যৌন অভিমুখিতা |
---|
যৌন অভিমুখিতাসমূহ |
যৌনদ্বৈততা-বিহীন বিষয়শ্রেণী |
গবেষণা |
অ-মানব প্রাণী |
পরিবেশ এবং যৌন অভিমুখিতা নিয়ে যে গবেষণা করা হয়; তা দ্বারা বুঝানো হয় মানুষের যৌন অভিমুখিতার ক্রমবিকাশে পরিবেশগত প্রভাবের একটি সম্ভাবনা আছে। কিছু গবেষকের মতে পরিবেশগত প্রভাব হরমোনের প্রভাব কে প্রভাবিত করে।[১] আবার কিছু গবেষক মনে করেন মানুষের যৌন অভিমুখিতা পরিবেশগত নয় বরং তার জন্মপূর্ব থেকে নির্ধারিত; যেখানে জন্মপূর্ব হরমোন ক্রিয়া করে[২] বিজ্ঞানীরা যৌন অভিমুখিতার একদম সঠিক কারণ সম্বন্ধে জ্ঞাত নন। তারা বিশ্বাস করেন জিনগত, হরমোনগত, এবং পরিবেশগত প্রভাব যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে একত্রে মিথস্ক্রিয়া করে।[৩][৪][৫] যৌন অভিমুখিতার পরিচয় যেভাবে পরিবর্তন করা যায়, এমনটা সবাই নিশ্চিত থাকলেও, যৌন অভিমুখিতা পরিচয়ের মত যৌন অভিমুখিতা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করা যায়; এমনটা তারা বিশ্বাস করেন না।[৩][৪][৬]
এমন কোন চূড়ান্ত গবেষণা নেই; যা থেকে বলা যায় পরিবারের পরিচর্যা অথবা শৈশবের প্রথমার্ধে কোনো অভিজ্ঞতা যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে,[৭][৮] কিছু গবেষণা পারিবারিক পরিবেশ আর পরিচর্যাকে অবিষমকামী পরিচয়ের জন্য,[২][৯] শৈশবের লিঙ্গ অসংগতির জন্য এবং সমকামিতার জন্য দায়ী করেছে।[১০][১১][১২]
যৌন অভিমুখিতার সাথে অনেক সময় যৌন অভিমুখিতার পরিচয়ের পার্থক্য বিবেচনা করা হয় না। ফলে এটা নিয়ে দ্বিধা থাকে, যৌন অভিমুখিতার পরিচয়ের মত; অভিমুখিতাও পালটানো যাবে কিনা। যৌন অভিমুখিতার পরিচয়; জীবনের যে কোনো সময় পালটানো যায়।[১৩][১৪][১৫] আসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের কেন্দ্র ও মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন উদ্ধৃতিতে বলে, যৌন অভিমুখিতা সহজাত, চলমান অথবা জীবনভর স্থিতিশীল থাকতে পারে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা অন্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হতে পারে বা তারল্যরুপ প্রদর্শন করতে পারে,[১৬][১৭] মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন যৌন অভিমুখিতা (সহজাত আকর্ষণ) এবং যৌন অভিমুখিতার পরিচয়ে (যা ব্যক্তির জীবনে যে কোনো সময় পাল্টানো যায়) পার্থক্য বর্ণনা করেছে।[১৮] বিজ্ঞানী ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটা বিশ্বাস করেন না যে, সমকামিতা ইচ্ছাকৃত।[১][৬]
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন তার উদ্ধৃতিতে বলেছে, "যৌন অভিমুখিতা কোনো ইচ্ছাকৃত চয়েজ না, যা ইচ্ছাকৃতভাবে পালটানো যাবে এবং যৌন অভিমুখিতা হলো পরিবেশ, বোধশক্তি, জৈবিক ফ্যাক্টরের মিশ্রণে একটি জটিল মিথস্ক্রিয়া; যা শৈশবের প্রথমার্ধে তৈরী হয়... এবং প্রমাণ গুলো থেকে এটাই অনুমেয় হয় যে, জৈবিক, জিনগত ও হরমোনাল ফ্যাক্টর মানুষের যৌনতা নির্ধারণ সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে"।[৪] তারা বলেছে যৌন অভিমুখিতার পরিচয় (যৌন অভিমুখিতা নয়), মনোথেরাপি দিয়ে পরিবর্তন করা যায়।[১৮] মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন তাদের বিবৃতিতে বলেছে" ব্যক্তি তার জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের অভিমুখিতা সম্বন্ধে জ্ঞাত হতে পারে। এই সংগঠন যদিও বিষমকামীতে রুপান্তরকারী অপবৈজ্ঞানিক পন্থা কনভার্সন থেরাপিকে নিরুৎসাহিত করে, তবে সমকামিতাকে স্বীকার করে নেওয়া থেরাপিকে উৎসাহিত করে।[১৭]
