শিগেরু মিয়ামোতো | |
---|---|
宮本 茂 | |
২০১৩ ইথ্রি সম্মেলনে মিয়ামোতো | |
জন্ম | সোনোবে, কিয়োটো, জাপান | ১৬ নভেম্বর ১৯৫২
মাতৃশিক্ষায়তন | কানাজাওয়া শিল্প কলেজ |
পেশা | গেম ডিজাইনার, গেম পরিচালক |
উপাধি | নিনটেনডো কো. লি.-এ:[১][২] ডিজাইনার (১৯৭৭ – ১৯৮৪) মহাব্যবস্থাপক, নিনটেনডো ইএডি (১৯৮৪ – ২০১৫) প্রধান নির্বাহী(২০০২ – ২০১৫) প্রতিনিধি পরিচালক/সৃজন সহকারী (২০১৫ – ২০১৭) প্রতিনিধি পরিচালক/ফেলো (২০১৭ – ) |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইয়াসুকো মিয়ামোতো |
সন্তান | ২ |
পুরস্কার | এআইএএস হল অফ ফেম পুরস্কার (১৯৯৮)[৩] বাফটা ফেলোশিপ (২০১০) |
স্বাক্ষর | |
![]() |
শিগেরু মিয়ামোতো (জাপানি: 宮本 茂 হেপবার্ন: Miyamoto Shigeru, উচ্চারিত [mijamoto ɕiɡeɾɯ]; জন্ম নভেম্বর ১৬, ১৯৫২)[৪] হলেন নিনটেনডোতে কর্মরত একজন জাপানী ভিডিও গেম নকশাকারী, পরিচালক এবং প্রযোজক, এবং প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রতিনিধিত্বমূলক পরিচালক। সর্বকালের সর্বোচ্চ বিক্রিত এবং জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি ভিডিও গেমের জনক হিসেবে মিয়ামোতো সুবিদিত। তার তৈরি করা গেমের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল, মারিও, দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা, স্টার ফক্স, এফ-জিরো, ডংকি কং, পিকমিন, এবং আরও অনেক।
মিয়ামোতো ১৯৭৭ সালে নিনটেনডোতে যোগ দেন, যখন প্রতিষ্ঠানটি ১৮৮৯ সাল থেকে চলা তাসের ব্যবসা বর্জন করে প্রথমবারের মত ভিডিও গেম শিল্পে প্রবেশ করার পরিকল্পনা করছিল। মিয়ামোতোর বহু গেম নিনটেনডোর প্রতিটি গেম কনসোলের অবমুক্তিকালীন পণ্য হিসেবে বহুল-আকাঙ্খিত এবং বিশেষভাবে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। তার প্রথম দিককার কাজগুলো ছিল ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে ভিডিও গেম আর্কেডের জন্য। তিনি নিনটেনডোর গবেষণা ও উন্নয়ন শাখার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন, যেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু প্রথমপক্ষীয় পণ্যের বিকাশ ঘটেছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিনটেনডোর প্রেসিডেন্ট সাতোরু ইওয়াতার মৃত্যুর পর জেনিও তাকেদার সঙ্গে মিয়ামোতো ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর কয়েক মাস পর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির "সৃজন সহকারী" পদাধিকার দেয়া হয়।[৫]
মিয়ামোতোর জন্ম ১৯৫২ সালের ১৬ নভেম্বর, জাপানের কিয়োটো প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মফস্বল শহর সোনোবেতে।[৬] তাদের পরিবার ছিল মধ্যম আয়ের, এবং মিয়ামোতোর বাবা ছিলেন একজন ইংরেজি শিক্ষক।[৬]
শৈশবে মিয়ামোতো বাড়ির আশেপাশে প্রাকৃতিক এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। এভাবে একবার তিনি একটি গুহার সন্ধান পেয়েছিলেন, এবং বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনা করে অবশেষে তার মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন। মিয়ামোতোর শৈশবের এই ভ্রমণোভ্যাস পরবর্তী জীবনে তার কাজকে অনুপ্রাণিত করেছে, বিশেষত দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা গেম ও একই নামের গগেমসিরিজকে।[৭]
মিয়ামোতো কানাজাওয়া মিউনিসিপাল কলেজ অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস থেকে ইনডাস্ট্রিয়াল নকশার ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন[৬] কিন্তু তখন কোন চাকরি যোগাড় করতে পারেননি। তার মাঙ্গা-প্রীতি ছিল এবং প্রথমদিকে মাঙ্গা অঙ্কনকে পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন, তবো পরে ভিডিও গেমের দিকে মনোযোগ দেন।[৮] মাঙ্গার চিরায়ত কিশোতেনকেৎসু বর্ণনাপ্রথা[৯] এবং ওয়েস্টার্ন টিভি অনুষ্ঠান[১০] মিয়ামোতোর কাজকে প্রভাবিত করেছে। মিয়ামোতোকে ভিডিও গেম শিল্পে প্রবেশে উৎসাহী করেছিল ১৯৭৮ এর জনপ্রিয় আর্কেড গেম স্পেস ইনভেডার্স।[১১]
আমার মনে হয় ভিডিও গেম শিল্পের শুরুর দিকের একজন গেম ডিজাইনার হতে পেরে আমি খুবই সৌভাগ্যবান। আমি কোন প্রকৌশলী নই, কিন্তু লম্বা সময় ধরে গেম ডিজাইনের মূলনীতিগুলো একদম গোড়া থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছি। এবং আমি সবসময় অগ্রবর্তী থাকতে চাই বলে, যুগান্তকারী কোন গেম তৈরির আগে প্রথমে সেটার জন্য দরকারী প্রযুক্তি ও উপকরণ তৈরি করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
শিগেরু মিয়ামোতো (অনুবাদ)[১২]
নিনটেনডো প্রথম দিকে খেলার তাস এবং অন্যান্য পণ্য তৈরি করত, তবে ১৯৬০ দশকে খেলনা ও ভিডিও গেম শিল্পে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। ১৯৭৭ সালে মিয়ামোতোর বাবা বন্ধুসুত্রের সাহায্যে নিনটেনডোর প্রেসিডেন্ট হিরোশি ইয়ামাউচির সঙ্গে মিায়মোতোর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন। মিয়ামোতো নিজের তৈরি কিছু খেলনা দেখিয়ে নিনটেনডোর পরিকল্পনা বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন।[৬]
মিয়ামোতোর প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শিল্পী পদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।[৬] মিয়ামোতো নিনটেনডোর প্রথম মুদ্রা-চালিত আর্কেড গেম শেরিফ এর চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন।[১৩] পরে ১৯৮০ সালে প্রকাশিত রাডার স্কোপ এর ডেভলপমেন্টে মিয়ামোতোর ভূমিকা ছিল। গেমটি জাপানে কিছু সফলতা পেলেও উত্তর আমেরিকার ভিডিও গেম বাজারে নিনটেনডোর প্রবেশের প্রচেষ্টা ১৯৮১ সাল এর মধ্যে বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এবং আর্থিক ধ্বসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। বিপর্যয় এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্ট ইয়ামাউচি রাডার স্কোপ গেমের অবিক্রিত কপিগুলোকে আর্কেড গেমে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেন এবং মিয়ামোতোকে এই কাজের দায়িত্ব দেন। এই রূপান্তরিত গেমটি পরে ডংকি কং নামে প্রকাশিত হয়।[১৪]:১৫৭ এ ঘটনার ব্যাপারে মিয়ামোতো পরে বলেছেন, ওই সময় এ দায়িত্ব দেয়া মত জন্য আর কেউ ছিল না।[১৫] নিনটেনডোর প্রধান প্রকৌশলী গানপেই ইয়োকোই প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।[১৪]:১৫৮
