আতা আল-আইয়ুবি عطا الأيوبي | |
---|---|
সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৫ মার্চ ১৯৪৩ – ১৭ আগস্ট ১৯৪৩ | |
পূর্বসূরী | জামি আল-উলশি |
উত্তরসূরী | শুকরি আল-কুয়াইতি |
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ – ২১ ডিসেম্বর ১৯৩৬ | |
পূর্বসূরী | তাজউদ্দিন আল-হাসানি |
উত্তরসূরী | জামিল মারদাম বে |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | দামেস্ক, উসমানীয় সাম্রাজ্য | ২৫ মার্চ ১৮৭৭
মৃত্যু | ২১ ডিসেম্বর ১৯৫১ দামেস্ক, সিরিয়া | (বয়স ৭৪)
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
আতা আল-আইয়ুবি (২৫ মার্চ ১৮৭৭ – ২১ ডিসেম্বর ১৯৫১; আরবি: عطا الأيوبي) ছিলেন উসমানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি। তিনি সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্তানবুলে তিনি প্রশাসন নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। এরপর তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯০৮ সালে তিনি সিরিয়ান উপকূলের লাতাকিয়ার গভর্নর হন। ১৯১৬-১৯১৮ সালের উসমানীয়-আরব সংঘাতের সময় তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন। কিন্তু ১৯১৮ সালে উসমানীয়দের পরাজয়ের পর তিনি দামেস্কে বসবাসের জন্য ফিরে আসেন। উসমানীয়দের প্রত্যাবর্তন ও আরব বাহিনীর আগমনের মধ্যবর্তী চারদিন সময়ের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য সিরিয়ানদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করেন। সাইদ আল-জাজাইরি ছিলেন এই সরকারের প্রধান।
১৯২০ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী আলাউদ্দিন দারাওবি তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেন। এসময় বাদশাহ প্রথম ফয়সালের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি সিরিয়ায় ফরাসি মেন্ডেটের সময় দপ্তরে ছিলেন। তিনি স্থানীয় জাতীয়তাবাদিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সিরিয়ান উপকূলের বিদ্রোহের নেতা সালেহ আল-আলি ও হানানু বিদ্রোহের নেতা ইবরাহিম হানানুর কাছে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করেন। এসময় তিনি বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার করতে রাজি হননি। বিখ্যাত মাইসালুনের যুদ্ধের সময় তিনি মন্ত্রী ছিলেন। যুদ্ধে সিরিয়ানরা ফরাসিদের কাছে পরাজিত হয়। আইয়ুবির সহকর্মী জেনারেল ইউসুফ আল-আজমা যুদ্ধে নিহত হন।
১৯২০ সালে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি দক্ষিণ সিরিয়ার হাওরান প্রদেশে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ফরাসি মেন্ডেটের অধীনে দপ্তর গ্রহণের কারণে তাকে তারা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯২২ সাল পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল ছিলেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী সুবহি বারাকাতের ফরাসিপন্থি মন্ত্রিসভার বিচার মন্ত্রী হন। ১৯২৫ সালের অভ্যুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯২৮ সালে তিনি প্রধান ফরাসি বিরোধী আন্দোলন ন্যাশনাল ব্লকের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। তবে তিনি এর সদস্য হননি। সশস্ত্র প্রতিরোধের বদলে কূটনৈতিক পন্থায় সিরিয়ার স্বাধীনতা অর্জন তাদের উদ্দেশ্য ছিল। একইসময় আইয়ুবি ফরাসি কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন। ১৯৩০ এর দশকে তিনি দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৩৪ সালের মার্চে তিনি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আল-হাসানির মন্ত্রিসভার বিচারমন্ত্রী হন।
১৯৩৬ সালে ব্লকের সাথে ফরাসিদের সম্পর্ক অবনতি হয়। ব্লক নেতারা প্রতিবাদ হিসেবে হরতালের আহ্বান জানান। হরতালের ফলে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। একই সময় ফরাসিরা বহুসংখ্যক সিরিয়ানকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে। এই অবস্থা ষাটদিন পর্যন্ত চলেছিল। উত্তর আফ্রিকার ফরাসি উপনিবেশে হরতাল ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কায় ফরাসি সরকার সিরিয়ানদের দাবি মানতে রাজি হয় এবং স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলাপের জন্য ব্লকের প্রতিনিধিদের প্যারিসে আমন্ত্রণ জানায়।
আলোচনা চলাকালে তাজউদ্দিন হাসানির ফরাসিপন্থি মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করা হয়। ফরাসি হাই কমিশনার কোত হেনরি দা মার্টেল আইয়ুবিকে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানান। নতুন সরকারে ন্যাশনাল ব্লক ও ফরাসিপন্থি আন্দোলনের সদস্যরা ছিলেন। ১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্লকের প্রতিনিধিরা ফ্রান্স থেকে ফিরে আসার পর আইয়ুবি পদত্যাগ করেন। তিনি ৬০দিনব্যপী হরতালের সমাপ্তি এবং ২৫ বছর মেয়াদে সিরিয়ার স্বাধীনতার ব্যাপারে ফরাসিদের সাথে ঐকমত্যের ঘোষণা দেন। সিরিয়ানরা সমঝোতা অনুমোদন করলেও পরে ফরাসিরা তা প্রত্যাখ্যান করে। ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হলে গুরুত্বপূর্ণ এই উপনিবেশ হাতছাড়া করার ব্যাপারে তারা শঙ্কায় করেছিল। ১৯৪৩ সালের মার্চে বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে চার্লস দা গল সিরিয়ায় মিত্রবাহিনীর একটি অভিযানে নেতৃত্ব দেন। আইয়ুবি ১৯৪৩ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ছিলেন। শুকরি আল-কুয়াইতি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করেন।