ধরন | বাপ |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | কোরিয়া |
অঞ্চল বা রাজ্য | পূর্ব এশিয়া |
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলী | কোরীয় রন্ধনশৈলী |
ভিন্নতা | দোংইয়ং বিবিমবাপ(동영 비빔밥), দোলসত্ বিবিমবাপ(돌솥 비빔밥), জ্যোনজু বিবিমবাপ (전주 비빔밥), জিন্জু বিবিমবাপ(진주 비빔밥) ইত্যাদি |
কোরীয় নাম | |
হাঙ্গুল | 비빔밥 |
---|---|
হাঞ্জা | n/a |
সংশোধিত রোমানীকরণ | bibimbap |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | pibimpap |
আইপিএ | [pi.bim.p͈ap̚] |
বিবিমবাপ[১] (비빔밥) হল কোরিয়ান খাবারের এক বিশেষ ধরনের পদ। 'বিবিমবাপ' (비빔밥) শব্দটি কোরিয়ান ভাষা থেকে এসেছে যার অর্থ হল “বিবিম” (비빔) অর্থাৎ “কয়েক প্রকার খাদ্যীয় উপকরণের মিশ্রণ” এবং “বাপ”(밥) অর্থাৎ “সাদা ভাত”। 'বিবিমবাপ' সাধারণত একটি বড়ো গোল বাটিতে পরিবেশন করা হয়, যেখানে প্রথমে নিচে গরম ভাত এবং তার উপর “নামুল”(나물) অর্থাৎ সাঁতলান বিভিন্ন প্রকারের শাক্-সব্জি, কিমচি (김지), গোচুজাং(고추장) অর্থাৎ কোরিয়ান লাল লঙ্কার পেষ্ট, “কোরিয়ান পদ্ধতিতে তৈরি সয়া পেষ্ট”(된장) কিংবা “সয়া-সস্”, মাংসের কিমা (সাধারণত গরুর মাংস) দিয়ে ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে এবং অবশেষে সবার ওপর একটি ডিমের অমলেট দিয়ে সাজিয়ে পরিবশন করা হয়। এটি খাওয়ার সময় সব উপকরণ একসাথে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়।[২] 'বিবিমবাপ' খাওয়ার এই পদ্ধতিটি কোরিয়া-দেশে অনেক পুরনো সময় থেকেই সবাই মেনে চলে এসেছে।
বিবিমবাপ হল ভাত ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মিশ্রিত একটি বিশেষভাবে সৃষ্টি করা খাবারের পদ। এটি শত শত বছর ধরে কোরিয়ান সমাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে এসেছে এবং আগামী দিনেও একইভাবে স্থান অধিকার করে থাকবে। প্রাচীনযুগের মানুষেরা সময় বাঁচাতে এই পদের সৃষ্টি করেছে, যেখানে ঘরে রয়ে যাওয়া কিছু সব্জি, কখনোওবা গোরুর মাংসের টুকরো বা কিমাও ব্যবহার করা হয় এবং ঘরোয়া প্রকৃতিতে অনেক দিন ধরে তৈরি করা কিছু উপকরণ (যেমন- গোচুজাং, কিমচি, হোয়াং-পো, ইত্যাদি) দিয়ে এই পদটি তৈরি করা হয়।
প্রাচীণ কালে 'জোসান(조선)' যুগে রাজা "সেজো(세조)"-র আমলে এই 'বিবিমবাপ' কথাটি 'গোলদোংবান'(골동반) নামে ঐতিহাসিক নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
'আঠারোশো শতকের' শেষের দিকে 'সিউই জনসন্ (시의 전서)' 'হাঙ্গুল্ (한굴)' ভাষায় 'বিবিমবাপ(비빔밥)' কথাটিতে পরিবর্তন করে। এই লিপিতে বিবিমবাপ প্রথমে বুবিমবাপ এবং 'গোলদোংবান'(골동반) নামে নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। 'গোলদোংবান'(골동반)- এর 'গোল(골)' কথাটির অর্থ হলো ' মিশ্রণ' এবং ' দোং(동)' -এর অর্থ হলো 'মিশ্রণ'।
অতএব, 'গোলদোংবান'(골동반) -এর পুরো অর্থ হলো 'একই পাত্রে গরম ভাতের সাথে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের মিশ্রণ'।
এরপর রাজা সুনজো(순조)- এর আমলে, যিনি ছিলেন 'জোসান’(조선) রাজত্বের ২৩-তম রাজা, তার সময়ে 'হং সক মো’(홍석모) আবার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন 'দোংজিদাল’(동지달)।
