মুসলিম বিজয় (আরবি: الغزوات, al-Ġazawāt or আরবি: الفتوحات الإسلامية, al-Futūḥāt al-Islāmiyya) ৭ম শতাব্দীতে মুহাম্মদ এর সময় থেকে শুরু হয়।[২] আরব উপদ্বীপে তিনি নতুন একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর রাশিদুন ও উমাইয়া খিলাফতের সময় শতাব্দীব্যপী মুসলিম শক্তির উত্থান ঘটে।
প্রথমে আরব উপদ্বীপ থেকে শুরু হয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য চীন ও ভারতের সীমান্ত থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, সিসিলি, ইবেরিয়ান উপদ্বীপ, পিরেনিজের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
উমাইয়াদের শেষের দিকে আরব সাম্রাজ্য পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ২০০ দিন ভ্রমণের সমান বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। তাতারীদের সীমানা এবং ভারতবর্ষ থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের তীর পর্যন্ত।
মুসলিম বিজয় সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটায় এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিশাল এলাকা অধিকার করে নেয়। মুসলিমদের সাফল্যের কারণগুলো পুনরুদ্ধার করা কঠিন কারণ মূল উৎসগুলোর অল্প টিকে আছে। অধিকাংশ ইতিহাসবিদরা একমত যে সাসানীয় পারস্য ও বাইজেন্টাইন রোমান সাম্রাজ্য কয়েক দশক ধরে পারস্পরিক লড়াইয়ের কারণে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। ভিসিগথিক স্পেনের জলদি পতনের কারণ ব্যাখ্যা সহজসাধ্য।
সাসানীয় সাম্রাজ্যের কিছু ইহুদি ও খ্রিষ্টান এবং সিরিয়ার ইহুদি ও মনোফিসিট খ্রিষ্টানরা অসন্তুষ্ট ছিল[৩] এবং তারা মুসলিম বাহিনীকে স্বাগত জানায়, বিশেষত দুই সাম্রাজ্যের ধর্মীয় সংঘাতের কারণে। একই সময়ে যেমন ফিরাজের যুদ্ধে আরব খ্রিষ্টানরা পারস্য ও বাইজেন্টাইনদের সাথে থেকে লড়াই করে।[৪][৫] বাইজেন্টাইন শাসিত মিশর, ফিলিস্তিন ও সিরিয়া মাত্র কয়েক বছর পূর্বে পারস্যের কাছ থেকে পুনরায় জয় করা হয়েছিল। এর পূর্বে ২৫ বছরের বেশি তা বাইজেন্টাইনরা শাসন করেনি।
ফ্রেড মেকগ্রো ডোনারের মতে আরব উপদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও আদর্শগত কাঠামোর সংগতি ও সেনা সমাবেশের কারণে মুসলিম সেনারা একশত বছরের মধ্যে সে সময়ের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য গঠন করতে সক্ষম হয়। ইসলামি সাম্রাজ্যের আকারের হিসাব অনুযায়ী এটি ১৩ মিলিয়ন (১ কোটি ৩০ লক্ষ) বর্গ কিমি (পাঁচ মিলিয়ন বা পঞ্চাশ লক্ষ বর্গ মাইল) স্থান জুড়ে ছিল যা বর্তমান সময়ের রুশ ফেডারেশন ছাড়া বাকি সব রাষ্ট্র থেকে বড় ছিল।[৬]
স্কটিশ ঐতিহাসিক জেমস বুচানের মতে: "গতি এবং ব্যাপ্তিতে, প্রথম আরব বিজয়গুলি কেবল আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সাথে তুলনা আলে এবং তার জয় করা অঞ্চলের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছিল।[৭]
আরব এমন একটি অঞ্চল ছিল যা বিভিন্ন সংস্কৃতির ধারক ছিল যার কিছু শহুরে এবং বাকিগুলো ছিল যাযাবর বেদুইন সংস্কৃতি।[৮] আরব সমাজ উপজাতি ও গোত্র লাইনে বিভক্ত ছিল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন ছিল "দক্ষিণ" এবং "উত্তরীয়" উপজাতি বিভাজন।[৯] রোমান ও পারস্য উভয় সাম্রাজ্যই তাদের তাবেদার রাজ্য দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে আরবে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করতো এবং এর ফলে আরব উপজাতিরা তাদের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা জোরদার করার জন্য দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতার আশা রাখতো।[৯] লাখমিদ রাজ্য যা বর্তমান দক্ষিণ ইরাক এবং উত্তর সৌদি আরবের কিছু অংশ জুড়ে ছিল পারস্যের ক্লায়েন্ট ছিল এবং ৬০২ সালে পারস্যরা দক্ষিণ সীমান্তের প্রতিরক্ষা গ্রহণের জন্য লখমিদের পদচ্যুত করেছিল।[১০]