লিসা ডায়মন্ডের ন্যায় বিশেষজ্ঞ নারী সমকামী এবং উভকামী নারীদের উপর পুনঃবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, "সমলৈঙ্গিক যৌনতায় পরিবর্তন এবং তারল্য (বিঃদ্রঃ তারল্য বলতে বুঝানো হয়েছে যৌনতার তারল্য, যেমনঃ একটা মেয়ে হয়তো বিবাহ করলো, তার নিজের মতামতে কোনো পুরুষকে, কিন্তু বিবাহের পর তার মধ্যে ধীরে ধীরে যেগে উঠতে শুরু করলো নারী আসক্তি, এই যে বিষমকামী থেকে সমকামী হবার যে প্রবণতা, এটা একপ্রকার যৌনতার তারল্য। তরল পদার্থ তার ধর্ম পরিবর্তন করর, কঠিন বা বায়বীয় হতে পারে, এজন্য তরলের ধর্মকে তারল্য বলে অভিহিত করা হয়।) চিরাচরিত নকশার বিরুদ্ধে যায় যা যৌন অভিমুখিতাকে একটি কঠিন, নির্ধারিত ও সমরূপ হিসেবে দেখে, এবং এই অবস্থা পূর্বের যৌনতা বিকাশকালীন অবস্থায় এটি যেমন ছিল সবসময় এরকমই থাকবে বলে মনে করে।"[১৯]
গবেষকরা দেখেছেন শৈশবকালীন লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতা লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতার উদাহরণমুলক ব্যাখ্যা হলো, কোনো শিশু জন্মের পর তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে সবাই নির্ধারণ করলো, নবজাতক ছেলে সন্তান; কিন্তু বয়োঃসন্ধিকালীন সময়ে, ছেলে সন্তান টি তার যৌনতা বা লিঙ্গ নিয়ে দিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে উঠলো, সে ছেলেরা যেমন আচরণ করে, এরকম প্রত্যাশিত আচরণ করতে বিব্রত বোধ করে, এই যে লিঙ্গের সাথে তার আচরণের সঙ্গতিহীনতা, এটাকেই লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতা বলা হয়] সৃষ্টি ভবিষ্যতে তার সমকামী হওয়ার পিছনে অন্যতম সুচক হিসেবে কাজ করে।[১০][১১][১২][২০] ড্যারিল বেম তার প্রস্তাবনায় বলেন, কিছু শিশু এমনভাবে আচরণ করে, যা দেখে মনে হয়, তার আচরণ অন্য লিঙ্গের সন্তানের ন্যায় আদর্শ। জৈবিক ভাবে একজন পুরুষ পুরুষালি আচরণ করবে, সামাজিকভাবে এটাই অনুমেয়। কিন্তু দেখা যায়, তার আচরণ বিপরীত লিঙ্গের মানুষের আচরণের ন্যায়। তখনি তৈরী হয়, লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতা। কিন্তু যদি জৈবিক ভাবে একজন ছেলে শিশু, ছেলের মতই আচরণ করে, তখন একে লৈঙ্গিক সঙ্গতিপূর্ণতা বলা হবে। উভয়ক্ষেত্রেই লৈঙ্গিক পার্থক্যের অনুভূতি মনস্তাত্ত্বিকভাবে একজনকে উত্তেজিত করতে পারে যখন সে লৈঙ্গিকভাবে "পৃথক" বলে মনে করে, আর এটিই সেই মানসিক উত্তেজনাকে যৌন উত্তেজনায় পরিণত করে। গবেষকরা অনুমান করছেন, এই লৈঙ্গিক সঙ্গতিহীনতা জিনগত, জন্মপুর্ব হরমোন, ব্যক্তিত্ব, পারিবারিক পরিচর্যা অথবা পরিবেশগত কারণে তৈরি হতে পারে।