মিয়ামোতো ডংকি কং গেমটির জন্য প্রচুর চরিত্র এবং কাহিনীর চিন্তাভাবনা করেছিলেন, তবে শেষপর্যন্ত একটি গরিলা, একজন ছুতার, ও একটি মেয়ের মধ্যে ত্রিকোণ প্রেমকে পটভূমি হিসেবে বাছাই করেন। তিনি জনপ্রিয় কমিক চরিত্র ব্লুটো, পপাই এবং অলিভ অয়লের মধ্যকার সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছিলেন, তবে নিনটেনডো ওই চরিত্রগুলোর স্বত্তাধিকার অর্জনে সক্ষম হয়নি।[৬] ব্লুটো একটি গরিলায় পরিণত হয়, যে রূপটিকে মিয়ামোতো ব্যাখ্যা করেছেন "খুব কুটিল বা কুৎসিত নয়" বলে।[১৬]:৪৭ মিয়ামোতো চরিত্রগুলোর অনুপ্রেরণা হিসেবে আরও উল্লেখ করেছেন "বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট" এবং কিং কং (১৯৩৩) সিনেমাকেও।[১৭]:৩৬ ডংকি কং-ই ছিল প্রথম গেম যেখানে গেমটি তৈরি করার আগেই তার কাহিনী ও পটভূমি গঠন করে নেয়া হয়েছিল।[১৭]:৩৮ মিয়ামোতো অনেক উচ্চাশা নিয়ে প্রকল্পটির কাজ করছিলেন, তবে তার উপযুক্ত প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছিল না। তাই তিনি গেমটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ধারণা গঠন করতেন, এবং প্রকৌশলীদের থেকে পরামর্শ নিতেন যে সেসব বাস্তবায়ন করা যাবে কীনা। তিনি চরিত্রগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন আকারের করতে চেয়েছিলেন, এবং বিভিন্নভাবে নড়াচড়া ও প্রতিক্রিয়া দেখানোর বৈশিষ্ট্যও রাখতে চেয়েছিলেন। তবে ইয়োকোই-এর দৃষ্টিতে মিয়ামোতোর প্রাথমিক নকশাটা বাস্তবায়নের পক্ষে খুবই জটিল ছিল।[১৬]:৪৭–৪৮ ইয়োকোই সী-স দিয়ে মূল চরিত্রটিকে অবস্থান পাল্টানোর ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন, তবে তা সেসময় প্রোগ্রাম করা অসম্ভব ছিল। মিয়ামোতো মূল চরিত্রের চলাফেরার জন্য ঢালু প্ল্যাটফর্ম বা মাচা এবং মই, ও পথে বাধা হিসেবে পিপা রাখার ধারণা করেছিলেন। তিনি গেমটিতে একাধিক লেভেল রাখার জন্যও প্রোগ্রামিং দলকে অনুরোধ করেছিলেন; তারা প্রথমে অনিচ্ছুক হলেও গেমটি প্রোগ্রামিং করতে সক্ষম হয়।[১৭]:৩৮–৩৯ গেমটি পরীক্ষার জন্য নিনটেনডোর যুক্তরাষ্ট্র শাখায় পাঠানো হলে ওই শাখার বিক্রয় ব্যবস্থাপক প্রচলিত ধারা থেকে গেমটির ব্যাপক বিচ্যুতির কারণে প্রথমদিকে অবহেলা করেছিলেন।[১৬]:৪৯ মার্কিন কর্মচারীরা চরিত্রগুলোর জন্য পশ্চিমা নাম দিতে চেয়েছিল। ফলশ্রুতিতে নারী চরিত্রটির নাম দেয়া হয় "পলিন" (নিনটেনডোর ওয়াশিংটন মজুদকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ডন জেমস (ভিডিও গেমস)ের স্ত্রী পলি জেমসের নামে)। মূল চরিত্রের প্রাথমিক নাম ছিল "জাম্পম্যান"; মজুদকেন্দ্রেটির জমির মালিক মারিও সেগালের নামে তার নাম দেয়া হয় মারিও।[১৬]:১০৯ গেমটির ইংরেজি শিরোনাম হিসেবে ডংকি কং নামটি বাছাই করা হয়। এসব নাম সেসময় গেমটির আর্কেড ক্যাবিনেট এবং চিত্রকর্মে ব্যবহার করা হয়েছিল।[১৭]:২১২
ডংকি কং গেমটি ব্যবসাসফল ছিল, ফলে মিয়ামোতো গেমটির পরবর্তী পর্ব ডংকি কং জুনিয়র (১৯৮২) এবং ডংকি কং ৩ (১৯৮৩) তৈরি করার দায়িত্ব পান। পরবর্তী গেমটিতে তিনি জাম্পম্যান তথা মারিও চরিত্রটিকে সুগঠিত করে তোলেন এবং লুইজি (গেমিং) নামের তার এক ভাই যোগ করেন। এই গেমটির নাম দেয়া হয় মারিও ব্রাদার্স। ইয়োকোই মারিও চরিত্রটিকে কিছু অতিমানবিক ক্ষমতা দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেমন অনেক উঁচু থেকেও নিরাপদে পতনের ক্ষমতা। ডংকি কং গেমে মারিওর গড়ন ও পোশাক—ওভারঅল, হ্যাট ও গোঁফ—ছুতারের চেয়ে বর্জ্য পাইপের শ্রমিক (plumber) হিসেবেই বেশি উপযুক্ত ছিল, তাই মিয়ামোতো সেভাবেই চরিত্রটিকে পুনর্গঠন করেন।[১৮] মিয়ামোতোর মনে হয়েছিল প্রচুর নর্দমা সম্পন্ন নিউ ইয়র্ক শহরটি এই গেমের উপযুক্ত ঘটনাস্থল হতে পারে। দুই-খেলোয়াড় (two-player) মোড সহ গেমটির আরও কিছু বৈশিষ্ট্য জাউস্ট নামক একটি পূর্ববর্তী গেম থেকে অনুপ্রাণিত।[১৯] এপর্যন্ত মারিও ব্রাদার্স ফ্র্যাঞ্চাইজের গেমগুলো এক ডজনেরও বেশি প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রকাশিত হয়েছে।[২০] প্রথম মারিও ব্রাদার্স গেমটি প্রকাশের পরে মিয়ামোতো এর বিভিন্ন আনুষঙ্গিক উপাদান বেজবল, টেনিস, এবং গল্ফ গেমগুলোতে ব্যবহার করেছৈন।[২১]
নিনটেনডোর প্রথম ঘরোয়া ভিডিও গেম কনসোল, ফ্যামিলি কম্পিউটার বা ফ্যামিকম (উত্তর আমেরিকায় নিনটেনডো এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম বা সংক্ষেপে এনইএস নামে মুক্তিপ্রাপ্ত) প্রকাশের সময় মিয়ামোতো এর জন্য দুটি গেম তৈরি করেন, সুপার মারিও ব্রাদার্স এবং দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা। দুটি গেমই সামগ্রিক ভিডিও গেম শিল্পে যুগান্তকারী অবদান রেখেছে।
