কৈলাশ সত্যার্থী (হিন্দি: कैलाश सत्यार्थी; জন্ম: ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৪) মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী।[১] ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তার সংগঠন বাচপান বাঁচাও আন্দোলন অক্টোবর, ২০১৪ সাল পর্যন্ত আশি হাজারেরও অধিক শিশুকে ক্রীতদাসত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মুক্ত করেছে এবং তাদের পুণঃমিলন, পুণর্বাসন ও শিক্ষায় সহযোগিতা করেছে।[২]মালালা ইউসুফজাইয়ের সাথে যৌথভাবে তাকে ২০১৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে নোবেল কমিটি বলেছে যে, ‘শিশু ও তরুণদের নির্যাতনের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ এবং সকল শিশুর শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রেক্ষাপটে তাঁকে এ পদক প্রদান করা হলো।’[৩][৪]
কৈলাশ সত্যার্থী ১৯৫৪ সালের ১১ই জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার উপাধিটি সত্যার্থীতে পরিবর্তিত করেছেন (অর্থ 'সত্যের অনুসন্ধানকারী')। একটি ঘটনায় নাম পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়, যেখানে তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে দ্বারা এবং তার নিজস্ব শহরের নেতারা যারা ভারতীয় বর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতেন তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, উচ্চ বর্ণের মানুষদের জন্য একটি নৈশভোজ সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন যেখানে নিম্ন বর্ণ অর্থাৎ তথাকথিত 'অস্পৃশ্য' মানুষ দ্বারা রান্নার আয়োজন করেন। যখন শহরের নেতৃবৃন্দ নৈশভোজে যোগ দিতে ব্যর্থ হন, সত্যার্থী তার বাড়ীতে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে দেখেন, গঙ্গার নদীতে স্নান করে না আসলে বয়স্ক উচ্চ বর্ণের লোকেরা তার পরিবারকে বিতাড়িত করার হুমকি দিচ্ছিল।[৫] উপরন্তু, "(তিনি) ১০১ পুরোহিতদের পা ধুয়ে এবং জল পান করে তাঁদের জন্য ভোজের আয়োজন করতে হবে"। সত্যার্থী তাদের অযৌক্তিক দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেন। যাইহোক, সত্যার্থীকে তখনও শাস্তি দেয়া হয়, তাকে তার বাড়ির রান্নাঘর এবং খাবার ঘর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং তার বাসনপত্র পৃথক করা হয়। তাকে বহিষ্কার করার প্রয়াসে ক্ষুব্ধ, সত্যার্থী অধিকাংশ ভারতীয় পদবী একটি পরিবারের জাতি প্রতিফলিত করে, সেই পদবী প্রত্যাখ্যান করে, সত্যার্থীতে পরিবর্তন করে, "সমগ্র জাতি ব্যবস্থাকে বহিষ্কার করেন”।
সত্যার্থীর শৈশবকালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি তার স্কুলের প্রথম দিনে ঘটেছিল, যেখানে সত্যার্থী তখনো একজন শিশু ছিলেন নজর করেন যে তার বয়সী একটি ছেলে, বাবার সাথে, স্কুল ভবনের বাইরে, জুতা মেরামতির জিনিস নিয়ে বসে আছে। তার শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করার পর ছেলেটি কেন তার মতো স্কুলে যায়নি এবং উত্তর না দেওয়ায়, সত্যার্থী তার প্রধানশিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যিনি বলেন যে মুচিটি দরিদ্র ছিল তাই সে তার ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারত না এবং দরিদ্র শিশুদের জন্য বেঁচে থাকার জন্য কাজ করা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। উত্তরে অসন্তুষ্ট সত্যার্থী নিজেকে মুচিকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন সে তার ছেলেকে স্কুলে পাঠায় নি। তিনি বলেন যে কিছু সন্তান আছে যারা "কাজ করতে জন্মগ্রহণ" করে।[৬] সত্যার্থী এইভাবে প্রথম বার তিনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন কেন কিছু শিশুর জন্ম পরিস্থিতির কারণে "তাদের শৈশব, স্বাধীনতা এবং শিক্ষা এবং স্বপ্নের পরিবর্তে " কাজ করতে জন্ম হয়।[৭]
তিনি বিদিশা সরকার বয়েজ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করেন।[৫]। ও সম্রাট অশোক টেকনলজিকাল ইনস্টিটিউট, বিদিশা[৮][৯][১০] থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর ডিগ্রী অর্জন করেন[১১] এবং পরবর্তিতে হাই-ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সমাপ্ত করেন। তিনি পরবর্তিতে ভূপালের একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কয়েক বছর কর্মজীবন অতিবাহিত করেন।[১২]
