খান্ডুয়া (এছাড়াও মানিয়াবান্ধি বা কটকি) হল ওড়িশা থেকে উৎপন্ন একটি ঐতিহ্যবাহী "বাঁধা" বা ইক্কত শাড়ি। [১][২][৩][৪][৫] বিবাহের সময় মহিলারা এটি পরিধান করেন। [৬][৭] এরই একটি বিশেষ ধরন জগন্নাথকে পরিধান করানো হয়। সেই কাপড়ের গায়ে গীতগোবিন্দের ছত্র লেখা থাকে। [৮] ১২ ফুট লম্বা কেন্দুলি খান্ডুয়া, যেটি খান্ডুয়ার একটি বিশেষ রূপ, এবং ২টি কানি (প্রতিটি কানি এক হাত পরিমাণ দীর্ঘ) খান্ডুয়া হিসাবে পরিধান করার জন্য জগন্নাথকে দেওয়া হয়। তাতে গীতা গোবিন্দের স্তবক এবং চিত্র অঙ্কিত থাকে। [৯][১০]
ভুবনেশ্বর (ওড়িশা রাজ্যের রাজধানী) থেকে প্রায় ৭০ কিমি দূরে, কটক জেলার তিগিরিয়া ব্লকের একটি ছোট গ্রাম নুয়াপাতনার খান্ডুয়া শাড়ি ও কাপড়ের একটি সমৃদ্ধ এবং গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে নুয়াপাতনার উৎপত্তি ও গুরুত্ব ভগবান জগন্নাথের মন্দির থেকে এসেছে। বুনকর (উড়িষ্যার তাঁতি সম্প্রদায়) নামক গ্রামের কারিগরদের একটি অংশকে মন্দিরের কাজে সেবক (ভগবানের সেবক) হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলভদ্রের (ভাই ও বোন) জন্য আলংকারিক কাপড় বুনতে তাঁদের রাখা হয়েছিল। পরবর্তীকালে আলংকারিক পোশাকগুলি খান্ডুয়া শাড়ি (ওডিশার খান্ডুয়াপাটা) নামে পরিচিত হয়ে গেছে।[১১]
ওডিয়া ভাষায় শরীরের নিচের অংশে পরিধান করা কাপড়কে খান্ডুয়া বলা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে কেন্তুলি খান্ডুয়া কাপড় জগন্নাথের নিম্নাঙ্গের কাপড় হিসাবে নিবেদন করা হয়। কটক ও মানিয়াবান্ধা এই শাড়ির উৎপত্তিস্থল হওয়ার কারণে, বাকি দুটি নাম কটকী এবং মানিয়াবান্ধি রূপে উদ্ভূত হয়েছে।[১০]
কটকের মানিয়াবান্ধা ও নুয়াপাতনার তাঁতি সম্প্রদায়[১০][১২] ঐতিহ্যগতভাবে এই ধরনের পাটা বুনন করে। গজপতিদের শাসনকালে, শাড়ি তৈরি করা হত এবং জগন্নাথ মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হত। বাদাখেমুন্ডির নীলকন্ঠ দেবকে 'খান্ডুয়া শাড়ি' দেওয়া হয়েছিল। এটি খান্ডুয়া সিল্কের এক টুকরো দিয়ে তৈরি, যাকে কৌকান্দিকা বলা হয়।[১৩][১৪]
এই শাড়ির দুটি প্রধান কাঁচামাল হল রেশম এবং সুতির সুতো। তবে শাড়িটির আরও সৌন্দর্যবৃদ্ধি করতে এবং একে আরও আকর্ষণীয় করতে কারিগররা জরিও ব্যবহার করেন।[১১]
ঐতিহ্যগতভাবে খান্ডুয়া লাল বা কমলা রঙের হয়। লাল রঙ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় শাল (শাল গাছ) থেকে। [৭] নকশায় একটি পবিত্র হাতির মোটিফ রয়েছে যেটি বুদ্ধেরর প্রতিনিধিত্ব করে। এর চারপাশে রয়েছে ময়ূর, একটি বড় ও অনেক পাপড়িযুক্ত ফুল, নবগুঞ্জর নামে উড়িষ্যার একটি অনন্য প্রাণী এবং একটি দেউল কুম্ভ। নুয়াপাতনার খান্ডুয়া ইক্কতের হাতি, সাধারণত সম্বলপুরি শাড়ি এবং উড়িষ্যার অন্যান্য অঞ্চলের ইক্কতের হাতির মোটিফ থেকে আলাদা হয়।[১৫] উড়িষ্যার অন্যান্য ইক্কতের পাড়ের তুলনায় খান্ডুয়া শাড়ির পাড় কারুকার্যহীন। [১৬]
এই শাড়ি বুননের জন্য, ৭০% তাঁতি ফ্লাই শাটল কাঠামোর তাঁত ব্যবহার করেন এবং বাকি ৩০% তাঁতি পিট তাঁত ব্যবহার করেন। গুচ্ছের মধ্যে ওয়েফট সুতা বিভিন্ন জায়গায় নকশা অনুযায়ী বাঁধা হয় তারপর রং করা হয়। সুতোর উপর সমস্ত রকম রং না দেওয়া পর্যন্ত বাঁধা, খোলা এবং রং করার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এই সুতো পিরনে প্যাঁচানো হয় এবং বুননের সময় তাঁতে ব্যবহার করা হয়।[১১]