এই গেমদুটিতে মিয়ামোতো প্রচলিত গেমগুলোর মত সর্বোচ্চ স্কোর করার পরিবর্তে আকর্ষণীয় গেমখেলার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।[৭] সুপার মারিও ব্রাদার্স গেমটির গঠন মোটামুটি সরলরৈখিক ছিল, প্রতিটি লেভেলে খেলোয়াড় ক্রমাগত দৌড়, ঝাঁপ এবং শত্রুদের এড়িয়ে বা পরাস্ত করে বাম থেকে ডানে অগ্রসর হত।[২২][২৩] এর বিপরীতে দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা গেমে মিয়ামোতো অরৈখিক গেমপ্লে বাস্তবায়ন করেছিলেন, যেখানে কোন সুনির্দিষ্ট গন্তব্য পথ ছিল না এবং খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ধাঁধা সমাধান করে অগ্রগতির পথ খুঁজে বের করতে হত।[২৪] এই গেমের বিশ্বটি সুবিস্তৃত এবং তৎকালীন গেমগুলোর তুলনায় দৃশ্যত সীমাহীন ছিল, এবং "অগণিত বিকল্প পথ এবং গভীরতা প্রদান করেছিল, যা অন্য কোন গেমে দেখা যায়নি"।[৬] দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা-তে মিয়ামোতো এমন একটি জগত তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা খেলোয়াড়দের কাছে আকর্ষণীয় হবে, "একটা ছোট বাগানের মত, যা তারা ড্রয়ারে গুছিয়ে রেখে দিতে পারে"।[৭] তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন নিজের কৈশোরে কিয়োটোর প্রান্তর, বন, গুহায় ঘোরাফেরার অভিজ্ঞতা থেকে। প্রতিটি জেল্ডা গেম এরকম রোমাঞ্চকর অভিযানের ভাব ধারণ করে।[৭] মিয়ামোতোর বর্ণনায়, "আমি ছোটবেলায় একবার ঘুরতে বের হয়ে একটা হ্রদ আবিষ্কার করলাম। হঠাৎ করে একটা হ্রদ খুঁজে পাওয়া আমার কাছে খুবই আশ্চর্যজনক ছিল। কোন মানচিত্র ছাড়াই গ্রামের এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে আমি অনেক মজার মজার জিনিস আবিষ্কার করেছিলাম, আর তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, এরম একটা অভিযানে যেতে কেমন লাগবে।"[১৬]:৫১ জেল্ডা সিরিজের গেমগুলোর একটি অপরিহার্য উপকরণ হল গোলকধাঁধারূপ অন্ধকূপ বা dungeon এলাকা, যেখানে মিয়ামোতো তার শৈশবে স্লাইডিং দরজাময় পারিবারিক গৃহে হারিয়ে যাবার স্মৃতির অনুভূতিটা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন।[১৬]:৫২ ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনইএস-এর নতুন উপাদান ডিস্ক সিস্টেমের মুক্তির সময় গেমটি প্রকাশিত হয়।
এনইএসের জন্য মিয়ামোতো আরও কিছু গেম তৈরি করেছেন, যেমন আইস ক্লাইমার, কিড ইকারাস, এক্সাইটবাইক, ডেভিল ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি। এছাড়া তিনি সুপার মারিও ব্রাদার্স এবং দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা উভয় সিরিজেরই পরবর্তী গেমও তৈরি করেন। সুপার মারিও ব্রাদার্স ২, প্রাথমিকভাবে কেবল জাপানে মুক্তি পেয়েছিল। গেমটি সুপার মারিও ব্রাদার্স এর বহু উপাদানের পুনর্ব্যবহার করলেও তার তুলনায় অত্যন্ত কঠিন ছিল। নিনটেনডো অফ আমেরিকার কাছে গেমটি খুব বেশি কঠিন মনে হয়েছিল, এবং তাছাড়াও প্রথম গেমটির সামান্য সম্পাদিত সংস্করণ ছাড়া বাড়তি বিশেষত্ব প্রতীয়মান হয়নি। তাই সিরিজটির জনপ্রিয়তা অটুট রাখার জন্য তারা এই গেমটির যুক্তরাষ্ট্রীয় মুক্তি বাতিল করে একটি বিকল্পের সন্ধান করছিল। এক্ষেত্রে মিয়ামোতোরই নকশা করা ইয়ুমে কোজো: দোকি দোকি প্যানিক গেমটি বাছাই করা হয়।[২৫] এই গেমটিরই কিছু পরিবর্তন করে সুপার মারিও ব্রাদার্স ২ হিসেবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রকাশ করা হয়। মূল জাপানি সংস্করণটি পরবর্তীতে সুপার মারিও ব্রাদার্স: দ্য লস্ট লেভেলস নামে উত্তর আমেরিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা এর পরবর্তী গেম, জেল্ডা ২: দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ লিংক, প্রকাশপরবর্তী সময়ে উচ্চ সাফল্য অর্জন করলেও প্রথম গেমের থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী ছিল। দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ লিংক গেমটি ছিল সাইড-স্ক্রলিং ঘরানার (যেখানে প্রথম গেমটি ছিল টপ-ডাউন দৃষ্টিকোণের)। এই গেমটিতে আরপিজি ঘরানা প্রচুর উপকরণ যোগ করা হয়েছিল, যেমন কৌশলগত আক্রমণ পদ্ধতি, অভিজ্ঞতা পয়েন্ট (EXP), যাদু ক্ষমতা, অ-খেলোয়াড় চরিত্র তথা এনপিসি (NPC) সমূহের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ। গেমটিতে মূল চরিত্র লিংকের একাধিক জীবন ছিল; জেল্ডা সিরিজের আর কোন গেমে এই বৈশিষ্ট্য নেই।[২৬] দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ লিংক এর খেলার পদ্ধতি ছিল দুটি পদ্ধতির সংমিশ্রণ: ওভারওয়ার্ল্ড বা মূল বিশ্ব, এবং যোট গ্রামের মত বিভিন্ন সীমিত এলাকা। মূল বিশ্ব, যেখানে অন্যান্য জেল্ডা গেমের বেশিরভাগ অংশ ঘটিত হয়, সেটি এই গেমেও "টপ-ডাউন" রূপে থাকলেও মূলত অন্যান্য এলাকায় যাওয়ার একটি মধ্যবর্তী অঞ্চল হিসেবে কাজ করত। গ্রামের মত কোন এলাকায় প্রবেশ করলে গেমটি সাইড-স্ক্রলিং গঠন ধারণ করত।[২৬] গেমটিতে "যাদু মিটার" এবং ও ডার্ক লিংকের মত এমন কিছু উপাদান যুক্ত করা হয়েছইল, যা পরবর্তী গেমগুলোতে পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সাইড-স্ক্রলিং চলন এবং আরপিজি বৈশিষ্ট্যগুলো এই গেম সিরিজে আর ফিরে আসেনি। এই গেমটি জেল্ডা সিরিজে তো বটেই, এবং সমগ্র ৮-বিট গেমিং ইতিহাসেরই অন্যতম কঠিন গেম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ লিংক ছিল আরপিজি এবং প্ল্যাটফর্মিং ঘরানায় সংমিশ্রণকারী অন্যতম একটি গেম।
কিছুকাল পর নিনটেনডো ইএডি প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে সুপার মারিও ব্রাদার্স ৩ গেমটি তৈরি করে।[২৭] এই গেমটিতে প্রথম সুপার মারিও ব্রাদার্স এর ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যেমন বিভিন্ন বিশেষ ক্ষমতাদানকারী পোশাক, এবং নতুন নতুন শ্রেণীর শত্রু।[২৭][২৮] গেমটিতে কুপালিং তথা বাউজারের সন্তানদের প্রত্যেককে আলাদা গড়ন ও চরিত্র দিয়ে নকশা করা হয়েছে। মিয়ামোতো এদের নাম দিয়েছিলেন তার সাতজন প্রোগ্রামারের নামে, তাদের অবদানের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ।[২৭] পশ্চিমা সংস্করণে কুপালিংদের নাম পরিবর্তন করে সুপরিচিত পশ্চিমা সঙ্গীতজ্ঞদের নাম দেয়া হয়েছিল।[২৭] মারিও সিরিজের প্রথম গেম হিসেবে এই গেমটিতে দুটি ভিন্ন স্ক্রিনে খেলা চলত: একটি ওভারওয়ার্ল্ড ম্যাপ এবং লেভেলসমূহ। ওভারওয়ার্ল্ডে সম্পূর্ণ বিশ্বের ম্যাপ এবং বিভিন্ন লেভেলে প্রবেশের পথ অবস্থিত, আর লেভেলগুলো হল বিভিন্ন বাধা ও শত্রু ধারণকারী বাম-থেকে-ডানে যাবার সরলরৈখিক সাইড-স্ক্রলিং এলাকা।
