ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হাভিয়ের আলেহান্দ্রো মাসচেরানো | ||
জন্ম | ৮ জুন ১৯৮৪ | ||
জন্ম স্থান | স্যান লরেঞ্জো, আর্জেন্টিনা | ||
উচ্চতা | ১.৭৪ মিটার (৫ ফুট ৮+১⁄২ ইঞ্চি)[১] | ||
মাঠে অবস্থান | সেন্টার ব্যাক / ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার | ||
ক্লাবের তথ্য | |||
বর্তমান দল | হেবেই চীন ফরচুন | ||
জার্সি নম্বর | ১৪ | ||
যুব পর্যায় | |||
রিভার প্লেত | |||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) |
২০০৩–২০০৫ | রিভার প্লেত | ৪৬ | (১) |
২০০৫–২০০৬ | করিন্থিয়ান্স | ২৬ | (০) |
২০০৬–২০০৭ | ওয়েস্ট হ্যাম | ৫ | (০) |
২০০৭–২০১০ | লিভারপুল | ৯৪ | (১) |
২০১০–২০১৮ | বার্সেলোনা | ২০৩ | (১) |
২০১৮- | হেবেই চীন ফরচুন | ১০ | (০) |
জাতীয় দল‡ | |||
২০০৩–২০০৪ | আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২০ | ২২ | (১) |
২০০৪–২০০৮ | আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২৩ | ১৮ | (০) |
২০০৩–২০১৮ | আর্জেন্টিনা | ১৪৬ | (৩) |
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ২ জুন ২০১৮ তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক। ‡ জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা ১ জুলাই ২০১৮ তারিখ অনুযায়ী সঠিক। |
হাভিয়ের আলেহান্দ্রো মাসচেরানো (স্পেনীয়: Javier Mascherano, স্পেনীয় উচ্চারণ: [ma(s)tʃeˈɾano], ইতালীয় উচ্চারণ: [maskeˈraːno]; জন্ম ৮ জুন ১৯৮৪) একজন আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার যিনি সেন্টার ব্যাক এবং ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে চীনা দল হেবেই চীন ফরচুন এর হয়ে হয়ে খেলেন।
মাসচেরানো তার ক্যারিয়ার শুরু করেন আর্জেন্টিনীয় ক্লাব রিভার প্লেত এর হয়ে। ২০০৩–০৪ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে প্রথম লিগ শিরোপা জেতেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতেন এবং ২০০৪ কোপা আমেরিকায় রানার-আপ হন। ২০০৫ সালে তিনি ব্রাজিলীয় ক্লাব করিন্থিয়ান্সে যোগ দেন এবং প্রথম মৌসুমেই ব্রাজিলীয় সিরি এ জেতেন। এরপর তিনি ইউরোপে চলে আসেন এবং প্রিমিয়ার লিগের দল ওয়েস্ট হ্যামে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে তিনি বেশিদিন থাকেননি। ২০০৭ সালে তিনি ধারে যোগ দেন লিভারপুলে। সেখানে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগে রানার-আপ তিনি। ঐ বছর কোপা আমেরিকাতেও আর্জেন্টিনার হয়ে রানার-আপ হন তিনি।
২০০৮ সালে ১৮.৬ মিলিয়ন পাউন্ড স্থানান্তর ফি এর বিনিময়ে দাপ্তরিকভাবে লিভারপুলে যোগ দেন মাসচেরানো। ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয়বারের মত স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। ২০১০ সালে তিনি স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেন ২ কোটি ৪ লক্ষ ইউরোর বিনিময়ে। বার্সেলোনাতে তিনি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত করেন। প্রায় ৮ বছর বার্সেলোনায় কাটানোর পর, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি চীনা ক্লাব হেবেই চীন ফরচুনে যোগ দেন।
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ এর পর মাসচেরানো আর্জেন্টিনা জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
