সৈয়দ শুজাত আলী কাদরী | |
---|---|
জন্ম | সৈয়দ শুজাত আলী জানুয়ারি ১৯৪১ উত্তর প্রদেশ, ভারত |
মৃত্যু | ২৭ জানুয়ারি ১৯৯৩ জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া |
পেশা | ইসলামী পণ্ডিত |
অঞ্চল | পাকিস্তান |
ধারা | সুন্নি, হানাফি |
প্রধান আগ্রহ | ফিকহ, ইসলামি দর্শন, হাদিস |
উল্লেখযোগ্য অবদান | পাকিস্তানে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের উলামাদের একত্রিত করার প্রচেষ্টা |
ভাবগুরু
| |
ভাবশিষ্য
|
রেজভী |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
সৈয়দ শুজাত আলী কাদরী (উর্দু: حضرت علامہ مفتی سید شجاعت علی قادری) (জানুয়ারি ১৯৪১ — ২৭ জানুয়ারী ১৯৯৩) ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান মুফতি, ফেডারেল শরীয়ত আদালতের বিচারক,[১] পাকিস্তানি ইসলামি মতাদর্শ পরিষদের সদস্য এবং ইসলামি বিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞানের একজন পণ্ডিত।[২] তিনি মোস্তফা রাজা খান কাদরীর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।[৩]
তিনি বিভিন্ন অফিসে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বই লিখেছেন।[৪] তিনি ইসলামী ফিকহ, অর্থনীতি ও উত্তরাধিকারের উপর বই লিখেছেন এবং আরবি থেকে উর্দুতে বই অনুবাদ করেছেন।[৫]
শুজাত আলী কাদরী ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সৈয়দ মাসউদ আলী কাদরীর পুত্র, যিনি পাঞ্জাবের (পাকিস্তান) মুলতানের একটি মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া আনোয়ার-উল-উলূম-এ আফতা (ইসলামী আইনশাস্ত্র) অফিসে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাদরী ছিলেন তার পিতার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ভাইয়েরা হলেন:[৬]
কাদরী তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।[৬]
কাদরী আলীগড়ের দাদু জেলার মাদ্রাসা-ই-আরাবিয়া হাফিজিয়া সাদিয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি গোলাম রব্বানী ও শাহ আহমদ নূরানী সিদ্দিকীর কাছ থেকে কুরআন শিখেন। তারপর, ১০ বছর বয়সে তিনি তার পিতামাতার সাথে ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের মুলতানে চলে যান এবং মাদরাসা আনোয়ার-উল-উলুমে পড়ালেখা শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে দরস-ই-নিজামী সম্পন্ন করেন। তিনি পীর কিফায়াত আলী শাহের কাছ থেকে সুফিবাদের কাদেরী তরিকায় ইজাজা বা অনুমতি লাভ করেন।[৬] তিনি মুলতানের জামিয়া ইসলামিয়া আনোয়ার-উল-উলূম থেকে আঠারো বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি নিম্নলিখিত যোগ্যতা অর্জন করেছেন:
কাদরী মুসলমানদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা মাদারিসে শিক্ষক ও মুফতি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম আমজাদিয়ায় বিভাগীয় প্রধান এবং মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫] এরপর তিনি দারুল উলূম নঈমীয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর, ১৯৭৩ সাল থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি করাচির দারুল উলুম নঈমীয়ার শায়খুল হাদিস ও মুফতির দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[৫] কাদরী করাচির লিয়াকত সরকারি কলেজে ১২ বছর এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে দুই বছর যাবৎ প্রভাষক হিসাবেও কাজ করেছেন।[৪]
তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দশ বছর দারুল উলুম নঈমীয়ায় শায়খুল হাদিস ও আফতা অফিসে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি;[৫] [১] ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ছয় বছর পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়ত আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই ফেডারেল শরীয়ত আদালতের আলিম বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত[৫] তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তানের ইসলামি মতাদর্শ পরিষদের সদস্য এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।[৪]
তার সাহিত্য পাণ্ডিত্যের মধ্যে রয়েছে:[৭]
শুজাত ছিলেন বেরলভী আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত এবং ইসলামের প্রধান সম্প্রদায়ের পণ্ডিত ও পাকিস্তানের জনগণের দ্বারা সম্মানিত ছিলেন।[১২]
১৯৯৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কাদরী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে ইন্দোনেশিয়ার একটি সরকারী সফরে যান। এই সফরের সময়ই চতুর্থ শাবান ১৪১৩ হিজরি, ২৭ জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে জাকার্তায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[১৩] জাকার্তায় কাদরীর জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হামিদ সাঈদ কাজেমী, যিনি তখন জাকার্তায় জেইউপির এমএনএ ছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল যে, ইসলামি দেশগুলির রাষ্ট্রদূত ও ধর্মীয় পণ্ডিতগণ, ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তাগণ এবং ইন্দোনেশিয়ায় পাকিস্তানের বিদেশী প্রতিনিধিসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছিল।[২][১৪][১৫] সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স করে ১৯৯৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার মরদেহ পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনা হয়, তাকে করাচির দারুল উলূম নঈমীয়ায় দাফন করা হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সকল চিন্তাধারার পণ্ডিতদের উপস্থিতিতে করাচিতে কাদরীর জানাজা তার ভাই সৈয়দ সাদাত আলী কাদরীর ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয়। আনুমানিক পনের হাজার মানুষ তার জানাজায় অংশ নিয়েছিল।[১৬] তার সমাধি দারুল উলূম নঈমীয়ার ভিতরে অবস্থিত।[১৭]
সৈয়দ শুজাত আলী কাদরীর মৃত্যুকে একটি জাতীয় শোক এবং পাকিস্তানের জনগণের জন্য ইসলামের প্রখ্যাত ধর্মীয় পণ্ডিতের একটি বড় ক্ষতি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ নওয়াজ শরীফ কাদরীর মৃত্যুতে তার গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নিম্নরূপ:
“ | মুফতি সৈয়দ শুজাত আলী কাদরী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, দয়ালু হৃদয়ের অধিকারী।[১৮] | ” |
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা বেনজির ভুট্টো তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন:
“ | মুফতি সৈয়দ সুজাত আলী কাদরী একজন মহান আলেম ছিলেন যিনি ইসলাম প্রচার এবং উম্মাহর উন্নতিতে তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।[১৯] | ” |
তৎকালীন ফেডারেল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল সাত্তার খান নিয়াজী শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন:
“ | ইসলামের জন্য অমূল্য সেবা প্রদানকারী একজন মহান আলেমকে দেশ হারালো। মহান আল্লাহ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দান করুন।[১৮] | ” |
আহমেদ নুরানী সিদ্দিকী কাদরীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে কাদরীর বাড়িতে গিয়েছিলেন:
“ | মুফতি সৈয়দ সুজাত আলী কাদরী ছিলেন একজন দক্ষ আলেম, পণ্ডিত এবং চমৎকার শিক্ষক। আহলে সুন্নাহ সম্প্রদায়ের লোকেরা কখনই তাঁর মূল্যবান খেদমতের কথা কখনোই ভুলবে না।[২০] | ” |