নিনটেনডোর বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ গবেষণা ও উৎকর্ষ দলের সমন্বয়ে নিনটেনডো ইএডি (Nintendo Entertainment Analysis & Development) শাখাটি জন্ম নিয়েছে, যার প্রারম্ভিককালের কর্ণধার ছিলেন মিয়ামোতো। নিনটেনডো ইএডি প্রায় ১৫ মাসের ভিতর এফ-জিরো গেমটি তৈরি করেছিল, যা ছিল সুপার নিনটেনডো এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম বা এসএনইএস কনসোলের অবমুক্তিকালীন একটি গেম।[২৯] মিয়ামোতো পরে এসএনইএসের আরও কিছু গেমে কাজ করেছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্টার ফক্স। এই গেমটির জন্য প্রোগ্রামার জেজ স্যান নিনটেনডোকে এসএনইএসের জন্য সুপার এফএক্স চিপ নামে একটি হার্ডওয়্যার আপগ্রেড তৈরিতে সম্মত করেছিলেন, যার মাধ্যমে কনসোলটির ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স প্রদর্শনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।[৩০][৩১] এই হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে মিয়ামোতো এবং কাৎসুয়া এগুচির ডেভলপ করা স্টার ফক্স ছিল অন্যতম একটি প্রারম্ভিক ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স সম্পন্ন গেম।[৩২]
মিয়ামোতো এই কনসোলটির জন্য দুটি মারিও গেম তৈরি করেছেন। সুপার মারিও ওয়ার্ল্ড ছিল এসএনইএসের অবমুক্তিকালীন গেম এবং কনসোলটির সাথে দেয়া থাকতো। এতে "ইয়োশি" নামের একটি ডায়নোসর চরিত্র যোগ করা হয়েছিল, যা পরে নিনটেনডোর আরও অনেক গেমে উপস্থিত হয়েছে। এবং দ্বিতীয় গেমটি হল সুপার মারিও আরপিজি, যা সিরিজের পূর্ববর্তী গেমগুলো থেকে ভিন্নধর্মী: প্ল্যাটফর্মারের পরিবর্তে কাহিনীনির্ভর রোল-প্লেইং গেম। এই গেমটির জন্য মিয়ামোতোর অধীনে নিনটেনডো এবং স্কয়ার কোং. সমন্বিত একটি দল কাজ করেছে। গেমটির গ্রাফিক্স তৈরিতেই প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল।[৩৩]
মিয়ামোতো এসএনইএসের জন্য জেল্ডা সিরিজের তৃতীয় গেম দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: এ লিংক টু দ্য পাস্ট তৈরি করেছেন। এটি প্ল্যাটফর্মার ঘরানা থেকে বের হয়ে সিরিজটির প্রাথমিক রূপে তথা টপ-ডাউন ধারায় ফিরে যায়। এই গেমটিতে এমন বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছিল, যা জেল্ডা সিরিজের অত্যাধুনিক গেমগুলো পর্যন্তও উপস্থিত রয়েছে, যেমন একটি বিকল্প বাস্তবতা বা সমান্তরাল জগৎ, "মাস্টার সোর্ড", এবং অন্যান্য অস্ত্র ও উপকরণ।
এসময় সাতোশি তাজিরির পোকেমন সিরিজের প্রথম গেম পোকেমন রেড এবং ব্লু তৈরিতে মিয়ামোতো পরামর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি গেমটির প্রযোজকও ছিলেন এবং কিছু সামাজিক অনুষঙ্গ যোগ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।[৩৪] পোকেমন পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন ফ্র্যাঞ্চাইজে পরিণত হয়েছে, এবং প্রচুর গেম, এনিমে, কমিকস, খেলনা প্রভৃতির জন্ম দিয়েছে।[৩৫]
মিয়ামোতো নিনটেনডো ৬৪ কনসোলের জন্যও প্রধানত তার চলমান সিরিজগুলোরই একাধিক গেম তৈরি করেছেন। মিয়ামোতো ছিলেন কনসোলটির অবমুক্তিকালীন গেম সুপার মারিও ৬৪ এর প্রধান পরিচালক। গেমটি ডেভলপ করার সময় তিনি চরিত্রের নকশা এবং ভার্চুয়াল ক্যামেরা পদ্ধতি নিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করেছিলেন। মিয়ামোতো এবং অন্যান্য ডেভলপাররা প্রথমদিকে নিশ্চিত ছিলেন না যে গেমটির গতিপথ কোন দিকে যাবে, এবং ক্যামেরা ও সজ্জা নির্ধারণ করতেই বেশ কয়েক মাস সময় খরচ করে ফেলেছিলেন।[৩৬] প্রাথমিক নকশাটা ছিল স্থির পথসম্পন্ন আইসোমেট্রিক গঠনের, তবে পরে স্বাধীন চলাচলযোগ্য ত্রিমাত্রিক নকশা চূড়ান্ত বাছাই করা হয়।[৩৬] নিনটেনডো ৬৪ কন্ট্রোলারেরও নকশাতেও মিয়ামোতোর গুরুতর অবদান আছে।
সুপার মারিও ৬৪ এবং স্টার ফক্স ৬৪ এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে[১০] মিয়ামোতো তৈরি করেন তার পরবর্তী গেম, দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: অকারিনা অফ টাইম। তিনি গেমটির পরিচালক দলের প্রধান ছিলেন।[৩৭] গেমটিতে সুপার মারিও ৬৪ এর ইঞ্জিনই ব্যবহৃত হয়েছে, তবে এতটা পরিবর্তনকৃত যে বস্তুত সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছিল। নিনটেনডো ইএডি-এর একটি নতুন কৌশল হিসেবে অকারিনা অফ টাইম-এর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন পরিচালকের নিয়ন্ত্রিত ছিল। তবে এভাবে ডেভলপমেন্টের গতি কমে গেলে পরে মিয়ামোতো কেন্দ্রীয় পরিচালকের ভূমিকা নেন (দোভাষী অনুবাদক বিল ট্রিনেনের সহায়তায়)।[৩৮] গেমের ডেভলপমেন্ট দলটি ত্রিমাত্রিক গেমে অনভিজ্ঞ ছিল, তবে সহপরিচালক মাকোতো মিয়ানাগার ভাষায়, তাদের মধ্যে ছিল নতুন এবং অনন্য কিছু তৈরির প্রচণ্ড উদ্দীপনা।[৩৯] মিয়ামোতো অকারিনা অফ টাইম এর পরে দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: মেজোরা'স মাস্ক নামে জেল্ডা সিরিজের আরেকটি গেম তৈরি করেন। পূর্ববর্তী গেমটির ইঞ্জিন এবং গ্রাফিক্স উপকরণ পুনর্ব্যবহার করে অপেক্ষকৃত ছোট একটি দল মাত্র ১৮ মাসেই মেজোরা'স মাস্ক সম্পন্ন করে ফেলে।
মিয়ামোতো এন৬৪ এর জন্য মারিও সিরিজের বেশ কিছু সহবর্তী গেমও তৈরি করেছেন, যেমন মারিও কার্ট ৬৪ এবং মারিও পার্টি।
