গ্রন্থে উক্ত তাদের সম্পর্ককে নিরূপণ করে পার্থক্যটি তুলে ধরেছেন এভাবেঃ
সূফিদের অভিযান শুরু হয় শয়তান ও নফস আল-আম্মারার প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করার মাধ্যমে।
আত্মা যদি এই সংগ্রামের ভেতর নিজেকে সপে দেয় তবে তখন তাকে বলা হয় নফসে লাউয়ামা বা কলুষিত আত্মা।
কুরআন সূরা রাদে র ২৮নং আয়াতে বলে যে, কীভাবে পরিতুষ্ট আত্মার দশা অর্জন করতে হয়ঃ: "যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" [কুরআন ১৩:২৮]
সূফি দৃষ্টিকোণ অনুসারে, মানবীয় পূর্ণতা নির্ধারিত হয় শৃঙ্খলা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে। মানুষ দুটি চরম সত্ত্বার মাঝখানে বাস করে, এর সর্বনিম্ন সত্ত্বাটি পশুর চেয়েও অধম, আর সর্বোচ্চ সত্ত্বাটি ফেরেশতাকেও অতিক্রম করে। এই দুই চরম সত্ত্বার মধ্যবর্তী আন্দোলন নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করা হয় তাকে ইলমে আখলাক বা নীতিশাস্ত্র বলা হয়। প্রথাগত মুসলিম দার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন যে, নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধি ব্যতীত অন্য সকল বিজ্ঞানের উপর পান্ডিত্ব্য অর্জন করা হলে তা শুধু মূল্যবোধ বিচ্যুত নয় বরং ভেতরেও অন্তঃসারশূণ্য হয়। একারণেই সূফি সাধক বায়জিদ বোস্তামি বলেছেন, জ্ঞান হল সবচেয়ে পুরু পর্দা, যা মানুষের দৃষ্টি ও বাস্তবতার মাঝে বাধা হয়ে দাড়ায়।
অন্তরাত্মা বা নফসের সঙ্গে লড়াই ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, সুফিগণ সাওম বা রোজা রাখে, পানাহার থেকে বিরত থাকে (জুʿ'), কূরআন পড়ার জন্য রাতে জেগে থাকে (কিয়ামুল লাইল), নির্জনে সময় পার করে (খালাওয়াত), দরিদ্র ও অসহায় অবস্থায় অনাবাসিক স্থানে পরিভ্রমণ করে, এবং দীর্ঘ ধ্যান করে (মুরাকাবা, জাম' আল-হাম্ম)। ক্রমাগত চলমান মাকামাতের মাধ্যমে আত্মত্যাগ ও আত্ম-পরিবর্তনের সচেষ্ট পন্থা নিশ্চেষ্ট রহস্যময় আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার (আহওয়াল) সঙ্গে বিজড়িত হয়।[৪]
পারস্য মুর্শিদ আবু আল-নাজিব আল-সুহরাওয়ার্দি এই প্রক্রিয়াকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, একমাত্র আল্লাহর কাজে আবিচল আনুগত্য, আল্লাহকে স্মরণ, কুরআন পাঠ, প্রার্থনা ও ধ্যান (মুরাকাবা) এগুলোর মাধ্যমেই একজন সুফি তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছুতে পারে, যাকে বলা হয় উবুদিয়াহ বা আল্লাহর প্রতি উপযুক্ত পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য। আরেকটি চর্চা যা প্রায়শই সুফিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকে তা হল আধ্যাত্মিক সঙ্গীত জলসা, বা শ্রবণ (সামা), যাতে অংশগ্রহণকারীরা কাব্যিক আবৃত্তি, বাদ্য ও নৃত্য পরিবেশন করে, অনেকসময় তা করে থকে আনন্দ-উল্লাসিত ও উচ্ছসিত অবস্থায়। অধিকাংশ সুফি তরিকা বিভিন্ন স্তরের অনুষ্ঠান চালু করেছে, যাতে প্রথমে প্রতি মুরিদ (আকাঙ্খী) জিকির আল-লিসানি (জিহ্বার সাহায্যে জিকির) নামক আচার শেখে এবং সবশেষে জিকির আল-কিলবি-এর শিক্ষালাভ করে, এবং তখন থেকেই মুরিদ্গণ তা চর্চা শুরু করে।[৫]
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব অসংখ্য সুফি চর্চার প্রখর সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও বলেন:
"আমরা সুফিদের তরীকাসমূহ এবং হৃদয় ও অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত পাপসমূহ থেকে অন্তরাত্মার পরিশুদ্ধি (তাজকিয়া) কে অস্বীকার করি না, যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তি শরিয়াহর নীতি ও পরীক্ষিত-সঠিক পন্থা পূর্ণরুপে অনুসরণ করে। তবে, আমরা ব্যক্তির কথা ও কাজকে অপ্রস্তুতপ্রশংসা দ্বারা বর্ণিত রূপকধর্মী ব্যাখ্যা (তা'ওয়িল) করতে তা গ্রহণ করব না। আমরা শুধুমাত্র ভরসা রাখি, সহায়তা চাই, সাহায্য প্রার্থনা করি এবং আমাদের সকল কাজে আত্মবিশ্বাস রাখি মহান আল্লাহর উপর। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট, সর্বশ্রেষ্ঠ অভিভাবক, সর্বোত্তম মাওলা ও সর্বোত্তম সাহায্যকারী।"