ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হুয়ান রোমান রিকেল্মে | ||
জন্ম | ২৪ জুন ১৯৭৮ | ||
জন্ম স্থান | সাম ফের্নান্দো, আর্জেন্টিনা | ||
উচ্চতা | ১.৮২ মিটার (৫ ফুট ১১+১⁄২ ইঞ্চি) | ||
মাঠে অবস্থান | অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার | ||
ক্লাবের তথ্য | |||
বর্তমান দল | বোকা জুনিয়র্স | ||
জার্সি নম্বর | ১০ | ||
যুব পর্যায় | |||
১৯৯২–১৯৯৫ | আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স | ||
১৯৯৫–১৯৯৬ | বোকা জুনিয়র্স | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) |
১৯৯৬–২০০২ | বোকা জুনিয়র্স | ১৫১ | (৩৮) |
২০০২–২০০৫ | বার্সেলোনা | ৩০ | (৩) |
২০০৩–২০০৫ | → ভিয়ারিয়াল (ধার) | ৬৮ | (২৩) |
২০০৫–২০০৭ | ভিয়ারিয়াল | ৩৮ | (১৩) |
২০০৭ | → বোকা জুনিয়র্স (ধার) | ১৫ | (২) |
২০০৮–২০১২ | বোকা জুনিয়র্স | ৯৮ | (১৭) |
২০১৩– | বোকা জুনিয়র্স | ২৪ | (৪) |
জাতীয় দল | |||
১৯৯৭–১৯৯৮ | আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২০ | ২১ | (৭) |
২০০৮ | আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২৩ | ৬ | (১) |
১৯৯৭–২০০৮ | আর্জেন্টিনা | ৫১ | (১৭) |
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ১ মে ২০১৩ তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক। |
হুয়ান রোমান রিকেল্মে (স্পেনীয়: Juan Román Riquelme, স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈxwan roˈman riˈkelme]; জন্ম ২৪ জুন ১৯৭৮) একজন আর্জেন্টিনীয় ফুটবলার যিনি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলেন। নিজের প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান এই ফুটবলার সৃষ্টিশীল পাসিং দক্ষতার কারণে অধিক পরিচিত। একজন প্লেমেকার হিসেবে, তার মধ্যে পাসিং, ড্রিবলিং এবং মাঝমাঠ থেকে গোল করার ক্ষমতা দারুনভাবে রয়েছে। তিনি তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন বোকা জুনিয়র্সে, এছাড়া স্পেনে ভিয়ারিয়ালের হয়েও তিনি বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন। তিনি চারবার আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন।[১] রিকেল্মে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ এবং দুইটি কোপা আমেরিকায় অংশগ্রহণ করেন।
রিকেল্মে একটি দরিদ্র এবং নত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা’র এগারো সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ের একদিন আগে তার জন্ম হয়। সান ফের্নান্দোর স্থানীয় ক্লাবগুলোতে খেলার মাধ্যমে রিকেল্মে ফুটবল খেলা শুরু করেন। তিনি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে যোগ দেন। সেখানে তিনি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে শুরু করেন। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলে খেলার সময় তিনি বোকা জুনিয়র্স এবং রিভার প্লেটের নজরে আসেন। ১৯৯৫ সালে, তিনি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স অনূর্ধ্ব ২০ দল থেকে বোকা জুনিয়র্স অনূর্ধ্ব ২০ দলে ৮০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে স্থানান্তরিত হন।
১৯৯৬ সালের ১১ নভেম্বর, ১৮ বছর বয়সে, প্রিমেরা দিভিসিওনে রিকেল্মের অভিষেক হয়, ঐ খেলায় ইউনিয়ন দি সান্তা ফে’র বিপক্ষে ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে বোকা জুনিয়র্স। দুই সপ্তাহ পর, সিনিয়র দলের হয়ে তিনি প্রথম গোল করেন, ক্লাব আতলেতিকো হুরাকানের বিপক্ষে ঐ খেলায় বোকা জুনিয়র্স ৬–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। রিকেল্মে বোকা জুনিয়র্সে সাতটি সফল মৌসুম পার করেন। এই সময়ে তিনি ক্লাবের হয়ে ছয়টি শিরোপা জিতেন। এর মধ্যে ২০০০ সালে জিতেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ এবং কোপা লিবের্তাদোরেস।
২০০২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে, ১১ মিলিয়ন ইউরো স্থানান্তর ফি এর বিনিময়ে স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনায় পাড়ি জমান রিকেল্মে।[২] বোকা থেকে তার প্রস্থানের কিছুদিন আগে তার ভাই ক্রিস্তিয়ানকে অপহরণ করা হয়। রিকেল্মে তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য আলোচনা করেন এবং অবশেষে মুক্তিপণ পরিশোধ করেন, পরবর্তীতে তিনি প্রকাশ করেন যে এটি তার বোকা ত্যাগ করার অন্যতম কারণ ছিল।
বার্সেলোনার তত্কালীন ম্যানেজার লুইস ফন গাল রিকেল্মের স্থানান্তরকে “রাজনৈতিক চুক্তি” হিসেবে উল্লেখ করেন[৩] এবং তাকে উপেক্ষা করতে থাকেন। ফন গাল তাকে খুব কম খেলাতেই দলে রাখতেন এবং উইঙ্গার হিসেবে মাঠে নামাতেন। তিনি ফর্মহীন হয়ে পড়েন এবং দলের প্রথম একাদশে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলেন। তিনি প্রধানত কোপা দেল রে’র খেলায় মাঠে নামতেন। চ্যাম্পিয়নস লীগের গ্রুপ পর্বে ক্লাব ব্রুগে কে.ভি. এর বিপক্ষে তিনি প্রথম একাদশে জায়গা পান এবং বার্সেলোনার পক্ষে খেলার একমাত্র গোলটি করেন।
২০০৩ সালে বার্সেলোনার নতুন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফ্রাংক রাইকার্ড, এছাড়াও দলে যোগ দেন রোনালদিনিয়ো। দলে বিদেশী খেলোয়াড়দের আধিক্যের কারণে রিকেল্মকে দুই মৌসুমের জন্য ধারে ভিয়ারিয়ালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বার্সেলোনা। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে রিকেল্মে নিজেকে ভিয়ারিয়ালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলে কিছু সাফল্য বয়ে আনেন। ২০০৪–০৫ মৌসুমে ভিয়ারিয়াল লা লিগায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে এবং পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ২০০৪–০৫ মৌসুমের শেষ দিকে স্পেনীয় ক্রীড়া সংবাদপত্র মার্কা রিকেল্মেকে সবচেয়ে শৈল্পিক খেলোয়াড়ের পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া তিনি ২০০৫ ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও পান। ঐ মোসুমে তিনি লীগে ৩৫ খেলায় ১৫ গোল করেন।