গেমকিউব কনসোলের জন্য শিগেরু মিয়ামোতো বিভিন্ন গেম তৈরি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে কনসোলটির অবমুক্তিকালীন গেম লুইজি'স ম্যানশন। ২০০০ সালের নিনটেনডো স্পেস ওয়ার্ল্ড-এ গেমকিউবের উন্নত গ্রাফিক্স ক্ষমতার প্রযুক্তির ডেমো হিসেবে গেমটি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল।[৪০] প্রকৃতপক্ষে মিয়ামোতো প্রথমে একে কেবল একটি সংক্ষিপ্ত ডেমো হিসেবেই তৈরি করেছিলেন; নিনটেনডো পরে একে পূর্ণ গেমে রূপান্ডরের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০০১ এর ইথ্রি সম্মেলনে গেমকিউব কনসোলের পাশাপাশি লুইজি'স ম্যানশন গেমটি প্রদর্শিত হয়েছিল।[৪১] এসময় মিয়ামোতো মারিও সিরিজ থেকে উদ্ভূত আরও কয়েকটি গেম তৈরি করেছেন। এছাড়া মেট্রয়েড গেম সিরিজের মূল স্রষ্টা গানপেই ইয়োকোই মারা যাবার পর মিয়ামোতো সিরিজটির ত্রিমাত্রিক গেম মেট্রয়েড প্রাইম তৈরি করেন।[৪২] এছাড়া এসময় নিজের বাগান করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি পিকমিন এবং পিকমিন ২ গেমদুটি তৈরি করেন।[৬] গেমকিউব এবং গেম বয় অ্যাডভান্স উভয় কনসোলে স্টার ফক্স, ডংকি কং, এফ-জিরো, এবং দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা সিরিজের বেশ কিছু গেমে মিয়ামোতো কাজ করেছেন।[৪৩][৪৪][৪৫] এছাড়াও হিদেও কোজিমার সহায়তায় মিয়ামোতো মেটাল গিয়ার সলিড: দ্য টুইন স্নেকস এর ডেভলপমেন্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।[৪৬] নিনটেন্ডো ডিএস এর অনেক গেমে মিয়ামোতো সহায়তা করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে সুপার মারিও ৬৪ ডিএস, এবং মিয়ামাতোর পোষা কুকুরপালনের অভিজ্ঞতা থেকে উৎপন্ন একটি নতুন গেম সিরিজ, নিনটেনডগস।[৪৭]
মিয়ামোতো উয়ি কনসোলের উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। যন্ত্রটি মোশন-নিয়ন্ত্রিত গেমিংয়ে নতুন দিগন্তের সদচনা করেছিল। উপরন্তু কনসোলটির প্রথম গেম উয়ি স্পোর্টস তৈরিতেও মিয়ামোতো কাজ করেছেন। তিনি পরে উয়ি সিরিজের অন্যান্য গেমও তৈরি করেন, এবং পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার উদ্দেশ্য নিয়ে উয়ি ফিট গেমটি উদ্বাবন করেন।[৬]
ইথ্রি ২০০৪ এ মিয়ামোতো উয়ি এবং গেমকিউবের জন্য দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: টোয়াইলাইট প্রিন্সেস গেমটি উন্মোচন করেন। এটি ছিল জেল্ডা সিরিজের প্রথম মোশন-নিয়ন্ত্রিত গেম। পরবর্তীতে তিনি আরও উন্নত মোশন-নিয়ন্ত্রণ সুবিধাযুক্ত দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: স্কাইওয়ার্ড সোর্ড গেমের ডেভলপমেন্টেরও সহায়তা করেছেন। মিয়ামোতো এরপরে নিনটেনডো ডিএস এর জন্য দুটি জেল্ডা গেম তৈরি করেছেন, দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: ফ্যান্টম আওয়ারগ্লাস এবং দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: স্পিরিট ট্র্যাকস। এগুলো ছিল সিরিজটির টাচস্ক্রিন ব্যবস্থা যুক্ত প্রথম দুটি গেম।
২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মিয়ামোতো মারিও সিরিজের তিনটি গেম তৈরি করেছেন: সুপার মারিও গ্যালাক্সি, নিউ সুপার মারিও ব্রাদার্স উয়ি, এবং সুপার মারিও গ্যালাক্সি ২।
মিয়ামোতো ৩ডিএস-এর জন্য সুপার মারিও ৩ডি ল্যান্ড ও লুইজি'স ম্যানশন: ডার্ক মুন, এবং উয়ি ইউ এর জন্য পিকমিন ৩ প্রযোজনা করেছেন।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিনটেনডো প্রেসিডেন্ট সাতোরু ইওয়াতার মৃত্যুর পর মিয়ামোতো এবং জেনিও তাকেদাকে প্রতিনিধিত্বমূলক পরিচালকের সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়।[৪৮] ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তাৎসুমি কিমিশিমা প্রেসিডেন্ট পদে গেলে তারা দুজন সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান, এবং "সৃজনশীল সহকর্মী" (Creative fellow) পদে থেকে কিমিশামাকে অভিজ্ঞতালদ্ধ পরামর্শ প্রদানের দায়িত্ব লাভ করেন।[২][৪৯]
২০১৭ সালের সুপার মারিও ওডিসি গেমে মিয়ামোতো সৃজন পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন, এবং গেমটির ডেভলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।[৫০]
মানুষ আমার অনেক প্রশংসা করেছে, বলেছে আমি মেধাবী কথক এবং দক্ষ অ্যানিমটের, এবং এমনকি আমাকে চলচ্চিত্র তৈরির চেষ্টা করতেও পরামর্শ দিয়েছে, কারণ আমার গেম তৈরির প্রক্রিয়া নাকি অনেকটাই চলচ্চিত্র তৈরির মত। কিন্তু আমি নিজেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে দেখিনা, বরং আমার মূল শক্তি হচ্ছে হাতের কাছে থাকা প্রযুক্তি দিয়ে সবচেয়ে নিখুঁত, উৎকৃষ্ট ইন্টারঅ্যাক্টিভ অভিজ্ঞতা উদ্ভাবন করা, এবং তার মাধ্যমে এমন গেম তৈরি করা যা মানুষ পছন্দ করবে এবং আরাম করে খেলতে পারবে।
শিগেরু মিয়ামোতো (অনুবাদ)[১২]
মিয়ামোতো, এবং সামগ্রিকভাবে নিনটেনডো, ফোকাস গ্রুপ এর ওপর নির্ভর করে না। বরঞ্চ মিয়ামোতো নিজের সরাসরি অভিজ্ঞতায় বোঝার চেষ্টা করেন যে একটা গেম মজাদার ও আকর্ষণীয় হবে কিনা। তিনি বলেন, কোন গেম যদি তার মজা লাগে, তবে অন্যদেরও পছন্দ হবে।[৬] তিনি বিষয়টি পোকেমন এর উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করেন, "এটাই আসল কথা – বিক্রি বা জনপ্রিয়তার জন্য কিছু বানানো না, বরং ভালোবাসার মত কিছু বানানো, এমন কিছু যা এর স্রষ্টারাও ভালবাসতে পারে। গেম তৈরির সময় এটাই আমাদের মৌলিক অনুভূতি হওয়া প্রয়োজন।"[৫১] মিয়ামোতো গেমারদেরকে kyokan অভিজ্ঞতা দিতে চান; "গেম খেলার সময়, গেমের ডেভলপাররা যেমনটা অনুভব করেছি, ঠিক তেমন অনুভূতি পাওয়া।"[৬]
মিয়ামোতো নিজের পরিবার এবং বন্ধুমহলে গেমের পরীক্ষা করে দেখেন। গেম ডেভলপারদের তিনি পরামর্শ দেন, নতুন গেমারদের অভিজ্ঞতার প্রতিও খেয়াল রাখতে, যেমন নিজের দুর্বল হাতে গেমটি খেলার চেষ্টা করা, যাতে করে অদক্ষ গেমাররা কেমন অনুভব করতে পারে তা অনুমান করা যায়।[৬]
মিয়ামোতো অতি-বাস্তব গ্রাফিক্সের পরিবর্তে গেমের গঠনে বেশি গুরুত্ব দেন, যেমন গেমারদের বাছাই করার মত কী কী পথ আছে, বা সেসব পথে কী কী বাধা আছে, এসব বিষয়ে ভারসাম্য রাখা।[৬] ম্যাঙ্গা আর্টিস্টরা যেভাবে নিজেদের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন এনেছে, তেমনি মিয়ামোতোও নিজের আগেকার গেমগুলোতে উদ্ভাবিত মূলনীতিগুলো পরিবর্তন করতে সচেষ্ট।[৬]
