জঁ পিয়াজে | |
---|---|
জন্ম | জঁ উইলিয়াম ফ্রিৎস পিয়াজে ৯ আগস্ট ১৮৯৬ |
মৃত্যু | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ | (বয়স ৮৪)
পরিচিতির কারণ | নির্মাণবাদ, জিনগত জ্ঞানতত্ত্ব, বৌদ্ধিক বিকাশের তত্ত্ব, বস্তু স্থায়িত্ব, আত্মকেন্দ্রিকতা |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | বিকাশ মনোবিজ্ঞান, জ্ঞানতত্ত্ব |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | ইমানুয়েল কান্ট, হেনরি বার্গসন, পিয়ের জানে, জেমস মার্ক বলডুইন[১] |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | বের্বেল ইনহেলডের,[২] Jerome Bruner,[৩] Kenneth Kaye, Lawrence Kohlberg,[৪] Robert Kegan, হাওয়ার্ড গার্ডনার,[৫] টমাস স্যামুয়েল কুন,[৬] Seymour Papert,[৭] Umberto Eco, Lev Vygotsky[৮] |
জঁ পিয়াজে[ক] (পূর্ণনাম জঁ উইলিয়াম ফ্রিৎস পিয়াজে; আ-ধ্ব-ব: [ʒɑ̃ pjaʒɛ]; ফরাসি: Jean William Fritz Piaget) (৯ই আগস্ট ১৮৯৬ - ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৮০) একজন সুইজারল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক। তিনি একজন জীববিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
জঁ পিয়াজের জ্ঞানমূলক বিকাশসাধনের অর্থ গবেষণা (Genetic Epistemology of Jean Piaget)। যত তিনি বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার চিন্তায় গভীর থেকে গভীরতর মনোনিবেশ করছিলেন তত তিনি চিন্তন প্রক্রিয়ার প্রকৃতি সম্বন্ধেই বেশি বেশি করে কৌতূহলী হয়ে পড়ছিলেন। এই ভাবেই তিনি চিরন্তন প্রক্রিয়ার বিকাশ বিষয়ে বিশেষ অনুসন্ধিৎসু হয়ে পড়েন। যখন এই বিষয় নিয়ে পূর্বসূরীদের করা প্রায় কোন কাজই তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন তিনি এই চিন্তন প্রক্রিয়ার গবেষণারই একটি নতুন নাম দিলেন জ্ঞানের বিকাশসাধনের অর্থ গবেষণা (Genetic Epistemology)।
এমনকি শিশুদের মধ্যেও তিনি লক্ষ্য করেছিলন যে তাদের পরিবেশে থাকা বস্তুসমূহের প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রদান করার বিশেষ দক্ষতা তাদেরও আছে। এই দক্ষতা নিশ্চিতভাবেই সহজতর, এই দক্ষতার নাম তিনি দিয়েছিলেন সংবেদন-সঞ্চালন দক্ষতা ( Sensori-Motor Skill)। এই সংবেদন-সঞ্চালন দক্ষতা সহজতর হলেও সেগুলি শিশুকে তার পরিবেশ পরিচিতিতে সহায়তা করে এবং তাকে বিশ্ব সম্বন্ধে জ্ঞানাহরণে উৎসাহিত করে। এই ভাবে শিশু উন্নত থেকে উন্নততর দক্ষতা অর্জন করে। এই দক্ষতাসমূহকে তিনি স্কীমা (Schema) নাম দিয়েছিলেন। জ্ঞান সংগঠিত হলে চিন্তন ও মানসিক সক্রিয়তার যে প্যাটার্ণ নির্মিত হয় তাকেই বলে স্কীমা। স্কীমা হল প্রজ্ঞার মানসিক প্রতিরূপ। একটি শিশু জানে কীভাবে তার প্রিয় খেলনাটিকে ধরতে হয় এবং নিজের মুখের দিকে নিক্ষেপ করতে হয়। এই ভাবেই যে বস্তুগুলিকে ধরা যায় সেগুলিকেই মুখে নিক্ষেপ করা যায় এমন ধারণা গঠিত হয়। এই স্কিমাটিকে “Grab and Thrust” বলা যায়। বাবার মূল্যবান ঘড়িটিও সে ধরতে পারে তাই সেটিকেও সে মুখে নেয়। পিয়াজে একটি নতুন বস্তুকে পুরাতন স্কীমার (“Grab and Thrust”) মধ্যে স্থান দেওয়ার প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন আত্মিকরণ (Assimilation) ।
