হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে, কাবুলে মার্কিন কূটনীতিকরা নিরাপত্তা হুমকিজনিত কারণে মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দর এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।[১৭]যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি কাবুল বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের দ্বারা আক্রমণের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হুমকির বিষয়েও সতর্ক করেছিলেন।[১৮][১৯]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসগুলোও বিমানবন্দরে উচ্চ নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছিল।[২০]
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন হামলার আগের সপ্তাহে সম্ভাব্য আক্রমণের একাধিক প্রতিবেদন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।[২১]
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে জনসাধারণ সরিয়ে নেওয়ার সময়, স্থানীয় ও বিদেশী বেসামরিক নাগরিকরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য।[২২] বিমানবন্দরে প্রবেশের অন্যতম প্রধান গেট অ্যাবে গেটে একজন আত্মঘাতী বোমারু বিস্ফোরক বিস্ফোরণ ঘটায়।[২৩] বিস্ফোরণের পর গোলাগুলি শুরু হয় এবং বিমানবন্দরের সমস্ত গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।[২৪][২৫]
মার্কিন বাহিনীর পাশে একটি খালে বিস্ফোরণ ঘটে; বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে বাস্তুচ্যুতদের পাসপোর্ট, ভিসা এবং অন্যান্য নথিপত্র পরীক্ষা করা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন যে, বিস্ফোরণটি মনে হয়েছিল যেন কেউ তার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরিয়ে নিয়ে গেছে, এবং বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই ছিল যে অন্যান্য ব্যক্তিদের বাতাসে নিক্ষেপ হতে দেখা গেছে।[২৬]
প্রাথমিক একটি রিপোর্টে ভুলভাবে বলা হয়েছে যে, দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটেছে ব্যারন হোটেলের কাছে।[২৭][২৮] যাইহোক, পরের দিন এটি নিশ্চিত করা হয় যে দ্বিতীয়বার কোনো ধরনের বিস্ফোরণ হয়নি।[২৯]
হামলায় কমপক্ষে ১৮৫ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ১৬৯ জন আফগান, ১৩ভজন মার্কিন সামরিক সদস্য, দুই ব্রিটিশ নাগরিক এবং অন্য একজন ব্রিটিশ নাগরিকের সন্তান ছিল।[৩][৩০] প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল যে, এই হামলায় ২৮ জন তালেবান যোদ্ধাও নিহত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদরেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তা অস্বীকার করেন।[৩১] নিহত মার্কিনীদের মধ্যে দশজন নৌসেনা, দুজন সৈন্য এবং একজন নৌবাহিনীর কর্পসম্যান হিসাবে চিহ্নিত হয়।[৫][১২][৩২] ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর আফগানিস্তানে প্রথম মার্কিন সামরিক মৃত্যু ছিল এটি এবং ২০১১ সালের আফগানিস্তানের বোয়িং চিনুক বন্দুকযুদ্ধের পর মার্কিন সামরিক কর্মীদের সবচেয়ে বড় একক প্রাণহানিও এটি।[৩৩]
এই হামলায় কমপক্ষে আরও ১৫০ জন আহত হয়,[৪] যাদের মধ্যে ১৮ জন মার্কিন সামরিক সদস্য এবং বেশ কয়েকজন তালেবান সদস্যও রয়েছে।[৩৪]
তালেবান ও আইএসআইএস-কে উভয়ই জিহাদি সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও তারা একে অপরের শত্রু এবং একে অপরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করছে।[৩৬][৩৭] মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ এফ. ম্যাকেনজি জুনিয়র হামলার সাথে তালেবানের জড়িত থাকার সম্ভাবনা অস্বীকার করেছেন।[৩৮]
তালেবান মুখপাত্র একটি টুইটের মাধ্যমে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, "মন্দ চক্রদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে"।[৩৯] তালেবান পরবর্তীকালে ঘোষণা করে যে, তারা আইএসআইএস-কে নেতা শাহাব আল-মুহাজিরকে ধরার জন্য সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।[৪০]
আফগানিস্তানের সাবেক প্রধান নির্বাহী এবং বর্তমান আফগানিস্তানের জাতীয় জোটের নেতা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।[৪১] কিছু বেসামরিক নাগরিক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন যে, এই হামলাসহ আরও হামলার আশঙ্কায় দেশ থেকে চলে যাওয়ার তাদের যে ইচ্ছা তা আরও শক্তিশালী করেছে।[৪২]
হামলার পর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন জনসম্মুখে একটি ভাষণ দেন। যেসকল মার্কিন সামরিক সদস্য সেখানে নিহত হয়েছেন, তিনি তাদের সম্মানিত করেন, তাদের "বীর" হিসাবে অভিহিত করেন এবং বলেন যে তারা "স্বাধীনতার সেবায়" তাদের জীবন হারিয়েছেন, তিনি আরও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এক লাখেরও বেশি মার্কিন, আফগান এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে পেরেছেন। তিনি আফগান হতাহতদের জন্যও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি কামনা করে তাদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন যে, "আমরা আপনাদের খুঁজে বের করবো এবং এর প্রতিশোধ নেব।"[৪৩] যুক্তরাজ্য সরকারও বলেছে যে, তারা আফগানিস্তান থেকে বেসামরিক নাগরিক সরানোর অপারেশন, অপারেশন পিটিং চালিয়ে যাবে।[৪৪]
অনেক দেশ কাবুল বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে এবং বিমানবন্দরে নিহতদের এবং সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংহতি জানিয়েছে।[Notes ১]ইউরোপীয় কমিশন[৬৩] ও জাতিসংঘ[৬৪] একইভাবে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল আসন্ন ইসরায়েল সফর বাতিল করেন, এবং জার্মান সৈন্যদের বেসামরিক নাগরিক সরানোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য জার্মানিতেই অবস্থান করেন।[৬৫] বাইডেন হামলার কারণে সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সঙ্গে একটি বৈঠকের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করেন।[৪৩][৬৬] যুক্তরাজ্য বলেছে যে, হামলা সত্ত্বেও বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়া অব্যাহত থাকবে।[৪৪]
২৭ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানগারহর প্রদেশে আইএসআইএস-কে সদস্যদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য নির্দেশিত যুদ্ধাস্ত্রসহ একটি এমকিউ-৯ রীপার ড্রোন দ্বারা এই হামলা চালানো হয়। (বিমান) হামলা সঙ্গে পরিচিত একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এনবিসি নিউজকে বলেন, (বিমান) হামলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে আইএসআইএস-কে পরিকল্পনাকারী এক সহযোগী সহ একটি গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিল।[৬৭] নিহত ব্যক্তি কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনার জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।[৬৮]
↑Seligman, Laura; Ward, Alexander; Desiderio, Andrew; Lippman, Daniel; McLeary, Paul। "13 U.S. troops killed in ISIS attacks on Kabul airport"। Politico। Capitol News Company, LLC। ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২১। An ISIS militant wearing a suicide vest was responsible for the first bombing, two U.S. officials and a person familiar with the matter told POLITICO, detonating around 5 p.m. local time just outside Abbey Gate. ISIS gunmen then opened fire on the crowd. Three sources said U.S. troops returned fire soon after.
↑Ivana Kottasová, Barbara Starr, Kylie Atwood, Nick Paton Walsh, Sam Kiley, Zachary Cohen, Amy Woodyatt, Jennifer Hansler and Nectar Gan (২৭ আগস্ট ২০২১)। "Evacuation from Afghanistan in final phase after deadly Kabul airport attack"। cnn.com। ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২১।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link)