মিয়ামোতো পূর্বপ্রস্তুত ভিডিওর চাইতে প্রয়োজনমাফিক রেন্ডারকৃত থ্রিডি দৃশ্যপট ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করেন। এর ফলে দ্রুত ডেভলপমেন্টকালে বিলম্ব হয় না, এবং গেম খেলার সময়ও কোন বিরতির প্রয়োজন পড়ে না। তিনি একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গেমে পরিবর্তন করতে অভ্যস্ত, এবং গেমের ইন্টারঅ্যাক্টিভ বৈশিষ্ট্য অবিরত রাখতে ইচ্ছুক, যেকারণে তার গেমসমূহে জটিল বা দীর্ঘ চলচ্চিত্রিত অংশ থাকে না। ১৯৯৯ সালে তিনি বলেছেন, "আমি কখনোই সিনেমা-জাতীয় গেম বানাবো না"।[৫১] উদাহরণস্বরূপ, অকারিনা অফ টাইম গেমে সর্বমোট প্রায় ৯০ মিনিটের[১২] স্ক্রিপ্ট-নিয়ন্ত্রিত দৃশ্যপটসমূহ পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভিডিও চালিত না হলেও সিনেমা-সমতুল্য আবেশ দেয়।[৫১][৫২] মিয়ামোতোর তার এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে বলেছেন যে, ডেভলপমেন্ট দলের সময় ও মোট ক্ষমতা সীমিত, এবং তিনি সিনেমাজাতীয় উপকরণ তৈরিতে এই সময় ও সামর্থ্য ব্যয় না করে বরং গেমের অন্যান্য অংশের উন্নয়ন পরীক্ষানিরীক্ষায় মনোনিবেশে আগ্রহী।[১০][১২][৫১]
তাছাড়া মিয়ামোতোর দর্শন ছোট দলভিত্তিক দ্রুত পরিবর্তনশীল ডেভলপমেন্ট প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়। এর ফলে 'অকারিনা অফ টাইম ডেভলপকালে শেষের কয়েক মাসেও তিনি গেমটিতে গুরুতর সামগ্রিক পরিবর্তন করতে সফল হয়েছিলেন।[১২]
২০০৩ সালে একটি পত্রিকার সাক্ষাতকারে মিয়ামোতো রোল-প্লেয়িং গেম তথা আরপিজি সম্পর্কে তার মৌলিক অপছন্দের কথা জানান। তার মনে হয়েছে আরপিজি গেমগুলো শুরুতে গেমারকে নানা প্রতিবন্ধক দিয়ে কঠোরভাবে আবদ্ধ রাখে, এবং ধীরে ধীরে বাঁধন হালকা হলে গেমারের নিজেকে শক্তিশালী মনে হয়। কিন্তু মিয়ামোতোর এধরণের পদ্ধতিকে কোনভাবে আনন্দজনক মনে হয় না। এধরণের গেমে সময় খরচ করে যে কেউ অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। অন্যাদিকে, ধরা যাক, মারিও' গেমের ক্ষেত্রে, গেম খেলার একটি অন্তর্নিহিত দক্ষতা দরকার। এরকম গেমে কেউ যদি ভাল না পারে, তবে কখনও ভাল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা না-ও থাকতে পারে।[৫৩]
টাইম পত্রিকা মিয়ামোতোকে "ভিডিও গেমসের স্টিভেন স্পিলবার্গ"[৫৪] এবং "আধুনিক ভিডিও গেমের জনক" আখ্যা দিয়েছে।[১১] দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, তিনি "অনেকের মতে সম্ভবত সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রভাবশালী গেম ডিজাইনার",[৫৫] এবং গেমট্রেইলার্স-ও একই মত দিয়েছে।[৫৬] মিয়ামোতো ভিডিও গেম মাধ্যমটির বিভিন্ন অনুষঙ্গে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছেন। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ এর ভাষায়, তিনি "সবচেয়ে উদ্ভাবনী, যুগান্তকারী, এবং সফল গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি গেম তৈরি করেছেন"।[৫৫] মিয়মোতোর বেশ কিছু কাজ ভিডিও গেমে নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে, বা পুরাতন ধারণাকে নতুনভাবে বিকশিত করেছে। তার তৈরি অনেক গেম অতুলনীয় প্রশংসা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে, এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেমের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
মিয়ামোতো গেমগুলোর বিক্রিও হয় প্রচুর। নিনটেনডোর কনসোলগুলোর সর্বাধিক বিক্রিত বেশ কয়েকটি গেমে মিয়ামোতোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯৯৯ পর্যন্ত তার গেমসমূহ মোট ২৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে এবং কয়েকশ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে।[৫৫]
দ্য নিউ ইয়র্কার এর ভাষ্যে কনসোলগুলোর বিক্রি এমনকি নকশায়ও মিয়োমোতোর ভূমিকা অতুলনীয়। পত্রিকাটি মিয়ামোতোকে নিনটেনডোর "পথ প্রদর্শক, আয়ের টিকেট, এবং হাসিখুশি প্রতিনিধি" বলে পরিচয় দিয়েছে, এবং বলেছে তার অনুপস্থিতিতে নিনটেনডোও টীকে থাকতে পারত না।[৬] একইভাবে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ বলেছে নিনটেনডোর জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের পিছনে মিয়ামোতোর ভূমিকাই সর্বাধিক।[৫৫] নেক্সট জেনারেশন বলেছে, "তিনি ইতিহাসে সবচেয়ে সফল গেম ডেভলপার। তার আছে একটি অনন্য এবং মেধাদীপ্ত মন, এবং গেমাররা কী চায় তা বুঝতে পারার অতুলনীয় ক্ষমতা।"[৫৭]
মিয়ামোতোর সর্বাধিক জনপ্রিয় সৃষ্টি সুপার মারিও ব্রাদার্স গেমটি দ্য নিউ ইয়ার্কার-এর ভাষায়, "পাঠকের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, হয় একটি নতুন শিল্পক্ষেত্র গড়ে তুলেছে, নয়তো একটি মৃতপ্রায় শিল্পক্ষেত্রকে বাঁচিয়ে তুলেছে।"[৬] দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ বলেছে "গেমটি পরবর্তী সব গেমের জন্য গুণগত আদর্শ স্থাপন করে দিয়েছে।"[৫৫] জি৪ টিভি চ্যানেল গেমটির অতুলনীয় গেমিং অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেছে, এবং ১৯৮৩ সালের বিপর্যয়ের পর ভিডিও গেম শিল্পের পুনরুজ্জীবনে গেমটির প্রায় একক ভূমিকার কথা তুলে ধরেছে।[৫৮] তদুপরি, গেমটি সাইড-স্ক্রলিং ঘরানাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। দ্য নিউ ইয়র্কার মারিও চরিত্রটির সুগভীর ভূমিকাকে মিকি মাউসের সাথে তুলনীয় বলে মত দিয়েছে।[৬]
