স্বর্গ হ্রদ | |
---|---|
অবস্থান | উত্তর কোরিয়া ও চীন |
স্থানাঙ্ক | ৪২°০০′২২″ উত্তর ১২৮°০৩′২৫″ পূর্ব / ৪২.০০৬° উত্তর ১২৮.০৫৭° পূর্ব |
ধরন | জ্বালামুখ হ্রদ |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | বারিপাত |
অববাহিকার দেশসমূহ | উত্তর কোরিয়া ও চীন |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৯.৮২ কিমি২ (৩.৭৯ মা২) |
গড় গভীরতা | ২১৩ মি (৬৯৯ ফু) |
সর্বাধিক গভীরতা | ৩৮৪ মি (১,২৬০ ফু) |
পানির আয়তন | ২.০৯ কিমি৩ (০.৫০ মা৩) |
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা | ২,১৮৯.১ মি (৭,১৮২ ফু) |
কোরীয় নাম | |
চোসেঙ্গুল | 천지 |
---|---|
হাঞ্ছা | 天池 |
সংশোধিত রোমানীকরণ | Cheonji |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | Ch'ŏnji |
স্বর্গ হ্রদ (ইংরেজি:Heaven Lake, চোসঙ্গুল: 천지, চিয়নজি অথবা চেয়নজি; চীনা: 天池, তিয়ানচি ; মাঞ্চু: তামুন অমো অথবা তামুন জুসে) চীন ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে সৃষ্ট হ্রদ। কোরিয়ানদের জন্য হ্রদটি আধ্যাত্মিক ও পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য।[১] হ্রদটি পিকটু পর্বতের আগ্নেয়গিরির কেলডেরায় অবস্থিত, যা চাংবাই ও বিকডুডেগান পর্বতমালার অংশ। হ্রদটির দক্ষিণ-পূর্বাংশ উত্তর কোরিয়ার রিয়াংগাং প্রদেশ ও উত্তর-পশ্চিমাংশ চীনের জিলিন প্রদেশের অন্তর্গত। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হ্রদটিকে সমুদ্রপৃষ্ট হতে সবচেয়ে উচুতে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের হ্রদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[২]
স্বর্গ হ্রদটির মূল ধারক ক্যালডেরাটি নয়শত ছেচল্লিশ(৯৪৬) সালে পিকটু পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ঠ। হ্রদটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে ২,১৮৯.১ মি (৭,১৮২ ফু).[২] যা পৃথিবীর যেকোন আগ্নেয় হ্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ। সবচেয়ে উচুঁতে অবস্থানের কারণে ২০০০ সালে হ্রদটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। জলাধারটির মোট আয়োতন ৯.৮২ বর্গকিলোমিটার (৩.৭৯ বর্গমাইল)। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ৪.৮৫ কিলোমিটার (৩.০১ মাইল) এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩.৩৫ কিলোমিটার (২.০৮ মাইল) দীর্ঘ।[২] এর গড় গভীরতা ২১৩ মিটার (৬৯৯ ফুট) এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৮৪ মিটার (১,২৬০ ফুট)। মধ্য অক্টোবর হতে মধ্য জুন পর্যন্ত হ্রদটির পানি বরফ হয়ে থাকে এবং উপরিভাগ তুষারাবৃত থাকে।
প্রাচীন চৈনিক সাহিত্যে স্বর্গ হ্রদকে বর্ণনার ক্ষেত্রে 南冥 (উচ্চারণঃনানমিং) বা দক্ষিণের সাগর নামে অভিহত করা হয়েছে। স্বর্গ হ্রদ ও পিকটু পর্বত দুই কোরিয়ার মানুষদের কাছে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে মর্যাদাপূর্ণ এবং পবিত্রস্থান হিসেবে সম্মানিত।[৩] পিকটু পর্বতের কথা উত্তর ও দক্ষিণ দুই কোরিয়ার জাতীয় সঙ্গীতে উল্লেখ আছে।[৪]
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম স্বর্গ হ্রদের পবিত্র মূল্যবোধ ব্যবহার করে তাদের সাধারণ জনগণের সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণায় ব্যবহার করেছে। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম দাবী করে- তদের নেতা কিম জং-ইল পর্বতের নিকটে স্বর্গ হ্রদের পাশে জন্মে ছিলেন। তার মৃত্যুর সময় স্বর্গ হ্রদে বিকট শব্দে বরফে ফাটল ধরে, শব্দ "এতো জোড়ালো, যেন স্বর্গ ও ধরিত্রী প্রকম্পিত হয়"।[৫]
২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, দুই কোরিয়ার আন্ত সম্মেলনের অংশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিং জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুন জে ইন পিকটু পর্বত ও স্বর্গ হ্রদ পরিদর্শণ করেন। এসময় মুন জে ইন স্বর্গ হ্রদের পানি সংগ্রহ করেন।[১][৩]
স্বর্গ হ্রদেও লক নেস দানবের মত জলদানব থাকার কিংবদন্তি লৌকিক গল্প আছে। এই দানবটি 'তিয়ানচি দানব' নামে চীনের গণমাধ্যমে প্রচারিত।[৬] ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একজন টেলিভিশন সাংবাদিক স্বর্গ হ্ররদের উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী স্থানে ছয়টি সিল সদৃশ্য প্রাণীর ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিও ধারণ করেন। প্রাণী গুলিকে কিছুক্ষণ সাথে এবং তিনটি আলাদা জুটি হিসেবে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। তিনি লক নেস দানবের মত অজানা প্রাণীগুলির ছবি চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়ায় পাঠালে, স্বর্গ হ্রদের রহস্যময় জলদানব আরো আলোচিত হয়।[৭]