এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। (জুন ২০২২) |
হারম্যান মেইনার | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৬ এপ্রিল ১৯৮৬ | (বয়স ৬৬)
ড. হারম্যান মেইনার (ইংরেজি: Hermann Gmeiner) (২৩ জুন ১৯১৯ - ২৬ এপ্রিল ১৯৮৬) ছিলেন একজন বিখ্যাত অস্ট্রিয় সমাজসেবক ও দাতা। তিনি ছিন্নমূল ও অসহায় শিশুদের জন্য এসওএস শিশুপল্লী প্রতিষ্ঠা করেন।
হারম্যান মেইনারের জন্ম ২৩শে জুন ১৯১৯ সালে অস্ট্রিয়ার Vorarlberg,Alberschwende এ এক কৃষক পরিবারে। তার বাবার বেশ কিছু সন্তান এর মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ছোটবেলায় তিনি মাতৃহারা হন। মায়ের মৃত্যুর পর তার ষোড়শী বড়-বোন এশা তার ছোটো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করার ভার নেন। হারম্যান মেইনার বড় উঠেন এই বড় বোনের কাছে। তাদের পরিবারে বড়ো বোনের ভূমিকা ছিলো অনেকটা 'এসওএস' মায়ের মত। হয়ত এখান থেকেই আসে "এসওএস" ধারণাটি। যে পরিবেশে তিনি বড় হয়ে ছিলেন সেখানে একটি কৃষক পরিবারের টিকে থাকা অনেকটা নির্ভর করত পরিবারের বাবা-মা এবং তাদের সন্তান দের পারষ্পরিক সহযোগিতার উপর। ছোটোবেলায় হারম্যান মেইনার নিজেও তার বাবার খামারে কাজ করতেন। তার জীবনের প্রথম ঊপার্জন তিনি করেছিলেন একজন রাখাল হিসাবে।
ছোটোবেলা থেকেই হারম্যান মেইনার বিশেষ মেধার পরিচয় দেন এবং Feldkirch ব্যাকরণ-স্কুল হতে বৃত্তি পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সেনা-বাহিনীতে যোগ দেন এবং পশ্চিম সীমান্তে বেশ কয়েকবার আহত হন। ১৯৪৬ সালে হারম্যান মেইনার 'university of Innsbruck' এ মেডিসিন বিষয়ে পড়িলেখা শুরু করেন। তার ইচ্ছা ছিল একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হবার।
তখন সবেমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয়েছে। চারিদিকে যুদ্ধ ফেরত যুবক আর শরণার্থী শিশুদের আহাজারি। হারম্যান মেইনার এই সময় বসে না থেকে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে যান। সাথে সাথে তিনি 'এসওএস' ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করার চেস্টা করতে থাকেন। যা হতে পারে ঐসব শিশু ও কিশোরদের হারানো পরিবারের বিকল্প। এসওএস এর সূচনার ইতিহাসটা খুব মধুর ছিল না। তৎকালিন কর্তৃপক্ষের অনেকেই ধারণাটির মানে বুঝে উঠতে পারেননি। তখন হারম্যান মেইনার এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার কিছু বন্ধু। এই বন্ধুরাই তাকে যথাযথ সাহায্য করেছিলেন। মাত্র ৬০০ অস্ট্রিয়ান মুদ্রা নিয়ে ১৯৪৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এসওএস-কিন্ডারডফ। একই বছরে Imst তে প্রথমবারের মত উন্মোচিত হয় "এসওএস শিশু পল্লীর" ফলক। এই সময় খুব ব্যস্ত হয়ে পরার কারণে তিনি পড়াশোনা না চালানোর মত কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হন। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই "এসওএস শিশু পল্লীর" মাধ্যমে তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন।
হারম্যান মেইনার Imst "এসওএস শিশু পল্লীর" পরিচালক থাকার সময়ই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে "এসওএস শিশু পল্লীর" শাখা খুলতে সাহায্য করেন। ১৯৬৩ সালে 'কোরিয়ান যুদ্ধের' পর প্রথমবারের মত ইউরোপের বাইরের একটি দেশ কোরিয়ার, দিয়াগুতে স্থাপিত হয় "এসওএস শিশু পল্লীর" শাখা। সাথে সাথে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসওএস এর কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। এশিয়া, লাটিন-আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে স্থাপিত হয় "এসওএস শিশু পল্লী"। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত 'এসওএস-কিন্ডারডফ' সারা বিশ্বব্যাপি এই দায়িত্ব পালন করতে থাকে স্বয়ং হারম্যান মেইনার এর তত্ত্বাবধানে। ১৯৮৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮৫ টি দেশে ২২৫ টি "এসওএস শিশু পল্লী" এবং ৩৬৮ টি "সামাজিক কেন্দ্র " স্থাপিত হয়।
১৯৮৬ সালের ২৬ শে এপ্রিল এই মহান সমাজ-সেবক ইনসব্রাক শহরে মৃত্যু-বরণ করেন।
তার এই বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি সন্মানিত হয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সন্মাননায়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল 'অস্ট্রিয়া বিজ্ঞান একাডেমির' অনারারি সদস্য হওয়া, দুটি বিশ্ব-বিদ্যালয় কর্তৃক অনারারি ডাক্তার নির্বাচিত হওয়া, ভ্যারিটি ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক 'আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী পুরস্কার' লাভ করা।