মাসচেরানো সান্তা ফে’র স্যান লরেঞ্জোতে জন্মগ্রহণ করেন। রিভার প্লেটের যুব একাডেমী থেকে তার উদ্ভব ঘটেছে। তবে ক্লাবের হয়ে অভিষেকের পূর্বেই তিনি আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০০৩–০৪ মৌসুমে রিভার প্লেটের হয়ে তিনি ক্লাউসুরা চ্যাম্পিয়নশীপ জেতেন। ২০০৪ সালে কোপা লিবার্তাদোরেসের সেমি-ফাইনালে পৌছালেও চির প্রতিদ্বন্দ্বি বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষে পেনাল্টিতে পরাজিত হয় রিভার প্লেট। এই সময় রিয়াল মাদ্রিদ[২] এবং দেপর্তিভো লা করুনিয়ার মত বিভিন্ন ক্লাব মাসচেরানোর সাথে চুক্তি সাক্ষর করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু রিভার প্লেট সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
২০০৪–০৫ মৌসুম রিভার প্লেটের ভাল কাটেনি। তারা আপারতুরা চ্যাম্পিয়নশীপে তৃতীয় এবং ক্লাউসুরা চ্যাম্পিয়নশীপে দশম স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে। কোপা লিবার্তাদোরেসের সেমি-ফাইনালে এই মৌসুমেও পরাজিত হয় তারা। এবার পরাজিত হয় সাও পাওলোর বিপক্ষে।
জার্মানিতে ২০০৫ ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের পর ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ব্রাজিলীয় ক্লাব করিন্থিয়ান্সে যোগ দেন মাসচেরানো।
ব্রাজিলীয় সিরি এ শুরু হয় এপ্রিল থেকে, ফলে মাসচেরানো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে করিন্থিয়ান্সে যোগ দেন। দলের হয়ে নয়টি খেলায় অংশগ্রহণের পর, ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে, তিনি পায়ের ইনজুরিতে আক্রান্ত হন, ফলে মৌসুমের অবশিষ্ট সময় তাকে মাঠের বাহিরে কাটাতে হয়। জাতীয় দলের ডাক্তারদের দ্বারা অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্যে তিনি পুনরায় আর্জেন্টিনায় চলে যান।[৩][৪][৫] তবুও, করিন্থিয়ান্স ২০০৫ সিরি এ চ্যাম্পিয়নশীপে বিজয়ী হয়।
সব মিলিয়ে, মাসচেরানো ছয় মাস মাঠের বাহিরে ছিলেন। ২০০৬-এর ৫ মার্চ তিনি ফিরে আসেন।[৬] ২০০৬ কোপা লিবার্তাদোরেসে মাসচেরানোকে ছাড়াই অংশগ্রহণ করে করিন্থিয়ান্স, অবশ্য রাউন্ড অব ১৬-এ তিনি ফিরে আসেন। তবে রিভার প্লেটের বিপক্ষে হেরে করিন্থিয়ান্সকে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয়। ২০০৬ ব্রাজিলীয় সিরি এ খারাপভাবে কাটে করিন্থিয়ান্সের। এমনকি এক পর্যায়ে তাদের অবনমন এড়ানোর জন্য লড়তে হয়। জুনে, ২০০৬ বিশ্বকাপের জন্য লিগ মৌসুম সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়।
যদিও তার নৈপূন্য ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, অবনমন শঙ্কা এড়াতে সাহায্য করার জন্য তিনি করিন্থিয়ান্সেই থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং জানুয়ারি পর্যন্ত স্থানান্তর স্থগিত করেন।[৭] অবশ্য, ২০০৬ গ্রীষ্মকালীন স্থানান্তরের সময়সীমা শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানিক পূর্বেই কার্লোস তেবেসের সাথে তিনিও অপ্রকাশিত অর্থের বিনিময়ে ইংরেজ দল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে যোগ দেন।[৮]