অন্য একটি বস্তুর সন্ধান পেলে শিশুটি সেটিকেও হাতে ধরে মুখে নিক্ষেপ করার চেষ্টা ক’রে পুরানো স্কিমার (“grab and thrust”) অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। কিন্তু পুরানো স্কিমার সংগে এই নতুন বস্তুকে জুড়ে দিতে না পারলে শিশুর মধ্যে সমতার (Equilibrium)অভাব দেখা দেয় এবং সে নতুন স্কিমার সন্ধান করে। এই প্রক্রিয়াকে পিয়াজে অন্তর্ভুক্তিকরণ (Accommodation) নামে অভিহীত করেছেন। আত্মিকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিকরণ অভিযোজনের দুই দিক। পিয়াজের এই টার্মগুলিকে শিখন নাম দেওয়া যায়। পিয়াজে দেখলেন এই অভিযোজন প্রক্রিয়া আচরণবাদীদের শিখনের চেয়েও ব্যপকতর। তিনি মূলগত ভাবে অভিযোজনকে একটি জৈবিক পদ্ধতি হিসেবে দেখেছিলন।
পিয়াজে মানসিক গঠনের একটি ধারণা দিয়েছেন; যে মানসিক এককগুলি জ্ঞান গঠন এবং চিন্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকে মানসিক গঠন বলে। প্রকৃতপক্ষে মানসিক গঠন বুদ্ধির সেই ধরনের কাজ যা গৃহীত তথ্যগুলির প্রক্রিয়া করণ করে জ্ঞান গঠন করে। আত্মিকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিকরণ ঠিক যেন জগৎ সম্পর্কে বোঝাপড়ায় অগ্রসর এবং এই বোঝাপড়ায় আমাদের দক্ষতার মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে। পিয়াজের মতে এই অভিযোজন মানসিক গঠন (Structure) এবং পরিবেশের মধ্যে সমতা বিধানের দিকে পরিচালিত হয়, যখন মানসিক গঠন এবং পরিবেশের মধ্যে কিছুটা সর্বসমতা পরিলক্ষিত হয় তখন জগতের একটি সুন্দর মডেল প্রতিভাত হয়। এই আদর্শ অবস্থাই হলো সমতা (Equilibrium)।
পিয়াজেঁ শিশুদের নিয়ে যত তাঁর গবেষণায় অগ্রসর হয়েছিলেন তত তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে বিকাশের কিছু পর্যায়কালে আত্মিকরণ প্রাধান্য লাভ করে, আবার কিছু পর্যায়কালে অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রাধান্য লাভ করে। আপেক্ষিক সমতার এই পর্যায়কালগুলির প্রকৃতি সমস্ত শিশুর মধ্যে একটি বিশেষ বয়স কালে অনুরুপ ভাবে দেখা দেয়। তাই তিনি জ্ঞান মূলক বিকাশসাধনের দশার ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন। এই জ্ঞান মূলক বিকাশসাধনের দশার ধারনাগুলি মনোবিজ্ঞানে একটি স্থায়ী অবদান রেখেছে।
পিয়াজের মতে জ্ঞান মূলক বিকাশের প্রথম স্তরটি সংবেদন-সঞ্চালন স্তর। জন্ম থেকে দুই বছর বয়স পর্য্যন্ত বিকাশের স্তরকে পিয়াজে জ্ঞান মূলক বিকাশের সংবেদন-সঞ্চালন স্তর বলে চিহ্নিত করেছেন। স্তরটির নাম থেকেই স্পষ্ট যে এই স্তরে শিশু তার বিশ্বকে সংবেদন এবং সঞ্চালন ক্ষমতা দ্বারা জানতে চায়। সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া দিয়ে শুরু করে জটিল সংবেদন-সঞ্চালন মূলক দক্ষতার সমবায় ও বিন্যাসে শেষ হয় এই স্তরের বিকাশ।