গেমস্পট সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি গেমের তালিকায় দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা গেমটিকে স্থান দিয়েছে, কারণ এটি ছিল মুক্ত বিশ্ব অরৈখিক গেমখেলার প্রারম্ভিক নিদর্শন, এবং ব্যাটারি-ভিত্তিক গেম সেভের প্রচলন ঘটিয়েছিল, যা পরবর্তীতে মেট্রয়েড এবং ফাইনাল ফ্যান্টাসি এর মত দীর্ঘকালীন অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার এবং রোল-প্লেয়িং গেমে সহায়তা করে এবং আধুনিক ভিডিও গেমের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।[৫৯] ২০০৯ সালে গেম ইনফর্মার তাদের "সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০০ গেম" তালিকায় দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা সম্পর্কে বলে "সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেমের চেয়ে কোন অংশে কম নয়" এবং "তার যুগের থেকে থেকে কয়েক দশক না হলে অনেক বছর অগ্রবর্তী ছিল"।[৬০]
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত স্টার ফক্স গেমটিতে ত্রিমাত্রিক পলিগন গ্রাফিক্স প্রদর্শনকারী অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।[৬১] ব্যবসাসফল এই গেমটি স্টার ফক্স সিরিজকে নিনটেনডোর একটি অন্যতম পণ্যে পরিণত করে। এই সিরিজে এপর্যন্ত আরও পাঁচটি গেম মুক্তি পেয়েছে, এবং এর চরিত্রগুলো নিনটেনডোর অন্যান্য অনেক গেমেও অতিথি উপস্থিতি পেয়েছে।
নিনটেনডো ৬৪ এর জন্য মিয়ামোতোর তৈরি সুপার মারিও ৬৪ সামগ্রিক ৩ডি গেম ডিজাইনে সুগভীর প্রভাব রেখেছে, বিশেষত এর সচল ভার্চুয়াল ক্যামেরা এবং প্রায় নিখুঁত অ্যানালগ নিয়ন্ত্রণ।[৬২][৬৩][৬৪] দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা: অকারিনা অফ টাইম গেমটিতে লক্ষ্য-বদ্ধ ক্যামেরা, প্রসঙ্গভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি যুগান্তকারী বৈশিষ্ট্য উদ্ভাবিত হয়েছে, যা আজকাল ত্রিমাত্রিক গেমসমূহের সাধারণ উপাদান।[৬৫][৬৬]
তাছাড়া মিয়ামোতো উয়ি কনসোলটির ধারণা ও নকশার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এটি দূর থেকে ইশারা-নিয়ন্ত্রিত তথা motion-controlled ভিডিও গেম ব্যবস্থার উত্থান ঘটায়।[৬]
মিয়ামোতোর তৈরি অনেক গেম অতুলনীয় প্রশংসা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে, এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেমের হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।[৬]
মিয়ামোতোর দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা সিরিজের গেমগুলো অসামান্য প্রশংসা পেয়েছে। এ লিংক টু দ্য পাস্ট নিনটেনডোর একটি যুগান্তকারী পণ্য এবং বিভিন্ন সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেম হিসেবে পরিচিত হয়েছে। অকারিনা অফ টাইম বর্তমানকাল পর্যন্তও ভক্ত-সমালোচক উভয়ের মতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেম হিসেবে স্বীকার্য হয়ে আসছে।[৬৭][৬৮][৬৯][৭০] টোয়াইলাইট প্রিন্সেস সামগ্রিক প্রশংসার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছিল, উয়ি কনসোলের তৃতীয় সর্বোচ্চমানের গেম।[৭১] এটি একাধিক জনপ্রিয় গেমস-বিষয়ক প্রকাশনা কর্তৃক নিখুঁত স্কোর লাভ করেছে।[৭২][৭৩][৭৪][৭৫][৭৬]
সুপার মারিও ৬৪ সমালোচক এবং ভক্তদের মধ্যে সর্বকালের অন্যতম সেরা এবং উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের গেম হিসেবে সমান জনপ্রিয়।[৭৭][৭৮][৭৯][৮০][৮১][৮২]
মেটাক্রিটিকের মতে সুপার মারিও গ্যালাক্সি এবং সুপার মারিও গ্যালাক্সি ২ উয়ি কনসোলের প্রথম এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানপ্রাপ্ত গেম।[৭১]
ম্যাক্সিমাম পত্রিকার ১৯৯৫ সালের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, "গেমিং জগতে মিয়ামোতোর নাম স্পিলবার্গের চেয়ে বহুগুণে অধিক ওজনদার।"[৮৩]
মিয়ামোতোর গেম সবসময়ই প্রচুর বিক্রি হয়, এবং তার বেশি কিছু সৃষ্টিকর্ম নিনটেনডোর কনসোলগুলোতে সর্বোচ্চ বিক্রিত গেমের মধ্যে অন্যতম।
মিয়ামোতোর মারিও সিরিজ সর্বাধিক বিক্রিত গেমের তালিকায় স্পষ্টভাবে প্রথম, যা সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি কপি বিক্রিত হয়েছে। সুপার মারিও ব্রাদার্স, সুপার মারিও ব্রাদার্স ৩, এবং সুপার মারিও ব্রাদার্স ২ ছিল এনইএস কনসোলের সর্বাধিক বিক্রিতের তালিকায় প্রথম তিনটি গেম। পরবর্তীতে সুপার মারিও ওয়ার্ল্ড ছিল এসইএনএস কনসোলের সর্বোচ্চ বিক্রিত গেম।[৮৪][৮৫] সুপার মারিও ৬৪ নিনটেনডো ৬৪ এর সর্বাধিক বিক্রিত গেম,[৮৬] এবং ২০০৩ এর মে পর্যন্ত ১.১ কোটি কপি বিক্রিত হয়েছে।[৮৭] ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তম সর্বাধিক বিক্রিত গেম ছিল।[৮৮] ২০০৭ এর জুনের মধ্যে সুপার মারিও ব্রাদার্স উয়ি ভার্চুয়াল কনসোলের সর্বাধিক বিক্রয় তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল, এবং প্রথম ছিল সুপার মারিও ব্রাদার্স।[৮৯] নিনটেনডো ৬৪ এর পরবর্তী কনসোল গেমকিউবের জন্য বিক্রিত গেমের তালিকায় সুপার মারিও সানশাইন ছিল তৃতীয় স্থানে।
প্রথম দ্য লেজেন্ড অফ জেল্ডা গেমটি এনইএসের পঞ্চম সর্বাধিক বিক্রিত গেম। দ্য উইন্ড ওয়েকার গেমকিউবের চতুর্থ সর্বাধিক বিক্রিত গেম। গেমকিউব এবং উয়ির জন্য প্রকাশিত টোয়াইলাইট প্রিন্সেস গেমটিও বাণিজ্যিকভাবে সফল; বিশেষত PAL টেলিভিশন এলাকায়, অর্থাৎ এশিয়ার বৃহদাংশ, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউরোপে এটি সর্বাধিক বিক্রিত জেল্ডা গেম। অবমুক্তির প্রথম সপ্তাহে প্রতি চারটি উয়ি কনসোলের মধ্যে তিনটির সাথেই গেমটি বিক্রিত হয়েছিল।[৯০] ৩১ মার্চ ২০০৭ পর্যন্ত গেমটির গেমকিউব সংস্করণ ১৩.২ লাখ কপি,[৯১] এবং ১ মার্চ ২০০৮ পর্যন্ত উয়ি সংস্করণটি ৪৫.২ লাখ কপি[৯২] বিক্রিত হয়েছে।