বিয়ারম্যান এবং ব্রুকনার দেখান, যদি যমজ শিশুর একজন নারী ও অপরজন পুরুষ হয়; তবে পুরুষের মধ্যে সমলৈঙ্গিক আকর্ষণ তৈরি হবার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি থাকে। তবে, যদি সেই যমজ সহোদরের পুর্বেই কোনো বড় ভাই থাকে, তবে যমজের মধ্যে ছেলেটির সমলৈঙ্গিক আকর্ষণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা দ্বিগুণ হবার পরিবর্তে হ্রাস পায়। গবেষকদ্বয় বলেন, তাদের এই আবিষ্কারকে আরেকটি গবেষণাকে ব্যাখ্যা করে। সেটি হল, প্রাথমিক শৈশবকালে এবং বয়োসন্ধির পূর্বে অল্পমাত্রার লৈঙ্গিক সামাজিকীকরণ (জেন্ডার সোশালাইজেশন) [অল্পমাত্রার লৈঙ্গিক সামাজিকীকরণ বলতে বুঝানো হয়েছে, জৈবিকভাবে সন্তান যে লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, সেই লিঙ্গ অনুযায়ী তার সাথে প্রকট ব্যবহার না করা, যেমনঃ সমাজে ছেলে সন্তান বা মেয়ে সন্তান সুনির্দিষ্টভাবে কেমন আচরণ করবে, এই বিষয়ে তাদেরকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ওয়াকিবহাল না করা] পরবর্তীতে সমপ্রেমের অভিরুচি তৈরি করে। তারা প্রস্তাব করেন, বিপরীত লিঙ্গের যমজের পিতামাতা তাদের উভয় সন্তানের সাথে একইরকমভাবে লৈঙ্গিক আচরণ করে। কিন্তু যদি কোন বড় ভাই থাকে, তাহলে সে তার ছোট ভাই এর জন্য একরকম লৈঙ্গিক সামাজিকীকরণ কৌশলকে প্রতিষ্ঠিত করে।[১০] অর্থাৎ বড়ভাইয়ের আচরণ দেখে ছেলে বুঝতে পারে, ছেলেদের সমাজে কেমন আচরণ হওয়া উচিত, ফলে সে সমকামী হবার পরিবর্তে বিষমকামী হয়ে উঠে। যাইহোক, বিয়ারম্যান এবং ব্রুকনার এমন কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পান নি, যা থেকে বলা যায় লৈঙ্গিক সামাজিকীকরণ যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব ফেলে।[২১] প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি, যা থেকে বলা যায়, পিতামাতার লৈঙ্গিক সামাজিকীকরণ এর সাথে সন্তানের যৌন অভিমুখিতার সংযোগ আছে।[২১] এছাড়াও সহোদর বড় ভাই থাকলে ছোট ছেলে সন্তান, তার বড় ভাইয়ের আচরণ দেখে বিষমকামী হবার পরিবর্তে সমকামী হবার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়, এমনটা পুনঃপুন গবেষণাগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে। (নিচের অনুচ্ছেদে দেখুন) একইসাথে যমজ নিয়ে গবেষণা থেকে এটিও দেখা গিয়েছে, যৌন অভিমুখিতার সাথে পারিবারিক পরিবেশ নয় বরং জিনগত সংযোগ বিদ্যমান।[২১][২২] গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বয়োসন্ধিকালীন সময়ে সমলিঙ্গে যৌন অভিজ্ঞতার তুলনায় সমলিঙ্গে আকর্ষণ এর অনুপাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। আকর্ষণ ছাড়াও এখানে সুযোগের ব্যাপার জড়িত। যেহেতু সুযোগ পরিষ্কারভাবে সমাজ নির্মিত, তাই আকর্ষণের চাইতে আচরণের উপর সামাজিক প্রভাব বেশি হবে, এটাই প্রত্যাশিত।[১০]
গবেষকরা তাদের প্রমাণের মাধ্যমে দেখেছেন, সমকামী পুরুষরা, বিষমকামী পুরুষের তুলনায়; তাদের পিতার থেকে কম ভালোবাসা পেয়েছে অথবা প্রত্যাখাত হয়েছে এবং পক্ষান্তরে গভীর বন্ধন মায়ের সাথে সৃষ্টি হয়েছে। একারণে কিছু গবেষক মনে করেন, শৈশবের অভিজ্ঞতা হয়তো সমকামিতার দিকে ধাবিত করতে পারে,[২৩] অথবা পিতামাতার ব্যবহার শিশুর লিঙ্গ প্রকরণ বৈশিষ্ট্যে প্রভাব ফেলতে পারে।[২৪][২৫] মাইকেল রুস তার প্রস্তাবনায় বলেন, উভয় সম্ভাবনাই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে।[২৬]