২০০৬-এর গ্রীষ্মে, মাসচেরানো স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু অবশেষে তিনি প্রিমিয়ার লিগের দল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে যোগ দেন। বংশবৃতান্তের কারণে মাসচেরানোর একটি ইতালীয় পাসপোর্টও রয়েছে।[৯] তার ওয়েস্ট হ্যামে যোগদান ছিল বিস্ময়কর, যেহেতু পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে তিনি ইউরোপের বড় বড় কিছু দলের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। এছাড়া তার এই যোগদান নিয়ে অসংখ্য গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
মাসচেরানোর যোগদানের পূর্বে, ওয়েস্ট হ্যাম একটি খেলায় জয় লাভ করে, একটি খেলায় ড্র করে এবং একটি খেলায় পরাজিত হয়। তার যোগদানের পর ক্লাবের অধঃপতন ঘটে। তারা পরবর্তী নয় খেলায় একটিতে ড্র করে এবং আটটিতে পরাজিত হয়। অবশেষে ২৯ অক্টোবর একটি খেলায় তারা জয় লাভ করে। ওয়েস্ট হ্যামে থাকাকালে তিনি খুব কমই দলে জায়গা পেয়েছেন। অক্টোবরে, আর্জেন্টিনীয় কোচ আলফিয়ো বাসিল ঘোষণা করেন, “মাসচেরানোর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওয়েস্ট হ্যাম ছেড়ে দেওয়া উচিত। এবং আমি আশা করি যে সে জুভেন্তাসে যাবে।”[১০]
২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি, মাসচেরানোকে ধারে নেওয়ার জন্য লিভারপুল ফিফার কাছে তার সাফাই আবেদন করে।[১১] কিন্তু ফিফার আইন অনুযায়ী কোন খেলোয়াড় ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দুইটির বেশি দলের হয়ে খেলতে পারবে না। মাসচেরানো ঐ মৌসুমে করিন্থিয়ান্স এবং ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে খেলে। ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি ফিফা এই লেনদেন অনুমোদন করে।[১২] অবশ্য, স্থানান্তরের সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছুক্ষন আগে লিভারপুল মাসচেরানোর নিবন্ধন বিবরণ দাখিল করে। ফলে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষনিকভাবে ঘোষণা করেননি যে মাসচেরানো লিভারপুলের হয়ে খেলবেন কিনা।[১৩]
২ মার্চ, ঘোষণা করা হয় যে প্রিমিয়ার লিগ ওয়েস্ট হ্যামকে তৃতীয় পক্ষ মালিকানার প্রভাবে বি১৩ আইন ভঙ্গের দায়ে জরিমানা করতে যাচ্ছে।[১৪] ২৭ এপ্রিল, প্রিমিয়ার লিগ ওয়েস্ট হ্যামকে ৫.৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে, যা ছিল একটি বিশ্ব রেকর্ড।[১৫]
২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, লিভারপুল তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্কোয়াডে মাসচেরানোকে যুক্ত করে এবং তাকে ২০ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। অবশেষে, ২০ ফেব্রুয়ারি, প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ মাসচেরানোকে লিভারপুলে নিবন্ধনের আবেদন মঞ্জুর করলে, তার লিভারপুলে স্থানান্তর দাপ্তরিক বৈধতা পায়।[১৬]
২৪ ফেব্রুয়ারি, শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে মাসচেরানোর অভিষেক হয়।[১৭] খেলায় লিভারপুল ৪–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলা শেষে লিভারপুল ম্যানেজার রাফায়েল বেনিতেজ এবং অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড তার প্রশংসা করেন। ৩১ মার্চ, আর্সেনালের বিপক্ষে খেলার পর বেনিতেজ মাসচেরানোকে “মন্সটার অফ এ প্লেয়ার (Monster of a player)” নামকরণ করেন।