প্রাথমিক আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার স্তর (Primary Circular Reactions) – এক থেকে চার মাসের মধ্যে শিশু প্রাথমিক আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তার কাজ সম্পাদন করে। তার নিজের কোন প্রতিক্রিয়াই শিশুর কাছে উদ্দীপক হিসাবে প্রতিভাত হয় এবং সেই উদ্দীপকের প্রতি বারংবার একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকে। যেমন শিশু তার বুড়ো আঙুলটি চুষতেই থাকে, কেননা একাজ তার ভাল লাগে। অথবা মুখ দিয়ে তুড়তুড়ি দিতেই থাকে, কেননা এ খেলা তার কাছে আনন্দ দায়ক। এ সময়ে বস্তু স্থায়িত্ব বোধ থাকে না, চোখের আড়ালে গেলেই বস্তুর অস্তিত্বও লুপ্ত হয়। এই স্তরে শিশুর মধ্যে “out of sight, out of mind” স্কিমা গঠিত হয়।
মাধ্যমিক আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার স্তর (Secondary Circular Reactions) – চার থেকে 12 মাসের মধ্যে শিশু মাধ্যমিক আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার দিকে মোড় নেয়। এই স্তরে শিশু তার পরিবেশকে নিজের দেহ ছেড়েও বিস্তৃততর করে। তার নিজের শরীরের বাইরের কোন ক্রিয়া শিশু বার বার করতে ভালোবাসে। তার পুতুলটিকে চাপলে পিঁক পিঁক শব্দ হয় এবং এই শব্দ তার কাছে আনন্দদায়ক বলে সে বার বার পুতুলটিতে চাপ দিতেই থাকে, চাপ দিতেই থাকে। তেমনি ঝুমঝুমিটা ঝাঁকাতেই থাকে, ঝাঁকাতেই থাকে। এই সময় স্কিমা সমন্বিত হয়। এই সময়ে পূর্ববর্তী স্তরে যে সকল স্কিমা গঠিত হয় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়। এই সময়ে বস্তু স্থায়িত্ববোধও বিকশিত হতে থাকে, চোখের আড়ালে গেলেই বস্তুর অস্তিত্ব যে লোপ পায় না এমন বোধ জন্মাতে থকে। “out of sight, out of mind” স্কিমা থেকে বের হয়ে শিশু মনে রাখতে শেখে এবং যে সকল বস্তু সে আগে দেখেছে সে গুলি চোখের আড়ালে থাকলেও তাদেরকে খুঁজতে থাকে।
তৃতীয় আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার স্তর (Tertiary circular reactions) – বারো থেকে 24 মাসের মধ্যে শিশু দ্বিতীয় আবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে। কেবল মাত্র আনন্দের জন্যই নয়, কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে শিশু কোন কাজ বার বার করতে থকে। বার বার বলটাকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে কী হয় তা দেখতে চায়। সে ড্রামটাকে স্টিক দিয়ে বাজিয়ে ডুম ডুম শব্দ করে; কাঠের ব্লকটিকে বাজিয়ে ঠক ঠক শব্দ করে; বাবার মাথায় বাজিয়ে ওহঃ ওহঃ শব্দ করে। খাওয়ানোর সময় শিশুর এই ধরনের সক্রিয় পরীক্ষণ কার্য্য সব চেয়ে ভালোভাবে পর্য্যবেক্ষণ করা যায়; এই সময়ে চামচ, বাটি এবং খাবার ছুঁড়ে দেওয়ার মজার খেলা আবিষ্কার কারার আনন্দে শিশু মেতে ওঠে।