তাইওয়ানেজ সামরিক বাহিনীর ২৭৫ জন পুরুষের উপর করা গবেষণা থেকে শু এবং লুং এই বলে সমাপ্তি টানেন যে, "পৈর্তৃক প্রতিরক্ষা এবং মার্তৃত্বের যত্ন সমকামী পুরুষের ক্রমবিকাশে একটা প্রভাব ফেলে।"[২৭] একটি গবেষণা দেখিয়েছে যে, সমকামী পুরুষরা সমকামী নারীদের তুলনায় মায়ের সাথে অধিক বেশি সংযুক্ত থাকে।[২৮] মার্কিন যমজ পরীক্ষার একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, সমকামিতা আংশিকভাবে জিনগত হতে পারে, তা প্রভাবিত করতে পারে তবে নির্ধারণ নয়।[২৯]
গবেষণা আরো দেখিয়েছে, সমকামী পুরুষের; সমকামী নারীর তুলনায় অধিক সংখ্যক বড় ভাই থাকে।[৩০] ২০০৬ সালের একটি ড্যানিশ গবেষণা হয়। এগবেষণাটা ছিল বিপরীত লিঙ্গের বিবাহ বিবাহ যারা করেছে; তাদের সাথে সমলিঙ্গের বিবাহ সম্পন্নকারী মানুষের বিবাহের তুলনা। বিষমকামী বিবাহ যাদের হয়েছে, দেখা গিয়েছে, সেসব দম্পতির পিতামাতারা অল্পবয়সী, পিতা এবং মাতার বয়সের পার্থক্য কম, তাদের সম্পর্ক একটা স্থায়ী সম্পর্ক, প্রচুর ভাইবোন আছে এবং দেরী করে সন্তান নিয়েছে। যেসব সন্তান বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে বিষমকামী বিবাহ করার আগ্রহ কম থাকে। পক্ষান্তরে, যেসব পুরুষ সমকামী বিবাহ করতে অধিক আগ্রহী থাকে, দেখা গিয়েছে তাদের মা অধিক বয়সী হয়, সংসারে পিতার অনুপস্থিতি থাকে, অথবা পিতা-মাতায় বিচ্ছেদ থাকে এবং সংসারের কনিষ্ঠ সন্তান হয়। নারীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যেসব মেয়েদের কৈশোরে মার্তৃবিয়োগ হয় এবং সংসারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে হয়, অথবা পরিবারের একমাত্র মেয়ে হলে, তাহলে তার মধ্যে সমলিঙ্গে বিবাহ করার আগ্রহ জেগে উঠে।[২৩]
২০০৮ সালের যমজ পরীক্ষার পরে, যে বিষয়টা দেখা যায় এবং গবেষণার সমাপ্তিকায় বলা হয়, পুরুষ সমকামিতায় পারিবারিক বা পরিবেশগত প্রভাব কোনোভাবেই কার্যকর নয় এবং নারীর ক্ষেত্রে তা খুবই স্বল্পমাত্রায় কার্যকর।[২] বিপরীতক্রমে ৪০৯ জোড়া সমকামী ভাইয়ের (যমজও অন্তর্ভুক্ত ছিল) উপর একটা গবেষণা করা হয়েছে। যেখান থেকে এটা বলা যায়, পুরুষ সমকামীরা জন্মগতভাবেই সমকামী, এবং এই দাবীর একটা শক্ত ভিত্তি দাঁড়িয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে এখানে নমুনার সংখ্যা আগের গবেষণাগুলোর প্রায় তিনগুন। যার ফলে পারিসংখ্যানিক দিক থেকে এটা নির্ভরযোগ্য। এই গবেষণা থেকে সমকামিতার সাথে জড়িত মানব জিনোমের দুইটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়; যা আগেও অনুমান করা হয়েছিল।[৩১] যাইহোক, এই গবেষণার মুল অথর এলান স্যান্ডারস উদ্ধৃতিতে বলেন, "যৌন অভিমুখিতার জটিল বৈশিষ্ট্য অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। পরিবেশগত এবং জিনগত উভয় বিষয়ের উপর নির্ভর করে।"[৩২] ১৯৯৩ সালে মারিল্যান্ডের তে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ইন্সটিউটের ডিন হ্যামার এক্স ক্রমোজমের এলাকা এক্সকিউ২৮ প্রথম শনাক্ত করেন। ২০০৫ সালে ৮ নং ক্রমোজমের এইটকিউ১২ প্রথম শনাক্ত করা হয়।[৩৩][৩৪] মানব জিনোমের এই দুই এলাকাই সমকামিতার সাথে ইতিবাচকভাবে সংযুক্ত বলে গবেষণা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে।