১৯৮০ সালে তিনি একজন প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন এবং বন্ডেড লেবার লিবারেশন ফ্রন্টের সেক্রেটারি জেনারেল হন; তিনি বচপন বাঁচাও আন্দোলন ( শৈশব সংরক্ষণ আন্দোলন) সেই বছরের প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাধারণ সম্পাদক হন। শিশুবিষয়ক সামাজিক বিষয়াবলী নিয়ে সত্যার্থী বৈশ্বিক প্রচারণা চালান। [১৩][১৪] এছাড়াও শিশু শ্রমের বিপক্ষে বৈশ্বিক পদচারণার সাথে সংযুক্ত রয়েছেন।[১৫] বেসরকারী সংস্থা, শিক্ষক ও ট্রেড ইউনিয়নকর্মী এবং শিক্ষার জন্য বৈশ্বিক প্রচারণা সংস্থার বৈশ্বিক জোটকে নিয়ন্ত্রণকারী ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অন চাইল্ড লেবার এন্ড এডুকেশনের (আইসিসিএলই)[১৬] আন্তর্জাতিক পরামর্শক পরিষদের সাথেও তিনি জড়িত।[১৭][১৮]
সত্যার্থী বহু সংখ্যক তথ্যচিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, টক শো, প্রচার ও সচেতনতা ছায়াছবির বিষয়বস্তু হয়েছেন।[১৯] সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে ইন্ডিয়া টাইমস ১১ জন মানবাধিকার কর্মীদের তালিকাভুক্ত করে যাঁদের জীবনের লক্ষ্য অন্যদের সম্মানজনক জীবনযাত্রা প্রদান করা, তাদের মধ্যে সত্যার্থী একজন।[২০] সত্যার্থীকে নিম্নলিখিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে:
সত্যার্থী নোবেল পুরস্কার লাভের পর শিশু শ্রমের অবৈধীকরণের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। কিছু জনের মতে, এটি শিশু শ্রমকে লুক্কায়িত করে তুলবে, যা মজুরি হ্রাস করতে পারে।
১৬ জুন ২০১৫ সত্যার্থী শিশুশ্রম এবং দাসত্বের বিশ্বব্যাপী বর্জনের দিকে নেতা ও দেশগুলিকে উদাত্ত আহ্বান জানালেন। লিংঙ্কন স্মৃতিসৌধে বহু সংখ্যক শিশু অধিকার সংগঠন এবং সংগঠন সত্যার্থিকে যোগদান করেন, যেখানে তিনি দাসত্ব, শ্রম, অপব্যবহার, পাচার এবং নিরক্ষরতা থেকে শিশুদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আহ্বান জানান।[৩৮]
↑Kidwai, Rasheed (১০ অক্টোবর ২০১৪)। "A street rings with 'Nobel' cry"। The Telegraph। Calcutta। ১৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-১৩। Kailash Satyarthi was born Kailash Sharma in this Madhya Pradesh town but dropped the upper-caste surname […] Pravesh told The Telegraph. […] By 4pm, the Sharmas had had virtually the entire town of Vidisha visiting them. Almost every resident older than 50 has a story to tell about Kailash. Kailash had graduated in electrical engineering from the Samrat Ashok Technological Institute, Vidisha, and taught at a local polytechnic.
↑Trivedi, Vivek (১১ অক্টোবর ২০১৪)। "Kailash Satyarthi's hometown Vidisha celebrates Nobel win"। News18.com। Noida, Uttar Pradesh: Network18। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-১৪। He was born and brought up in Chhoti Haweli in Andar Quila area of the town. […] locals were seen drawing affiliation to institutions linked to Satyarhti including his schools – Toppura Primary School, Pedi school and Government Boys Higher Secondary School and Samrat Ashok Technological Institute (SATI) from where Satyarthi graduated in Electrical Engineering and later taught there for two years before embarking his journey to serve humanity.
↑Kapoor, Sapan (১১ অক্টোবর ২০১৪)। "Gandhiji would have been proud of you, Kailash Satyarthi"। The Express Tribune Blogs। Karachi। ১৫ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-১৪। Mr Kailash Satyarthi has come a long way since his engineering days at Samrat Ashok Technological Institute, Vidisha, Madhya Pradesh, literally. My father, who was one year senior to this electrical engineering student, vividly remembers him […] who would come to the college in his staple kurta-payjama with a muffler tied around his neck.
↑"Kailash Satyarthi"। Robert F. Kennedy Center for Justice & Human Rights। ১৮ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।