[১৮] একইভাবে তার সতীর্থরাও তার প্রতি মুগ্ধ হন। তার সম্পর্কে জাবি আলোনসো বলেন, “মাঠে তার মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে। প্রতি মূহুর্তে সে খেলা সম্পর্কে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করে।”[২] চ্যাম্পিয়নস লিগে মাসচেরানোর অভিষেক হয় ৩ এপ্রিল, পিএসভি আইন্দোভেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের খেলায়। খুব তাড়াতাড়ি দলের প্রথম একাদশে জায়গা করে নেয়ায়, ২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মিলানের বিপক্ষে খেলতে নামেন মাসচেরানো। তিনি এবং তার সতীর্থ আলোনসো খেলার অধিকাংশ সময়েই সফলভাবে ক্ল্যারেন্স সিডর্ফ এবং কাকার মত খেলোয়াড়দের আক্রমণ দমিয়ে রাখেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত জয়ের স্বাদ পাননি তারা। খেলায় মিলান ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৯] তিনি লিভারপুলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সমর্থকদের ভোটে লিভারপুলের পক্ষে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।[২০]
২০০৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, মাসচেরানো লিভারপুলের সাথে চার বছর মেয়াদী স্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[২১] এসময় লিভারপুল ১৮.৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে।[২২] ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ, রেডিং-এর বিপক্ষে মাসচেরানো তার প্রথম প্রিমিয়ার লিগ গোল করেন। ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া দূর্দান্ত এক শটে তিনি এই গোল করেন।[২৩]
২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর, এভারটনের বিপক্ষে ২–০ গোলে জয় পায় লিভারপুল। মাসচেরানোর ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে খেলার প্রথম গোলটি হলেও, বল জালে জড়ানোর পূর্বে এভারটন ডিফেন্ডার ইয়োসেপ ইয়োবোর পায়ে সামান্য স্পর্শ করে। ফলে গোলটিকে দাপ্তরিকভাবে ওন গোল ধরা হয়।[২৪] ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর, পোর্টস্মাউথের বিপক্ষে পোর্টস্মাউথ ডিফেন্ডার তাল বেন হেইমকে খারাপভাবে আঘাত করায় মাসচেরানোকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়। পরে নিশ্চিত করা হয় যে তাকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ এটি ছিল মৌসুমে তার দ্বিতীয় লাল কার্ড। শেষ পর্যন্ত খেলাটিতে লিভারপুল ২–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।[২৫] প্রিমিয়ার লিগের ২০০৯–১০ মৌসুমে মাসচেরানোর সবচেয়ে বাজে শাস্তিমূলক রেকর্ড ছিল (৭টি হলুদ কার্ড ও ২টি লাল কার্ড)।[২৬] মৌসুমে তিনি প্রথম গোল করেন ইউরোপা লিগের ইউনিরেয়া আর্জিসেনির বিপক্ষে। খেলায় লিভারপুল ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের বিরতির পর, ২৭ জুলাই, মাসচেরানো লিভারপুল ম্যানেজার রয় হজসনকে জানান যে তিনি ক্লাব ছাড়তে চান।[২৭]
লিভারপুল সমর্থকদের কাছে মাসচেরানো শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। বার্সেলোনার হয়ে ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল জেতার পর মাসচেরানো সরাসরিভাবে বলেন, “আমি জানি কিছু লিভারপুল সমর্থক আমার প্রস্থানের পর নিরাশ হয়েছিল, তারা আমার প্রতি সামান্য দুঃখিতও ছিল, কিন্তু এটা তাদের জন্য।”[২৮]