এরপরেও অনেকবার নানারকমের নামকরণ করা হয় এবং লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু অবশেষে আঠারোশো শতকের' শেষের দিকে 'সিউই জনসন্’(시의 전서) যিনি ছিলেন এক খাদ্যবিশেষক, এক আভিজাত্য পরিবারের সদস্য, তিনি 'হাঙ্গুল্ (한글)' ভাষায় 'বিবিমবাপ(비빔밥)' নামকরণ করেন ‘আঠারোশো শতক থেকে উনিশশো শতকের' মাঝে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত এই পদটি 'বিবিমবাপ'(비빔밥) নামেই পরিচিত হয়ে আছে।
পৌরাণিক দুটি লেখা থেকে জানা গেছে 'বিবিমবাপের' উৎপত্তি ও ব্যবহার। প্রথমটি হলো “জ্যোনজু”(전주), যেখানে বলা রয়েছে “জ্যোনজু বিবিমবাপ” যেটি প্রাচীন সময়ে রাজ-দরবারের অনুষ্ঠানের জন্যে তৈরি করা হতো।
আর দ্বিতীয়টি “লানোক্কি” (라녹기) নামে উল্লেখিত। যেটিতে লেখা আছে, আগেকারদিনে কৃষকদের স্ত্রীদের কাছে বিভিন্ন আলাদা আলাদা “সহযোগী পরিবেশণ পদ” বানানোর সময় থাকতো না, তাই তারা একটি পাত্রে সর্বরকম উপকরণ একসাথে মিশিয়ে তাদের স্বামীদের খেতে দিত।
আবার জানা গেছে আগেকারদিনের লোকেরা চন্দ্রগ্রহণের সময় এটি সবাই মিলে আনন্দের সাথে উপভোগ করতো। যেটি ঐতিহ্যগত পরম্পরায় আজও তাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং এখনও কোরিয়ার মানুষেরা এই পদটি বিভিন্ন উৎসবে খেয়ে থাকে। কেউ পূর্ণিমার সময়, কেউবা কোনো অনুষ্ঠানে, আবার কোথাও কৃষকরা কৃষি উৎসবে সবাই মিলে আনন্দ নিয়ে থাকে।[৩] আবার অবসর সময়ও সবাই এই পদটির সবাই আনন্দ নিয়ে থাকে।এবং এই পদটির অনেক প্রকারের হয়। বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যায় এই 'বিবিমবাপ' নামক পদটিকে। এটিকে সামুদ্রিক মাছ, কিংবা মাংস, কিংবা শুধু সব্জি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যায় এবং সর্ব প্রকারের বিবিমবাপের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।[৪]
'বিবিমবাপ' ব্যবহারিত উপকরণের উপর ভিত্তি করে সাধারণত অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। সাধারণত ‘বিবিমবাপ' তৈরিতে যে সমস্ত সাঁতলানো শাক্-সব্জি ব্যবহার করা হয়, তা হল- “ওই”(오이) অর্থাৎ “শশা”; “এ্যাহোবাক”(애호박) অর্থাৎ “ধুন্দুল”; “মু”(무) অর্থাৎ “মূলো”; মশরুম; গিম; পালং-শাক্; অঙ্কুরিত সয়া-বিনস্; “গোসারি”(고사리) অর্থাৎ “ফার্ন-ব্রেক”; “দুবু”(두부) অর্থাৎ “টোফু”(সাতঁলান); লেটুস পাতা; ঝলসানো গোরুর মাংস (“গোরুর মাংসের” জায়গায় “মুরগির মাংস” কিংবা “সী-ফুড” ব্যবহার করাও যেতে পারে)।[২] 'বিবিমবাপ' পদটি খুবই সুন্দর করে পাত্রে সাজানো হয়, বিভিন্ন রঙের উপকরণগুলিকে আলাদা আলাদা করে পাশাপাশি সাজানো হয়। তার মধে কম করে পাঁচ ধরনের রঙিন সবজি থাকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পদ্ধতিতে এতে আরো উপকরণ যোগ করা হয়, তিল (ইংরেজি ভাষায় “সেসিমি সীড্” ) ও তিলের তেল( ইংরেজি ভাষায় সেসিমি”); গোচুজাং (고추장) অর্থাৎ কোরিয়ান পদ্ধতিতে তৈরি করা “লাল লঙ্গার পেষ্ট”।[৫]
এছাড়াও অনেক রকম উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেগুলি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তথা কয়েকরকমের পেষ্ট, সস্, 'বানচান’(반잔) অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার সাঁতলানো সব্জি, নামুল(나물) অর্থাৎ বিভিন্ন রকম ভোক্ষণীয় সাঁতলানো ঘাস, পাতা, শাক্, ঔষধি গাছ ইত্যাদি। এইগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে অনেক দিন অব্দি খাওয়া যেতে পারে।
সাধারণ ভাষায়, একটি পাত্রে মধ্যে সর্বরকম উপকরণ, গরম ভাত ও ঝলসানো মাংস বা মাংসের কাবাব দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পদটি হল 'বিবিমবাপ'। এটি অত্যন্ত এক সুস্বাদুকর খাবার এবং খুবই জনপ্রিয়। এটি কম ক্যালরিযুক্ত, প্রোটিনকর খাবার পদ, যা স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী।[৫]
