ছাং-ও ৫ | |||||
---|---|---|---|---|---|
অভিযানের ধরন | পৃষ্ঠদেশীয় নমুনা প্রত্যানয়ন | ||||
পরিচালক | চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (CNSA) | ||||
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য | |||||
প্রস্তুতকারক | চীনের মহাকাশ প্রযুক্তি অ্যাকাডেমি (CAST) | ||||
উৎক্ষেপণ ভর | ৮,২০০ কেজি (১৮,১০০ পা)[১] | ||||
অভিযানের শুরু | |||||
উৎক্ষেপণ তারিখ | ২৩শে নভেম্বর ২০২০[২] | ||||
উৎক্ষেপণ রকেট | দীর্ঘ অভিযাত্রা ৫ | ||||
উৎক্ষেপণ স্থান | ওয়েনছাং | ||||
অভিযানের সমাপ্তি | |||||
অবতরণের স্থান | ওশেয়ানুস প্রোসেলারুম-এর মন্স রুমকার অঞ্চল[৩][৪] | ||||
চাঁদ অবতরক যান | |||||
----
|
ছাং-ও ৫[টীকা ১] (চীনা: 嫦娥五号; ফিনিন: Cháng'é wǔhào ছাং-ও উহাও) চীনা চন্দ্র অভিযান কর্মসূচির অন্তর্গত একটি রোবটভিত্তিক (স্বয়ংচালিত যন্ত্রভিত্তিক) চীনা চন্দ্রানুসন্ধান অভিযান।[৫] পূর্ববর্তী যানগুলির মতো এই যানটিকেও চীনের চন্দ্রদেবী ছাং-ও-র নামে নামকরণ করা হয়। মহাকাশযানটি ১,৭৩১ গ্রাম (৬১.১ আউন্স)[৬] ভরের চান্দ্র মাটি ও শিলার নমুনা পৃথিবীতে ফেরত নিয়ে আসে।[৩] এটি ছিল চীনের মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসের সর্বপ্রথম নমুনা প্রত্যানয়নকারী অভিযান এবং ১৯৭৬ সালের রুশ অভিযান লুনা ২৪-এর প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় পরে এটিই ছিল কোনও দেশের সর্বপ্রথম চান্দ্র নমুনা প্রত্যানয়ন অভিযান।[৭] এই অভিযান সফলভাবে সমাপ্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে চীন চাঁদের নমুনা সংগ্রহকারী তৃতীয় দেশে পরিণত হয়।
চীনের প্রথম দুইটি ছাং-ও মহাকাশযানগুলি চাঁদকে প্রদক্ষিণকারী কক্ষীয় আবর্তক যান ছিল। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ছাং-ও ৩ চাঁদে অবতরণ করলে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে চাঁদে সফলভাবে অবতরণকারী বিশ্বের তৃতীয় দেশে পরিণত হয়। এর প্রায় ৫ বছর পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ছাং-ও ৪ মহাকাশযানটি ইতিহাসের প্রথম মহাকাশযান হিসেবে চাঁদের দূরবর্তী পৃষ্ঠে অবতরণ করে। ২০২০ সালের শেষে এসেও ছাং-ও ৪-এর পরিভ্রামক যান (রোভার) ইউথু-২ সক্রিয় ছিল এবং প্রায় ২ বছর যাবৎ চাঁদের ভূতত্ত্ব নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে চীন একমাত্র দেশ যা চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছে এবং ছাং-ও ৫-এর মাধ্যমে দেশটি তিনবার এই কৃতিত্বটি অর্জন করেছে।[৮]
২০১৭ সালে দ্বিতীয় ছাং চেং ৫ ("দীর্ঘ অভিযাত্রা ৫") নামক উৎক্ষেপক যানের ব্যর্থতার পরে এই অভিযানটির তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।[৯]
ছাং-ও ৫ মহাকাশযানটিকে ২০২০ সালের ২৩শে নভেম্বর তারিখে সার্বজনীন সমন্বিত সময় অনুযায়ী ২০টা বেজে ৩০ মিনিটে দক্ষিণ চীনের উপকূলের কাছে দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত হাইনান দ্বীপের ওয়েনছাং কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং এটি ২০২০ সালের ১লা ডিসেম্বর তারিখে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে।[১০][১১][১২] এরপর এটি ২০২০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে সার্বজনীন সমন্বিত সময় অনুযায়ী ১৭টা বেজে ৫৯ মিনিটে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে।[৫][১০][১২]