২৭ আগস্ট, লিভারপুল ঘোষণা করে যে তারা বার্সেলোনার সাথে একটি স্থানান্তর ফিতে রাজি হয়েছে এবং মাসচেরানোকে স্পেনীয় ক্লাবটির সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে।[২৯]
২০০৮ এর ২৩ মার্চ, ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে নিজের প্রথম খেলায় দুটি হলুদ কার্ড দেখে মাসচেরানোকে মাঠ ছাড়তে হয়।[৩০] ম্যান ইউ মিডফিল্ডার পল স্কোল্সকে ট্যাকল করার কারণে তাকে প্রথম হলুদ কার্ডটি দেখানো হয়। সতীর্থ ফের্নান্দো তোরেসকে রেফারি স্টিভ বেনেট হলুদ কার্ড দেখালে এর প্রতিবাদে মাসচেরানো রেফারির দিকে তেড়ে যান, ফলে তাকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো হয়। স্টিভেন জেরার্ড এবং শাবি আলোনসো তাকে মাঠের বাহিরে নিয়ে যান। ম্যানেজার রাফায়েল বেনিতেজকেও ডাগ আউট ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মাসচেরানোর অসদাচরণের জন্য তাকে পরবর্তী এক খেলার পরিবর্তে তিনটি খেলায় নিষিদ্ধ করে।[৩১] মাসচেরানো অসদাচরণের কারণে তার উপর করা দন্ডাদেশ মেনে নিলেও, পরবর্তী দুই থেকে তিনটি খেলার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপীল করেন।[৩২] এই আপীল ফুটবল অ্যাসোসীয়েশন কর্তৃক খারিজ করা হয়।[৩৩] এছাড়া মাসচেরানোকে ১৫,০০০ ইউরো জরিমানা করা হয়। তিনি দাবি করেন যে এই জরিমানার অর্থ যেন দানকার্যে ব্যয় করা হয়।[৩৪]
এই বিতর্কিত ঘটনার পরও ২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, আনফিল্ডে ইউনাইটেডের বিপক্ষে লিভারপুলের খেলায় মাসচেরানো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। খেলায় লিভারপুল ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। যদিও খেলার শুরুতেই তিনি স্বদেশী কার্লোস তেবেসকে থামাতে ব্যর্থ হন এবং তেবেস ইউনাইটেডের পক্ষে গোল করেন। অবশ্য লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলে সহায়তা করে মাসচেরানো তার এই ব্যর্থতা সংশোধন করেন। লিভারপুলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সমর্থকদের ভোটে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন মাসচেরানো।
২০১০ সালের ২৮ আগস্ট, বার্সেলোনার সাথে চার বছরের চুক্তির শর্তাবলী মেনে নেন মাসচেরানো। ২৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এই চুক্তি করে বার্সেলোনা।[৩৫] ৩০ আগস্ট, মাসচেরানো মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং বার্সেলোনায় তার স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন।[৩৬] ২০১০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, লা লিগায় মাসচেরানোর অভিষেক হয়। হারকিউলিসের বিপক্ষে ঐ খেলায় ঘরের মাঠে ০–২ ব্যবধানে পরাজিত হয় বার্সা। ১৬ মাসের মধ্যে এটি ছিল ক্যাম্প ন্যুতে তাদের প্রথম পরাজয়। মৌসুমের প্রথম ভাগে অধিকাংশ খেলাতেই বদলি হিসেবে নামেন মাসচেরানো, কিন্তু শেষ দিকে এসে তিনি একজন সেন্ট্রাল ব্যাকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ২৮ মে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে হেরার্দ পিকের সাথে সেন্ট্রাল ব্যাক হিসেবে খেলতে নামেন মাসচেরানো। খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। মাসচেরানো এই জয় লিভারপুল সমর্থকদের উত্সর্গ করেন।
বার্সেলোনায় নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে প্রায় একচেটিয়াভাবে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন মাসচেরানো। তিনি দলের রক্ষনভাগের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন।