মানসিক প্রতিরূপের স্তর (Mental Representation) – আঠারো থেকে 24 মাসের মধ্যে শিশু স্পষ্ট ভাবে মানসিক প্রতিরূপ গঠন করে এবং সাংকেতিক চিন্তন কর্ম শুরু করে। অভিজ্ঞতা লাভের পরেও বস্তুর স্মৃতি মানস পটে ধরে রাখার ক্ষমতা গঠিত হয় এই স্তরে। মানসিক প্রতিরূপ গঠিত হওয়ার দরুন শিশু কিছুটা পূর্বানুমান (Prediction) করতেও পারে। শিশু সরল সমস্যা সমাধান করতে মানসিক প্রতিরূপ ব্যবহার করতে পারে। দরজার উঁচু চৌকাঠ পার হওয়ার সময় চৌকাঠটির উপর উঠে দাঁড়ালে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পারে এবং তারপর সে নেবে যায়।
পিয়াজের মতে জ্ঞান মূলক বিকাশের দ্বিতীয় স্তরটি প্রাক সক্রিয়তার স্তর। দুই থেকে সাত বছর বয়স পর্য্যন্ত বিকাশের স্তরকে পিয়াজে জ্ঞান মূলক বিকাশের প্রাক সক্রিয়তার স্তর বলে চিহ্নিত করেছেন। এখন শিশুর মানসিক প্রতিরূপ আছে এবং সে ভান করতেও পারে তাই প্রতীক ব্যবহারের খুব কাছা কাছি এসে সে পৌঁছেছে। জ্ঞানমূলক বিকাশের প্রাথমিক স্তরে প্রত্যক্ষণ ও সঞ্চালন ক্রিয়ার মাধ্যমে যে ধারণা গঠিত হয়, তার মানসিক প্রতিরূপ অর্থাৎ স্কিমাই পরবর্তি পর্যায়ে বিকাশের ভিত্তি রূপে কাজ করে।
কোন কিছুকে সাংকেতিক ভাবে প্রকাশ করাই হলো প্রতীক। কুকুরের একটি চিত্র, একটি লিখিত বা কথিত শব্দ (কুকুর) প্রকৃত কুকুরের প্রতীক। ভাষা ব্যবহার প্রতীকের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতীক ব্যসহারের অন্য উদাহরণ হলো সৃজনাত্মক ক্রীড়া, যেখানে কাগজকে থালা অথবা বাক্সকে টেবিল ইত্যাদি ভাবা হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে চিন্তন প্রক্রিয়া সম্পাদন করে, শিশুরাও প্রকৃত বস্তুর অনুপস্থিতিতে প্রতীক ব্যবহার করে চিন্তা করতে পারে। প্রতীক ব্যবহারের সংগে সংগে অতীত এবং ভবিষ্যতের বোধও জন্ম লাভ করে। কোন শিশু মায়ের জন্য কাঁদতে থাকা কালে তাকে তার মা তাড়াতাড়িই আসবে বললে সে কান্না থামায়। অথবা তার পড়ে যাওয়ার স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিলে মুখটা ব্যথায় ভার হয়ে যায়। এই স্তরে শিশু কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক হয়। সে সকল বস্তুকে তার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। সে একটা ছবিকে এমন ভাবে ধরে থাকে যাতে কেবল মাত্র সে-ই দেখতে পায়, কিন্তু অন্যেরাও দেখতে পেচ্ছে এমনটাও আশা করছে।মাটিতে পড়ে আঘাত লাগলে সে মটিকে মেরে শোধ নেয়, যেন মাটিই তাকে মেরেছে।
পিয়াজে ঘটনাটি ভালো ভাবে জানতে একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং এই পরীক্ষার নাম দেন “the mountains study” । তিনি শিশুদের একটি প্লাস্টারের তৈরি সরল পর্বতমালার সামনে বসিয়ে, নিজে অন্য দিকে বসলেন এবং তারপর শিশুদের তিনি চারটি ছবি থেকে পিয়াজে নিজে যেমন দেখবেন তেমন একটিকে বেছে নিতে বলেন। ছোট শিশুরা তারা যেমন দেখে তেমিন ছবি বেছে নেয় বটে, কিন্তু একটু বয়স্ক শিশুরা সঠিক ছবিটিই বেছে নিতে পারলো। এই “the mountains study” প্রাক সক্রিয়তার স্তরের বিকশের একটি বিখ্যাত পরীক্ষা।