যদিও এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি, যার থেকে বলা যায়, শিশুর পারিবারিক পরিচর্যা তার যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণ করে,[৭][৮] তবে ক্যামেরনের ২০০৬ সালের গবেষণা থেকে বলা যায়, পিতামাতার যৌন প্রবৃত্তি শিশুকে প্রভাবিত করে।[৩৫] ২০১০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই ফলাফল নিশ্চিত করে এবং এখানে বলা হয়, "যদিও এই গবেষণার ফলাফলকে ভুল প্রমাণ করার জন্য অনেকগুলো চেষ্টা করা হয়, এবং ২০টি পর্যন্ত কোডিং এররকে অনুমতি দেয়া হয়, তবুও দেখা যায় যে সমকামী পিতা বা মাতাদের সন্তানদের সমকামী বা উভকামী বা অনিশ্চিত যৌন অভিমুখী হবার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে - ক্যামেরনের এসম্পর্কিত ২০০৬ সালের গবেষণাটিকে নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে... সামাজিক ও পিতামাতার প্রভাবসমূহ বিষমকামীদের পরিচয় এবং/অথবা আচরণের প্রকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।"[৯] অন্যদিকে বিয়ারম্যান বলেন, সামাজিকীকরণ আকাঙ্ক্ষার কিছুটা আকৃতি দান করতে পারলেও প্রাপ্তবয়স্কের যৌন অভিমুখিতার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। বরং জেনেটিক প্রভাবই আকর্ষণ থেকে আচরণ পর্যন্ত গতিবিধিকে ঠিক করে দেয়।[১০]
বেশ অনেকগুলো গবেষণা থেকে এটা বলা যায়, প্রত্যের বড় ভাই থাকার দরুন ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা উত্তোরোত্তর বাড়তেই থাকে এবং এ সম্ভাবনা ২৮-৪৮% পর্যন্ত হতে পারে। অনেক গবেষক একে জন্মপূর্ব পরিবেশ যেমন হরমোনের জন্য হয় বলে অনুমান করেছেন।[৩৬][৩৭][৩৮][৩৯]
১৯৯৪ সালে এডওয়ার্ফ লম্যান এবং তার সহযোগী গণ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মানুষের যৌনতার চর্চার ওপর একটি গবেষণা করেন। গবেষণা থেকে তারা দেখতে পান, শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সমকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তি গ্রামের তুলনায় বেশি। যাইহোক, এই গবেষণাটির গবেষকদের মত অনুসারে, এমনটা ঘটার সবচেয়ে বড় কারণ হলো স্থানান্তর। গ্রামীণ সমাজের সমকামীরা যদি তাদের স্থানীয় এলাকায় তাদের বন্ধু এবং পরিবারের কাছে নিজেদেরকে প্রকাশে দ্বিধান্বিত থাকে এবং তাদের প্রবৃত্তির প্রতি নেতিবাচক ধারণা সে সমাজ পোষণ করে, সে ক্ষেত্রে তারা গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয় কারণ শহর সমকামী সম্প্রদায়কে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা তাদের প্রস্তাবনায় আরও বলেন: সমলিঙ্গের প্রতি জৈবিক প্রেষণা; যা তারা জন্ম সূত্রে প্রাপ্ত, সে আকর্ষণ আরো ঘনীভূত এবং বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ শহরই গড়ে দেয়।[৪০][৪১] এই ধারনাটি শহরের যৌন সংগঠন (The Sexual Organization of the City) নামে তার পরবর্তী বইতে আরো বিস্তৃতভাবে বলা হয়। যৌন অভিমুখিতার এই প্রবৃত্তির বিকাশের জন্য কিছু শর্তের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট যৌন অভিমুখিতার মানুষরা বেশি জড়ো হতে পারে, সাক্ষাৎ করতে পারে, এরকম জায়গা একটা স্থানে যত বেশি থাকবে, সেখানে সেই যৌন অভিমুখিতা ততটা প্রকাশ পাবে।[৪২]
ডেনমার্কে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব মানুষ পুজিবাদী এলাকায় জন্ম নেয়, তাদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের বিষমকামীদের তুলনায় সমকামীদের বিবাহ করার একটা প্রবণতা বেশি দেখা যায়।[২৩]