২০১২ সালের ২৬ জুলাই, মাসচেরানো বার্সেলোনার সাথে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেন।[৩৭]
মাসচেরানোর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ২০০১ সালে। ঐ বছর ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৭ দল চতুর্থ হয়।
যুব স্তরে মাসচেরানোর এতটাই প্রভাব ছিল যে রিভার প্লেটের মূল দলে অভিষেকের পূর্বেই আর্জেন্টিনার সিনিয়র দলে তার অভিষেক হয় (কারণ, ক্লাবে তার অবস্থান ছিল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে এবং রিভার প্লেটে সেই অবস্থান ধরে রেখেছিলেন দলের দীর্ঘদিনের অধিনায়ক লিওনার্দো আস্ত্রাদা)। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার এই অভিষেক হয় ২০০৩ সালের ১৬ জুলাই উরুগুয়ের বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায়।[৩৮]
২০০৩–০৪ আপের্তুরা (উদ্বোধনী) চ্যাম্পিয়নশিপের মাঝামাঝি সময়ে ২০০৩ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য আর্জেন্টিনা দলে ডাক পান মাসচেরানো। এই প্রতিযোগিতায়ও আর্জেন্টিনা চতুর্থ হয়।[৩৯] দূর্দান্ত নৈপূন্য প্রদর্শন করেন মাসচেরানো। অবশ্য তৃতীয় স্থান বাছাইয়ের প্লে-অফে তিনি সাসপেন্ড হন।
২০০৪ এর জানুয়ারিতে, চিলিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান প্রি-অলিম্পিকো প্রতিযোগিতার জন্য তিনি আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩ দলে যোগ দেন মাসচেরানো। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনা জয় লাভ করে এবং ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করে। আগস্টে, মাসচেরানো এবং তার দল গ্রীসে স্বর্ণপদক বিজয়ীতে পরিণত হয়।[৪০]
২০০৩–০৪ মৌসুমের শেষে, মাসচেরানোক ২০০৪ কোপা আমেরিকার জন্য ঘোষিত আর্জেন্টিনার সিনিয়র দলে জায়গা দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে পরাজিত হয়। অবশ্য মাসচেরানো তার সতীর্থদের ভোটে প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।[৩৯]
পরের বছর, জার্মানিতে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন্স কাপে অংশগ্রহণ করেন মাসচেরানো। এখানেও ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয় আর্জেন্টিনা।[৪১]
২০০৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিটি খেলার প্রত্যেকটি মিনিট মাঠে কাটিয়েছেন মাসচেরানো। অবশ্য কোয়ার্টার-ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে আর্জেন্টিনা।
২০০৭ সালের জুলাইয়ে, কোপা আমেরিকায় মাসচেরানো দুইটি গোল করেন। এগুলোই ছিল সিনিয়র দলের হয়ে তার প্রথম দুই গোল। প্রতিযোগিতায় তার দূর্দান্ত নৈপূন্যের কারণে তারকা সমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ব্যপকভাবে বিবেচিত হয়েছিলেন।[৪২]
২০০৮ সালের ৮ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলায় মাসচেরানো জাতীয় দলের হয়ে প্রথম লাল কার্ড দেখেন। খেলায় তিনি প্রথম হলুদ কার্ড দেখার পর ৮৬তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড ও লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়।
