এস. পি. বালসুব্রহ্মণ্যম | |
---|---|
![]() | |
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | শ্রীপতি পণ্ডিতআরাধ্য বালসুব্রহ্মণ্যম |
জন্ম | [১] নেল্লোর, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত)[২][৩][৪] | ৪ জুন ১৯৪৬
মৃত্যু | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ চেন্নাই, তামিলনাড়ু, ভারত | (বয়স ৭৪)
ধরন | নেপথ্য সঙ্গীত[১] |
পেশা |
|
কার্যকাল | ১৯৬৫-বর্তমান |
শ্রীপতি পণ্ডিতআরাধ্য বালসুব্রহ্মণ্যম (তেলুগু: ఎస్. పి. బాలసుబ్రహ్మణ్యం; ৪ জুন ১৯৪৬ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতজ্ঞ, নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, অভিনেতা, ডাবিং শিল্পী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন। তিনি এস. পি. বালু, এস. পি. বি. বা এককভাবে বালু নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত তেলুগু, তামিল, কন্নড়, হিন্দি ও মালয়ালম ভাষার চলচ্চিত্রে কাজ করতেন। জাতি হিসেবে বলসুব্রাহ্মণ একজন তেলুগু যদিও তামিল ভাষাও অনর্গল বলতে পারতেন এবং তার চলচ্চিত্র জগতের যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে তামিল চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই। তিনি ১৬টি ভারতীয় ভাষায় ৪০,০০০-এর অধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
চারটি ভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি ছয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন; তেলুগু চলচ্চিত্রে কাজের জন্য ২৫টি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চলচ্চিত্র পুরস্কার নন্দী পুরস্কার পেয়েছেন, এবং কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াও তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ অর্জন করেছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০০১ সালে পদ্মশ্রী ও ২০১১ সালে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে। ২০১২ সালে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য এনটিআর জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৬ সালে তাকে একটি রৌপ্য ময়ূর পদক-সহ বর্ষসেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর এমজিএম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এস. পি. বালসুব্রহ্মমণ্যম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (বর্তমান তিরুবল্লুর জেলা, তামিলনাড়ু) উত্তর আর্কোট জেলার কনেটাম্পেট গ্রামে এক তেলুগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং নেল্লোরে বেড়ে ওঠেন।[৫][৬] তার পিতা এস. পি. সাম্বামূর্তি হরিকথা শিল্পী ছিলেন এবং তিনি নাটকে অভিনয়ও করতেন।[৭] তার মাতা শকুন্তলাম্মা ২০১৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।[৮] তার দুই ভাই ও পাঁচ বোন রয়েছে। সঙ্গীতশিল্পী এস. পি. শৈলজা তার বোন।[৯][১০][১১] তার পুত্র এস. পি. চরণ দক্ষিণ ভারতীয় গায়ক, অভিনেতা ও প্রযোজক।[১২]
বালসুব্রহ্মণ্যম ১৯৮০ সালে শঙ্করভরনম চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটি তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র বলে বিবেচিত। কে. বিশ্বনাথ পরিচালিত চলচ্চিত্রটির সুরারোপ করেন কে. ভি. মহাদেবন এবং তিনি তেলুগু চলচ্চিত্রে অতিমাত্রায় কর্ণাটকী সঙ্গীতের ব্যবহার করেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত না হলে বালসুব্রহ্মণ্যম এই চলচ্চিত্রের গান রেকর্ডের ক্ষেত্রে নান্দনিকতার পরিচয় দেন।[১৩] এই চলচ্চিত্রে "ওমকারা নাধানু" গানের জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১৪] হিন্দি চলচ্চিত্রে তার প্রথম কাজ ছিল এক দুজে কে লিয়ে (১৯৮১)। এই চলচ্চিত্রের "তেরে মেরে বিচ মেঁ" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১৫]
বালসুব্রহ্মণ্যম এ আর রহমানের সুরারোপিত প্রথম চলচ্চিত্র রোজা-র তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। তন্মধ্যে কে. এস. চিত্রার সাথে তার "ইয়ে হাসিন ওয়াদিয়া" দ্বৈত গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তী কালে তিনি রহমানের সাথে দীর্ঘকাল কাজ করেন। এ আর রহমানের সুরে তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গান হল পুধিয়া মুগাম (১৯৯৩)-এর "জুলি মাধম"। এই গানে মধ্য দিয়ে গায়িকা অনুপমা কৃষ্ণস্বামীর নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অভিষেক ঘটে। এছাড়া তিনি কিঝাক্কু চেমাইল (১৯৯৩) চলচ্চিত্রের লোকধর্মী "মন্নুতু মান্তাইলে" গান, সঙ্গীতধর্মী প্রণয়মূলক ডুয়েট (১৯৯৪) চলচ্চিত্রের প্রায় সবক'টি গানে কণ্ঠ দেন।
১৯৯৪ সালে হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন..! চলচ্চিত্রটি হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র।[১৬] এই চলচ্চিত্রে লতা মঙ্গেশকরের সাথে বালসুব্রহ্মণ্যমের দ্বৈত গান "দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা" জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এটি বালসুব্রহ্মণ্যমকে এককভাবে ভারতের অন্যতম সেরা নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।[১৭] এছাড়া ১৯৯০-এর দশক জুড়ে তিনি সালমান খানের নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন, ঠিক যেমনটি ১৯৭০-এর দশকে রাজেশ খান্নার নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কিশোর কুমার খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।[১৮]
রহমানের সুরে মিন্সার কনবু (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের "তাঙ্গা তামারাই" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি তার ষষ্ঠ ও সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১৯]
২০২০ সালের ৫ই আগস্ট বালসুব্রহ্মণ্যমের কোভিড-১৯ পজিটিভ ফলাফল আসে এবং তাকে চেন্নাইয়ের এমজিএম হেলথকেয়ারে ভর্তি করা হয়। তার স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যেতে থাকলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। তার ভেন্টিলেটর ও কৃত্রিম উপায়ে বাড়তি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থার (একমো) দরকার হয়।[২০][২১] তার পূত্র চরণ ভক্তদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের সদস্যরা ২০শে আগস্ট জুমে গণ প্রাথর্না করে এবং ভক্তরা হাসপাতালের বাইরে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করে।[২২] ২০২০ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর বালসুব্রহ্মণ্যমের করোনাভাইরাসের নেগেটিভ ফলাফল আসে, তবুও তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। তার পুত্র জানান এসপিবি তখনো নড়াচড়া করতে পারছেন এবং তার আইপ্যাডে টেনিস ও ক্রিকেটে খেলা দেখছেন।[২৩] এক মাসের অধিক সময় হাসপাতালে থাকার পর তিনি ২০২০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।[২৪][২৫]