মিয়ামোতোর মারিও কার্ট সিরিজটিও জনপ্রিয় এবং সফল। সুপার মারিও কার্ট গেমটি এনএসইএসের তৃতীয় সর্বোচ্চ বিক্রিত গেম। মারিও কার্ট ৬৪, মারিও কার্ট: ডাবল ড্যাশ এবং মারিও কার্ট উয়ি যথাক্রমে নিনটেনডো ৬৪, গেমকিউব এবং উয়ির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রিত গেম।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এছাড়া মিয়ামোতোর তৈরি উয়ি স্পোর্টস সর্বাধিক বিক্রিত গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম, এবং উয়ি সিরিজের অন্যতম ব্যবসা-সফল অংশ।
[মিয়ামোতো] স্ফূর্তির সাথে গেমে অগ্রসর হন, যা পরিষ্কার কথা মনে হতে পারে, কিন্তু অনেকেই এমনটা করে না। এবং তিনি খেলোয়াড়ের দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু দেখেন, যা তার জাদুকরি সৃষ্টিকর্মের অন্যতম অংশ।
শিগেরু মিয়ামোতোর সম্মানে কম্পিউটারের জন্য তৈরি ডাইকাতানা গেমের মূল চরিত্রের নাম দেয়া হয়েছে হিরো মিয়ামোতো।[৯৩] পোকেমন সিরিজের গ্যারি ওক চরিত্রটি জাপানে শিগেরু নামে পরিচিত, এবং অ্যাশ কেচামের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রসঙ্গত, অ্যাশ কেচাম চরিত্রটি জাপানে সাতোশি নামে পরিচিত, এবং পোকেমনের স্রষ্টা সাতোশি তাজিরি মিয়ামোতোর থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
মিয়ামোতো হলেন ইন্টারঅ্যাক্টিভ শিল্প ও বিজ্ঞান একাডেমির হল অফ ফেমে স্থান লাভ করা প্রথম ব্যক্তি, যে সম্মাননা তিনি ১৯৯৮ সালে অর্জন করেন।[৯৪] ২০০৬ সালে মিয়ামোতো ফরাসী অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স এর শেভালিয়ে (নাইট) পদবী লাভ করেন।[৯৫]
২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর টাইম ম্যাগাজিনের "সিক্সটি ইয়ার্স অফ এশিয়ান হিরোজ" এ মিয়ামোতোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[৯৬] পরবর্তীতে তিনি ২০০৭[৯৭] ও ২০০৮[৯৮] সালে পরপর টাইম ম্যাগাজিনের "বর্ষসেরা ১০০ ব্যক্তিত্ব" তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন, এবং ২০০৮ এর তালিকায় প্রথম স্থানে ছিলেন। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মিয়ামোতো গেম ডেভলপার্স চয়েস অ্যাওয়ার্ডস এর আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।[৯৯] গেমট্রেইলার্স এবং আইজিএন যথাক্রমে "শ্রেষ্ঠ দশ গেম স্রষ্টা" এবং "সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ১০০ গেম স্রষ্টা" তালিকায় মিয়ামোতোকে প্রথম স্থানে রেখেছিল।[১০০][১০১]
গেম ডেভলাপরদের মধ্যে ডেভলপ পত্রিকার পরিচালিত একটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সর্বাধিক অংশ, ৩০%,[৬] মিয়ামোতোকে নিজেদের "আল্টিমেট ডেভলপমেন্ট হিরো" হিসেবে বাছাই করেছিল।[১০২] মিয়ামোতো প্রচুর স্বনামধন্য প্রচারমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাতকার দিয়েছেন, যেমন সিএনএনের টক এশিয়া।[১০৩] ২০১০ এর ১৯ মার্চ তাকে বাফটা ফেলো পদবী প্রদান করা হয়।[১০৪] ২০১২ সালে মিয়ামোতো স্পেনের সর্বোচ্চ সম্মান প্রিন্স অফ আস্তুরিয়াস পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ছিলেন এই সম্মান পাওয়া প্রথম ইন্টারঅ্যাকটিভ মাধ্যমের ব্যক্তিত্ব।[১০৫][১০৬]
মিয়ামোতোর একজন স্ত্রী, ইয়াসুকো, এবং দুই সন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে তার ২৫ বছর বয়সী ছেলে এবং বিজ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত এবং ২৩ বছর বয়সী মেয়ে জীববিদ্যার শিক্ষার্থী ছিল। তার ছেলেমেয়ে কৈশোরে ভিডিও গেম খেলত, তবে মিয়ামোতো তাদেরকে ঘরের বাইরেও খেলতে উৎসহ দিতেন। মিয়ামোতো কিছু ইংরেজি জানলেও ভাল বলতে পারেন না, এবং জাপানি ভাষায় আলাপ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।[৬]
মিয়ামোতো দৈনন্দিন জীবনে জনসমাগম এড়ানোর জন্য সাধারণত অটোগ্রাফ দেন না, এবং জাপানি টেলিভিশনেও উপস্থিত হন না। জাপানিদের থেকে বিদেশী পর্যটকরাই বেশিরভাগ সময় মিয়ামোতোর সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করেন।[৬]
মিয়ামোতো ব্যক্তিগত সময়ে ভিডিও গেম খেলার চেয়ে গিটার, ম্যান্ডোলিন এবং বাঞ্জো বাজানোতেই বেশি আগ্রহী।[১০৭] তিনি ব্লুগ্রাস ঘরানার সঙ্গীতের ভক্ত।[৬] তারা পিক্কু নামের একটি পোষা শেটল্যান্ড শিপডগ রয়েছে, যার থেকে মিয়ামোতো নিনটেনডগস এর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।[১০৮] মিয়ামোতো একজন অর্ধ-পেশাদার কুকুর ব্রিডার।[১০৯] তার একটি উক্তি হল, "ভিডিও গেমস আপনাদের জন্য মন্দ? রক অ্যান্ড রোলের ব্যাপারেও মানুষ একই কথা বলেছিল!"[১১০]
মিয়ামোতো বাসার আসবাবপত্র সাজাতে পছন্দ করেন, এমনকি গভীর রাতেও।[৬] তিনি বলেছেন, তার আরেকটি অভ্যাস হল বিভিন্ন জিনিসের আকার অনুমান করা, এবং সেটা যাচাই করা, এবং এজন্য একটি মাপার ফিতাও সবসময় সঙ্গে রাখেন।[১১১] ২০১৬ সালে দ্য টুনাইট শো স্টারিং জিমি ফ্যালন অনুষ্ঠানে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় মিয়ামোতো তার এই শখটি প্রদর্শন করে দেখিয়েছিলেন।[১১২][১১৩]
Led by Mario creator Shigeru Miyamoto, teams at Nintendo Company Ltd. and Square Soft spent more than a year developing the visuals.
The companies [Sega and Nintendo] are codeveloping two F-Zero games... Nintendo will be handling the publishing duties for the GameCube version while Sega will take on the responsibility of releasing the arcade game.
We're [Amusement Vision] taking care of the planning and execution. Once things really begin to take shape, we'll turn to Nintendo for supervision.
the apex of 6-4bit[sic] gaming and oft-cited "Best Game Ever Made, The Legend of Zelda: Ocarina of Time, has touched down over the pond for play on the Wii Virtual Console in most PAL-enabled regions.
|শিরোনাম=
এবং |title=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)