সমকামীদের সংখ্যা গ্রামাঞ্চলে কম থাকার অন্যতম কারণ ব্যাখ্যা করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামের মানুষ শহরের তুলনায় অধিক রক্ষণশীল হয়, এই রক্ষণশীলতার জন্য সমকামী সম্প্রদায় তার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পিছিয়ে থাকে অথবা নিজেদের বাঁচাতে তারা শহরাঞ্চলে চলে আসে। ফলে জরিপে দেখা যায়, শহরাঞ্চলে সমকামীতার সংখ্যা বেশি।[৪৩]
উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানী সেথ স্টিফেন্স-ডাভিদইতিজ তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, আমেরিকার রাজ্যগুলোতে পুরুষ সমকামীর সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কম বা বেশি হয় না। তার দাবীর পক্ষে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন ইন্টারনেটে নীল চলচ্চিত্রগুলোতে পুরুষ সমকামীদের ব্যাপারে অন্বেষণ এর শতকরা পরিমাণ সবরাজ্যেই ৫ শতাংশের কাছাকাছি। এই কারণে তিনি বিশ্বাস করেন পুরুষ সমকামীরা শহরমুখী হচ্ছে এ ধরনের দাবী অতিরঞ্জিত। বরং যেসব রাজ্যে সমকামীদের কিছুটা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করতে হয়, সেসব রাজ্যে বস্তুত সমকামীরা নিজের যৌন পরিচয় গোপন রাখে। ফলে সেসব এলাকায় গবেষকরা সমকামীদের শতকরা পরিমাণ নির্ণয় করতে গেলে প্রকৃত সমকামীর সংখ্যা আড়ালে থেকে যায়।[৪৪][৪৫]:৯
মিরন ব্যারনের মতে কিছু সংস্কৃতি; উদাহরণস্বরূপ আসীরীয় এবং গ্রিক- রোমান সম্প্রদায় সমকামীদের প্রতি ঐতিহ্যগতভাবেই সহনশীল ছিল। এই আচরণ উন্মুক্তভাবেই চর্চা করা হত এবং তারা প্রাদুর্ভাব অনেক ছিল। যৌনতার যে বিন্যাস তা সমাজের আগ্রহ দেখে ব্যপ্তি হয়। কিন্তু সাংস্কৃতিক অবস্থা পরিবর্তনের ফলে যৌনতার স্বভাবে পরিবর্তন আসবে কিনা; তা নির্ধারণ করা কঠিন।[৪৬] রিচার্ড বার্টন সোটাডিক এলাকাকে তার দাবীর পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাবী করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যুক্তরাষ্টে নারীর প্রতি নারী আসক্তির সংখ্যা বাড়ছে।[ভাল উৎস প্রয়োজন] সুজান বরডো বলেছেন, যখন কোনো ট্যাবু সমাজে বাতিল হয়ে যায়, এটা প্রত্যেককেই সুযোগ দেয়, তার যৌন অভিমুখিতা আবিষ্কারে ও প্রকাশে। বিন্নি ক্লেইন, উদ্ধৃতিতে বলেছেন, যৌন অভিমুখিতা নিয়ে সমাজে এই পরিবর্তন মানুষকে এ সম্বন্ধে জানাতে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করছে; যার ফলে তাকে স্বীকার করার হারও পর্যায়ক্রমে বাড়ছে।"[৪৭]
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন উদ্ধৃতিতে বলেছে: "...কোনো সুনির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক অথবা পারিবারিক কারণ এবং যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায় নি, যে প্রমাণ থেকে বলা যায় মানুষ সমকামী এজন্যই হয়। যৌন নির্যাতনের প্রভাব শিশুর জীবনে ততটাও ব্যপ্ত নয়,যা থেকে সে শিশু বিষমকামী শিশু থেকে ভিন্ন হয়, নিজেকে সমকামী বা উভকামী ভাবতে শুরু করবে"।[৭]
