আব্দুল আজিজ বিন বায | |
---|---|
عبد العزيز بن باز | |
সৌদি আরবের প্রধান মুফতি | |
অফিসে ১৯৯৩ – ১৯৯৯ | |
পূর্বসূরী | মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম আল আশ-শেখ |
উত্তরসূরী | আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শাইখ |
উপাধি | মুফতি, শেখ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ২১ নভেম্বর ১৯১২ |
মৃত্যু | ১৩ মে ১৯৯৯ (৮৮ বছর বয়স) |
সমাধিস্থল | আল আদল গোরস্থান, মক্কা, সৌদি আরব |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | সৌদি আরব |
যুগ | আধুনিক যুগ |
অঞ্চল | মধ্য প্রাচ্য |
আখ্যা | সুন্নী |
ব্যবহারশাস্ত্র | সালাফী |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | আছারি |
আন্দোলন | ওয়াহাবী আন্দোলন[১] |
মুসলিম নেতা | |
শিক্ষক | মুহাম্মদ শফি উসমানি[২] |
যার দ্বারা প্রভাবিত
| |
যাদের প্রভাবিত করেন
| |
পুরস্কার | ইসলামী পরিষেবায় বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার (১৯৮২) |
ঐতিহ্যবাহী সালাফিবাদ (জ্ঞানমূলক/বৈজ্ঞানিক সালাফিবাদ) |
---|
সালাফিবাদের অংশ |
আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে বায (আরবি: عبد العزيز بن باز; জন্মঃ ২১ নভেম্বর ১৯১২[৩] – মৃত্যুঃ ১৩ মে ১৯৯৯) ছিলেন সৌদি আরবের বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত এবং সালাফি মতাদর্শের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ১৯৯৩ সাল থেকে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের প্রধান মুফতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বিন বায (রাহঃ)সোভিয়েত বিরোধী জিহাদের সময় একটি ফতোয়া প্রদান করেছিলেন। সেই ফতোয়ায় বলা হয় প্রত্যেকের সম্পদের কর যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদিনদের সমর্থনের জন্য দিতে হবে।[৪] আব্দুল্লাহ আযযামের "মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা" নামক ফতোয়ায় বিন বাযের অনুমোদন সোভিয়েত বিরোধী জিহাদে অংশগ্রহণ করার আহবানকে প্রচন্ড প্রভাবিত করেছিলো। তখন এটা বলা হত যে, আধুনিক যুগে একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপর কোন রাষ্ট্রের এটাই প্রথম অফিসিয়ালি যুদ্ধের আহবান।[৫]
ইবনে বায (রাহঃ) এর অনেক মতামত ও বিধি-বিধান সৌদি আরবের ভেতর এবং বাহিরে বিতর্কিত হয়েছিল। বিশেষ করে সৃষ্টিতত্ত্ব, নারী অধিকার, অসলো চুক্তিতে সৌদি আরবের সমর্থন এবং মক্কা ও মদীনার দুই পবিত্র মসজিদে অমুসলিম সৈন্যদের অবস্থান (গাল্ফ যুদ্ধের আগে ও পরে) ইত্যাদি সম্পর্কিত তার ফতোয়া প্রচন্ড বিতর্কের জন্ম দেয়। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র নীতি এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সৌদি জোটে সমর্থনের জন্য ওসামা বিন লাদেন বিন বাযের প্রচন্ড নিন্দা করতেন।
ইবনে বায (রাহঃ) ১৯১২ সালে হিজরী জ্বিলহজ্জ মাসে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার পরিবার ইসলাম ধর্ম পালনের জন্য বিখ্যাত ছিলো। তিন বছর বয়সে বিন বায তার বাবাকে হারান। তেরো বছর বয়সে তিনি তার ভাইদের সাথে বাজারে গিয়ে কাপড় বিক্রি করতেন। একই সাথে তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ এবং তাফসীরের ওপর জ্ঞানার্জন শুরু করেন।[৬] তার শিক্ষক ছিলেন মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আল আশ-শেখ। [৭] ১৯২৭ সালে যখন তার বয়স মাত্র ষোল বছর, তখন তার চোখে একটি গুরুতর সংক্রমণ হয় এবং তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারানো শুরু করেন। বিশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে একদম অন্ধ হয়ে যান।[৮][৯]
সে সময়ে সৌদি আরবে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় বলতে ছিলো না। বিন বায (রাহঃ)বিভিন্ন ইসলামী পণ্ডিতদের কাছে কুরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসীর এবং ইসলামি সাহিত্যের ওপর জ্ঞানার্জন করেন।[১০][১১]
তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যেমন:[১২]
১৯৮১ সালে তিনি বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। ইসলাম ধর্মে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।![১৩][১৪] সৌদি আরবের তিনিই একমাত্র গ্র্যান্ড মুফতি যিনি আল আশ-শেখ পরিবারের সদস্য নন।[১৫]
ইবনে বায (রাহঃ) বিভিন্ন অনেক দাতব্য এবং অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। যেমন:[১৩]
ইবনে বায (রাহঃ)একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার মসজিদে নিয়মিত বক্তব্য দিতেন। তার বক্তব্য শোনার জন্য অনেক মানুষ ভীড় জমাতো। মাঝে মাঝে তিনি লোকজনদের এশার নামাযের পর তার সাথে খাওয়ার নিমন্ত্রণ দিতেন।.[১৩] ইবনে বায (রাহঃ) সেই সমস্ত মুসলিম পণ্ডিতদের একজন ছিলেন, যারা বিশ্বাস করতেন যে সহিংসতার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা ইসলাম সমর্থন করে না।[১৬] সে জন্য তিনি জনগণকে সরকারের আনুগত্য করার আহবান জানান, যতক্ষণ না সরকার অনৈসলামিক কাজ করতে বাধ্য করে।[১৭]
ইবনে বায (রাঃহ) এর লেখা বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। তার বইয়ের বিষয়বস্তু হলো কুরআন, হাদিস, ফিকহ, ফারযিয়াত, নামায, জাকাত, দাওয়াত, হজ্জ্ব, ওমরাহ্ ইত্যাদি।[১৩] এছাড়াও তিনি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে বই লিখেছেন।[৬][৭]
বিন বাযের (রাহঃ) সকল স্ত্রী এবং সন্তানেরা রিয়াদের অদূরে শুমায়ছিতে আধুনিক দুই তলা ভবন এ বসবাস করতেন। অন্যান্য সৌদি অভিজ্ঞ পণ্ডিতদের মত তার বাসাও ধনী ব্যক্তি বা ধর্মীয় ফাউন্ডেশন এর উপহার ছিলো।
বৃহস্পতিবার সকালে, ১৩ মে ১৯৯৯ ইবনে বায (রাহঃ) ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। মক্কার আল আদিল কবরস্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়।[১৮]
বাদশাহ ফাহাদ একটি ডিক্রি জারির মাধ্যমে বিন বাযের (রাহঃ)স্থলে নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আশ শেখ কে নিয়োগ প্রদান করেন।[১৯]
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে তার কর্মজীবনে সৌদি ক্ষমতাসীন পরিবারের শাসনকে বৈধতা দিতে এবং সালাফি আদর্শের আলোকে মুসলিমদের সংস্কারের জন্য চেষ্টা করেছেন। রাজবংশকে সমর্থন করার জন্য অনেকে তার সমালোচনাও করেছে। সালাফি আন্দোলনে তার প্রভাব ছিল অনেক। বর্তমানে সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকার বিশিষ্ট বিচারক ও ধর্মীয় পণ্ডিতরা ইবনে বাযের সাবেক ছাত্র।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় বলা হয় "তার মতামত এবং ফতোয়া (ধর্মীয় বিধি-বিধান) ছিল বিতর্কিত, যা একই সাথে জঙ্গি, উদারপন্থী এবং প্রগতিশীলদের নিন্দা করে।"[২০] এছাড়াও ১৯৯১ সালে সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থান করতে সমর্থন করায় কট্টরপন্থীরা তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলো।[২১]
১৯৬৬ সালে যখন বিন বায (রাহঃ)ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনার উপাচার্য ছিলেন, তখন তিনি রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিন্দামূলক একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেই নিবন্ধে তিনি বলেন যে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় 'পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে' এইরূপ মিথ্যা তথ্য শিক্ষা দিচ্ছে।[২২][২৩]
লেখক রবার্ট লেসি বিন বাযের একটি ফতোয়া উল্লেখ করে বলেন,আমেরিকানরা চাঁদে অবতরণ করেছে এই তথ্যের ওপর তিনি মুসলিমদের আহবান জানিয়ে বলেন, "আমরা অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করব যখন কাফের এবং ফাসেকরা আমাদের কোন তথ্য জানাবে। আমরা তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোন কিছুই করব না যতক্ষন না মুসলিমরা নির্ভর করতে পারে এমন তথ্যসূত্র পাই।"
ধর্মীয় পদবীসমূহ | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম আল আশ-শেখ |
সৌদি আরবের প্রধান মুফতি ১৯৯২–১৯৯৯ |
উত্তরসূরী আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শাইখ |