এই প্রকার “বিবিমবাপ”-টি দক্ষিণ কোরিয়াতে ঐতিহাসিক সময় থেকে গতানুগতিকভাবে মানুষজন উপভোগ করে এসেছে। এই বিবিমবাপের “ভাতটি” একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় “মাংসের স্টক” এবং “অঙ্কুরিত সয়া-বিনস”- এর সাথে। সাধারণত গোরুর মাংস ব্যবহার করা হয় এইধরনের পদে। এরপর একই প্রক্রিয়া তে পাত্রে একের পর এক উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়। কিছু বিশেষধরনের উপকরণ যেমন- “হোয়াং-পো”(황포) অর্থাৎ “কোরিয়ান হলুদ জেলি”; “গোচুজাং”(고추장); “জ্যোপজাং”; মাংসের কাবাব; “কোংনামুল-গুকবাপ”(콩나물국밥) যোগ করা হয়। শুধুমাত্র কোরিয়াতেই নয়, বাকিদেশ গুলিতেও এটি খুবই জনপ্রিয়।[৬]
এই প্রকার 'বিবিমবাপ' পাথরের তৈরি পাত্রেই একদম গরম থাকা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। সাধারণত এই পদটিতে ডিমের ওমলেট দেওয়া হয়। আবার ডিমের ওমলেট- এর জায়গায় শুধু কুসুম দিয়েও পরিবেশন করা হয়।
সবার প্রথমে এই পাত্রের ভিতর সর্বএ তিলের তেল (সেসিমি অয়েল) লাগিয়ে নেওয়া হয়। এরপর একমুঠো ভাত তাতে দিয়ে বাকি উপকরণ তার উপর সাজিয়ে দিয়ে এবং শেষে অমলেট বা শুধু কাঁচা ডিমের কুসুম দিয়ে পাত্রটিকে আগুনের ওপর হলাকা আঁচে বসানো হয়, যতক্ষণ না নিচের পাত্র লাগোয়া ভাত গুলি হালকা লাল এবং হালকা কড়কড়ে হয়ে যায়। তারপর সেটিকে পরিবেশন করা হয়।
“জিন্জু বিবিমবাপ” হল এমন এক প্রকার পদ, যেটি খুবই কম সময়ে তৈরি করা যায়। “জিন্জুসং” যুদ্ধের সময় এই প্রকার পদটির উৎপত্তি হয় বলে এর নাম 'জিন্জু বিবিমবাপ”। এই পদটি তৈরিতে যাতে সময়ও কম লাগে এবং যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতকারী সৈন্যরা বেশি সময় ব্যয় না করে পেট ভরে খেতে পারে, তার জন্যে এই রকম পদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই পদটিতে কিছু সাঁতলান তাজা সবজি, কাঁচা মাংসের কিমা ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করা কিছু উপকরণ দিয়ে মিশ্রিত, এবং সাদা ভাতের সাথে পরিবেশণ করা হত। সেই সময় থেকেই এই পদের সৃষ্টি এবং নামকরণ। আজও এর আনন্দ সবাই উপভোগ করে। অতি অত্যন্ত সুস্বাদু ও প্রোটিনকারি পদ, স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী।
এই পদটিতে সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটিতে ভাতের ওপর সাঁতলানো কিছু সবজি, লেটুস পাতা, তিলের তেল, ছোগোচুজাং(“초고추장” – এটি একটি সস্, যেটি ভিনিগার, গোচুজাং এবং চিনি দিয়ে তৈরি) একই প্রক্রিয়ায় সাজিয়ে এবং সর্বশেষে যে কোনো এক প্রকারের সামুদ্রিক মাছ (যেমন - টুনা, রক্ ফিস্, স্যালমন্,হেলিবাট ইত্যাদি) ওপরে দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশণ করা হয়।
এই প্রকার বিবিমবাপে “মাছের ডিম”(যেমন – টুনা মাছের ডিম অথবা স্যালমন্ মাছের ডিম) দেওয়া হয়। এছাড়া আবার এই প্রকার 'বিবিমবাপে' ভাজা মাছের টুকরোও দিয়ে থাকা হয়। সুতরাং বাকি ধরনের বিবিমবাপগুলির মতই একই প্রকারে সমস্ত উপকরণ ভাতের ওপর একের পর এক সাজিয়ে অবশেষে মাছের ডিম বা ভাজা মাছের টুকরো দিয়ে এবং ঘরোয়া প্রক্রিয়ায় তৈরি সস্ দিয়ে পরিবেশণ করা হয়।
ইয়াকছো বিবিমবাপ (약초비빔밥)[৭]
আন্দোং বিবিমবাপ (안동 비빔밥)
ইত্যাদি।