সান্দ্রো | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | রোবের্তো সানচেস-ওকাম্পো |
উপনাম | সান্দ্রো সান্দ্রো দে আমেরিকা হিতানো |
জন্ম | বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা | ১৯ আগস্ট ১৯৪৫
মৃত্যু | জানুয়ারি ৪, ২০১০ মেন্দোজা, আর্জেন্টিনা | (বয়স ৬৪)
ধরন | রক এন্ড রোল, লাতিন পপ |
পেশা | সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনেতা, গায়ক |
বাদ্যযন্ত্র | ভোকাল, গিটার, পিয়ানো |
কার্যকাল | ১৯৬০-২০০৯ |
লেবেল | সিবিএস, আরসিএ, ইএমআই, সোনাগ্রাফিকা ভেলভেট, ইউনিভার্সাল মিউজিক, বিএমজি মিউজিক, সনি মিউজিক, এক্সকালিবার |
রোবের্তো সানচেস-ওকাম্পো (স্পেনীয়: Roberto Sánchez-Ocampo; জন্ম: ১৯ আগস্ট, ১৯৪৫ - মৃত্যু: ৪ জানুয়ারি, ২০১০) বুয়েনোস আইরেসে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা আর্জেন্টিনীয় গায়ক ও অভিনেতা ছিলেন। সঙ্গীত জগতে তিনি সান্দ্রো/সান্দ্রো দে আমেরিকা (আমেরিকার সান্দ্রো), "হিতানো" (জিপসি) ও ‘আর্জেন্টিনার এলভিস’ নামে পরিচিত ছিলেন। লাতিন আমেরিকায় স্পেনীয় ভাষায় তাকে প্রথম রক সঙ্গীতশিল্পীরূপে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
১৯৪৫ সালে বুয়েনোস আইরেসের ইরমা নিদিয়া ওকাম্পো ও বিসেন্তে সানচেস দম্পতির সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলী বালেন্তিন আলসিনা এলাকায় তার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়।[১] শিশু অবস্থাতেই গিটার বাজানো শিখেন। তখন তার সঙ্গীতকে রোমানীরূপে চিহ্নিত করা হয়।[২] তার পিতামহ হাঙ্গেরি থেকে আগত রুশ রোমা বংশোদ্ভূত ছিলেন। আর্জেন্টিনায় রোমা জাতির লোকদেরকে "হিতানোস" (জিপসি) বলা হয়ে থাকে।[১][৩]
বিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে তিনি রক এন্ড রোলের রাজারূপে চিহ্নিত এলভিস প্রেসলিকে অনুকরণ করতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজের কর্মজীবনে ব্যক্তিগত ধাঁচের আবহ সৃষ্টি করেন ও রক সঙ্গীতে স্পেনীয় ভাষার পথিকৃৎরূপে পরিচিতি পান। ১০ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে অবশেষে প্রেসলিকে ব্যক্তিগতভাবে দেখার সুযোগ পান। বোস্টন গার্ডেনে এক সফরে তার এ সুযোগ ঘটে।
১৯৬১ সালে তিনি সঙ্গীত দল সান্দ্রো এ লোস দে ফুয়েগো গঠন করেন। এ দলটি টিভি অনুষ্ঠান ‘সাবাদোস সির্কুলারেসের’ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে ও ১৯৬০-এর দশকে বিস্তৃত পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পায়। ‘অ্যাভ ডে পাসো’, আতমোসফেরা পেসাদা’, ‘কিয়েরো ইয়েনার্মে দে তি’, ‘তেঙ্গো’, ‘এস্তো লে ইয়ামাস আমর?’, ‘এরেস এল দেমোনিও ডিসফ্রাসাদো’, ‘পর্ক ইউ তে আমো’, ‘পেনুমব্রাস’, ‘উনা মুচাচা ই উনা গিতাররা’, ‘ত্রিগাল’ বা ‘রোসা রোসা’ তার সঙ্গীতজীবনকে স্থিরতা প্রদান করে ও সফলতার মুখ দেখায়।
৫,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের ফেল্ট ফোরামের সকল টিকেট বিক্রয় হয়ে যায়। প্রথম লাতিনো গায়ক হিসেবে তিনি এ সম্মান পান। ১৯৭০-এর দশকে পাঁচবার ঐখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। দি এড সালিভান শো-তে দুইবার অংশ নেন। পাশাপাশি দোমেনিকো মদুংগো-সহ, দ্য ডোরস ব্যান্ডের ন্যায় অনেকগুলো দলের সাথে বেশ কয়েকবার অংশ নেন তিনি।
১১টি চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সান্দ্রো। তন্মধ্যে, ১৯৬৯ সালে ‘কুইরো ইলেরার্মে ডে তি’ ও ১৯৮০ সালে ‘সুবি কুই তে ইলেভো’ অন্যতম। এছাড়াও, ১৯৭৬ সালে ‘তু মে এনলোকুইসেস’ চলচ্চিত্র পরিচালনায় অগ্রসর হন তিনি।[৪] শেষ চলচ্চিত্রটিতে আর্জেন্টিনীয় অভিনেত্রী সুজানা জিমেনেজের বিপরীতে অভিনয় করেন। টিভি ভ্যারাইটি শোতে উপস্থাপন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। জিমেনেজের শো যা ‘হোলা সুজানা’ নামে পরিচিত ছিল যা ১৯৮৭ সালে শুরু হবার পরপরই নেতা বনে যান।[৫] এছাড়াও তিনি দুইটি সোপ অপেরায় অংশ নেন। তন্মধ্যে ‘ফিউ সিন কুইরারে’ পুয়ের্তোরিকীয় অভিনেত্রী গ্ল্যাডিস রদ্রিগুয়েজের সাথে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
সান্দ্রো’র গানগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও শার্লি বাসে, লিজা মিনেলি, বার্ত বাকারাখ, দালিদা, শার্লি ম্যাকলেইন, তোতো কুতুগনো, ন্যান্সি উইলসন, মেরি হপকিন, লোরেদানা বার্তে, আম্বার্তো তোজ্জি, গিলবার্ট বেকদ, মিলভা, জুলিও ইগলেসিয়াস, হোস লুইস রদ্রিগুয়েজ ও ইঙ্গলবার্ত হাম্পার্দিঙ্কের ন্যায় বিভিন্ন শিল্পী রেকর্ড করেছেন।
১৯৯০ সালে তাঁর সম্মানে ‘পাদ্রে ডেল রক এন কাস্তেলানো’ (স্পেনীয় রকের জনক) শিরোনামে আর্জেন্টিনীয় ও অন্যান্য লাতিন আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী অ্যালবাম প্রকাশ করে। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকেও ধারাবাহিকভাবে স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করতে থাকেন। ১৯৯৩ সালে নতুন ধরনের আসরে পুনরায় আবির্ভূত হন। বুয়েনোস আইরেসের মর্যাদাপূর্ণ জনপ্রিয় সঙ্গীত অনুষ্ঠান তিয়েত্রো গ্রান রেক্সে ধারাবাহিকভাবে রেকর্ডভঙ্গকারী ১৮বার দর্শক শ্রোতাদের কাছে হাজির হন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ৫২টি রেকর্ড সম্পাদনা করেন ও ৫০ মিলিয়ন কপি রেকর্ড বিক্রীত হয়। তবে, অন্যান্য সূত্র থেকে জানানো হয় যে, ৭৫ মিলিয়নেরও অধিক কপি বিক্রয় হয়েছে।[৬] তার সর্বাপেক্ষা সফলতম গানের মধ্যে রয়েছে ‘ডেম ফিউগো’, ‘রোজা, রোজা’, ‘কুইরো লেনার্মে ডে তি’, ‘পেনামব্রাস’, ‘পর্ক ইউ তে অ্যামো’, ‘অ্যাসি’, ‘মি আমিও এল পুমা’, ‘টেঙ্গো’, ‘ত্রিগাল’ ও ‘ইউনা মুচাচা ওয়াই ইউনা গুইতারা’। কেবলমাত্র ‘রোজা, রোজা’ ২ মিলিয়নেরও অধিক কপি বিক্রি হয় যা তাকে সর্বাপেক্ষা স্বীকৃত ও জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীতে পরিণত করে। তার অন্য সেরা গান ‘টেঙ্গো’ আর্জেন্টিনায় রক সঙ্গীতের ১০০ সেরা গানের তালিকায় ১৫শ স্থান দখল করে। এ গানটি এমটিভি চ্যানেল ও রোলিং স্টোন সাময়িকীতেও স্থান দখল করেছিল। এছাড়াও সান্দ্রো প্রথম লাতিন আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পীরূপে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের ফেল্ট ফোরামে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।[৭] ২০০৫ সালে সান্দ্রোকে তার সঙ্গীত জীবনে অসাধারণ স্বীকৃতিস্বরূপ লাতিন গ্র্যামি পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
১৯৯৮ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে তিনি এমফিসেমা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এরফলে বিশ্বব্যাপী তার সমর্থকদের মনে গভীর রেখাপাতের সৃষ্টি করে। অবশ্য সান্দ্রো নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানে আসক্ত।[৮] ফলশ্রুতিতে এ রোগের কারণ সম্পর্কে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
২০ নভেম্বর, ২০০৯ তারিখে সান্দ্রো আর্জেন্টিনার মেন্দোজায় ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেন। সফলভাবে এ চিকিৎসাকার্য সম্পন্ন হয়। পাঁচদিন পর তার চিকিৎসকগণ দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে, সান্দ্রো তখনও নিবীড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস করছেন ও ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার করছেন। প্রতিস্থাপনের ৪৫দিন পর ৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মেন্দোজা ইতালিয়ানো হাসপাতালে তার দেহাবসান ঘটে।[৯]