চাঁদে অবতরণের পরে অভিযানের নমুনা সংগ্রাহক যানটি ১৯ ঘণ্টা ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং বিশ্বের ২য় দেশ হিসেবে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) চাঁদের বুকে নিজ দেশের (চীনের) পতাকা স্থাপন করে। ২০২০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তারিখে ছাং-ও ৫-এর আরোহী যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে আরোহণ করে উড্ডয়নের ৬ মিনিট পরেই চান্দ্র কক্ষপথে আবর্তন করতে শুরু করে এবং ইতোমধ্যে আবর্তনশীল সরঞ্জাম প্রকোষ্ঠটির সাথে সংযুক্ত হবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ৫ই ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে সার্বজনীন সমন্বিত সময় অনুযায়ী ২১টা বেজে ৪২ মিনিটে আরোহী যানটি আবর্তক-প্রত্যাবর্তক যানটির সাথে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ (রঁদেভু Rendez-vous) সম্পন্ন করে এবং সেটির সাথে একাধিক মানব-বাহুসদৃশ আঁকশির মাধ্যমে সংযুক্তি প্রক্রিয়াটি (ডকিং docking) সম্পাদন করে। ২২টা বেজে ১২ মিনিটে চাঁদের নমুনাগুলি প্রত্যাবর্তক প্রকোষ্ঠে স্থানান্তর সম্পন্ন হয়।[১৩] এটি ছিল মানবজাতির ইতিহাসে মহাশূন্যে কোনও মনুষ্যবিহীন ও স্বয়ংক্রিয় আ্যলগোরিদমভিত্তিক পদ্ধতিতে দুইটি মহাকাশযানের সংযুক্তির সর্বপ্রথম সফল ও ঐতিহাসিক একটি ঘটনা। এর আগে মার্কিন অ্যাপোলো অভিযানগুলিতে সংঘটিত সংযুক্তিগুলির ক্ষেত্রে মহাকাশযানগুলিতে মহাকাশচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংযুক্ত হবার পরে ছাং-ও ৫-এর প্রত্যাবর্তক সরঞ্জাম প্রকোষ্ঠটি প্রায় ১ সপ্তাহ চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে এবং পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করার জন্য সর্বানুকূল গতিপথের জন্য অপেক্ষা করবে। এর পরে এটি পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করে এবং পৃথিবী থেকে ৫০০০ কিলোমিটার দূরত্বে সরঞ্জাম প্রকোষ্ঠটি থেকে পুনঃপ্রবেশকারী যানটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চাঁদ থেকে রওনা হবার ১১২ ঘণ্টা পরে ১৬ই ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ নাগাদ এটি চীনের উত্তরভাগের অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়ার এক জনবিরল অংশে অবতরণ করে।[১৪]
চীনা চন্দ্র অভিযান কর্মসূচিটিকে ৪টি দশায় বিভিক্ত করে নকশা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দশা এর পূর্ববর্তী দশা থেকে প্রযুক্তিগতভাবে এক ধাপ অগ্রসর।[১৫]
কর্মসূচিটির সামগ্রিক লক্ষ্য হল ২০৩০-এর দশকে চীনা মহাকাশচারীদের চাঁদে অবতরণের কাজ সহজ করা এবং সম্ভব হলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি চীনা বসতি স্থাপন করা।[১৮]
মার্কিন দৈনিক সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতে ছাং-ও ৫-এর সাফল্য আগামী দশকগুলিতে এক নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতার মঞ্চ প্রস্তুত করেছে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম মহাকাশ প্রতিযোগিতাটি সংঘটিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল চাঁদে অবতরণের মাধ্যমে মহাকাশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। এর বিপরীতে নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হবে চাঁদের ভূতাত্ত্বিক সম্পদ ব্যবহার করে আরও গভীর মহাকাশে সৌরজগতের আরও বেশি দূরত্বে যাবার প্রতিযোগিতা। ছাং-ও ৫ অভিযানের সাফল্য মহাকাশ যাত্রায় চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও উচ্চাভিলাষের প্রমাণ। মার্কিন বেসরকারী, অলাভজনক সংস্থা দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটি-র ওয়াশিংটন ডিসি শাখার সভাপতি ব্রেন্ডান কারি বলেন যে চীন "নিশ্চিতভাবেই মহাকাশে এক প্রধান খেলোয়াড় হতে চায়"। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে মহাকাশ প্রতিযোগিতাটি বর্তমানে বন্ধুত্বসুলভ নয়। ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন করে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা-কে চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন বা চীনা মালিকানাধীন কোম্পানির সাথে সরাসরি কাজ করার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ফলে চীনের নিয়ে আসা অপেক্ষাকৃত নবীন চান্দ্র শিলা ও মাটিগুলি পর্যবেক্ষণ করা থেকে নাসা ও মার্কিন গ্রহ বিজ্ঞানীরা বঞ্চিত হবে।[৮]
এর বিপরীতে ছাং-ও ৫ অভিযানে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করেছে। ইউরোপীয় সংস্থাটি চীনের মহাকাশযানটিকে ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে অনুসরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে। ইউরোপের মহাকাশ খাতটি অপেক্ষাকৃত নবীন ও এর তহবিলও কম, তাই চীনের নেতৃত্বে মহাকাশযাত্রায় সহযোগিতা প্রদান করে চীনের কাছ থেকে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা আদায়ের ব্যাপারগুলি ইউরোপকে এই ধরনের সহযোগিতায় উৎসাহিত করেছে।[১৯]
ছাং-ও ৫-এর সফল প্রত্যাবর্তন চীনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশবিশেষ। চীন ২০২১ সালে মঙ্গলগ্রহে একটি মহাকাশযান অবতরণ, ২০২২ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে একটি স্থায়ী মহাকাশ স্টেশন স্থাপন, ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা প্রত্যানয়ন অভিযান, ২০২৫ সালে ১০০ কিলোওয়াট মহাকাশ-ভিত্তিক সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র প্রদর্শন, এবং ২০২৮ সালে মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা প্রত্যানয়ন অভিযানের পরিকল্পনা করেছে। ২০৩০ সালে দেশটি চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে জরিপ চালানো, দীর্ঘ অভিযাত্রা ৯ নামক অতিভারী উত্তোলক উৎক্ষেপণ এবং ১ মেগাওয়াট মহাকাশ-ভিত্তিক সৌরশক্তি উৎপাদন প্রদর্শনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। ২০৩৫ সালে দেশটি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তিতে চালিত একটি চান্দ্র ঘাঁটির ভিত্তি স্থাপনের প্রযুক্তিগুলি পরীক্ষা করে দেখবে, যার উদ্দেশ্য ২০৩৬ সালে চাঁদে একটি মনুষ্যবাহী অভিযান প্রেরণ করা এবং সেখানে একটি চান্দ্র গবেষণা ঘাঁটি স্থাপন করা। ২০৪০ সাল নাগাদ চীন একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত মহাকাশ জাহাজবাহিনী গঠন করা এবং ঐ একই বছরে চীনের মহাকাশ-ভিত্তিক সৌরশক্তি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করেছে।[১৯]
And the next mission actually, we will assign the Chang'e 5 probe. That [is] expected to launch on November 25, 24th or 25th. So that will be our next mission.
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Ch 5
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; jones
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; xinhuanet
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "AJ23112020" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে ":2" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
|তারিখ=
(সাহায্য)