২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য আর্জেন্টিনা দলে তেইশোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে জায়গা পান মাসচেরানো। আর্জেন্টিনা ফুটবলে স্বর্ণপদক জয় করে। এতে করে, মাসচেরানো একমাত্র আর্জেন্টিনীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে দুইটি স্বর্ণপদক জিতার রেকর্ড গড়েন।[৪৩][৪৪]
২০০৮ সালের নভেম্বরে, আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দিয়েগো মারাদোনা। মারাদোনা ঘোষণা করেন যে তিনি মাসচেরানোকে দলের অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান।[৪৫] মাসচেরানো মারাদোনার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ১০ নভেম্বর আর্জেন্টিনার নতুন অধিনায়ক হিসেবে হাভিয়ের জানেত্তির স্থলাভিষিক্ত হন।[৪৬] ২০১০ বিশ্বকাপে, অধিনায়ক মাসচেরানোর অধীনে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত পৌছায় এবং সেখানে জার্মানির বিপক্ষে ৪–০ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়।[৪৭]
ক্লাব | মৌসুম | লিগ | কাপ | মহাদেশীয় | অন্যান্য | মোট | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | ||
রিভার প্লেত | ২০০৩-০৪ | ২১ | ০ | — | ১৩ | ০ | — | ৩৪ | ০ | ||
২০০৪-০৫ | ২৫ | ০ | — | ১২ | ২ | — | ৩৭ | ১ | |||
মোট | ৪৬ | ০ | — | ২৫ | ১ | — | ৭১ | ১ | |||
করিন্থিয়ান্স | ২০০৫ | ৭ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ১ | ০ | ৮ | ০ |
২০০৭ | ১০ | ০ | ২ | ০ | ৫ | ০ | ৮ | ০ | ২৫ | ০ | |
মোট | ১৭ | ০ | ২ | ০ | ৫ | ০ | ৯ | ০ | ৩৩ | ০ | |
ওয়েস্ট হ্যাম | ২০০৬-০৭ | ৫ | ০ | ০ | ০ | ২ | ০ | ০ | ০ | ৭ | ০ |
লিভারপুল | ২০০৬-০৭ | ৭ | ০ | ০ | ০ | ৪ | ০ | ০ | ০ | ১১ | ০ |
২০০৭-০৮ | ২৫ | ১ | ২ | ০ | ১৩ | ০ | ১ | ০ | ৪১ | ১ | |
২০০৮-০৯ | ২৭ | ০ | ৩ | ০ | ৮ | ০ | ০ | ০ | ৩৮ | ০ | |
২০০৯-১০ | ৩৪ | ০ | ০ | ০ | ১৩ | ১ | ১ | ০ | ৪৮ | ১ | |
২০১০-১১ | ১ | ০ | — | — | — | ১ | ০ | ||||
মোট | ৯৪ | ১ | ৫ | ০ | ৩৮ | ১ | ২ | ০ | 1৩৯ | ২ | |
বার্সেলোনা | ২০১০-১১ | ২৭ | ০ | ৭ | ০ | ১১ | ০ | — | ৪৫ | ০ | |
২০১১-১২ | ৩১ | ০ | ৬ | ০ | ১০ | ০ | ৫ | ০ | ৫২ | ০ | |
২০১২-১৩ | ২৫ | ০ | ৬ | ০ | ৮ | ০ | ২ | ০ | ৪১ | ০ | |
২০১৩-১৪ | ২৮ | ০ | ৭ | ০ | ৯ | ০ | ২ | ০ | ৪৬ | ০ | |
২০১৪-১৫ | ২৮ | ০ | ৭ | ০ | ১২ | ০ | — | ৪৭ | ০ | ||
২০১৫-১৬ | ৩২ | ০ | ৬ | ০ | ৮ | ০ | ৫ | ০ | ৫১ | ০ | |
২০১৬-১৭ | ২৫ | ১ | ৫ | ০ | ৮ | ০ | ২ | ০ | ৪০ | ১ | |
২০১৭-১৮ | ৭ | ০ | ২ | ০ | ২ | ০ | ১ | ০ | ১২ | ০ | |
মোট | ২০৩ | ১ | ৪৬ | ০ | ৬৮ | ০ | ১৭ | ০ | ৩৩৪ | ১ | |
হেবেই চীন ফরচুন | ২০১৮ | ১০ | ০ | ১ | ১ | — | — | ১১ | ১ | ||
সর্বমোট | ৩৭৫ | ২ | ৫৪ | ১ | ১৩৮ | ২ | ২৮ | ২ | ৫৯৫ | ৫ |
১ জুলাই ২০১৮ অনুসারে।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দল | ||
---|---|---|
সাল | উপস্থিতি | গোল |
২০০৩ | ১ | ০ |
২০০৪ | ১০ | ০ |
২০০৫ | ৩ | ০ |
২০০৬ | ৮ | ০ |
২০০৭ | ১৪ | ২ |
২০০৮ | ৯ | ০ |
২০০৯ | ১০ | ০ |
২০১০ | ১০ | ০ |
২০১১ | ১৩ | ০ |
২০১২ | ৮ | ০ |
২০১৩ | ৯ | ০ |
২০১৪ | ১৫ | ১ |
২০১৫ | ১২ | ০ |
২০১৬ | ১৩ | ০ |
২০১৭ | ৬ | ০ |
২০১৮ | ৬ | ০ |
মোট | ১৪৭ | ৩ |
অলিম্পিক পদক রেকর্ড | ||
---|---|---|
ছেলেদের ফুটবল | ||
২০০৪ এথেন্স | দল | |
২০০৮ বেইজিং | দল |