এই স্তরে শিশুর চিন্তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আলোচিত হলোঃ
পিয়াজের মতে জ্ঞান মূলক বিকাশের তৃতীয় স্তরটি মূর্ত সক্রিয়তার স্তর। সাত থেকে এগারো বছর বয়স পর্য্যন্ত বিকাশের স্তরকে পিয়াজে জ্ঞান মূলক বিকাশের মূর্ত সক্রিয়তার স্তর বলে চিহ্নিত করেছেন। সক্রিয়তা বলতে এখানে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যে যৌতিক সক্রিয়তা বা নীতি প্রযোগ করা হয় তাকেই বোঝায়। এই স্তরে বালক বালিকা কেবল প্রতীক ব্যবহার করতেই পারে এমন নয়, তারা যুক্তির সঙ্গে এই সকল প্রতীকগুলিকে পরিবর্তিত করতেও পারে। কিন্তু এই স্তরে তাদের সব সক্রিয়তা থাকে মূর্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। গতিশীল বিকেন্দ্রিকরণের মধ্যে দিয়েই এই স্তরের কাজ শুরু হয়। সংখ্যা, দৈর্ঘ্য বা তরলের আয়তন সম্বন্ধে সংরক্ষণ বোধ বেশির ভাগ বালক বালিকার মধ্যেই ছয় অথবা সাতেই জন্মে যায়। এখন বালক বা বালিকারা বুঝতে পারে যে আকারের পরিবর্তন হলেও বস্তুর আয়তন একই থাকতে পারে।
এই স্তরে শিশুর চিন্তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আলোচিত হলোঃ
পিয়াজের মতে জ্ঞান মূলক বিকাশের চতুর্থ স্তরটি যৌক্তিক সক্রিয়তার স্তর। এগারো বছর বয়স থেকে সমগ্র কৈশোর কাল ব্যপী চলতে থাকে এই স্তরের বিকাশ। পূর্ববর্তী স্তরে সক্রিয়তার মাধ্যমে যে স্কিমা গঠিত হয় সেগুলিকে এই স্তরে কিশোর কিশোরীরা সরাসরি প্রথাগত যুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রায় বারো বছর বয়স থেকেই কিশোর কিশোরীরা পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির মতো করে চিন্তা করতে থাকে।এই চিন্তাগুলি যৌক্তিক সক্রিয়তার (Logical Operations) মাধ্যমে ঘটতে থাকে। এই যুক্তিগুলি মূর্ত সক্রিয়তা ছেড়ে বিমূর্ত চিন্তনে প্রবেশ করে। এই প্রকার চিন্তনকে অনেক সময় হাইপোথেটিক্যাল চিন্তনও (Hypothetical Thinking) বলে। প্রকল্প (Hypothesis) গঠন করার পর অভিজ্ঞতা ও যুক্তির দ্বারা বিচার করে তাকে গ্রহণ বা বর্জন করার পদ্ধতিই এই হাইপোথেটিক্যাল চিন্তন। সম্পূর্ণ বিমূর্ত এবং তর্কবিদ্যা সম্মত অবরোহ যুক্তি কিশোর কিশোরীদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে-
একটি পেন্ডুলামের দোলন কীভাবে দ্রুততর বা মন্দিভূত করা যায় এ প্রশ্নের উত্তরে একটি 16 বছরের কিশোর –
এই ভাবে নানা প্রকল্প গঠন ও ঐ সকল প্রকল্প পরীক্ষণ করার পর দৈর্ঘ্য বাড়লে পেন্ডুলামের দোলন কাল বাড়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় কিশোরটি। কিশোর কিশোরীরা চিন্তনের ক্ষেত্রে যে সকল যুক্তি প্রযোগ করে সেগুলি হলোঃ