২০০৫ সালের জুনে, প্রায় ৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে স্থায়িভাবে ভিয়ারিয়ালে যোগ দেন রিকেল্মে। তিনি ভিয়ারিয়ালের সাথে চার বছরের চুক্তি সাক্ষর করেন।[৪]
বার্সেলোনা থেকে রিকেল্মের ভিয়ারিয়ালে স্থানান্তরের চুক্তি কিছুটা অদ্ভুত ধরনের ছিল। ২০০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর, ভিয়ারিয়াল যখন ফরাসি ক্লাব লিলে ওএসসিকে ১–০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে, ইংরেজ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে চ্যাম্পিয়নস লীগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে নিজেদের অভিষেক মৌসুমেই নকআউট পর্বে পৌছায়, তখন চুক্তির শর্ত অনুসারে তাদরকে বার্সার কাছে ১ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া চুক্তিতে আরও দুটি শর্ত ছিল, যদি ভিয়ারিয়াল ২০০৫–০৬ মৌসুমে লীগে চতুর্থ অবস্থানের মধ্যে থেকে লীগ শেষ করে তাহলে তাদেরকে আরও ১ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে হবে এবং ২০০৬–০৭ মৌসুমের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য ছিল।
চ্যাম্পিয়নস লীগের শেষ চারে পৌছানোর পর, ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল, আর্সেনালের বিপক্ষে রিকেল্মের একটি পেনাল্টি কিক ঠেকিয়ে দেন ইয়েন্স লেহমান ফলে খেলাটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র হয়।[৫]
২০০৬–০৭ লা লিগা মৌসুমে রিকেল্মে তার প্রথম গোল করেন ২৪ সেপ্টেম্বর রিয়াল জারাগোজার বিপক্ষে। ঐ খেলায় ভিয়ারিয়াল ৩–২ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলার ৭৯তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে তিনি গোল করেন।[৬] ২০০৬–০৭ মৌসুমের প্রথমার্ধ্বে রিকেল্মে মাত্র ১৩টি খেলায় মাঠে নামেন এবং ২০০৬–০৭ কোপা দেল রেতে তাকে কোন খেলাতেই মাঠে দেখা যায়নি।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ মাসের ধারে বোকা জুনিয়র্সে যোগ দেন রিকেল্মে।[৭][৮] ২০০৭–০৮ আর্জেন্টিনীয় প্রিমেরা দিভিসিওনের ২০০৭ তর্নিও ক্লাউসুরায় বোকার হয়ে যোগ দেন তিনি। ১৭ ফেব্রুয়ারি, রোজারিও সেন্ট্রালের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়। খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হয়। বোকার হয়ে তিনি প্রথম গোল করেন ৯ মার্চ ইন্দিপেন্দিয়েন্তের বিপক্ষে। খেলার ৫৪তম মিনিটে গোল করে তিনি দলকে সমতায় ফেরান। খেলাটি শেষ পর্যন্ত ১–১ গোলে ড্র হয়।[৯] ২০০৭ কোপা লিবের্তাদোরেসে তিনি প্রথম গোল করেন ২২ মার্চ গ্রুপ পর্বের তৃতীয় খেলায় মেক্সিকোর ক্লাব তলুকার বিপক্ষে। তিনি খেলার ২৩তম মিনিটে গোল করেন, খেলায় শেষ পর্যন্ত ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে বোকা জুনিয়র্স। গ্রুপ পর্বে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ লাভ করে বোকা। ২০০৭ কোপা লিবের্তাদোরেসের নকআউট পর্বে ভেলেজ সার্সফিল্ডের মুখোমুখি হয় বোকা। ২ মে, ১ম লেগের খেলায় ১ম মিনিটেই একটি গোল করেন রিকেল্মে, খেলায় বোকা ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। কোয়ার্টার ফাইনালে বোকা মুখোমুখি হয় প্যারাগুয়ের ক্লাব লিবের্তাদের। ২৪ মে, কোয়ার্টার-ফাইনালের ২য় লেগের খেলার ৬১তম মিনিটে বোকার হয়ে গোল করেন রিকেল্মে। তার এই গোলে খেলায় ১–০ তে এগিয়ে যায় বোকা, শেষ পর্যন্ত খেলায় ২–০ গোলের ব্যবধানে তারা জয় লাভ করে। দুই লেগ মিলিয়ে ৩–১ গোল ব্যবধানে তারা সেমি-ফাইনালে পৌছায়। ৭ জুন, সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে কলম্বিয়ার ক্লাব কুকুতা দেপোর্তিভোর বিপক্ষে খেলার ৪৪তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করে বোকাকে ১–০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান রিকেল্মে। শেষ পর্যন্ত খেলায় ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে বোকা। সেমি-ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে ৪–১ গোল ব্যবধানে তারা ফাইনালে পৌছায়। ফাইনালে ব্রাজিলীয় ক্লাব গ্রেমিওর মুখোমুখি হয় বোকা। ১৩ জুন, প্রথম লেগের খেলায় বোকার প্রথম গোলে রিকেল্মে সহায়তা করেন। তিনি ফ্রি কিক থেকে স্ট্রাইকার মার্তিন পালের্মোর কাছে বল পাঠান যিনি বলটি গোলপোস্টের সামনে রদ্রিগো পালাসিওকে পাস করেন এবং পালাসিও ১৮তম মিনিটে খেলার প্রথম গোলটি করেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধ্বে, ৭৩তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন রিকেল্মে। শেষ পর্যন্ত খেলায় ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে বোকা। ২০ জুন দ্বিতীয় লেগে, রিকেল্মে জোড়া গোল করেন এবং দলকে ২–০ গোলের জয় এনে দেন। এতে করে ৬ষ্ঠ বারের মত বোকা কোপা লিবের্তাদোরেস শিরোপা জিতে। বোকা জুনিয়র্স ২০০৭ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যায় এবং রিকেল্মে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন।
২০০৭ সালের আগস্টে, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে বোকা রিকেল্মের সাথে পুনরায় চুক্তি সাক্ষর করার আশা ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য, কিছু দিন পরেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে, দলটির পরিচালক হুয়ান কার্লোস ক্রেসপি আশা প্রকাশ করেন যে রিকেল্মে দশ দিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন। আলাপ-আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় যখন ভিয়ারিয়াল রিকেল্মেকে ৪ মিলিয়ন ইউরো, মাউরো বোসেই অথবা জনাথান মাইদানার অর্ধেক সত্ত্ব এবং রদ্রিগো পালাসিওর বিনিময়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে এবং বোকা জুনিয়র্স কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ আগস্ট ঘোষণা করা হয় যে রিকেল্মে ৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আতলেতিকো মাদ্রিদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। অবশ্য, এই চুক্তি একদম শেষ সময়ে এসে বাতিল করা হয় এবং রিকেল্মে ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড় হিসেবেই রয়ে যান। তাকে ২০০৭–০৮ লা লিগার জন্য ১৬ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর, রিকেল্মে ভিয়ারিয়ালের সাথে একটি মতৈক্যে পৌছান এবং ২০০৮ এর জানুয়ারিতে স্থানান্তর মৌসুম শুরু হলে তাকে পুনরায় বোকা জুনিয়র্সে যোগ দেওয়ার জন্য ছাড় দেওয়া হয়।[১০] বোকা জুনিয়র্স রিকেল্মের জন্য ভিয়ারিয়ালকে ১৫,০০০,০০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সাথে ২০০৭–০৮ মৌসুমের অবশিষ্ট সময়ের জন্য বোকার পক্ষে রিকেল্মের পারিশ্রমিক পরিশোধ করার দায়িত্ব ভিয়ারিয়ালের, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন ইউরো। রিকেল্মে ২০০৭ সালের শেষ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মেয়াদের চুক্তি সাক্ষর করেন। তিনি ২০০৭ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণে অপারগ ছিলেন, কেননা তিনি সময়মত ফিফা কর্তৃক নিবন্ধিত হতে পারেননি। ২০০৭–০৮ আর্জেন্টাইন প্রিমেরা দিভিসিওনে তিনি মাত্র ১০টি খেলায় মাঠে নামেন এবং একটি গোল করেন। ২০০৭–০৮ মৌসুমে রিকেল্মে প্রথম মাঠে নামেন ২০০৮ তর্নিও ক্লাউসুরাতে রোজারিও সেন্ট্রালের বিপক্ষে খেলায়, যা ১–১ গোলে ড্র হয়। ২০০৮ সালের ৪ মে, সুপারক্ল্যাসিকোতে রিভার প্লেটের বিপক্ষে সেবাস্তিয়ান বাত্তাগ্লিয়ার গোলে তিনি সহায়তা করেন। খেলার ১৪তম মিনিটে রিকেল্মে একটি কর্নার কিক নেন, যা বাত্তাগ্লিয়া হেডের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন। ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল, কোপা লিবের্তাদোরেসে বোকার গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় মারাকাইবোর বিপক্ষে গাব্রিয়েল পালেত্তার গোলে সহায়তা করেন রিকেল্মে, খেলার ১০ম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে তার বাড়ানো শট হেডের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন পালেত্তা। খেলার ৭৪তম মিনিটে তিনি বোকার তৃতীয় গোলটি করেন। খেলায় শেষ পর্যন্ত তারা ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। তারা গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থেকে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে। ২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিল, দ্বিতীয় পর্বের প্রথম লেগে, খেলার ৬ষ্ঠ মিনিটে আলভারো রাফায়েল গঞ্জালেজের বাড়ানো পাস থেকে রিকেল্মে একটি গোল করেন। খেলায় বোকা ২–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে এবং পরবর্তীতে দুই লেগে ৪–২ গোল ব্যবধানে জয় লাভ করে। সেমি-ফাইনালে বোকা ফ্লুমিনেন্সের মুখোমুখি হয়। ২০০৮ সালের ২৮ মে, প্রথম লেগে রিকেল্মে খেলার ১২তম মিনিটে রদ্রিগো পালাসিওর বাড়ানো বল থেকে গোল করেন। খেলার ৬৫তম মিনিটে তিনি ফ্রি কিক থেকে আরেকটি গোল করেন। খেলাটি ২–২ গোলে ড্র হয়। দ্বিতীয় লেগে ফ্রুমিনেন্সে বোকা জুনিয়র্সকে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে। দুই লেগে ৫–৩ গোল ব্যবধানে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনীয় দলটি। বোকা জুনিয়র্সের বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় ৪টি গোল করেন রিকেল্মে।
২০০৮ সালের অক্টোবরে, হুলিও সিজার কাসেরেস সতীর্থ হুয়ান রোমান রিকেল্মের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। প্যারাগুয়ের রেডিও আসুনসিওনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন যে ক্লাবের হয়ে রিকেলমে সব খেলায় এক রকম খেলেন না, যখন তিনি দেশের হয়ে খেলেন, তখন তার মধ্যে অধিক প্রেরণা দেখা যায়। রিকেল্মে ফক্স স্পোর্টস কেবল চ্যানেলে টেলিফোন সাক্ষাতকারের মাধ্যমে এর সাড়া দেন। তিনি বলেন, “সে জানেনা আমি ক্লাবের জন্য কেমন অনুভব করি। অন্য খেলোয়াড়দের মত আমিও খেলার পূববর্তী মনোযোগ আকর্ষণে অংশগ্রহন করি এবং আমার কোন ছুটিও নেই কারণ আমি (অলিম্পিক) গেমসে খেলতে চেয়েছিলাম। যখন আমরা স্বর্ণ জিতি, আমি বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছিলাম যেন আমি রিকোপা সুদামেরিকানা ২০০৮ এর ফাইনাল খেলতে পারি।”[১১] অবশ্য, ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর, রিভার প্লেটের বিপক্ষে বোকার ১–০ গোলের ব্যবধানে সুপারক্ল্যাসিকো ডার্বি জিতার পর কাসেরেস বলেন যে এই দ্বন্দ্বকে তারা পেছনে ফেলে এসেছেন, তিনি যোগ করেন যে তাদের মধ্য সম্পর্কেরও উন্নতি হয়েছে।[১২]
২০০৮ সালের ২৭ আগস্ট, আর্সেনাল দি সারান্দির বিপক্ষে ২০০৮ রিকোপা সুদামেরিকানার দ্বিতীয় লেগে খেলার ৯১তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলকে ২–২ গোলে সমতায় ফেরান রিকেল্মে। বোকা জুনিয়র্স দুই লেগ মিলিয়ে ৫–৩ গোল ব্যবধানে জয় লাভ করে।
২০১০ সালের ১২ এপ্রিল, আর্সেনাল দি সারান্দির বিপক্ষে খেলার ৪৭তম মিনিটে রিকেল্মে একটি গোল করেন, খেলায় বোকা ৪–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৩]
২০১১–১২ আর্জেন্টাইন প্রিমেরা দিভিসিওনে রিকেল্মে প্রথম মাঠে নামেন ২০১১ সালের ১২ জুন, ২০১১ তর্নিও আপের্তুরায় বানফিল্ডের বিপক্ষে। খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হয়।[১৪] ২০১১ তর্নিও আপের্তুরায় তিনি তার প্রথম গোল করেন ১৫ আগস্ট ইউনিয়ন দি সান্তা ফে’র বিপক্ষে বোকার ৪–০ গোলে জয়ের খেলায়। খেলার ৮৩তম মিনিটে বোকার পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন তিনি।[১৫] বোকা জুনিয়র্স ২০১১ তর্নিও ক্লাউসুরায় ১৯টি লীগ খেলায় অপরাজিত থেকে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত তারা এই শিরোপা জিতে এবং ২০১২ কোপা লিবের্তাদোরেসে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
২০১১–১২ কোপা আর্জেন্টিনায় রিকেল্মে প্রথম মাঠে নামেন ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, দেপোর্তিভো সান্তামারিনার বিপক্ষে। খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হয়। রিকেল্মে ফাকুন্দো রনকাগ্লিয়ার গোলে সহায়তা করেন। খেলায় ৬৩তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে রিকেল্মের লব শটটিকে হেডের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন রনকাগ্লিয়া। খেলাটি শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুট-আউট পর্যন্ত গড়ায়, যা ৪–৩ ব্যবধানে জিতে বোকা জুনিয়র্স।[১৬] ২০১২ তর্নিও ক্লাউসুরাতে রিকেল্মে প্রথম মাঠে নামেন ২০১২ ফেব্রুয়ারি ১০, অলিম্পো দি বাহিয়া ব্লাঙ্কার বিপক্ষে বোকার ২–০ গোলের ব্যবধানে জয়ের খেলায়। খেলার ৭৯তম মিনিটে ক্রিস্তিয়ান শ্যাভেজের বদলি হিসেবে তিনি মাঠে নামেন।[১৭] চার দিন পর, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভেনিজুয়েলার ক্লাব জামোরার বিপক্ষে ২০১২ কোপা লিবের্তাদোরেসে প্রথম মাঠে নামেন রিকল্মে। খেলাটি ০–০ গোলে ড্র হয়।[১৮] ২০১২ তর্নিও ক্লাউসুরায় রিকেল্মে তার প্রথম গোল করেন ২৬ ফেব্রুয়ারি নিউওয়েল’স ওল্ড বয়েজের বিপক্ষে। খেলায় বোকা ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলার ৮০তম মিনিটে তিনি গোলটি করেন।[১৯] দুই সপ্তাহ পর, ১১ মার্চ, ইন্দিপেন্দিয়েন্তের বিপক্ষে বোকার পক্ষে খেলায় তৃতীয় গোলটি করেন রিকেল্মে। অবশ্য ঘরের মাঠে ৪–৫ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয় বোকা।[২০] এর দুই সপ্তাহ পর, ২৫ মার্চ, রিকেল্মে লানুসের বিপক্ষে একটি গোল করেন। তিনি খেলার ৪১তম মিনিটে গোল করে দলকে ২–০ গোল এগিয়ে নিয়ে যান। অবশ্য, লানুস দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল শোধ করলে, খেলটি ২–২ গোলে ড্র হয়।[২১] ১৮ এপ্রিল, কোপা লিবের্তাদোরেসের গ্রুপ পর্বে বোকার শেষ খেলায় জামোরার বিপক্ষে খেলার ৭৫তম মিনিটে রিকেল্মে একটি গোল করেন এবং দলকে ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় এনে দেন। এই জয়ের মাধ্যমে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তারা তৃতীয় স্থান অর্জন করে এবং প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে।[২২]
নকআউট পর্বে বোকা মুখোমুখি হয় চিলির ক্লাব ইউনিয়ন ইস্পানিওলার। ২ মে প্রথম লেগে, খেলার ২৫তম মিনিটে রিকেল্মে একটি গোল করে দলকে ১–০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান। খেলায় বোকার দ্বিতীয় গোলে রিকেল্মে সহায়তা করেন, তিনি বলটি গোলপোস্টের বাম দিকে থাকা পাবলো মুচের দিকে পাস করেন, যিনি গোলপোস্টের সামনে দাড়িয়ে থাকা সান্তিয়াগো সিলভার কাছে বলটি ক্রস করেন এবং তিনি হেড শটে তা গোলে পরিণত করেন। খেলায় শেষ পর্যন্ত ২–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে বোকা।[২৩] ৯ মে দ্বিতীয় লেগের খেলায়, রিকেল্মে বোকার প্রথম গোলে সহায়তা করেন। খেলার ২৬তম মিনিটে তার নেওয়া ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে তা গোলে পরিণত করেন হুয়ান ইন্সাউরাল্দে। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে, ৫০তম মিনিটে, রিকেল্মে ইউনিয়ন ইস্পানিওলার ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে পাবলো মুচের দিকে বল পাস করলে, তিনি খেলায় বোকার দ্বিতীয় গোলটি করেন। খেলায় ৬৮তম মিনিটে রিকেল্মে বোকার তৃতীয় গোলটি করেন। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলায় বোকা ৩–২ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২৪]
কোপা লিবের্তাদোরেসের কোয়ার্টার-ফাইনালে বোকা মুখোমুখি হয় ব্রাজিলীয় ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের। ১৭ মে, প্রথম লেগে রিকেল্মে খেলার একমাত্র গোলটিতে দলকে সহায়তা করেন। বোকা ১–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২৫] ২৩ মে, দ্বিতীয় লেগের খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হয়। এতে দুই লেগ মিলিয়ে ২–১ গোল ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে সেমি-ফাইনালে পৌছায় বোকা। ২০১২ সালের ৩ জুন, কোপা আর্জেন্টিনার সেমি-ফাইনালে বোকা মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব দেপোর্তিভো মেরলোর। খেলার ৫৭তম মিনিটে রিকেল্মে গোল করে দলকে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। অবশ্য পরবর্তীকালে দেপোর্তিভো মেরলো সমতায় ফিরলে খেলাটি পেনাল্টি শুট-আউট পর্যন্ত গড়ায়, যা বোকা ৫–৪ ব্যবধানে জিতে।[২৬] কোপা লিবের্তাদোরেসের সেমি-ফাইনালে চিলিয় ক্লাব ইউনিভার্সিদাদ দি চিলিকে পরাজিত করার পর বোকা প্রতিযোগিতার দুই লেগের ফাইনালে ব্রাজিলীয় ক্লাব করিন্থিয়ান্সের মুখোমুখি হয়। রিকেল্মে বোকার হয়ে উভয় খেলায়ই অংশগ্রহণ করে। যদিও দুই লেগ তারা মিলিয়ে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ৪ জুলাই, দ্বিতীয় লেগে ২–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর তাত্ক্ষণিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন ৩৪ বছর বয়সী রিকেল্মে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন যে তিনি ক্লাব ছাড়তে যাচ্ছেন, কারণ খেলা চালিয়ে যাওয়ার মত ক্ষমতা তার মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই। ক্লাবকে দেওয়ার মত কিছু তার মধ্যে আর নেই এবং ফুটবল থেকে তার বিরতির প্রয়োজন।[২৭] ৮ আগস্ট, রিকেল্মের অনুপস্থিতিতে রেসিংকে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ২০১১–১২ কোপা আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতে বোকা।
২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে অস্ট্রেলীয় এ-লীগের কোন একটি ক্লাব রিকেল্মের প্রতিনিধি দানিয়েল বলত্নিকফের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং রিকেল্মের সাথে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তবে বলত্নিকফ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।[২৮] ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে রিকেল্মে মেজর লীগ সকারের দল চিভাস ইউএসএতে প্রায় যোগদান করে ফেলেছেন।[২৯] ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে, অনেক জল্পনা-কল্পনার পর রিকেল্মে পালমেইরাসে যোগদানের চেষ্টা করেন, তবে ক্লাবের নতুন নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট পাওলো নব্রে ঘোষণা করেন যে পালমেইরাস অর্থনৈতিক শর্তাবলী এবং রিকেল্মের মূল্যের কারণে চুক্তি করবেনা।[৩০][৩১]
২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি, রিকেল্মে স্বীকার করেন যে তার শেষ বিকল্প হল আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স বা টাইগ্রের হয়ে খেলা।[৩২] ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, দাপ্তরিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের প্রেসিডেন্ট লুইস সেগুইরা ঘোষণা করেন যে ক্লাবের পক্ষ থেকে রিকেল্মের কাছে একটি প্রস্তাব প্রদান করা হবে।[৩৩] ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে রিকেল্মে টাইগ্রের ব্যবস্থাপক সার্হিও মাসার কাছে গিয়েছেন, ক্লাবে তার যোগদানের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করতে।[৩৪] ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে অনেক আলাপ আলোচনার পর, রিকেল্মে টাইগ্রের হয়ে খেলার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।[৩৫]
২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে রিকেল্মে বোকা জুনিয়র্সে তার প্রত্যাগমনের কথা বিবৃত করেছেন এবং তিনি বোকার কোচ কার্লোস বিয়াঞ্চির সাথে যোগাযোগ করেছেন।[৩৬]
২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, রিকেল্মের বোকা জুনিয়র্সে প্রত্যাগমনের খবর নিশ্চিত করা হয়।[৩৭][৩৮] ২০১৩ সালের ১৫ মে, কোপা লিবের্তাদোরেসে করিন্থিয়ান্সের বিপক্ষে মাঝমাঠ থেকে গোল করেন রিকেল্মে। খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হলে, দুই লেগ মিলিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটিকে ২–১ গোল ব্যবধানে পরাজিত করে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় করে বোকা।[৩৯][৪০]
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে সফল সময় কাটানোর পর, ১৯৯৭ সালের ১৬ নভেম্বর, কোচ দানিয়েল পাসারেলার অধীনে ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ডাক পান রিকেল্মে। বোকা জুনিয়র্সের লা বম্বোনেরা স্টেডিয়ামে, কলম্বিয়ার বিপক্ষে তার অভিষেক হয়। তিনি খেলার একদম শেষ মিনিটে মাঠে নামেন। খেলাটি ১–১ গোলে ড্র হয়। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৯৯ কোপা আমেরিকায় অংশগ্রহণ করেন, যা ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার প্রথম প্রধান কোন প্রতিযোগিতা। রিকেল্মে তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন ২০০৩ সালের ৩০ এপ্রিল, লিবিয়ার বিপক্ষে। ত্রিপোলিতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। ২০০৪ সালের ১৭ নভেম্বর, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে রিকেল্মে আর্জেন্টিনার হয়ে তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৫ ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের জন্য বিদায় গ্রহণের পূর্বে, ৮ জুন, বুয়েনোস আইরেসে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ৩–১ গোলে জয়ের খেলায় তিনি একটি গোল করেন। ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পেরুর বিপক্ষে খেলায় রিকেল্মে তার সপ্তম আন্তর্জাতিক গোল করেন। খেলায় ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। রিকেল্মে তার অষ্টম আন্তর্জাতিক গোল করেন ২০০৫ সালের ১৬ নভেম্বর, কাতারের বিপক্ষে। তার একমাত্র গোলেই খেলায় জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। ২০০৬ সালে, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের নতুন নিযুক্ত কোচ আলফিও বাসিল রিকেল্মেকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব প্রদান করেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন রিকেল্মে এবং পরাজয়ের দায়ও এসে পড়ে তার উপর। এই ঘটনা রিকেল্মের মায়ের স্বাস্থের উপর প্রভাব ফেলে, যাকে ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপের পর দুই মাসে দুইবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এটি রিকেল্মেকে প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে তার অবসরের ঘোষণা প্রদানের দিকে ঠেলে দেয়। ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি সেই ঘোষণা দেন। সে সময় পর্যন্ত, রিকেল্মে জাতীয় দলের হয়ে ৩৭টি খেলায় মাঠে নেমেছিলেন এবং ৮ গোল করেছিলেন।[৪১][৪২] ২০০৭ সালের ১৩ অক্টোবর, ভিয়ারিয়ালে তিন মাসের নিষ্ক্রিয়তা থেকে বের হয়ে চিলির বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে দুটি গোল করে দলকে ২–০ গোলের ব্যবধানে জয় এনে দেন রিকেল্মে। এতে জয় দিয়ে শুরু হয় আর্জেন্টিনার ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের যাত্রা। ১৭ নভেম্বর, ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলায় তিনি পুনরায় জোড়া গোল করেন। এতে তার মোট আন্তর্জাতিক গোলের সংখ্যা হয় ১৭। ২০০৯ সালের মার্চে, কোচ দিয়েগো মারাদোনার সাথে মতানৈক্যের পর জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন রিকেল্মে।[৪৩] প্রাক্তন ম্যানেজার সার্হিও বতিস্তা বিবৃত করেন যে তিনি রিকেল্মেকে পুনরায় আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখতে চান এবং ২০১০ সালের আগস্টে, স্পেনের বিপক্ষে প্রীতি খেলায় তাকে মাঠে নামানোর ইঙ্গিত প্রদান করেন,[৪৪] যা অবশ্য পরবর্তীকালে ঘটেনি। ২০১১ সালে, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া সুপারক্ল্যাসিকো দি লাস আমেরিকাসের জন্য রিকেল্মেকে দলে ডাকেন। অবশ্য, তিনি ইনজুরির কারণে মাঠে নামতে পারেননি।[৪৫]
কোচ হোসে পেকারম্যানের অধীনে, ১৯৯৭ দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পান রিকেল্মে। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার ৯টি খেলার সবকয়টিতেই তিনি মাঠে নামেন এবং ৩টি গোল করেন। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয়। এটি ছিল ত্রিশ বছরের মধ্যে তাদের দ্বিতীয় দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা। ওয়াল্টার স্যামুয়েল এবং পাবলো আইমারের সাথে রিকেল্মেও প্রতিযোগিতার সেরা একাদশে জায়গা পান। যা প্রতিযোগিতার জন্য নিবন্ধিত সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল।[৪৬] এই জয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ১৯৯৭ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
১৯৯৭ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য রিকেল্মেকে আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। তিনি গ্রুপ পর্বের সবকয়টি খেলায় মাঠে নামেন। ১৮ জুন, হাঙ্গেরির বিপক্ষে খেলার ৫০তম মিনিটে তিনি একটি গোল করেন। আর্জেন্টিনা খেলায় ৩–০ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৪৭] ২০ জুন, কানাডার বিপক্ষে খেলার ৫৫তম মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি জয়সূচক গোল করেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৪৮] আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার ৮৮তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ৩–৩ গোলে সমতায় ফেরান রিকেল্মে। অবশ্য, খেলার ৯০তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করে খেলায় জয় লাভ করে অস্ট্রেলিয়া।[৪৯] আর্জেন্টিনা ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এবং দ্বিতীয় পর্বে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে। ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন, রাউন্ড অফ ১৬ এর খেলায় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। খেলার ১০ম মিনিটে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন রিকেল্মে। আর্জেন্টিনা খেলায় ২–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[৫০] কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্রাজিলকে ২–০ গোলের ব্যবধানে[৫১] এবং সেমি-ফাইনালে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রকে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে[৫২] প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌছায় আর্জেন্টিনা। ৫ জুলাই, প্রতিযোগিতার ফাইনালে উরুগুয়েকে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মত ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনা।[৫৩] রিকেল্মে প্রতিযোগিতায় চারটি গোল করেন এবং আর্জেন্টিনা ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কার জিতে।
ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য ১৯৯৮ তলুন টুর্নামেন্টের জন্য হোসে পেকারম্যান পুনরায় রিকেল্মেকে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলে জায়গা দেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালে ফ্রান্সকে ২–০ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনা। রিকেল্মে আর্জেন্টিনার হয়ে সবকয়টি খেলায় মাঠে নামেন এবং প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
১৯৯৯ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার ২২ সদস্য বিশিষ্ট দলে জায়গা পান রিকেল্মে। তাকে #২২ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও বোকা জুনিয়র্সের আরও পাঁচ খেলোয়াড় ঐ দলে ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলায় তিনি মাঠে নামেন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঐ খেলায় আর্জেন্টিনা ৩–১ গোলে জয় লাভ করে। তবে খেলার ৯০তম মিনিটে তাকে উঠিয়ে মাঠে নামানো হয় দিয়েগো কাগনাকে। ৪ জুলাই, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলায় তিনি পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ঐ খেলায় আর্জেন্টিনা ৩–০ গোলে পরাজিত হয়। ৭ জুলাই, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার তৃতীয় খেলায়ও তিনি পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন। উরুগুয়ের বিপক্ষে ঐ খেলায় আর্জেন্টিনা ২–০ গোলে জয় লাভ করে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। কোয়ার্টার-ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের। রিকেল্মে খেলার পুরো ৯০ মিনিটই মাঠে ছিলেন। খেলার ৩২তম মিনিট পর্যন্ত ১–০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ২–১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আর্জেন্টিনাকে।[৫৪]
প্রাক্তন যুব দল কোচ হোসে পেকারম্যানের অধীনে, ২০০৫ ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের জন্য আর্জেন্টিনা দলে জায়গা পান রিকেল্মে। প্রতিযোগিতায় তিনি #৮ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। ১৫ জুন, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলায় তিউনিসিয়ার বিপক্ষে তিনি মাঠে নামেন। খেলার ৩৩তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে তিনি দলকে ১–০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে।[৫৫] ১৮ জুন, গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় খেলায় অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। খেলার ৩১তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ২–০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান রিকেল্মে। অবশ্য, খেলায় আর্জেন্টিনা ৪–২ গোলে জয় লাভ করে।[৫৬] ২১ জুন, গ্রুপ পর্বের তৃতীয় খেলায় আয়োজক জার্মানির মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। খেলার ৩৩তম মিনিটে গোল করে দলকে ১–১ গোলে সমতায় ফেরান রিকেল্মে। অবশ্য, চার মিনিট পরই পুনরায় এগিয়ে যায় জার্মানি।[৫৭] খেলাটি শেষ পর্যন্ত ২–২ গোলে ড্র হয়। ৭ পয়েন্ট নিয়ে জার্মানির সাথে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। ২৬ জুন, সেমি-ফাইনালে মেক্সিকোর মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ের পরও, ১–১ সমতা থাকায় খেলাটি পেনাল্টি শুট-আউটে গড়ায়, যা আর্জেন্টিনা ৬–৫ ব্যবধানে জিতে।[৫৮] ২৯ জুন, ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ফ্রাংকফুর্টের কমার্জব্যাংক-এরিনায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় পুরো ৯০ মিনিটই মাঠে ছিলেন রিকেল্মে। যদিও আর্জেন্টিনা ৪–১ গোলে পরাজিত হয়।[৫৯] প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সিলভার বল পুরস্কার অর্জন করেন রিকেল্মে।
কোচ হোসে পেকারম্যানের অধীনে ২০০৬ বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আর্জেন্টিনা দলে জায়গা পান রিকেল্মে। প্রতিযোগিতার জন্য তাকে প্রথমবারের মত #১০ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস, সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রো এবং আইভরি কোস্টের। প্রতিযোগিতায় গ্রুপটিকে গ্রুপ অফ ডেথ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১০ জুন, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলায় আইভরি কোস্টের বিপক্ষে মাঠে নামেন রিকেল্মে। খেলার ৩৮তম মিনিটে হাভিয়ের সাভিওলার গোলে তিনি সহায়তা করেন, এতে আর্জেন্টিনা খেলায় ২–০ গোলে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে। অবশ্য, খেলার ৯৩তম মিনিটে তাকে উঠেয়ে পাবলো আইমারকে নামানো হয়।[৬০] ১৬ জুন, গেলসেনকির্শেনে সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। রিকেল্মে পুরো ৯০ মিনিট খেলেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ৬–০ গোলে জয় লাভ করে। খেলার দ্বিতীয় গোলটি টানা ২৪টি সফল পাসের মাধ্যমে করা হয় যার মূলে ছিলেন রিকেল্মে। গোলটি করেন এস্তেবান কাম্বিয়াসো। এই পাসিং সমন্বয়কে এর্নান ক্রেসপো “সবচেয়ে সুন্দর গোল” বলে বিবৃত করেন।[৬১] রিকেল্মে খেলায় আর্জেন্টিনার পঞ্চম গোলে সহায়তাও করেন। তিনি ফ্রি-কিক থেকে লিওনেল মেসির কাছে বল পাঠান যা তিনি ক্রেসপোর কাছে ক্রস করেন এবং ক্রেসপো ক্রসটিকে গোলে পরিণত করেন। রিকেল্মে ফিফা ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।[৬২][৬৩] ২১ জুন, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়। খেলার ৮০তম মিনিটে রিকেল্মেকে উঠিয়ে পাবলো আইমারকে মাঠে নামানো হয়। ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।[৬৪] ২৪ জুন, রিকেল্মে তার ২৮তম জন্মদিন উদযাপন করেন রাউন্ড অফ ১৬-তে মেক্সিকোর মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে। খেলার ৬ষ্ঠ মিনিটে মেক্সিকো রাফায়েল মার্কুয়েজের গোলে ১–০ তে এগিয়ে যায়। খেলার ১০ম মিনিটে আর্জেন্টিনার পক্ষে কর্ণার কিক নেন রিকেল্মে যা ফ্লিক শটের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন ক্রেসপো।[৬৫] ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পরও ১–১ গোলে সমতা থাকায় খেলাটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। অতিরিক্ত সময়ের ৮ম মিনিটে ম্যাক্সি রদ্রিগুয়েজ গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং আর্জেন্টিনা খেলায় জয় লাভ করে কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌছে।[৬৬] ৩০ জুন, কোয়ার্টার-ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় আয়োজক জার্মানির। খেলার ৪৯তম মিনিটে রবের্তো আয়ালাকে লক্ষ্য করে একটি কর্ণার কিক নেন, যা আয়ালা হেডের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন এবং আর্জেন্টিনাকে ১–০ গোলে এগিয়ে নিয়ে যান। খেলার ৭২তম মিনিটে রিকেল্মের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এস্তেবান কাম্বিয়াসো। এর কিছুক্ষণ পর, খেলার ৮০তম মিনিটে, মিরোস্লাভ ক্লোজে গোল করে জার্মানিকে সমতায় ফেরান। খেলাটি পেনাল্টি শুট-আউট পর্যন্ত গড়ায়, যা জার্মানি ৪–২ ব্যবধানে জিতে।[৬৭]
২০০৭ জুন ২৬ জুন, কোচ আলফিও বাসিল ২০০৭ কোপা আমেরিকার জন্য রিকেল্মেকে দলে ডাকেন। বোকা জুনিয়র্সের ২০০৭ কোপা লিবের্তাদোরেস জিতার পরের সকালে, রিকেল্মে খুব দ্রুত বুয়েনোস আইরেসে ফিরে যান এবং জাতীয় দলের সাথে ভেনেজুয়েলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৮ জুন, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামেন রিকেল্মে। খেলায় ৪–১ গোলে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। ২ জুলাই, আর্জেন্টিনা কলম্বিয়ার মুখোমুখি হয়। খেলায় রিকেল্মে জোড়া গোল করেন। ৩৪তম মিনিটে হেডে এবং ৪৫তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে। আর্জেন্টিনা খেলায় ৪–২ গোলে জয় লাভ করে। ৫ জুলাই, গ্রুপ পর্বে নিজেদের ৩য় খেলায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষেও তারা জয় লাভ করে এবং ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ৮ জুলাই, কোয়ার্টার-ফাইনালে আর্জেন্টিনা পেরুর মুখোমুখি হয়। তিনি খেলার ৪৭তম এবং ৮৫তম মিনিটে দুইটি গোল করেন এবং ৬১তম মিনিটে লিওনেল মেসির গোলে সহায়তা করে। ১১ জুলাই, সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনা মেক্সিকোকে ৩–০ গোলে পরাজিত করে। খেলার ৪৫তম মিনিটে গাব্রিয়েল হাইনৎসের গোলে তিনি সহায়তা করেন এবং ৬৫তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন। ১৫ জুলাই, প্রতিযোগিতার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের। রিকেল্মে পুরো ৯০মিনিটই খেলেন, যদিও আর্জেন্টিনা ৩–০ গোলে পরাজিত করা হয়। রিকেল্মেকে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে পুরষ্কৃত করা হয়।[৬৮]
২০০৮ সালের আগস্টে, ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আর্জেন্টিনা দলে তিন জন তেইশোর্ধ্ব সদস্যের একজন ছিলেন রিকেল্মে। এছাড়া কোচ সার্হিও বাতিস্তা প্রতিযোগিতায় তাকে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও প্রদান করেন।[৬৯] দলে তেইশোর্ধ্ব অন্য দুইজন ছিলেন হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো এবং নিকোলাস পারেজা। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল আইভরি কোস্ট, অস্ট্রেলিয়া এবং সার্বিয়া। ৭ আগস্ট, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলায় পুরো ৯০ মিনিট খেলেন রিকেল্মে। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে।[৭০] তিন দিন পর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও তিনি মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ১–০ গোলে জয় লাভ করে।[৭১] গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার তৃতীয় খেলায় রিকেল্মে বিশ্রামে ছিলেন। খেলায় তার পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মাশ্চেরানো। সার্বিয়ার বিপক্ষে ঐ খেলায় ২–০ গোলে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা।[৭২] ১৬ আগস্ট, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রিকেল্মে মাঠে নামেন। খেলায় আর্জেন্টিনা ২–১ গোলে জয় লাভ করে এবং সেমি-ফাইনালে পৌছায়।[৭৩] ১৯ আগস্ট, সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। সার্জিও অ্যাগুয়েরোর জোড়া গোলের পর, খেলায় ৭৬তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে ৩–০ গোলের জয় এনে দেন রিকেল্মে।[৭৪] ২৩ আগস্ট, প্রতিযোগিতার ফাইনালে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। বেইজিং জাতীয় স্টেডিয়ামে ৮৯,১০২ জন দর্শকের সামনে নাইজেরিয়াকে ১–০ গোলে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ফুটবলে স্বর্ণপদক জিতে আর্জেন্টিনা।[৭৫][৭৬]
আর্জেন্টিনার গোলের হিসাব প্রথমে।
২৫ অক্টোবর ২০১৩ অনুসারে।[৭৭][৭৮]
ক্লাব | লীগ | কাপ | মহাদেশীয় | মোট | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মৌসুম | ক্লাব | লীগ | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল |
আর্জেন্টিনা | লীগ | কাপ | দক্ষিণ আমেরিকা | মোট | ||||||
১৯৯৬–৯৭ | বোকা জুনিয়র্স | প্রিমেরা দিভিসিওন | ২২ | ৪ | ২২ | ৪ | ||||
১৯৯৭–৯৮ | ১৯ | ০ | ২ | ০ | ২১ | ০ | ||||
১৯৯৮–৯৯ | ৩৭ | ১০ | ৫ | ০ | ৪২ | ১০ | ||||
১৯৯৯–২০০০ | ২৪ | ৪ | ১৬ | ৩ | ৪০ | ৭ | ||||
২০০০–০১ | ২৭ | ১০ | ১৪ | ৩ | ৪১ | ১৩ | ||||
২০০১–০২ | ২২ | ১০ | ৬ | ০ | ২৮ | ১০ | ||||
মোট | ১৫১ | ৩৮ | ৪৩ | ৬ | ১৯৪ | ৪৪ | ||||
স্পেন | লীগ | কোপা দেল রে | ইউরোপ | মোট | ||||||
২০০২–০৩ | বার্সেলোনা | লা লিগা | ২৯ | ৩ | ১ | ১ | ১১ | ২ | ৪১ | ৬ |
২০০৩–০৪ | ভিয়ারিয়াল (ধার) | লা লিগা | ৩৩ | ৮ | ৩ | ১ | ১২ | ৪ | ৪৮ | ১৩ |
২০০৪–০৫ | ৩১ | ১৫ | ০ | ০ | ৯ | ৩ | ৪০ | ১৮ | ||
২০০৫–০৬ | ভিয়ারিয়াল | লা লিগা | ২৫ | ১২ | ১ | ০ | ১২ | ২ | ৩৮ | ১৪ |
২০০৬–০৭ | ১৩ | ১ | ০ | ০ | - | - | ১৩ | ১ | ||
মোট | ১৩১ | ৩৯ | ৫ | ২ | ৪৪ | ১১ | ১৮০ | ৫২ | ||
আর্জেন্টিনা | লীগ | কাপ | দক্ষিণ আমেরিকা | মোট | ||||||
২০০৭ | বোকা জুনিয়র্স (ধার) | প্রিমেরা দিভিসিওন | ১৫ | ২ | ১০ | ০ | ২৫ | ২ | ||
২০০৭–০৮ | বোকা জুনিয়র্স | প্রিমেরা দিভিসিওন | ১১ | ১ | ১০ | ৪ | ২১ | ৫ | ||
২০০৮–০৯ | ২৮ | ৫ | ৭ | ৩ | ৩৫ | ৮ | ||||
২০০৯–১০ | ২৪ | ৩ | ২ | ০ | ২৬ | ৩ | ||||
২০১০–১১ | ১৩ | ৪ | ১৩ | ৪ | ||||||
২০১১–১২ | ২৩ | ৪ | ২ | ১ | ১৩ | ৩ | ৩৮ | ৮ | ||
২০১২–১৩ | ৫ | ০ | ১ | ০ | ৭ | ২ | ১৩ | ২ | ||
২০১৩–১৪ | ৯ | ২ | ০ | ০ | ০ | ০ | ৯ | ২ | ||
মোট | ১২৮ | ২১ | ৩ | ১ | ৪৯ | ১২ | ১৮০ | ৩৪ | ||
দেশ | আর্জেন্টিনা | ২৭৯ | ৫৯ | ৩ | ১ | ৯২ | ১৮ | ৩৭৪ | ৭৮ | |
স্পেন | ১৩১ | ৩৯ | ৫ | ২ | ৪৪ | ১১ | ১৮০ | ৫২ | ||
মোট | ৪১০ | ৯৮ | ৮ | ৩ | ১৩৬ | ২৯ | ৫৫৪ | ১৩০ |
আর্জেন্টিনা জাতীয় দল | ||
---|---|---|
সাল | উপস্থিতি | গোল |
১৯৯৭ | ১ | ০ |
১৯৯৮ | ০ | ০ |
১৯৯৯ | ৫ | ০ |
২০০০ | ০ | ০ |
২০০১ | ০ | ০ |
২০০২ | ১ | ০ |
২০০৩ | ৩ | ১ |
২০০৪ | ৬ | ১ |
২০০৫ | ১৩ | ৬ |
২০০৬ | ৮ | ০ |
২০০৭ | ৯ | ৯ |
২০০৮ | ৫ | ০ |
মোট | ৫১ | ১৭ |