মার্কিন চিকিৎসা সংগঠনের সাময়িকী প্রতিবেদনে বলে, "নিপীড়িত কিশোরদের যারা পুরুষ কর্তৃক শারীরিক পীড়নের শিকার হয়েছিল, তাদের সংখ্যা নিপীড়নের শিকার না হওয়া সমকামীদের তুলনায় ৭ গুণ। যাইহোক, এখানে এটা পরিষ্কার নয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া সমকামীরা, নির্যাতনের পরে সমকামী হয়েছে নাকি উৎপীড়নের পুর্বেই তারা জানত। তারা প্রতিবেদনে এটাও বলেছে, তারা যে বিষমকামী নয়, এবং এই অভিমুখিতার জন্য যৌন পীড়ন দায়ী নয়। এমন কোনো পুনঃপুন গবেষণার মাধ্যমে যৌন অভিমুখিতার সাথে যৌন নির্যাতনের কার্যকারণ সম্পর্কিত কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় নি।[৪৮]
আর্কাইভ অফ সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়র জার্নালে দীর্ঘ ৩০ বছরের ডেটা নিয়ে করা একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণা অনুসারে, যদিও দেখা যায় সমলিঙ্গের মানুষের দ্বারা শৈশবে যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা থাকা পুরুষদের নিজেদের সাতে হওয়া অন্যায় রিপোর্ট করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তবুও তারা "শিশুর ছোটবেলায় শিকার হওয়া নির্যাতন বা অবহেলার সাথে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সমলৈঙ্গিক যৌন অভিমুখিতার সম্পর্কে" পাওয়া যায় নি। শৈশবে যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বা অবহেলার শিকার এমন নারী বা পুরুষ কারও ক্ষেত্রেই যেসব নারী বা পুরুষের এরকম অভিজ্ঞতা নেই তাদের তুলনায় অধিক পরিমাণে সমকামী আচরণ পাওয়া যায় নি।[৪৯] গবেষণাটির লেখকগণ বলেন, "যৌন নির্যাতন এর কারণে ব্যক্তির মাঝে যৌন অভিমুখিতা সম্পর্কে একরকম অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, এবং এর ফলে সমলিঙ্গ ও বিপরীত লিঙ্গ উভয়ের সাথেই যৌনতার অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণ হতে পারে", কিন্তু এটা যে চূড়ান্তভাবে যৌন অভিমুখিতাকে প্রভাবিত করবে, তেমনটা নাও হতে পারে।[৪৯]
The reason some individuals develop a gay sexual identity has not been definitively established – nor do we yet understand the development of heterosexuality. The American Psychological Association (APA) takes the position that a variety of factors impact a person's sexuality. The most recent literature from the APA says that sexual orientation is not a choice that can be changed at will, and that sexual orientation is most likely the result of a complex interaction of environmental, cognitive and biological factors...is shaped at an early age...[and evidence suggests] biological, including genetic or inborn hormonal factors, play a significant role in a person's sexuality (American Psychology Association 2010).
No conclusive evidence supports any one specific cause of homosexuality; however, most researchers agree that biological and social factors influence the development of sexual orientation.
Most health and mental health organizations do not view sexual orientation as a 'choice.'
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; LeVay_2017
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি