রতিক্রিয়াকালীন মাথাধরা | |
---|---|
বিশেষত্ব | স্নায়ুচিকিৎসাবিজ্ঞান |
রতিক্রিয়াকালীন মাথা ধরা (ইংরেজি: Sexual headaches/coital cephalalgia) হচ্ছে মাথা ধরার এক বিরল প্রকার; যা যৌন ক্রিয়াকালীন সময় বিশেষত রাগমোচন ও হস্তমৈথুনের সময়ে মানুষের ঘাড় এবং মস্তিষ্কাভ্যন্তরে অনুভূত হয়। এ মাথাধরা যদিও খুব বেশি প্রকট হয় না কিন্তু অনেক সময় অন্তর্মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণ (ইংরেজি: intracranial hemorrhage) এবং মস্তিষ্ক ধমনী সংকীর্ণায়নের (ইংরেজি: cerebral infarction) কারণেই এর মাথা ধরা সৃষ্ট হতে পারে। এমনটা হয়েছে কিনা তা বুঝা যায় যদি মাথা ধরা হঠাৎ করে তীব্রভাবে অনুভূত হয়।[১] কায়িক বা মানসিক শ্রম, যৌন উত্তেজনা অথবা ঘাড় এবং মুখের পেশী সংকোচন এর জন্য এমনটা হতে পারে।[১] বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ মাথা ধরা সফলভাবে ওষুধ প্রয়োগের ফলে সম্পুর্ণভাবে সেরে যায়।[১]
ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব হেডেক ডিসঅর্ডারের (আইসিএইচডি) এর তৃতীয় সংস্করণ অনুযায়ী এজাতীয় মাথাব্যাথা "প্রাথমিকভাবে যৌন ক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত", এই ধরনের মাথাধরা মৃদুভাবে শুরু হয়, যা যৌন উত্তেজনার সাথে বাড়তে থাকে এবং রাগমোচনের সময় তীব্র আকার ধারণ করে।[২] কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এ মাথাধরা প্রায়সই রাগমোচনের সময় হঠাৎই শুরু হয়।[১] দুই তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে এই মাথাধরা দ্বিপার্শ্বিক এবং বাকি ক্ষেত্রে এক পার্শ্বিক।[২] মাথাধরা যদি তীব্র হয় তবে তা ১ মিনিট থেকে ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয় অথবা মাথাধরা যদি হালকা হয়, তবে তা ৭২ ঘণ্টা অবধি স্থায়ী হতে পারে।[২] এটি কখন ঘটবে তা পূর্ব থেকে নির্ধারণ করা যায় না এবং প্রতিটি যৌন ক্রিয়ার সময় নাও ঘটতে পারে।[১]
আইসিএইচডির পূর্ববর্তী সংস্করণে এই অবস্থাকে দুইটি বিভাগে পৃথক করা হয়েছে। একটি হলো "রাগমোচনপূর্ব মাথাধরা" এবং "রাগমোচনকালীন মাথাধরা"। এই দুইটি বিভাগকে পরবর্তীতে একটি বিভাগে নিয়ে আসা হয়, কারণ চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণাগুলো দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারে নি।[২] রাগমোচন-উত্তর মাথাধরা মানুষের অবস্থানের ভিত্তিতে, তার অঙ্গ কী অবস্থায় আছে তার উপর নির্ভর করে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের বেরিয়ে আসার দরুনও এমনটা হতে পারে।[২] যৌনক্রীয়া কালীন সময়ে তীব্র মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে অন্তর্মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণ, মধ্যমাত্রিকা নিম্নরক্তক্ষরণ, (ইংরেজি: subarachnoid hemorrhage) অথবা মস্তিষ্ক ধমনী সংকীর্ণায়ন। এমনটা হলে তাৎক্ষণিক ভাবে চিকিৎসকের দ্বারস্থ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করা উচিত[১][৩]
কিছু রোগীর জন্য এই মাথাধরা সাধারণ কায়িক শ্রমের জন্য হতে পারে। একটি গবেষণায় ৪০ শতাংশ রতিকালীন মাথাধরা রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, তাদের মাথাধরা যৌনতা বিহীন পরিশ্রম করলেও উদ্ভূত হতে পারে।[১] শরীরচর্চার একটি প্রেসর প্রতিক্রিয়াকে এই সমস্যার কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়েছে।[৪] অন্যান্য রোগীদের জন্য এই মাথাধরা যৌন উত্তেজনা এবং মুখ ও ঘাড়ের পেশী সংকোচনের কারণে সৃষ্ট হয়।[১]
বিচ্ছিন্ন কিছু কেস স্টাডি রতিকালীন মাথাধরার সাথে সুনির্দিষ্ট কিছু ড্রাগে যেমন এমিওডারনে, সুডোএফেড্রিন, জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি এবং ক্যানাবির ব্যবহারের সম্পর্ক আছে।[১] রিভার্সিবল সেরেব্রাল ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন লক্ষণের মত ঘটনার জন্য গৌণ কারণ হতে পারে।[১] এটি মাইগ্রেনের সাথে সম্পৃক্ত।[১]
মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই মাথাধরা হতে পারে।[১] যেকোনো বয়সে যৌনক্রীয়ার সময় এই মাথাব্যথা হতে পারে।[২] এই মাথাব্যথা নারীর তুলনায় পুরুষে বেশি দেখা যায়, বিশেষত লিঙ্গ অনুপাতের দিকে আলোকপাত করা হলে ১.২:১ এবং ৩:১ অনুপাতের মধ্যে এই মাথাব্যথা দেখা যায়। অর্থাৎ যে পরিমাণ মানুষে এই মাথাব্যাথা দেখা যায়, তাদের মধ্যে প্রতি ১ জন নারীর বিপরীতে গড়পড়তায় ১.২ জন পুরুষ থেকে ৩ জন পুরুষের রতিকালীন মাথাধরা হতে পারে।[২]
একজন চিকিৎসক যৌনক্রীয়া করার সময় উত্তেজনা পরিহার করার কথা বলতে পারেন[১] ইনডোমেথাসিয়ান এবং বেটা ব্লকার এধরনের মাথা ধরায় ফলপ্রসূ চিকিৎসা হিসেবে বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গিয়েছে।[১][৫] প্রোপানল, বেলেগ্রাল, এবং ট্রিপ্টান এধরনের ব্যথায় সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[১] এন্সিডোটাল এবং পরোক্ষ প্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে ম্যাগনেসিয়ামের ব্যবহার মাথাব্যথা উপশমে কার্যকরী।[৬]