ধরন | ধান এবং তরকারি |
---|---|
উৎপত্তিস্থল | ভারত |
প্রধান উপকরণ | ডাল, শাক সবজি, মসলা, জিরা, আদা, রসুন, মাংস (হয় মাটন নাহলে ছাগলের মাংস), লাউ বা কুমড়া |
ধানশাক হল একটি জনপ্রিয় ভারতীয় খাদ্য, যেটি পারসি জরাথুস্ট্রবাদী সম্প্রদায় থেকে উদ্ভূত।[১] এটি ইরানী এবং গুজরাটি রন্ধনপ্রণালীর উপাদানগুলি মিশিয়ে তৈরি হয়েছে। ডাল এবং শাকসবজির সঙ্গে মাটন বা ছাগলের মাংস মিশিয়ে রান্না করে ধানশাক তৈরি করা হয়। এটি ক্যারামেলাইজড সাদা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। ক্যারামেলাইজড সাদা ভাত হল জল, গোটা মশলা এবং ক্যারামেলাইজড (দগ্ধ চিনি) পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা ভাত। মাংস ও সবজি দিয়ে যে ডাল রান্না করা হয় তাকে ধানশাক বলে। এটি বাদামী চালের (ব্রাউন রাইস) সাথে পরিবেশন করা হয়।
একই রন্ধনপ্রণালীতে শাকসবজি এবং / অথবা ডালের সাথে একত্রিত করে তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল উপাদান (মাংস) ব্যবহার করার কৌশলটি পারসি রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। "ধান" হল গুজরাটি খাদ্যশস্যের খাবার, ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে কানহড়াদে প্রবন্ধে যার উল্লেখ করা হয়েছে;[২] "শাক" শব্দটি গুজরাটি "শাক" থেকে এসেছে যার অর্থ উদ্ভিজ্জ শাক বা রান্না করা সবজি। রন্ধনপ্রণালীটির গুজরাটি উপাদান হল বিভিন্ন ভারতীয় মশলা এবং ফোড়নের উদার ব্যবহার, যেটি প্রকৃতপক্ষে ইরানিদের মৃদু রন্ধনপ্রণালীর বিপরীত।
পারসি বাড়িতে, পরম্পরাগতভাবে রবিবারে ধানশাক তৈরি করা হয়,[৩] যার প্রধান কারণ ডাল এবং শাকসবজি রান্না করে মণ্ড প্রস্তুত করার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয় (প্রেশার কুকারে রান্নার আগেকার কথা)।
কাছের একজনের মৃত্যুর পর চতুর্থ দিনে সবসময় ধানশাক রান্না করা হয়। মৃত্যুর পর তিন দিন কোনো মাংস খাওয়া হয় না এবং চতুর্থ দিনে এই বিরতি ভাঙতে ধানশাক খাওয়া হয়। তাই উৎসব এবং বিবাহের মতো শুভ অনুষ্ঠানে ধানশাক কখনই প্রস্তুত করা হয় না।[৪]
বিভিন্ন ডাল এবং সবজির মিশ্রণে মাংসের টুকরো রান্না করে ধানশাক তৈরি করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, চার রকমের ডাল (অড়হর ডাল, বাংলা ছোলা বা ছোলার ডাল, লাল মসুর ডাল এবং বাদামী মসুর ডাল) ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এক বা একাধিক ডাল বাদ দেওয়া যেতে পারে বা সেই জায়গায় অন্য় ডাল ব্যবহার করা যেতে পারে। সবজির মধ্যে রয়েছে আলু, টমেটো, বেগুন, কুমড়ো এবং মেথি পাতা: এখানেও, বিকল্প হিসেবে কুমড়োর বদলে স্কোয়াশ এবং আলুর বদলে রাঙা আলু ব্যবহার করা যেতে পারে: পুরোটাই নির্ভর করে কোন সবজি হাতের কাছে পাওয়া সুবিধাজনক তার ওপর। প্রথাগত রন্ধনপ্রণালীতে দীর্ঘক্ষণ রান্না করার পর (বা প্রেসার কুকার ব্যবহার করে), ডাল সম্পূর্ণভাবে মণ্ড হয়ে যায় এবং শাকসবজি ডালের সাথে কমবেশি মিশে যায়; যার ফলে তরকারির পরিবর্তে একটি ঘন স্ট্যু তৈরি হয়।
সময়ের সাথে সাথে রন্ধনপ্রণালীটির বিবর্তন হয়েছে। পারসিরা, যারা জরাথুস্ট্রবাদী, তারা পারস্যে আরব বিজয় এবং ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে সাসানীয় সাম্রাজ্য পতনের পর ৮ম শতাব্দীতে ধর্মীয় উদ্বাস্তু হিসাবে পশ্চিম ভারতে এসেছিল। তারা তাদের সাথে ডাল এবং / অথবা সবজি দিয়ে মাংস রান্নার পরম্পরা নিয়ে এসেছিল। যাইহোক, টমেটো, লঙ্কা, কুমড়ো এবং আলু আমেরিকার স্থানীয় সবজি এবং ভারতে তাদের ব্যবহার অজানা ছিল। খ্রিস্টাব্দ ১৬ শতকে পর্তুগিজরা (যারা স্পেনের সাথে বাণিজ্যের মাধ্যমে এগুলিকে পেয়েছিল) তাদের ভারতে নিয়ে এসেছিল।
ধানশাক যে মশলার মিশ্রণ দিয়ে স্বাদযুক্ত করা হয় তাকে "ধানশাক মসলা" বলা হয়, এটি "গরম মসলা"র মতোই, তবে বেছে নেওয়া মশলাগুলি তীব্র গন্ধযুক্ত না হয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি। এই মশলার মধ্যে আছে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জায়ফল, শুকনো আদা, গোটা ধনে এবং গোটা জিরা, এর সাথে আছে এক চিমটি হিং। পিঁয়াজ এবং রসুন বাদামী করে ভেজে স্টুয়ের মূল অংশ তৈরি হয়, ধনে পাতা, কাঁচা লঙ্কা ও পুদিনা পাতা খাদ্যটি সাজিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়। যদিও "ধানশাক মসলা" একটি প্রস্তুত মিশ্রণ হিসাবে বিক্রি হয়, কোন রাঁধুনি ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে মশলার সংমিশ্রণ এবং অনুপাত পরিবর্তন করে একেবারেই শুরু থেকে মশলার মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারে। পারসি সম্প্রদায়ের মধ্যে, ধানশাকে সাধারণত ছাগলের মাংস বা মাটন থাকে; এটি খুব কমই অন্যান্য মাংস, যেমন মুরগির মাংসের সাথে তৈরি করা হয়, বা মাংস ছাড়া তৈরি করা হয়।
ধানশাকের জন্য আন্তর্জাতিক রন্ধনপ্রণালীর বিকল্পগুলিতে কখনও কখনও একটি মিষ্টি স্বাদ প্রদানের জন্য আনারস খণ্ড ব্যবহার করা হয়, [৫] কিন্তু ঐতিহ্যগত ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীতে কুমড়া, স্কোয়াশ বা লাউয়ের ব্যবহার পছন্দ করা হয়।